প্রচলিত ভুল

প্রচলিত ভুল

Sabet Bin Mukter

ডিসক্লেইমারঃ “প্রচলিত ভুল ও তার সঠিক ব্যাখ্যা” শিরোনামে বহুদিন আগে ফেইসবুকে পোস্ট করা ৯ পর্বের স্ট্যাটাসের সংকলন এই অগোছালো নোটটি। এই নোটের অধিকাংশ বিষয়ই উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ মুফতি আব্দুল মালেক (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত “প্রচলিত ভুল”, “প্রচলিত জাল হাদিস” ও মাসিক আল কাউসারের বিভিন্ন সংখ্যা থেকে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আলিমের কাছ থেকে তাহকিক করে জানা জিনিসগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে। আমি নিজ থেকে কোন ফাতাওয়া দেইনি। পোস্টটি মূলত তাদের উদ্দেশ্যে লেখা যারা দ্বীন নিয়ে জানতে আগ্রহী বা নতুন দ্বীনের পথে এসেছেন। এই পোস্টের অনেককিছুই দ্বীনি ভাইদের কাছে তাই হাস্যকর বলে মনে হবে !!! আর কলেবর বিশাল হয়ে গেছে এমনিতে, তাই অনেক ক্ষেত্রেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। আপনার কোন বিষয়ে সংশয় থাকলে দয়া করে কোন নির্ভরযোগ্য আলিমের কাছে বা মাদ্রাসার ইফতা বিভাগে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন। জাযাকাল্লাহু খইরন।
১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নূরের তৈরি বলে বিশ্বাস করা।
উত্তরঃ তিনি মাটির তৈরি ছিলেন। এই ব্যাপারে মহান আল্লাহ্‌ নিজেই পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন।
২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্‌র নূরের অংশ মনে করা।
উত্তরঃ এই বিশ্বাস কেউ করলে তা শিরক হবে। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহ্‌র জাতের সাথে অন্য কোনকিছুর তুলনা বা মিশ্রণ হতে পারে না।
৩) প্রচলিত মিলাদকে দরুদ শরীফ বলে চালিয়ে দেয়া।
উত্তরঃ দরুদ পড়া আল্লাহ্‌র হুকুম আর প্রচলিত মিলাদ পড়া সম্পূর্ণ বিদ’য়াত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ দরুদ পড়ার হুকুম করেছেন, মিলাদ নয়। আর হাদিসে বর্ণিত দরুদই পড়তে হবে, যেমন নামাজের শেষ বৈঠকে পড়া দরুদে ইব্রাহীম সর্বোত্তম দরুদ। আরও কিছু দরুদ হাদিসে আছে। তবে মানুষের বানানো প্রচলিত মিলাদ পড়া সুস্পষ্ট বিদ’য়াত।
৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ্‌ কিছুই সৃষ্টি করতেন না। -জাল হাদিস
৫) হযরত আদম(আঃ) এর ১৪ হাজার বছর পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূর আকারে ছিলেন। – জাল হাদিস।
৬) আল্লাহ্‌ তায়ালা সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নূরকে সৃষ্টি করেছেন। -জাল হাদিস।
৭) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছায়া ছিল না। – জাল হাদিস।
৮) ২৭ রজবকে শবে মেরাজের রাত মনে করা। উত্তরঃ অথচ এই ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোন মত নেই। সবচেয়ে সঠিক মত হল তা হিজরতের ১ বা ২ বছর আগে সংগঠিত হয়েছিল। আর শবে মিরাজের রাত ইবাদাতের জন্য নয়। এই রাতে ইবাদাতের ব্যাপারে কোন হাদিসে বর্ণনা নেই।
