আহলুল ইলমদের দৃষ্টিতে- “মানহাজ”

আসসালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
এই পোস্টের বিষয়বস্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা হলো আক্বীদা এবং মানহাজ।
কাজেই ধৈর্যসহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।
:
আক্বীদা মানে বিশ্বাস বা creed বা belief system. আর মানহাজ মানে methodology বা চলার পথ। আভিধানিকভাবে মানহাজ মানে চলার পথ। শরী’আহ-এর পরিভাষায় দ্বীনের ক্ষেত্রে সলফে-সলিহীনগণের অনুসৃত পথে চলার নামই মানহাজ, যাকে আমরা বলে থাকি সলফে-সলিহীনগণের মানহাজ অথবা সালাফী মানহাজ। এক্ষেত্রে দ্বীনের ব্যাপারে পরিপূর্ণভাবে সলফে-সলিহীনগণের নীতিকে মেনে চলাকেই বোঝায়। মানহাজটাই মূলত সীরাতে মুস্তাক্বীম।
আক্বীদাসহ দ্বীনের সকল বিষয়ই মানহাজের মধ্যে শামিল। এছাড়া আরেকভাবে বলা যায় যে, যখন বলা হয় সলফে-সলিহীনগণের মানহাজ, তখন আক্বীদাসহ যা কিছু আছে সব কিছুই মানহাজের মধ্যে শামিল। আর যখন বলা হয় সলফে-সলিহীনগণের আক্বিদা-মানহাজ, তখন সেক্ষেত্রে আক্বীদার বিষয় ছাড়া বাকি সবকিছুই মানহাজের মধ্যে শামিল।
[উস্তায হাম্মাদ বিল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ)-এর লেকচার থেকে সংগৃহীত ও সংযোজিত এবং পরিমার্জিত]
:
এবার তাহলে একটি প্রশ্ন এসে যায় যে, আক্বীদা এবং মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি? এছাড়া আরো প্রশ্ন এসে যায় যেমন কেউ আক্বীদায় সালাফী আর মানহাজে ভিন্ন হলে সেক্ষেত্রে তার বিধান কি এবং যারা সলফে-সলিহীনগণের মানহাজের বিরোধিতা করে তাদের বিধান কি। আসুন এই সকল বিষয়েই আমরা বিভিন্ন আহলুল ‘ইলমদের উক্তি থেকে জেনে নিই। এই প্রত্যেকটি ব্যাপারেই নিম্নে বিভিন্ন আহলুল ‘ইলমদের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।
:
==========================================================
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ডে আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্যের ব্যাপারে ফতোয়া জিজ্ঞেস করা হয়। নিম্নে দেয়া হলো,
প্রশ্ন:- আজকাল আক্বীদা এবং মানহাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে মর্মে অনেক কথা শোনা যায়, মানুষ এখন এও বলা শুরু করেছে যে, “অমুক ও অমুকের আক্বীদা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা” অথবা সালাফীয়্যাহ এর আক্বিদা, তবে তার মানহাজ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মানহাজ নয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ, তারা জামাতুত তাবলীগের বা ইখওয়ানুল মুসলিমীনের, অথবা অন্যকোন গ্রুপের কিছু কিছু কথা বলে থাকে। কাজেই, এর কী কোনো মূলনীতি আছে যার দ্বারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বা সালাফিয়্যাহ-এর মানহাজ সম্পর্কে জানা যেতে পারে? এবং আক্বিদা ও মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কী?
