সবসময় সুস্থ ও ভালো থাকার দুআ

প্রশ্ন: সবসময় সুস্থ ও ভালো থাকার কিছু সহীহ দুআ জানতে চাই।

উত্তর:
শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও ভালো থাকার জন্য মহান আল্লাহর নিকট দুআ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সম্মত খাবার, পরিমিত ঘুম, বিশ্রাম ইত্যাদি ঠিক রাখতে হবে এবং যে সকল কাজ ও আচরণে শরীর ও মন খারাপ হতে পারে সে সব থেকে যথাসাধ্য দূরে থাকতে হবে। কিন্তু সব কিছু ঠিক থাকার পরও আল্লাহ তাআলা অনেক সময় বান্দাকে রোগ-ব্যাধী ও বিপদ-মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। এতে সে পরিশুদ্ধ হয়, তার গুনাহ মোচন হয় এবং আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়।

❖ কতিপয় দুআ:

শরীরিক সুস্থতা, নিরাপত্তা ও সকল প্রকার বিপদাপদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য রাখার জন্য সহীহ হাদীসে বর্ণিত নিম্নোক্ত দুআগুলো পাঠ করা যেতে পারে:

❑ ১ নং দুআ:

اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي ، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي ، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي ، لا إِلَهَ إِلا أَنْتَ
উচ্চারণ:
আল্ল-হুম্মা আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্ল-হুম্মা আ-ফিনী ফী সাম’ঈ, আল্ল-হুম্মা আ-ফিনী ফী বাসারী, লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা।

অর্থ:
“হে আল্লাহ, তুমি আমার শরীর সুস্থ ও নিরাপদ রাখো।
হে আল্লাহ, তুমি আমার কান সুস্থ ও নিরাপদ রাখো।
হে আল্লাহ, তুমি আমার চোখ সুস্থ ও নিরাপদ রাখো। তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নাই।”
(আল-আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং ৭০৬, অধ্যায়ঃ দোয়া-দুরুদ, সনদ হাসান)

❑ ২ নং দুআ:
ইবন উমার রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকাল ও সন্ধ্যায় এ দু’আ কখনই পরিত্যাগ করতেন না:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِي وَمَالِي
اللَّهُمَّ اسْتُرْ‏ عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي
اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ وَمِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي وَمِنْ فَوْقِي وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي ‏
উচ্চারণ:
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্ দুন্ইয়া- ওয়াল আ-খিরাহ,
আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল ‘আফ্ওয়া, ওয়াল ‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়া দুন্ইয়া-ইয়া ওয়া আহলী, ওয়া মা-লী।
আল্ল-হুমাসতুর ‘আওর-তী, ওয়া আ-মিন রও‘আ-তী।
আল্ল-হুম্মাহ্ ফাযনী মিন বায়নি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খলফী, ওয়া ‘আন ইয়ামীনী, ওয়া ‘আন শিমা-লী, ওয়া মিন ফাওক্বী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহতী।

অর্থ:
হে আল্লাহ, আমি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার কাছে (রোগ-বালা, বিপর্যয়-বিপদ, মুসিবত, ক্ষয়-ক্ষতি ইত্যাদি থেকে) নিরাপত্তা চাই।
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দীন ও দুনিয়ার ক্ষমা ও নিরাপত্তা চাই। আর আমার পরিবার-পরিজন ও সম্পদের জন্য নিরাপত্তা চাই্।
হে আল্লাহ, আমার দোষ-ক্রটি গোপন রাখুন এবং আমার অন্তরে শান্তি প্রদান করুন।
হে আল্লাহ, আমাকে রক্ষা করুন-আমার ডান দিক হতে, বাম দিক হতে, সামনে হতে, পেছন হতে এবং উপর ও নীচের দিকের ক্ষতি থেকে।
তোমার বিশালত্বের ওসীলায় তোমার নিকট জমিনের মধ্যে ধ্বসে যাওয়া (ভূমিধ্বস) থেকে আশ্রয় চাই।
(সুনান আবু দাউদ, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১২০০/৯১৬, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৭। আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন)

❑ ৩ নং দুআ:

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ
اَللّهَمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ فَلَا تَكِلْنِي اِلَي نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ وَّ أَصْلِحْ لِيْ شَانِي كُلُّهُ لا اِلَهَ اِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ:
ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু, বিরাহমাতিকা আসতাগিছু।
আল্ল-হুম্মা রাহমাতাকা আরজু- ফালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা আইন। ওয়া আসলিহলী শা’নী কুল্লুাহু। লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা।

অর্থ:
হে চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারকও বাহক, আমি তোমার রহমতের ওসীলায় তোমার নিকট (সকল বিপদ-মুসিবত ও সঙ্কট থেকে) পরিত্রাণ চাই।
হে আল্লাহ, আমি তোমার দয়ার আশা করি। তুমি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের উপর ন্যস্ত করো না বরং তুমি স্বয়ং আমার সমস্ত ব্যাপার ঠিক করে দাও। তুমি ব্যতীত সত্য কোনো মা’বুদ নাই।
(মুসনাদে হাকিম, আবু দাউদ)

উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত দুআগুলো সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার পাশাপাশি দুআ কবুলের সময়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে পাঠ করার চেষ্টা করা উচিৎ। বিশেষ করে ভোররাতে একান্ত নিভৃতে দু হাত তুলে মুনাজাত অবস্থায়, সেজদারত অবস্থায়, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দুআ-আযকার-তাসবীহ ইত্যাদি শেষ করে একান্ত একাকি অথবা অন্য সময় যখন সুবিধা হয় মনের একান্ত আবেগ মিশিয়ে পূর্ণ ইখলাস সহাকরে যথাসম্ভব কান্না বিজড়িত কণ্ঠে পাঠ করার চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ তাআলার নিকট কাকুতি-মিনতী ও পূর্ণ ঈমান ও ইখলাস সহকারে প্রার্থনা করলে আশা করাা যায় তিনি খালি হাতে ফিরাবেন না। নিশ্চয় তিনি মহান দয়ালু ও দাতা।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬▬▬◉◉◉▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।।