সেহরি সংক্রান্ত বিদআত

আমাদের দেশে দেখা যায়, রমাযান মাসের মধ্যরাত থেকেই মুয়াজ্জিনগণ মাইকে কুরআন তিলাওয়াত, গজল, ইসলামী সঙ্গীত ইত্যাদি গাওয়া শুরু করে অথবা টেপ রেকর্ডার, মোবাইল, ইউটিউব ইত্যাদি থেকে বক্তাদের ওয়াজ, গজল ইত্যাদি বাজাতে থাকে। সেই সাথে চলতে থাকে অনবরত ডাকাডাকি: রোযাদার ভায়েরা, মা ও বোনেরা, উঠুন, সেহরীর সময় হয়েছে, রান্নাবান্না করুন, খাওয়া-দাওয়া করুন” ইত্যাদি। অথবা কোথাও বা কিছুক্ষণ পরপর উঁচু আওয়াজে হুইশেল বাজানো হয়!

এর থেকে আরো আজব কিছু আচরণ দেখা যায়। যেমন, এলাকার কিছু যুবক রমাযানের শেষ রাতে মাইক নিয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে গজল বা কাওয়ালি গেয়ে বা অডিও রেকর্ড বাজিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে চাঁদা আদায় করে অথবা মাইক বাজিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে! এ ছাড়াও এলাকা ভেদে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম দেখা যায়।

আমাদের জানা উচিত যে, শেষ রাতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিচের আসমানে নেমে আসেন। এটি দুআ কবুলের গুরুত্বপূর্ণ সময়। আল্লাহ তাআলার নিকট এ সময় কেউ দুআ করলে তিনি তা কবুল করেন। মুমিন বান্দাগণ এ সময় তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করেন, কুরআন তিলাওয়াত করেন, মহান আল্লাহ তাআলা তায়ালা দরবারে রোনাজারি-কান্নাকাটি করেন।

সুতরাং এ সময় মাইক বাজিয়ে, গজল গেয়ে বা চাঁদা তুলে এ মূল্যবান সময়ে ইবাদতে বিঘ্নিত করা নিঃসন্দেহে গুনাহর কাজ। এতে রোগী, শিশু বা যাদের উপর রোযা ফরয নয় তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এদের হাঁকডাকে অস্থির হয়ে অনেকে সেহরির শেষ সময় পর্যন্ত বিলম্ব না করে আগে ভাগে সেহরি শেষ করে দেয়।

🔰 তাহলে আমাদেরকে জানতে হবে এ ক্ষেত্রে সুন্নত কি?

এ ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে, ফজরের আগে সেহরির জন্য আলাদা একটি আযান দেয়া। এই আযান হল সেহরি খাওয়ার জন্য এবং তারপর ফজর সালাতের জন্য আরেকটি আযান দেয়া।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে দুজন মুয়াজ্জিন নিয়োগ করা ছিল। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
« إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ »
“বেলাল রাতে আযান দেয়। অত:এব তোমরা বেলালের আযান শুনলে পানাহার করতে থাক ইবনে উম্মে মাকতুমের আযান দেয়া পর্যন্ত।” [বুখারী, অনুচ্ছেদ: ফজরের আগে আযান দেয়া। মুসলিম: অনুচ্ছেদ: ফজর উদিত হলে রোযা শুরু হবে……।]

সহীহ মুসলিমের বর্ণনা রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ لِيُوقِظَ نَائِمَكُمْ وَلِيَرْجِعَ قَائِمَكُمْ
“বিলাল রা. আযান দেয় এজন্য যে, যেন ঘুমন্ত লোক জাগ্রত হয় আর তাহাজ্জুদ আদায়কারী ফিরে আসে অর্থাৎ নামায বাদ দিয়ে সেহরি খায়।” সহিহ মুসলিম,কিতাবুস সওম, হা/ ১০৯৩)

সুতরাং এ দুটির বেশি কিছু করতে যাওয়া বিদআত ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এজন্যই ওলামাগণ বলেছেন: “যেখানে একটি সুন্নত উঠে যায় সেখানে একটি বিদআত স্থান করে নেয়।” আমাদের অবস্থাও হয়েছে তাই। সুন্নত উঠে গিয়ে সেখানে নিজেদের মনগড়া পদ্ধতি স্থান দখল করে নিয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় সুন্নতের দিকে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। আমীন।

তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যে এলাকায় দুটি আযান দেয়ার প্রচলন নেই সেখানে রমাযান মাসে হঠাৎ করে দুটি আযান দেয়া ঠিক নয়। কেননা, এতে মানুষের মাঝে সেহরি খাওয়া ও ফজর সালাতের সময় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। দুটি আযান চালু করার পূর্বে জনগণের মধ্যে পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরি করা আবশ্যক। অন্যথায় ফেতনা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকলে তা না করাই উত্তম।

আল্লাহ আমাদেরকে রমাযান কেন্দ্রিক সব ধরণের বিদাআত ও শরিয়ত গর্হিত কাজ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍ ◍
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।