উত্তর:- একজন মুসলিমের আক্বিদা এবং মানহাজ একই জিনিস এবং তা হলো— একজন মানুষ তার অন্তরে যা কিছুই বিশ্বাস করে, জিহ্বা দিয়ে উচ্চারণ করে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দ্বারা তার উপর আমল করে এবং মহামহিমান্বিত আল্লাহর একাত্মতায়, রুবুবিয়্যাহতে (সমগ্র বিশ্বের কতৃত্ব), উলুহিয়্যাহতে (এককভাবে শুধুমাত্র তিনিই ‘ইবাদাতের হকদার), এবং আসমাউস সিফাতে (তাঁর নাম ও গুণাবলী), এবং এককভাবে শুধুমাত্র তাঁর ‘ইবাদাত করা, এবং কিতাবুল্লাহ (কুরআন) ও রসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহতে যা কিছুই এসেছে সেগুলোকে মুখে স্বীকার করা, আমল করা এবং অন্তরে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে তাঁর (আল্লাহর) শরীয়তকে মজবুত করে আঁকড়ে ধরা এবং এই উম্মতের সালাফগণ এবং ইমামগণ যেই পথের উপর ছিলেন সেই পথের উপর থাকা। এবং এসবের দ্বারা এটাই বোঝায় যে, আক্বিদা ও মানহাজে কোনো পার্থক্য নেই, বরং এই দুইটি একই জিনিস এবং একজন মুসলিমের জন্য এর উপর অটল ও অবিচল থাকা ওয়াজিব।
[ফাতওয়া আল-লাজনাহ আদ-দা’ঈমাহ – ২/৪০-৪১]
[http://www.manhaj.com — থেকে অনুবাদকৃত]
==========================================================
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দীস, আহলুস সুন্নাহর ইমাম এবং মুজাদ্দিদ — ‘আল্লামা শাইখ নাসিরউদ্দীন আল-আলবানী (রহিমাহুল্লাহ)-কে আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়, যা তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে উত্তর প্রদান করেন।
প্রশ্নঃ- “কিছু তরুণরা সালাফদের আক্বীদা এবং সালাফদের মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করে, যে কারণে আপনি দেখে থাকবেন যে তাদের কেউ কেউ সালাফদের আক্বীদার উপর আছে কিন্তু তারা আজ প্রচলিত কিছু ভিন্ন methodologies বা মানহাজসমূহের সাথে কাজ করার জন্য নিজদেরকে নির্দেশ দিয়ে থাকে, যদিও চর্চার ক্ষেত্রে তাদের মাঝে সালাফদের মানহাজের বিরোধিতা হতে পারে। কাজেই, সালাফী মানহাজের কার্যকর বাস্তবায়নের মধ্যে সালাফদের আক্বীদা ও মানহাজের মাঝে বাধ্যবাধকতাপূর্ণ কোনো সংযোগ আছে কি?”
উত্তরঃ— “আমি যেটা বিশ্বাস করি এবং আল্লাহর ‘ইবাদত করি যে, সালাফী মানহাজ এবং আক্বীদার মাঝে ‘আম (অনির্দিষ্ট (সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে)) এবং খাস (নির্দিষ্ট (দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে)) উভয়ই রয়েছে। মানহাজ থেকে আক্বীদা হলো বেশি খাস বা নির্দিষ্ট যেটা তোমরা সবাই জেনে থাকো। আক্বীদার লিঙ্ক হলো তার সঙ্গে যাকে বলা হয় — “তাওহীদের জ্ঞান” — এবং এটা ইসলামের প্রধান ও মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি। তবে আক্বীদা বা তাওহীদের চাইতে মানহাজ আরো ব্যাপক। আর যারা পার্থক্যের দাবি করে যা উক্ত প্রশ্নে এসেছে (আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে), তারা তাদের ইসলামের দা’ওয়াহ এর মধ্যে এমন উপায় ও পদ্ধতি অবলম্বন করতে নিজদের জন্য জায়েজ সাব্যস্ত করার কুবাসনা করে যার উপর সলফে সলিহীনগণ ছিলেন না। এটা অন্যভাবে বলা যায়, তারা চিন্তা করে- যে কোনো উপায় ও পদ্ধতি যা তাদেরকে ইসলাম পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে বলে তারা মনে করে থাকে তা অবলম্বন করার স্বাধীনতা তাদের রয়েছে, এবং এধরনের বা এধরনের পদ্ধতিসমূহের দৃষ্টান্তের ব্যাপারে তোমরা অবগত। যেমন উদাহরণস্বরূপ, সমাজ কি অভিযোগ করে এবং এই একই ব্যাপারগুলোর প্রতি জোরপূর্বক সরকার বা শাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মিছিল বের করা। কাজেই আমরা বলি যে, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং পথ ও পন্থা সম্পর্কে কিতাবে (কুরআন) ও সুন্নাহতে (হাদীস) যা এসেছে এবং সলফে-সলিহীনগণ যার উপর ছিলেন সেগুলোই উম্মাহর জন্য যথেষ্ট। তবে কিছু মানুষ এমন (ভিন্ন) পথ ও পন্থা অবলম্বন করার জন্য নিজদেরকে নির্দেশ দিতে প্ররোচিত করার কারণ হলো, প্রকৃতপক্ষে আমার জন্য এটা বলাই যথার্থ যে তারা নিজদেরকে অন্ধভাবে কাফেরদের অনুসরণ করতে নির্দেশ প্রদান করে থাকে, তারা (কাফেররা) যাকে বলে গণতন্ত্র বা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং এরকম অন্যান্য শব্দগুলো যাদের (কাফেরদের) প্রতি এগুলোর কোনো বাস্তবতা নেই সেগুলো কার্যকর করার জন্য যে পথ তারা (কাফেররা) অবলম্বন করে। কাজেই তারা অর্থাৎ সেসব মুসলিমরা কাফেরদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করার জন্য এসব পথ ও পন্থার প্রতি নিজদেরকে নির্দেশ প্রদান করে থাকে।
