খাদ্যবস্তুর বদলে টাকা দিলে কি ফিতরা আদায় হবে? ফিতরার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

★ খাদ্যবস্তুর বদলে টাকা দিলে কি ফিতরা আদায় হবে? ফিতরার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ★

১. যাকাতুল ফিতর কি? যাকাতুল ফিতর কখন আদায় করতে হবে ?
@ ইবনু আব্বাস (রা) সুত্রে বর্নিত, তিনি বলেন রাসুল (সা) যাকাতুল ফিতর যরয করেছেন অশ্লীল কথা ও খারাপ কাজ হতে রোযাকে পবিত্র করতে এবং মিশকিনদের খাদ্যের জন্য । যে ব্যক্তি সলাতের (নামাযের) পুর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদকাহ গণ্য হবে, আর যে ব্যক্তি সালাতের পর তা আদায় করবে তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহিত হবে । (আবু দাউদ, ১ম খন্ড,হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ,হা/১৮২৭)

২. যাকাতুল ফিতর কাদের উপর ফরয ও তার পরিমাণ কি ?
@ ইবনু উমার (রা) হতে বর্নিত, রাসুল (সা) যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন প্রত্যেক স্বাধীন বা গোলাম, পুরুষ কিংবা নারী নির্বিশেষে সকল মুসলিমের উপর মাথা পিছু এক সা’ খেজুর বা যব রমজানের ফিত্রা আদায় করা । (বুখারী,হা/১৫০৩; মুসলিম,হা/৯৮৪)

৩. যাকাতুল ফিতরের খাদ্য দ্রব্য কি ?
@ আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসুল (সা) এর যুগে ইদুল ফিতরের দিন আমরা এক সা’ খাদ্য ফিতরা দিতাম । তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনীর ও খেজুর ।(বুখারী/১৫০৬; মুসলিম/৯৮৫; আবু দাউদ/১৬১৬)
সুতরাং দেশের প্রধান খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হবে । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে উপরোক্ত হাদিসে যে খাদ্য দ্রব্যের কথা বলা হয়েছে তা সে দেশের প্রধান ও প্রচলিত খাদ্য দ্রব্য ছিল । তাই তা থেকে তারা যাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন ঐ সকল খাদ্য দ্রব্য দিয়ে । হাদিসে বর্নিত খাদ্য দ্রব্যের যে উল্লেখ রয়েছে তা উদাহরণ হিসাবে নির্ধারণ হিসেবে নয় । তাই দেশের প্রধান ও প্রচলিত খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা প্রদান করতে হবে ।

৪. ধানের ফিতরা আদায় করা যাবে কি ?
@ আমরা আমাদের দেশে প্রধানতঃ খাদ্য হিসেবে চালের ব্যবহার করে থাকি কারণ ধান আমাদের প্রধান খাদ্য নয় এবং সরাসরি আহার্য বস্তুও নয়। আমরা বাস্তব ক্ষেত্রে চালের ব্যবহার করি এবং ব্যবহার হতে দেখি, যেমন; ১. মিড ডে মিল প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে সরকার চাল সরবরাহ করে থাকে, কোনো বিদ্যালয়ে ধান দেওয়া হয় না ।
২. সরকার বা বহিরাগত দেশ থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য আসলে চাল ও গম ছাড়া কোনো দিন ধান আসতে দেখিনি ।
৩. বি.পি.এল কার্ডধারী দুঃস্থ লোকেদের সরকার খুব সস্তায় চাল ও গম দেয় ।
সুতরাং বাঙালীদের প্রধান খাদ্য চালের ফিতরা আদায় করতে হবে । যবের উপর ক্বিয়াস করে ধানের ফিত্রা সিদ্ধ হবে না ।
তাছাড়া নিম্নোক্ত আলেমগণ চালের ফিতরার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেনঃ- ১. ইবনুল কাইউম (রহ)- ইলামুল মুয়াক্কেয়ীন ২/১৮ পৃষ্ঠা
২. আল্লামা ইবনু বায- মাযমু’আ ফাতাওয়া উষাইমীন ১৪/২০৭ পৃষ্ঠা
৩. আল্লামা উষাইমীন (রহ) মাযমু’আ ফাতাওয়া উষাইমীন ১৮/২৮৭ পৃষ্ঠা
৪. আল্লাম সলেহ বিন ফাওযান – আল মুলাখ খাসুল ফিখহী ১/৩৫৩ পৃষ্ঠা
৫. হাফিয আইনুল বারী – সিয়াম ও রমযান ১০১ পৃষ্ঠা

৫. টাকা পয়সা দিয়ে ফিতরা আদায় করা কি বৈধ ?

