আহলে হাদীছ পরিচয় গ্রহণ করার বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মত

একজন নতুন মুসলিম সালেহ আল মুনাজ্জিদের কাছে প্রশ্ন করেন যে, আমি ভারতে বসবাস করি। ২০০৮ সালে ইসলামে প্রবেশ করেছি। এর আগে আমি খৃষ্টান ছিলাম। আমি যেই মসজিদে নামায পড়ি, সেটিকে আহলে হাদীছ মসজিদ বলা হয়। আমি যেখানে থাকি, সেখানকার লোকেরা মুসলিম পরিচয়ের চেয়ে আহলে হাদীছ পরিচয়টি বড় করে প্রকাশ করে। অথচ তারা মুসলমান। এখন দয়া করে আমাকে বলুনঃ আমি কি মুসলিম হিসাবে নিজের পরিচয় দিব? না আহলে হাদীছ পরিচয় দিব?
.
উত্তরঃ যে সমস্ত নাম মুসলিমের সহীহ আকীদাহ পোষণ এবং কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের প্রমাণ বহন করে, বিদআতীদের থেকে নিজেকে পার্থক্য করার জন্য সে সমস্ত নাম ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কোন সন্দেহ নেই যে, মুসলিম নামটি অত্যধিক মর্যাদাবান ও বিরাট একটি নাম।
.
কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে, মুসলমানেরা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত। কেউ সুফী, কেউ যুক্তিবাদী, কেউ শিয়া, কেউ মুতাজেলা, কেউ নকশবন্দী, মুজাদ্দেদী, চিশতী এমনি আরও অসংখ্য ফির্কা। শুধু তাই নয়, কোন কোন ফির্কার অবস্থা এমন যে, তারা নিজেদেরকে মুসলিম মনে করলেও তারা ইসলামের সম্পূর্ণ বাইরে। যেমন বাহাইয়া ও ব্রেলবী ফির্কা। কেউ যদি বলে আমি আহলে হাদীছ, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে সে নিজেকে এ সমস্ত বাতিল ফির্কা থেকে আলাদা করে নিল এবং ঘোষণা করল যে, সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের অন্তর্ভূক্ত।
.
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি সালাফী মাজহাব প্রকাশ করে এবং সালাফী পরিচয়ে নিজেকে পেশ করে, তাতেও কোন দোষ নেই; বরং এই নামটি সকল মুসলিমের গ্রহণ করে নেওয়া উচিৎ। কেননা সালাফদের মাজহাবে হক ছাড়া অন্য কিছু নেই। কোন সালাফী যদি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে হক পথে চলে এবং সত্যকে গ্রহণ করে, সে ঐ মুমিনের মতই, যে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এবং সকল অবস্থায় হকের অনুসরণ করে। কিন্তু যদি প্রকাশ্যে সালাফিয়াতের দাবী করে, কিন্তু অন্তরে সালাফী আকীদাহ পোষণ করে না এবং হক অনুযায়ী আমল করে না, সে মুনাফিক। তার বাহ্যিক পরিচয় গ্রহণ করা হবে এবং অন্তরের বিষয়টি আল্লাহর নিকট সোপর্দ করা হবে। আমাদেরকে মানুষের অন্তর ছিদ্র করে এবং পেট চিরে দেখার আদেশ করা হয়নি।

(দেখুনঃ মাজমুআয়ে ফাতওয়াঃ ১/১৪৯) মান্যবর শাইখ ডঃ সালেহ আল ফাওযান হাফিঃ বলেন: সত্যিকার অর্থেই যে মুসলিম সহীহ আকীদার অনুসরণ করে, তার জন্য সালাফী পরিচয় গ্রহণ করাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু কেউ যদি শুধু মুখে মুখে সালাফীয়াতের দাবী করে এবং সে সালাফী মানহাজের বাইরে বলে তার জন্য এই নাম ধারণ করা জায়েয নেই।
এখানে স্মরণ রাখা দরকার যে, আহলে হাদীছ অর্থ এই নয় যে, তারা কুরআনের অনুসরণ করে না।
.
সম্ভবতঃ এখান থেকেই অনেকে আহলে হাদীছ নামটি গ্রহণ করতে আপত্তি করে থাকেন। বরং আহলে হাদীছগণ কুরআন ও হাদীছের উপর আমল করেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হেদায়াত ও জীবনীকে অনুসরণ করেন। সেই সাথে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র সাহাবীদেরকেও উত্তমভাবে অনুসরণ করেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنْ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে অগ্রগামী, এবং যারা উত্তমভাবে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ্ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন এমন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা”। (সূরা তাওবাঃ ১০০)
.
হে ভাই! ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথে আল্লাহ্ তোমাকে আরেকটি অতিরিক্ত নেয়ামত দান করেছেন। আর সেটি হচ্ছে তুমি আহলে হাদীছ তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের লোকদের সাথে থাকতে ও তাদের সাথে বসবাস করতে পারছ। সুতরাং তাদের সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা কর, তাদের অনুসরণ কর এবং তারা যে পথে চলে সে পথেই চল।