আমরা বলি, পরাক্রমশালী ও মহিমান্বিত আমাদের পালনকর্তা শরী’আহ এর মাধ্যমে কোনো বিচ্ছিন্নতার প্রয়োজন থেকে, যেটি বলা হয়েছে (অর্থাৎ আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে) এবং কাফেরদের প্রয়োজন থেকে এবং তাদের (কাফেরদের) পথ ও পন্থা গ্রহণ করা থেকে আমাদের পরিত্রাণ দিয়েছেন, যেটি তাদের জন্য ভালো হতে পারে (অর্থাৎ কাফেরদের জন্য তাদের নিজদের পথ ও পন্থা), এর একমাত্র কারণ তাদের এমন কোনো শরী’আহ নেই যার মাধ্যমে তারা নিজদেরকে পথ নির্দেশ দিতে পারে। একারণেই আমরা বলি যে আক্বীদা এবং তাওহীদের চাইতে মানহাজ হলো আরো ব্যাপক, সুতরাং উভয় ক্ষেত্রেই (আক্বীদা-মানহাজ) সলফে-সলিহীনগণ যার উপর ছিলেন তার উপর টিকে থাকা অপরিহার্য। যেটি প্রথম ও সর্বাগ্রে সেটি ব্যাপক (মানহাজ) আর যেটি সংকীর্ণ বা ছোট (মানহাজের চাইতে), অর্থাৎ আক্বীদা।”
[http://www.manhaj.com — থেকে অনুবাদকৃত]
:
আরেক স্থানে শাইখ আল-আলবানী (রহিমাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়। দেখুন,
প্রশ্ন:— “এই স্টেইটমেন্ট বা উক্তির বিধান কি যেমন উদাহরণস্বরূপ — অমুক এবং অমুক আক্বীদার ক্ষেত্রে সালাফী কিন্তু মানহাজের ক্ষেত্রে ইখওয়ানি (ইখওয়ানুল মুসলিমীন)? তাহলে আক্বীদা কি মানহাজের অন্তর্ভূক্ত নয়? এবং এরকম শ্রেণীবিন্যাস কি সালাফরাও করতেন যে একজন ব্যক্তি সালাফী কিন্তু তার মানহাজ ভিন্ন?”
উত্তর:— “আঁখি, এগুলো (আক্বীদা ও মানহাজ) আলাদা নয়। এটা সম্ভব নয় যে, কেউ হবে ইখওয়ানি-সালাফী। তবে সে কিছু ব্যাপারে সালাফী হয়ে থাকতে পারে আর কিছু ব্যাপারে ইখওয়ানি হয়ে থাকতে পারে। অথবা সে কিছু ব্যাপারে ইখওয়ানি হয়ে থাকতে পারে আর কিছু ব্যাপারে সালাফী হয়ে থাকতে পারে।
(তবে) রসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীরা যার উপর ছিলেন সেভাবে সালাফী হতে গেলে এই দুইয়ের মাঝে একত্রিত করার মতো বিষয়টি অসম্ভব (অর্থাৎ ভিন্ন আক্বীদা এবং ভিন্ন মানহাজের মধ্যে)।
ইখওয়ানুল মুসলিমীন দা’ঈরা কোন দিকে ডাকে? তারা কি সলফে-সলিহীনগণের দা’ওয়াহ এর দিকে ডাকে? যদি আমরা ধরে নিই যে সে ইখওয়ানি-সালাফী তাহলে সে কি সালাফীয়্যাহ এর দা’ওয়াহ এর দিকে ডাকে?
এর উত্তর হলো – “না”। কাজেই, এটা সালাফীয়্যাহ নয়।
তবে কিছু ব্যাপারে সে সালাফীয়্যাহ এর দর্শন অনুসরণ করে থাকতে পারে আর কিছু ব্যাপারে ইখওয়ানিদের দর্শন অনুসরণ করে থাকতে পারে।” (যা মূলত সালাফীয়্যাহ নয় যেটা শাইখ উপরেই বললেন)
[অডিও থেকে অনুবাদকৃত]
:
আরেক স্থানে শাইখ আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) মানহাজের ব্যাপারে উল্লেখ করেন:– “মুসলিমকে অবশ্যই এই দু’টি জিনিসের মাঝে সংযোগ স্থাপন করতে হবে:- মহামহিমান্বিত আল্লাহর জন্য নিয়তের ব্যাপারে বিশুদ্ধ হতে হবে এবং নবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে, তিনি যার উপর ছিলেন। একইভাবে শুধু এটাই যথেস্ট নয় যে একজন মুসলিম কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাহ (হাদীস)-এর উপর আমল করার উদ্দেশ্যের ব্যাপারে নির্ভেজাল ও উৎসাহী হবে এবং এর দিকে দা’ওয়াহ দেবে (কুরআন-সুন্নাহর প্রতি)। বরং এটাও যোগ করা আবশ্যক যে তার মানহাজ (methodology) সঠিক ও ন্যায়পরায়ণ হতে হবে।”
[Mawsūʿat al-Albānī fī-al-ʿAqīdah, pg. 286]
[http://troid.ca — থেকে অনুবাদকৃত]
==========================================================
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ, আহলুস সুন্নাহর ইমাম — ‘আল্লামা শাইখ সালিহ আল-উসায়মীন (রহিমাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল সালাফরা আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করতেন কিনা সেই বিষয়ে। তিনি সুন্দরভাবে এর জবাব দেন। তিনি বলেন,
“আল্লাহ তোমায় রহম করুন। আক্বীদার উপরেই মানহাজ গঠিত। কাজেই, যার আক্বীদা ঠিক, নিঃসন্দেহে তার মানহাজও ঠিক, কারণ নবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উম্মতের মধ্যে ৭৩ ফিরক্বায় বিভক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন যারা সবাই জাহান্নামে যাবে শুধুমাত্র একটি ছাড়া, তখন সাহাবীরা জিজ্ঞেস করেন:- “হে আল্লাহর রসূল, সেই একটি কোনটি”?