৯) খাওয়ার সময় ও ওযুর সময় সালাম দেয়া বা নেয়া যাবে না। উত্তরঃ এটি একটি কুসংস্কার। খাওয়ার সময়, ওযুর সময় সালাম দেয়া বা নেয়া যাবে। এতে কোন অসুবিধা নেই।
১০) ওযুর পরে কাপড় চেইঞ্জ করলে হাঁটুর উপর কাপড় খুলে গেলে ওযু ভেঙ্গে যায়। উত্তরঃ এটিও ভুল ধারণা। ওযু ভাঙবে না।
১১) সালামের জবাব মনে মনে দিলেই হয়ে যায়। উত্তরঃ সালামের জবাব সালাম দাতাকে শুনিয়ে দিতে হবে। এটিই ওয়াজিব।
১২) পাগড়িসহ ২ রাকাত নামায, পাগড়িবিহীন ৭০ রাকাত নামাজের চেয়েও উত্তম। – জাল হাদিস। উত্তরঃ তবে সর্বাবস্থায় পাগড়ি পরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। একাধিক সাহিহ হাদিসে পাগড়ি পরার কথা এসেছে। তবে শুধুমাত্র নামাজের জন্য নয়।
১৩) যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলবে তার ৪০ বছরের নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। – জাল হাদিস।
১৪) সালামের জবাবের পরে “ওয়া বারাকাতুহু” বলার পরে “ওয়া মাগফিরাতুহু ওয়া জান্নাতুহু” বলা। উত্তরঃ হাদিসে “ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” পর্যন্ত এসেছে। বাকিগুলো মানুষের বানানো।
১৫) বিদায়ের সময় খোদা হাফেয বলা।
উত্তরঃ খোদা হাফেয বলা গুনাহ না, তবে সালাম দেয়া উত্তম। বিদায়ের সময় সালাম দেয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ।
১৬) মুসাফাহা(হ্যান্ডশেইক) করার পর হাত বুকে রাখা।
উত্তরঃ মুসাফাহা করতে হয় দুই হাত দিয়ে, এটাই সুন্নাত। এরপর বুকে হাত রাখার বিধান নেই। এটি মানুষের বানানো।
১৭) দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ইলম অন্বেষণ কর। – জাল হাদিস।
১৮) “মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া” জাতীয় কথা বলা। উত্তরঃ মৃত্যুর সাথে আবার কিভাবে লড়াই সম্ভব। আল্লাহ্‌র হুকুম আসলেই চলে যেতে হবে। এখানে লড়াই হবে কার সাথে? আল্লাহ্‌র হুকুমের সাথে? নাউযুবিল্লাহ।
১৯) “মহাভারত কি অশুদ্ধ হয়ে যাবে” বলা। উত্তরঃ এই কথার দ্বারা সে মহা ভারতকে শুদ্ধ হিসেবে মেনে নিল ! অথচ তা মুশরিকদের বানানো কল্পকাহিনী। এই ধরণের কথা কোন মুসলিমের বলা উচিত নয়।
২০) নবী রাসূলের সংখ্যা ২ লক্ষ ২৪ হাজার বলে বিশ্বাস করা। উত্তরঃ এই ব্যাপারে জানা অপরিহার্য নয়। আর এই সংখ্যা সম্পর্কে কোন হাদিসে বলা নেই। তবে ১ লক্ষ ২৪ হাজার বারের কথা অনেক হাদিসে এসেছে। হযরত আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! নবীগণের (আ.) সংখ্যা কত? রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, “নবীগণের (আ.) সংখ্যা একলক্ষ চব্বিশ হাজার।” হযরত আবু যর (রা.) বলেন, আমি বললাম, তাদের মধ্যে রাসূল কতজন? তিনি ইরশাদ করলেন, “রাসূলগণের (আ.) সংখ্যা তিনশত তের জনের বড় জামা‘আত।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২২৩৪২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৯৪,মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৩৩৮০, মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৩০৩৯ প্রভৃতি)
