স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করা

স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করা
~~~~~~
স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা দ্বারা দাম্পত্য জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠে। এই ভালবাসা ও প্রেম-প্রীতিময় পরিবেশ সৃষ্টি করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দায়িত্ব। তাই এ ব্যাপারে উভয়কে সচেষ্ট থাকতে হবে।
ইসলাম স্বামীদেরকে আদেশ করেছে স্ত্রীদের ভোরণ-পোষণ সহকারে তাদের সাথে সদাচরণ করতে। আর স্ত্রীদের প্রতি আদেশ করেছে, স্বামীদের আনুগত্য করতে যদি তিনি অন্যায় ও গুনাহের নির্দেশ না দেন।

স্বামীর মধ্যে যদি আচরণগত বা দ্বীন বিষয়ে ত্রুটি পরিলক্ষীত হয় স্ত্রী যথাসম্ভব ধৈর্য ধারণ করবেন এবং তাকে সংশোধের চেষ্টা করবেন এবং তার জন্য দুয়া করবেন…।

*এ বিষয়ে আল্লাহ এবং রাসুল সা: এর নির্দেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ* (রিয়াদুস সালিহীন গ্রন্থ থেকে)

♻ মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘আর তাদের (স্ত্রীদের) সাথে মিলেমিশে সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করো।’ (সূরা আন-নিসাঃ ১৯)

♻ মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ স্ত্রীদের মাঝে পুরোপুরি ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা তোমাদের সাধ্যাতীত। তোমরা মন-প্রাণ দিয়ে চাইলেও তা করতে পারবে না। কাজেই একজন স্ত্রীকে একদিকে ঝুলিয়ে রেখে অন্যজনের দিকে একেবারে ঝুঁকে পড়বে না। তোমরা যদি নিজেদের কাজকর্ম সঠিকভাবে সম্পাদন করো এবং আল্লাহকে ভয় করে চলো, তাহলে আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও দয়াময়’। (সূরা আন নিসাঃ ১২৯)

♻ ২৭৩. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমার কাছ থেকে মেয়েদের প্রতি সদাচারণ করার শিক্ষা গ্রহণ করো। কেননা, নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টাই সবচেয় বাঁকা। অতএব, তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তবে ভেঙ্গে যাওয়ার( বিচ্ছিন্ন বা তালাক) সম্ভাবনাই রয়েছে। আর যদি ফেলে রাখো, তবে বাঁকা হতেই থাকবে। কাজেই মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। (বুখারী ও মুসলিম)

♻ ২৭৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যাম‘আ (রা) বর্ণনা করেনঃ একদিন তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবা দিতে শুনলেন। তিনি তাঁর খুতবায় মেয়েদের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি তাদের সম্পর্কে কিছু উপদেশ দিলেন। তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাঁকে বাদী-দাসীর ন্যায় প্রহার করে। দিনের শেষে সে আবার তার সাথে শয়ন করে। (বুখারী ও মুসলিম)

♻ ২৭৫. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমান পুরুষ যেন কোন মুসলমান নারীর প্রতি হিংসা-দ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ না করে; কেননা তার কোন একটি বিষয় তার কাছে খারাপ মনে হলেও অন্য একটি বিষয় তার পছন্দ হবেই। (অর্থ্যাৎ তার দোষ থাকলে গুণও থাকবে)। (মুসলিম)

♻ ২৭৬. হযরত ‘আমর ইবনে আহওয়াস আল-জুশাম্মী (রা) বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজ্জের ভাষণ (খুতবা) শুনেছেন। সে ভাষণে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করলেন। এবং লোকদেরকে ওয়াজ নসিহত করার পর বললেনঃ তোমরা মেয়েদের প্রতি সদাচরণ করো; কেননা তারা তোমাদের হেফাযতে রয়েছে। তোমরা তাদের কাছ থেকে (বৈধ) সুযোগ-সুবিধা লাভ ছাড়া অন্য কিছুর অধিকারী নও। অবশ্য তারা যদি প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়, তবে তোমাদের বিছানা থেকে তাদের আলাদা করে দাও; এমনকি, প্রয়োজনে তাদেরকে প্রহার করো; কিন্তু কঠোরভাবে নয়। (এরপর) যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তবে তাদের জন্য ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না। সাবধান! তোমাদের স্ত্রীদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তোমাদের ওপরও তাদের অধিকার রয়েছে। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের অপছন্দীয় লোকদের দ্বারা তোমাদের বিছানা কলুষিত করবে না এবং তাদেরকে তোমাদের বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দেবে না। তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলোঃ তোমরা তাদের পানাহারের ব্যাপারে ভাল ব্যবস্থা করবে, তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। (তিরমিযী)

♻ ২৭৭. হযরত মুআবিয়া ইবনে হাইদাহ (রা) বর্ণনা করেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো ওপর তার স্ত্রীর কি অধিকার রয়েছে?’ তিনি বললেনঃ তুমি যখন আহার করবে, তাকেও আহার করাবে, তুমি যখন (পোশাক) পরিধান করবে, তাকেও পরিধান করাবে, কখনো তার চেহারা কিংবা মুখমণ্ডলে আঘাত করবে না, কখনও তাকে অশ্লীল ভাষায় গাল দেবে না এবং ঘরের ভেতর (অর্থ্যাৎ বিছানা) ছাড়া তার থেকে আলাদা হয়ো না। (আবু দাউদ)

♻ ২৭৮. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সবচাইতে উত্তম, ঈমানের দৃষ্টিতে সে-ই পূর্ণাঙ্গ মুমিন। তোমাদের মধ্যে সেইসব লোক উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম। (তিরমিযী)

★★★সৌজন্যেঃ- বোন আয়েশা আক্তার★★★