তিনি জবাব দেন:- “যারাই আমার ও আমার সাহাবীদের পথের উপর থাকবে।”
কাজেই তাঁর উক্তি — “যারাই আমার ও আমার সাহাবীদের পথের উপর থাকবে”— অর্থাৎ আক্বীদায় ও মানহাজে এবং কর্মে এবং সবকিছুতেই। এবং এটা (আক্বীদা) থেকে এটা (মানহাজ) আলাদা করা সম্ভব না। যেমন উদাহরণস্বরূপ, ইখওয়ানিরা (ইখওয়ানুল মুসলিমীন) ও তাবলীগীরা (চেল্লা দেয়া তাবলীগ) এবং ইসলাহিরা এবং এছাড়া অন্যান্যরা….. যদি তাদের মানহাজ শরী’আহ এর বিরোধীতা না করে তাহলে এর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই, আর যদি তা শরী’আহ এর বিরোধীতা করে তাহলে এটা নেহাৎ আক্বীদা থেকেই উত্থিত হয় কারণ প্রতিটি কাজেরই উদ্দেশ্য রয়েছে এবং যখন একজন মানুষ এমন মানহাজ গ্রহণ করে যা রসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এবং তাঁর হেদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের মানহাজের বিরোধীতা করে, তখন এর মানে হলো তার আক্বীদা ঠিক নয়। নতুবা যখন আক্বীদা ঠিক হয় তখন মানহাজও ঠিক হবে।”
[http://www.manhaj.com — থেকে অনুবাদকৃত]
:
আরেক স্থানে শাইখ উসায়মিন (রহিমাহুল্লাহ) সালাফদের মানহাজ বিরোধীদের থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে অত্যন্ত তথ্যবহুল কথা বলেন। তিনি বলেন (নিম্নে দেয়া হলো),
“বিদাতিদের এবং যারা ত্রুটিপূর্ণ ধারণা বা মানহাজ বহন করে যা ন্যায়নিষ্ঠ নয় তাদের সম্পর্কে কথা বলা হলো নসিহা বা উপদেশ। বরং তা আল্লাহর প্রতি, তাঁর কিতাবের প্রতি এবং তাঁর রসূলের প্রতি আন্তরিকতা (সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজে নিষেধ করার মাধ্যমে) এবং তা মুসলিমদের (কাজের আন্তরিকতা) (তাদেরকে উপদেশ দেয়ার মাধ্যমে)। কাজেই যদি আমরা একজন বিদাতিকে বিদাত ছড়াতে দেখি তাহলে এটা আমাদের স্পষ্ট করা ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক যে সে বিদাতি যাতে করে মানুষরা তার ক্ষতিকর কাজ থেকে বাঁচতে পারে। (একইভাবে) যদি আমরা কাউকে দেখি যার এমন কোনো চিন্তাধারা/ধারণা আছে যা সালাফরা যেই মানহাজের উপর ছিলেন তার বিরুদ্ধাচরণ করে তাহলে আমাদের জন্য তা স্পষ্ট করা ওয়াজিব বা জরুরী যাতে মানুষরা তার দ্বারা প্রতারিত হতে না পারে। (একইভাবে) যদি আমরা একজন মানুষকে দেখি যার নির্দিষ্ট একটা methodology বা মানহাজ রয়েছে (সালাফদের মানহাজ থেকে ভিন্ন) যার ফলাফল অনিষ্টকর তাহলে আমাদের জন্য তা স্পষ্ট করা ওয়াজিব বা জরুরী যাতে মানুষরা তার ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে এবং এটা আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলের প্রতি এবং তাঁর কিতাবের প্রতি আন্তরিকতা, এবং তা শাসকদের ও তাদের প্রজাদের আন্তরিকতা (সদুপদেশ দেয়ার মাধ্যমে যাতে করে তারা অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারে)। তালিবুল ‘ইলমদের মাঝে হোক অথবা অন্য কোনো মজলিসে হোক, বিদাতিদের নিয়ে কথা বলা গীবত নয়। এবং যতক্ষণ আমরা বিদাতসমূহ অথবা এর কনসেপ্ট অথবা এর methodology বা মানহাজ ছড়ানোর আশংকা করি যা সালাফদের মানহাজের বিরোধী; তাহলে এটা আমাদের স্পষ্ট করা ওয়াজিব বা জরুরী যাতে মানুষরা এর মাধ্যমে প্রতারিত হতে না পারে।”
[অডিও থেকে অনুবাদকৃত]
==========================================================
বিগত শতাব্দীর অন্যতম ‘আলেমে দ্বীন ও ইমাম ও বাতিলদের বিরুদ্ধে বীর মুজাহিদ — ‘আল্লামা শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামী (রহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে আক্বীদা-মানহাজের পার্থক্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি সাবলীলভাবে এর জবাব দেন।
প্রশ্ন:— “আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি?”