২১) আশুরার দিন(১০ই মহররম) কিয়ামত হবে। উত্তরঃ কিয়ামত শুক্রবার হওয়ার কথা বলা আছে, কিন্তু কোন মাসের কোনদিন হবে তা বলা হয়নি।
২২) দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। – জাল হাদিস।
২৩) জ্ঞানীর কলমের কালি শহিদের রক্তের চেয়েও পবিত্র। – জাল হাদিস।
২৪) “নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া…” বলে নিয়াত করা। উত্তরঃ ছোটবেলায় আমরা সবাই এই নিয়াত মুখস্থ করেছি। অথচ এভাবে নিয়াত করার প্রমাণ কোন হাদিসে নেই। নিয়াত হল মনের সংকল্প। মনে মনে কোন ওয়াক্তের কি নামাজ পড়ছি তা মনে করলেই নিয়াত হয়ে যায়।
২৫) ১ ওয়াক্ত নামাজ কাযা করলে ২ কোটি ৮৮লক্ষ বছর জাহান্নামে জ্বলতে হবে। উত্তরঃ নামাজ কাযা করার শাস্তি অনেক কঠিন। এই ব্যাপারে প্রচুর হাদিসে সাবধানবাণী এসেছে। তবে আলাদা করে ২ কোটি ৮৮লক্ষ বছরের কথা বলা হয়নি। এটি জাল বর্ণনা।
২৬) সওয়াবের আশায় মৃত ব্যক্তির রূহ তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে হাজির হয়। উত্তরঃ মৃত্যুর পর রূহের এই দুনিয়াতে ফিরে আসা সম্ভব নয়। স্বপ্নে মৃত ব্যক্তিকে দেখার জন্য রুহের আসা জরুরী নয়। আল্লাহ্‌ যেভাবে দেখাতে চান ওইভাবেই স্বপ্নে দেখি আমরা।
২৭) আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত করা। উত্তরঃ এটি বিদয়াত। আযানের দুয়া আছে যা আদায় করা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় কেননা এখানে রাসূল(স) এর জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান “মাকামাম মাহমুদ” এর জন্য দুয়া করা হয়েছে। আর রাসূল(স) বলেছেন, যে উনার জন্য মাকামাম মাহমুদের দুয়া করবে তার জন্য উনার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে। তাই হাদিসে বর্ণিত এই দুয়া করতে হবে, তবে হাত তুলে নয়।
২৮) রাসূল(স) এর নাম শুনলে দুই হাতে চুমু খেয়ে চোখ মুছা। প্রচলিত আছে এতে নাকি চোখের আয়ু বাড়ে।
উত্তরঃ সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন কথা। রাসুলের নাম শুনলে ১ম বার দরুদ পড়া অর্থাৎ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা ওয়াজিব। না বললে গুনাহ হবে। একই বয়ান বা মজলিসে বারবার শুনলে বাকি বার বলা মুস্তাহাব। তাই আমরা রাসূলের নাম যতবার শুনবো ততবারই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলবো ইনশা আল্লাহ্‌।
২৯) “এতো কষ্ট ভালো লাগে না, মরে গেলেই ভালো হতো”, “বেঁচে থেকে কি লাভ” ইত্যাদি কথা বলা। উত্তরঃ আপনি কতদিন বাঁচবেন তা মহান আল্লাহই ঠিক করে রেখেছেন। এখানে প্রশ্ন তোলা মানে আল্লাহ্‌র হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করা। আর হতাশা থেকে কুফুরির জন্ম হয়।
৩০) “এতো দুয়া করলাম কবুল হয় না”, এই জাতীয় কথা বলা।
