আল্লাহ্‌ সম্পর্কে মিথ্যাচার!

আল্লাহ্‌ সম্পর্কে মিথ্যাচার!

আমি অনেকের মুখেই এরক কথা শুনি যে, সবি আল্লাহর খেলা/আল্লাহর লিলা খেলা (নাউজুবিল্লাহ্)।

আমার ফেসবুকের এক বন্ধু লিখছে,

রোদ বৃষ্টি ঝড় আল্লাহর খেলা তাইতো নিত্য দেখি ভবের মেলা। (নাউজুবিল্লাহ্)

লেখাটা পড়ে আমিও আর না লিখে থাকতে পারলাম না। কেননা এটা আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যাচার বৈ কি হতে পারে? আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা, কোরআন এ আল্লাহ বলেছেন বলে মিথ্যা বলা যা আল্লাহ কোরআন এ বলেন নি, আল্লাহ সম্পর্কে অনুমান, ধারণা, আন্দাজে কিছু বলা, আল্লাহ সম্পর্কে কিছু বলা যা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই এগুলো সবই ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রত্যেক মুসলিমকে এটা থেকে বিরত থাকা উচিত। আমরা জেনে অথবা না জেনে, জ্ঞানে অথবা অজ্ঞানতা বশত, ভুলবশত অনেক সময় অনেক কথা বলি। এসব কথার মধ্যে আল্লাহ সম্পর্কিত কথাও থাকে। এতে যেন আমাদের বিন্দুমাত্র মিথ্যাচার না থাকে সে দিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার।

সত্যই কি আল্লাহ্‌ লিলাখেলা করেন? চলুন দেখি আল্লাহ্‌ এসম্পর্কে কি বলেন।

আল্লাহ্‌ বলেন,

ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀَ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻭَﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ ﻟَﺎﻋِﺒِﻴﻦَ

আসমান-যমীন ও তাদের মাঝখানে যা কিছু আছে তার কোন কিছুই আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।

ﻟَﻮْ ﺃَﺭَﺩْﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻧَﺘَّﺨِﺬَ ﻟَﻬْﻮًﺍ ﻟَﺎﺗَّﺨَﺬْﻧَﺎﻩُ ﻣِﻦْ ﻟَﺪُﻧَّﺎ ﺇِﻥْ ﻛُﻨَّﺎ ﻓَﺎﻋِﻠِﻴﻦَ

আমি যদি খেলাধূলার বস্তু বানাতে চাইতাম তাহলে আমার কাছে যা আছে তা নিয়েই তা করতাম, যদি আমাকে করতে হত!

(আল-আম্বিয়া ২১:১৬-১৭)

ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ۖ ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻛُﻦْ ﻓَﻴَﻜُﻮﻥُ ۚ ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﺍﻟْﺤَﻖُّ ۚ ﻭَﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﻨْﻔَﺦُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﻮﺭِ ۚ ﻋَﺎﻟِﻢُ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐِ ﻭَﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓِ ۚ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ ﺍﻟْﺨَﺒِﻴﺮُ

তিনি আসমান আর যমীনকে সত্যিকারভাবে সৃষ্টি করেছেন (খেলা-তামাশার জন্য নয়)। আর যখনই তিনি বলবেন, (কিয়ামাত) ‘হও’, তখনই তা হয়ে যাবে, তাঁর কথাই প্রকৃত সত্য। যেদিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন কর্তৃত্ব থাকবে তাঁরই হাতে। অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্বন্ধে ওয়াকেফহাল, তিনি হিকমাতওয়ালা, সবকিছুর ব্যাপারে তিনি সবিশেষ জ্ঞাত। (সূরা আন’আম ০৬:৭৩)

যারা এরূপ কথা বলে থাকেন তাদের জন্য সতর্ক বার্তা। আজই তওবা করুন এবং বিরত থাকুন এরকম কথাবার্তা থেকে।

কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,

“আর যে, আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অথবা তাঁর নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে, তার চাইতে বড় জালেম কে? নিশ্চয় জালেমরা সফলকাম হবে না।” (সূরা-আনআম, সূরা সংখ্যা- ৬, আয়াত সংখ্যা- ২১)

“ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা বলেঃ আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার প্রতি কোন ওহী আসেনি এবং যে দাবী করে যে, আমিও নাযিল করে দেখাচ্ছি যেমন আল্লাহ নাযিল করেছেন। যদি আপনি দেখেন যখন জালেমরা মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকে এবং ফেরেশতারা স্বীয় হস্ত প্রসারিত করে বলে, বের কর স্বীয় আত্মা! অদ্য তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি প্রদান করা হবে। কারণ, তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তাঁর আয়াত সমূহ থেকে অহংকার করতে।” (সূরা-আনআম, সূরা সংখ্যা- ৬, আয়াত সংখ্যা- ৯৩)

“… অতএব সে ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী অত্যচারী কে, যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা পোষন করে যাতে করে মানুষকে বিনা প্রমাণে পথভ্রষ্ট করতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না।” (সূরা-আনআম, সূরা সংখ্যা- ৬, আয়াত সংখ্যা- ১৪৪)

“মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ দুর্ভাগ্য তোমাদের; তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। তাহলে তিনি তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ধবংস করে দেবেন। যে মিথ্যা উদভাবন করে, সেই বিফল মনোরথ হয়েছে।” (সূরা-ত্বহা, সূরা সংখ্যা- ২০, আয়াত সংখ্যা- ৬১)

“হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

সে তো এ নির্দেশই তোমাদিগকে দেবে যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাক এবং আল্লাহর প্রতি এমন সব বিষয়ে মিথ্যারোপ কর যা তোমরা জান না।” (সূরা-বাকারা, সূরা সংখ্যা- ২, আয়াত সংখ্যা- ১৬৮-১৬৯)

“আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন, সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না।” (সূরা-আ’রাফ, সূরা সংখ্যা- ৭, আয়াত সংখ্যা- ৩৩)

আশাকরি আমরা এর পর কথা বলার সময়, আল্লাহ সম্পর্কিত কোন কথা না জেনে, নিশ্চিত না হয়ে বলব না। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি মুলুক কাজকর্ম থেকে রক্ষা করুক। আমীন।।