উত্তর:— “আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে এই পৃথকীকরণ হলো হিজবিয়্যুনদের বিদ’আতের একটি রূপ। বলা হয়ে থাকে আহলুস সুন্নাহর আক্বীদা অথবা আক্বীদার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ। আক্বীদার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ কি? তাদের মানহাজ হলো তারা তাদের আক্বীদা কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাহ (হাদীস) থেকে গ্রহণ করে। যা কিছুই আল্লাহ তাঁর নিজ সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন এবং তাঁর রসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন তারা তা বিকৃতি অথবা অস্বীকৃতি এবং কোনো সাদৃশ্যতা ছাড়াই অথবা – “কীভাবে” – বলা ছাড়াই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নেয়। এটাই হলো তাদের আক্বীদা।
যদি একজন মানুষ দাবি করে যে, সে সালাফদের মানহাজের উপর আছে অথবা তার আক্বীদা হলো সালাফিয়্যাহ আর তার মানহাজ হলো ইখওয়ানি (ইখওয়ানুল মুসলিমীন) অথবা যেভাবেই তারা বলুক। এই কথা incomprehensible বা ধারণাতীত, এটি যুক্তিযুক্ত নয়। এই কথাটাই হলো স্ববিরোধী। এটি যুক্তিযুক্ত নয় (গ্রহণযোগ্য নয়)।”
[অডিও থেকে অনুবাদকৃত]
==========================================================
বর্তমান সময়ে জীবিত কিবারুল ‘উলামাদের মধ্যে অন্যতম, যিনি জারাহ ওয়াল তা’দীলের ঝান্ডাবাহী ও বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলুস সুন্নাহর ইমাম, যিনি মদীনা ইউনিভার্সিটির হাদীস ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন প্রধান — ‘আল্লামা শাইখ রাবী’ বিন হাদী উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)-এর কাছে আক্বীদা-মানহাজের পার্থক্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। তিনি সংক্ষেপে তা তুলে ধরেন।
প্রশ্ন:— “আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য কি?”
উত্তর:— “আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করার ইস্যুটা এসেছে এই যুগে (মডার্ণ যুগ)। (এর আগে) মানুষ কখনই আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করেনি; অবশ্য এই ফিতনা এসেছে এবং আহলুস সুন্নাহর মধ্য থেকে কেউ আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করতে বাধ্য করেছে। শাইখ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) কখনই আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করেননি। তিনি বলেছেন (শাইখ বিন বায)— “আক্বীদা ও মানহাজ একই।”
(অধিকন্তু) আমি বলতে বাধ্য যে, আক্বীদার চাইতে মানহাজ হলো প্রশস্ত (ব্যাপক) এবং মানহাজের মধ্যেই আক্বীদা প্রবেশ করে (অর্থাৎ আক্বীদা মানহাজের অন্তর্ভূক্ত)। (উদাহরণস্বরূপ) আল্লাহর নাম ও সিফাতের উপর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হলো এই এই….. যা কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাহতে (হাদীস) এসেছে, দলীল ও প্রমাণ প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হলো এই এই….., বর্ণনার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ হলো এই এই…..।
এটাই তাদের মানহাজ। যেভাবে তারা (সলফে সলিহীনগণ) দলীল ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন এবং প্রয়োগ করেছেন সেটাই হলো মানহাজ। যেভাবে তারা বর্ণনা গ্রহণ করেছেন এবং বর্ণনাটি বিবেচনা করেছেন সেটাই মানহাজ।”
[অনুবাদকৃত]
==========================================================
বর্তমান সময়ে জীবিত কিবারুল ‘উলামাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান এবং ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যতম, যিনি সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ডের সদস্য— ‘আল্লামা শাইখ সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)-এর কাছে জানতে চাওয়া হয় আক্বীদা-মানহাজের পার্থক্যের ব্যাপারে। তিনি অতি সংক্ষেপে এর উত্তর দেন।
প্রশ্নঃ— “আক্বীদা এবং মানহাজের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?”