উত্তরঃ দুয়া কবুল হওয়ার ৪টি প্রক্রিয়া আছে। ১) যা চাওয়া হয় তাই দেয়া হয়, ২) চাওয়ার চেয়েও উত্তম কিছু দেয়া হয়, ৩) দুয়ার কারণে চাওয়া জিনিস না দিয়ে আসন্ন বিপদকে দূর করে দেয়া হয়, ৪) দুনিয়াতে না দেয়া হলেও আখিরাতে এই দুয়ার প্রতিদান দেয়া হবে। অনেকসময় পরীক্ষার জন্য বান্দা তার দুয়া কবুল দেখতে পায় না। এটি মহান আল্লাহর পরীক্ষা। পরীক্ষা না থাকলে মুমিন আর মুনাফিক নির্ণয় হবে কিভাবে? তিনি চান যেন আমরা উনার কাছে চাওয়া থেকে যেন নিরাশ না হই। বান্দা যদি হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থেকে, কবিরা গুনাহ থেকে তাওবা করে আল্লাহ্‌র কাছে চাইতেই থাকে আর ধৈর্য ধারণ করে তবে এই দুনিয়াতে না পেলেও এর প্রতিদান সে আখিরাতে পাবে ইনশা আল্লাহ্‌। যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
৩১) কল্পকাহিনীর ভূত প্রেতাত্মার মতো জিন জাতির অস্তিত্বে অবিশ্বাস করা।
উত্তরঃ ভূত বলে কিছু নেই, কিন্তু কেউ জিন জাতির অস্তিত্বে অবিশ্বাস করলে তার ঈমানই থাকবে না। কেননা জিনের অস্তিত্ব স্বয়ং মহান আল্লাহ্‌ই পবিত্র কুরআনে বলেছেন। সূরা জিন নামে পূর্নাঙ্গ একটি সুরাই রয়েছে জিন জাতির কথা বলার জন্য। জিনে অবিশ্বাস মানে কুরআনকেই অবিশ্বাস করা। সাইন্স জিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে না পারলেও দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষের বাস্তব জীবনের অনেক অস্বাভাবিক ঘটনাতেই তাদের অস্তিত্ব বুঝা যায়।
৩২) যাদু টোনাকে কল্পকাহিনী মনে করা। উত্তরঃ অথচ এটি সত্য। স্বয়ং রাসূল (স) কে যাদু করা হয়েছিল। একজন ইহুদি নারী চিরুনিতে ১১টি গিঁট দিয়ে কুয়ার পানিতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে মহান আল্লাহ্‌ সূরা ফালাক ও নাস(মোট ১১ আয়াত) নাযিল করে রাসূল (স) কে এই যাদুর প্রভাব থেকে হেফাজত করেন।
৩৩) “এতো গুনাহ করেছি আল্লাহ্‌ কিভাবে মাফ করবে” এই জাতীয় কথা বলা। উত্তরঃ এই ধরণের কথা বলা মানে আল্লাহর ক্ষমা করার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা। এটি কবিরা গুনাহ। বান্দা গুনাহ করতে করতে যদি আসমান পর্যন্ত গুনাহ পৌঁছে যায় এবং সে যদি এতে অনুতপ্ত হয়ে একবার আন্তরিকভাবে তাওবা করে তবে মহান আল্লাহ্‌ তাকে মাফ করে দিবেন।
৩৪) নজর না লাগার জন্য বাচ্চাদের কপালে কালো টিপ দেয়া।
উত্তরঃ কেউ যদি নজর না লাগার নিয়াতে এই কাজ করে তবে তা সম্পূর্ণ শিরক হবে। নজর না লাগার নিয়াত না থাকলেও এই কাজ করা যাবে না। কেননা এটি অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের প্রমাণ বহন করে। যা একজন মুসলিমের কাছ থেকে আশা করা যায় না। শিশুকে বদ নযর ইত্যাদি থেকে রক্ষা করার জন্য কী করতে হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শিখিয়েছেন। সহীহ বুখারীর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রা. এর জন্য এই দোয়া পড়ে আল্লাহর আশ্রয় চাইতেন, উচ্চারণঃ উয়িযুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাহ, মিন কুল্লি শাইত্ব-নিও ওয়া হাম্মাহ। ওয়া মিন কুল্লি য়াইনিন লাম্মাহ। অর্থ : সকল শয়তান, কীটপতঙ্গ ও বদনজর হতে তোমাদেরকে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমাসমূহের আশ্রয়ে দিচ্ছি। এর সাথে আয়াতুল কুরসী, তিন কুল ও হাদীসের অন্যান্য দোয়া তো আছেই।