টাকা পয়সা দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ নয়, কারণ টাকা পয়সা কোনো সময় খাদ্য দ্রব্য হতে পারে না । আর খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায়ের কথা হাদিসে বলা হয়েছে ।
এছাড়া তিন ইমামের মতে তা না-যায়িয বা অবৈধ । ইমামদের মধ্যে কেবল আবু হানীফার (রহ) মতে টাকা পয়সা দিয়ে চলতে পারে । বলাবাহুল্য রাসুল (সা) বা সাহাবীদের (রা) যুগেও টাকার প্রচলন ছিল অথচ তারা টাকা না দিয়ে খাদ্য দ্রব্য দিয়েছেন । যখন তাদের কাছে এ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা তা দেয়নি তখন আমরা কেন তা করতে যাবো ? নাকি আমরা তাঁদের থেকেও বড় হাদিস কুরান বুঝনে ওয়ালা হয়ে গেছি (মা’আয আল্লাহ) ।

৬. ফিতরা পাওয়ার হকদার কারা ?@ ইবনে আব্বাসের (রা) বর্নিত হাদিসে রাসুল (সা) শুধু মাত্র ফকীর ও মিশকীনদের মধ্যে বন্টন করতে নির্দেশ দিয়েছেন । সুতরাং ফকীর ও মিশকিনরা শুধু মাত্র ফিতরা পাওয়ার অধিকারি । (আবু দাউদ/১৬০৯; ইবনু মাজাহ/১৮২৭)

৭. ফিতরা কাদের দেয়া যাবে না ?@ ১. যাদেরকে যাকাত দেয়া বৈধ নয় ২. কোনো ধনী ব্যক্তিকে ৩. ইসলামের দুশমনকে ৪. কাফিরকে ৫. মুরতাদকে ৬. ফাসিককে ৭. ব্যাভিচারী বা ব্যাভিচারিনীকে ৮. রোজগার করার ক্ষমতা রাখে এমন ব্যক্তিকে ৯. জিম্মি ব্যক্তিকে ১০. নিজের স্বামীকে ১১. নিজের স্ত্রীকে ১২. নিজের পিতাকে এবং সন্তান সন্ততিকে ১৩. কুরাইশ বংশের হাশিম বংশধরদের ১৪. মসজিদ নির্মানে বা জনকল্যান মুলক কাজে ফিতরা দেয়া যাবে না ।

৮. ফিতরার মাল এক জায়গায় জমা করা যায় কি না ?
@ ইবনু উমার (রা) হতে বর্নিত, ইদুল ফিতরের একদিন কিংবা দু দিন পুর্বে আদায়কারী বা একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট তা জমা দিতেন । তিনি আরও বলেন, সাহাবীরা ঐ ব্যক্তির নিকট জমা দিতেন, সরাসরি ফকির মিশকীনদের দিতেন না । (বুখারি/২০৫ পৃষ্টা; আবু দাউদ ১ম খন্ড ২২৭ পৃষ্ঠা) সুতরাং ফিতরার দ্রব্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে বন্টনের জন্য জপমা করা যেতেই পারে ।
[6/10, 5:40 PM] ‪+966 50 038 5135‬: যাকাতুল ফিতরের বিধান
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، على العبْدِ والحرِّ، والذَّكَرِ والأُنْثَى، والصغيْرِ والكبيْرِ مِنَ المُسْلِمِيْنَ، وَأمَرَ بِهَا أنْ تُؤدََّى قَبلَ خُرُوْجِ النََّاسِ إلَى الصََّلَاةِ.
(صحيح البخاري، رقم الحديث 1503، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 16- (984)،).
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মুসলিমদের প্রত্যেক স্বাধীন, পরাধীন, নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ বা ছোটো এবং বড়ো সকলের পক্ষ থেকে জাকাতুল ফিতর হিসাবে খাদ্য দ্রব্য খেজুর অথবা যব থেকে এক “সা” পরিমাণ প্রদান করা অপরিহার্য করেদিয়েছেন। এবং তিনি আরো উপদেশ প্রদান করেছেন যে, লোকজন ঈদের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই যেন জাকাতুল ফিতর প্রদান করা হয়।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1503 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 16 – (984), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ اَلْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنََّا نُخْرِجُ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللهِ يَوْمَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، وَقَالَ أبُوْ سَعيْدٍ: وَكَانَ طَعَامُنَا الشََّعِيرُ وَالزََّبِيْبُ وَالأَقِطُ وَالتََّمرُ.
(صحيح البخاري، رقم الحديث 1510، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 17- (985)،).
অর্থ: আবু সাঈদ আলখুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা খাদ্য দ্রব্য থেকে এক সা পরিমাণ জাকাতুল ফিতর প্রদান করতাম। তিনি আরও বলেন: সেই সময় আমাদের খাদ্য দ্রব্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনীর এবং খেজুর।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1510 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 17 – (985), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
এক “সা” পরিমাণ এর বর্তমান যুগের ওজন মোতাবেক ভালো ধরণের গম বা চাল হয় দুই কেজি ৪০ গ্রাম। তবে অন্য মত অনুযায়ী এক “সা” পরিমাণ এর বর্তমান যুগের ওজন মোতাবেক তিন কেজি 25 গ্রাম। এই দুইটি মতের মধ্যে থেকে যে কোনো একটি মত গ্রহণ করতে পারা যায়।
উল্লিখিত হাদীসটির আলোকে আর জেনে রাখা দরকার যে, যে কোনো দেশের বা সমাজের প্রধান খাদ্য দ্রব্য থেকেই জাকাতুল ফিতর প্রদান করা উচিত।
وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يُعْطِيْهَا الَّذِيْنَ يَقْبَلُوْنَهَا، وَكَانُوا يُعْطُوْنَ قَبْلَ الفِطْرِ بِيَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ.
(صحيح البخاري، رقم الحديث 1511).
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] হতে বর্ণিত। তিনি জাকাতুল ফিতর যারা গ্রহণ করতো তাদেরকে প্রদান করতেন। আর সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] জাকাতুল ফিতরের গ্রহীতাদেরকে জাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন। এবং ঈদের এক দিন বা দুই দিন পূর্বেই জাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1511]।