উত্তরঃ— “একজন মুসলিম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে নীতি বা পদ্ধতি অনুসরণ করে চলে, সেটাকেই মানহাজ বলে। তাই দেখা যায় যে, আক্বীদা-বিশ্বাস, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, লেন-দেন ইত্যাদি; একজন মুসলিমের জীবনের সর্ব বিষয়ে সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে মানহাজের উপস্থিতি। পক্ষান্তরে আক্বীদা বলতে মৌলিক ঈমান বা বিশ্বাস এবং শাহাদাতাইনের অর্থ, দাবি ও চাহিদাকে বুঝায়। তাই আক্বীদার চেয়ে মানহাজ হলো অনেক ব্যাপক ও সাধারণ একটি বিষয়।”
[সূত্র:- আল আজওয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আছইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ- লিশ্শাইখ ড. সালিহ্‌ ইবনু ফাওযান আল ফাওযান। প্রশ্ন নং- ৪৪]
[উস্তায হাম্মাদ বিল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ) এর ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত — http://eshodinshikhi.com]
==========================================================
বর্তমান সময়ে কিবারুল ‘উলামাদের মধ্যে অন্যতম, যিনি বাতিলদের আতংক এবং মদীনার বিশিষ্ট ‘আলেমে দ্বীন — ‘আল্লামা শাইখ উবায়দ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি? তিনি খুব সুন্দর ও নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে এর জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
উত্তরঃ— “আক্বীদা হলো একজন মানুষের জন্য জরুরী বিষয় যা হলো সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর এবং যা কিছুই তাঁর কাছ থেকে এসেছে তাঁর উপর এবং তাঁর রসূলগণের উপর এবং যা কিছুই তাঁরা নিয়ে এসেছেন, সেসবের উপর ঈমান আনা। এবং পুরো ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের উপর ঈমান আনা, যেগুলো হলো- আল্লাহর প্রতি, তাঁর মালাইকা বা ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রসূলগণের প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা এবং আল-ক্বদরের উপরও ঈমান আনা এবং এর ভালো ও মন্দের প্রতি (তাক্বদীর)। অতঃপর তারপরে যা কিছুই আছে যার প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব এবং যা সত্য এবং সঠিক। যেমন গাইব বা অদৃশ্যের বিষয় যেমন পুনরুত্থানের ফিতনা (কঠোর দুর্দশা) যা নবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাধ্যমে জানানো হয়েছে এবং নবী-রসূলগণের (পূর্ববর্তী) বিষয়ে যা জানানো হয়েছে, তা কিতাব (কুরআন) বা সুন্নাহ (হাদীস) যেখানেই থাকুক। এবং বারযাখের অবস্থা (কবরের জীবন) এবং কবরের ‘আযাব ও সুখ-শান্তি, এবং শেষ বিচারের দিন যা ঘটবে, যেমন হাওজ (হাওজে কাওসার), পুলসিরাত, মিযান স্থাপন (দাঁড়িপাল্লা) এবং তার পাশাপাশি যা কিছুই আছে।
আর যখন মানহাজের বিষয় আসে, তখন সেটা হলো দ্বীন এবং এর ফুরূ’ (ভিত্তি এবং শাখা-প্রশাখা)-এর উসূলের সমর্থন, সংস্থাপন। মানহাজ হলো রাস্তা যার মাধ্যমে একজন মানুষ দ্বীনের ভিত্তি ও শাখা-প্রশাখা সমর্থন করে। কাজেই এই রাস্তা যদি কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাহ (হাদীস) এবং সলফে-সলিহীনগণের পদ্ধতির সাথে মিল থাকে, তাহলেই এটি সত্যিকারের মানহাজ। আর যদি তা এর বিপরীত হয় তাহলে তা বিকৃত মানহাজ।
আর ইসলাম এসেছে এই দুইটি জিনিসের সাথে একত্রিত হয়ে— a) সঠিক ও বিশুদ্ধ আক্বীদা, এবং b) সঠিক ও নিরাপদ মানহাজ। যে কারণে, একটি আরেকটি থেকে আলাদা করা যায় না।
যেই মানুষের মানহাজ বিকৃত, বিশ্বাস রেখো যে এই বিকৃতি তার আক্বীদাকেও অনুসরণ করে। যখন আক্বীদা সঠিক হয়, একইভাবে তখন মানহাজও সঠিক হয়।
আক্বীদা বিকৃত হওয়ার কারণে খারেজীদের মানহাজও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তারা এই বিশ্বাস পোষণ করেছিল যে কবীরা গোনাহগারের রক্ত হালাল এবং এইজন্য তারা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে এবং তাদের হত্যা করাকে জায়েজ করেছিল এবং গোনাহগার অবাধ্য শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তারা রক্ত ও সম্পদ নেয়াকে বৈধ করেছিল। এসব কারণেই বলা হয়েছে যে “তারা কাফের” (অর্থাৎ খারেজীদেরকে কাফের বলা হয়েছে) এবং যারা এটি বলেছেন তারা আহলুল ‘ইলমদের মধ্য থেকেই (কারণ তারা অর্থাৎ খারেজীরা এমন জিনিস হালাল করে নিয়েছিল, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, যা হলো উপযুক্ত কারণ ছাড়া (যেমন হত্যার বদলে বদলা) মুসলিমের রক্ত)।”
[http://www.manhaj.com — থেকে অনুবাদকৃত]
:
আরেক স্থানে শাইখ উবায়দ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়। দেখুন,
প্রশ্ন:— “এই প্রশ্নটা হলো একটা উক্তি (ফ্রেইজ) সম্পর্কে; আল্লাহ আপনার সঙ্গে উত্তম আচরণ করুন; এটা বলা হয়ে থাকে যে: “আমি সালাফী তবে আমি মানহাজের ব্যপারে গোঁড়া না” – এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?”
উত্তর:— “হয় এই লোকটা (যে এই কথা বলে) জাহেল, আর না হয় সে ফাজলামো করছে; এই দুইয়ের একটি। সালাফী মানহাজ কি এই ব্যপারে সে জাহেল অথবা সে ফাজলামো করছে। এর কোনোটাতেই তার কাছ থেকে ‘ইলম নেয়ার ব্যপারে সে উপযুক্ত না। এর কারণ সালাফীর কোনো আত-তা’আসসুব (গোঁড়ামি) নেই তবে আত-তামাসসুক (অটলতা/অবিচলতা) রয়েছে; মানহাজের প্রতি অটলতা/অবিচলতা রয়েছে যেটা সাহাবীরা রসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ থেকে পেয়েছিলেন এবং তাবেয়ীরা সাহাবীদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন এবং গোটা মুসলিমরা এভাবে তা পেতে থাকবে (মানহাজে অটলটা/অবিচলতা), যারা গত হয়েছে তাদের কাছ থেকে তারা পাবে যারা পরবর্তীতে আসবে। এর মানে হলো সে তা (মানহাজ) পরিপূর্ণভাবে মেনে চলবে। এই ফ্রেইজ বা উক্তিটা (প্রশ্নের উক্তিটা) হলো অব্যাহতি দেয়ার এবং সহযোগিতা করার একটা মূলনীতি (অজুহাতমূলক মূলনীতি) যে, “আমরা যে বিষয়ের উপর একমত হই সে বিষয়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করব আর যে বিষয়ে একমত নই সে বিষয়ে ক্ষমা করে চলবো” — আমরা এই মূলনীতি সম্পর্কে বহু জায়গায় এবং বহু সমাবেশে অলরেডি আলোচনা করেছি।”
[অডিও থেকে অনুবাদকৃত]
=========================================================
বর্তমান সময়ে বিশিষ্ট ‘আলেমে দ্বীন, যিনি সৌদির – “মাজলিস হাইয়াত কিবারুল ‘উলামা”- (সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল)-এর সদস্য এবং যিনি সৌদির রিয়াদের সুপ্রিম আদালতসহ অন্যান্য আদালতের বিচারকার্যও করে থাকেন — ‘আল্লামা শাইখ ‘আব্দুল মুহসিন আল-উবায়কান (হাফিযাহুল্লাহ) আক্বীদা-মানহাজের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ ও ইখতিলাফের (মতানৈক্য) ব্যাপারে চমৎকার কথা বলেছেন। নিম্নে দেয়া হলো,
  • “বস্তুত, যেই ইজতিহাদ আক্বীদা ও মানহাজের সাথে সম্পৃক্ত তাতে ইখতিলাফ (মতানৈক্য) করা জায়েজ নেই। এটি আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের মধ্যে তখনকার সময়ে ঘটেনি অথবা আবু বকর ও ‘উমার (রদ্বী-আল্লাহু ‘আনহুমা)-দের সময়ে ঘটেনি। বস্তুত, সাহাবীরা একই আক্বীদা ও মানহাজের উপর ছিলেন।”
  • “আক্বীদা ও মানহাজের ব্যাপারে ইজতিহাদের ক্ষেত্রে, তার জন্য কোনো সৌভাগ্য বা পুরষ্কার নেই, যে এই ব্যাপারে ইজতিহাদ প্রয়োগ করে। বরং শুধুমাত্র টেক্সটে বা দলীলে যা উল্লেখ করা হয়েছে তাতেই থেমে থাকা ওয়াজিব বা জরুরী (অর্থাৎ আক্বীদা-মানহাজের ব্যাপারে)।”
  • “…..আক্বীদা ও মানহাজের ব্যাপারে ইজতিহাদ করার কোনো স্থান নেই। বরং সলফে-সলিহীনগণের মানহাজকে রক্ষা করা এবং সেসব বিবেচিত স্কলার বা ‘উলামাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকা ওয়াজিব, যারা এই মানহাজের বিষয়ে জ্ঞানী এবং বিশুদ্ধ ও দূর্বলের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম।”
[www.salafitalk.net — থেকে অনুবাদকৃত]
==========================================================
বিশিষ্ট ‘আলেমে দ্বীন শাইখ তারাহীব আদ-দরসী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়:– “তাদের প্রতি আমাদের কিরূপ জবাব হওয়া উচিত যারা বলে, “যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের (মুসলিমদের) আক্বীদা একই ততক্ষণ পর্যন্ত একই মানহাজে না থেকেও আমাদের উচিত ঐক্য করা এবং একসঙ্গে কাজ করা”।”
শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) এর উত্তরে বলেন যে, “এটি ত্রুটিপূর্ণ বিষয়। আক্বীদা এবং মানহাজ একই জিনিস। যার মানহাজ বিশুদ্ধ তার আক্বীদাও বিশুদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন:– “যেমন উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহগণ কীভাবে দৃঢ় থাকবে সেটির একটি অবস্থান রয়েছে (অর্থাৎ আল্লাহর নাম ও সিফাত সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহদের অবস্থান)। আরেকটি ইস্যু হলো যে তারা (আহলুস সুন্নাহগণ) কাউকে তাদের গুনাহের জন্য (যেমন কবীরা গুনাহ) কাফের বলে ঘোষণা করে না। কাজেই এই ইস্যুগুলো উভয়ই আক্বীদা এবং মানহাজ। তাদের উভয়েরই কানেকশন রয়েছে। কাজেই একটিকে বিবেচনা করে (মানহাজ বাদ দিয়ে) বলা যায় না যে তার আক্বীদা শুদ্ধ এবং তা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী। যেমন উদাহরণস্বরূপ, সে বলে তার মানহাজে সে একজন সূফী এবং সে তা দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করে যা আল্লাহ বিধিবদ্ধ করে দেননি। যদি সে সুন্নী হয়ে থাকে তাহলে সে সূফী নয়। আর যদি সে সূফী হয়ে থাকে তাহলে সে সুন্নী নয়।”
[www.salafitalk.net — থেকে অনুবাদকৃত]
==========================================================
আহলুল ‘ইলমদের তথ্যবহুল বক্তব্য থেকে এতক্ষণে নিশ্চয় হয়ত অনুধাবন করতে পেরেছেন যে মানহাজ কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং একে হেলার সাথে ঠেলা মেরে উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে, আক্বীদা ঠিক থাকলেই হলো আর মানহাজের দরকার নেই, মানুষ আক্বীদা বা তাওহীদ আগে শিখুক, আক্বীদা বা তাওহীদের খবর নেই আর আসছে মানহাজ নিয়া…………এইধরনের কথাবার্তা কতই না মূর্খতাপূর্ণ। বরং আক্বীদা-তাওহীদ বুঝতে গেলে তথা দ্বীনের ব্যাপারে যে কোনোকিছুই বুঝতে গেলে, শিখতে গেলে, গ্রহণ করতে গেলে, প্রয়োগ করতে গেলে, দা’ওয়াহ এর কাজ করতে গেলে……… অর্থাৎ দ্বীনের ব্যাপারে যাবতীয় সবকিছুই মানহাজের মাধ্যমেই শিখতে হবে, বুঝতে হবে, গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োগ করতে হবে, দা’ওয়াহ এর কাজ করতে হবে। আর সেই মানহাজটি হতে হবে সলফে-সলিহীনগণের মানহাজ অনুযায়ী তথা মানহাজ আস-সালাফিয়্যাহ তথা সালাফী মানহাজ। নতুবা ভিন্ন মানহাজ অনুযায়ী হতে গেলেই তা ভ্রষ্টতা ও গোমরাহী। আর প্রতিটি গোমরাহীর স্থান জাহান্নাম।
হোক, ধৈর্য সহকারে এই পর্যন্ত পড়ার জন্য জাযাকাল্লাহু খইরন। বারাকাল্লাহু ফীকুম।
কৃতজ্ঞতাঃ ABU TAWHA