৩৫) মৃত মানুষের জন্য ৩ দিন, চল্লিশা ইত্যাদি পালন করা। হুজুর ডেকে এনে কুরআন খতম করানো। উত্তরঃ এটি সম্পূর্ণ বিদয়াত। এর কোন প্রমাণ হাদিসে বা সালফে সালেহিনদের জীবনে নেই। মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সওয়াব তথা সওয়াব পাঠানোর জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক না করে যেকোন দিন গরিবদেরকে খাওয়ানো যেতে পারে, নিজেরা নফল সালাত পড়ে, কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব পাঠানো খুবই প্রশংসনীয় কাজ। কিন্তু হুজুর ডেকে এনে কুরআন খতম করিয়ে তার বিনিময়ে হাদিয়া দেয়া নেয়াকে উলামারা সম্পূর্ণ নাজায়েজ কাজ বলেছেন। যদিও হুজুরদের অধিকাংশ এই কাজ করুক না কেন। এটি শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। তবে অন্যকোন ক্ষেত্রে যেমন খতমে তারাবিহ বা মাসজিদে কোন দুয়ার পরে কেউ খুশি হয়ে হাদিয়া দিলে তা নিতে কোন বাধা নেই।
৩৬) চুলে খিযাব হিসেবে কালো রঙ ব্যবহার করা। উত্তরঃ কালো খিযাব সম্পূর্ণ নাজায়েজ। কালো ছাড়া অন্য যেকোন রঙ বা মেহেদি ব্যবহার করা যাবে।
৩৭) পায়ে ধরে সালাম করা। উত্তরঃ সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এর কোন প্রমাণ ইসলামে নেই। এমনকি মুরুব্বি, মা-বাবা কাউকেই করা যাবে না, বসেও করা জায়েজ নয়। এটি মুশরিকদের কালচার।
৩৮) সালামের জবাবে সালাম দেয়া। উত্তরঃ অথচ সালামের জবাবে ওয়ালাইকুমুস সালাম বলা ওয়াজিব। অথচ অনেক সময় বড় কেউ আগে সালাম দিলে আমরা সালামের জবাব না দিয়ে উল্টো সালাম দেই। এটি ঠিক নয়। বড় হলেও তার সালামের জবাব দিতে হবে। সালামের ব্যাপারে ছোট-বড়, ধনী-গরিব, মালিক-চাকর এর মাঝে পার্থক্য ইসলাম করেনি।
৩৯) মান্নত করার অভ্যাস করা। উত্তরঃ মান্নত করা জায়েজ। তবে মান্নত করাকে আল্লাহ্‌র রাসূল(স)উৎসাহ দিতেন না। মান্নত দুই প্রকার। একটা শর্তযুক্ত, আরেকটা শর্তমুক্ত। যেমন, শর্তযুক্ত মান্নত হল আমার এই কাজটা হয়ে গেলে আমি ১০টা রোজা রাখবো, শর্তবিহীন মান্নত হল কোন কিছু করার আগে আল্লাহ্‌র সাহায্যের আশায় কিছু নফল আমল, দান করা ইত্যাদি। মান্নত করলে কাজটা করা জরুরী(ওয়াজিব)হয়ে যায়। শর্তযুক্ত মান্নতের অর্থ হল আল্লাহকে দিতে বাধ্য করার মতো ব্যাপার যা তাক্বওয়ার খেলাফ। এই জাতীয় মান্নত পরিহার করাই শ্রেয়। আর মান্নত হতে হবে একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্যই। কোন পীর বা মাজারের নামে মান্নত করা সম্পুর্ণ হারাম ও শিরক। মানত করা হোক বা না হোক, ফলাফল একই হবে। তাকদীরে যা লেখা আছে সেটাই আসবে অবধারিতভাবে। কিন্তু মান্নত করার পর মান্নত পুরো করার আগেই মৃত্যু এসে হাজির হলে তা মান্নতকারির ঘাড়ে থেকে যাবে।
৪০) চোখের নজর(evil eye) কে অস্বীকার করা। উত্তরঃ চোখের নজর সত্য। এটি দুই ধরণের। এক, হিংসার কারণে; দুই, অতিরিক্ত প্রশংসার কারণে হয়ে থাকে। হিংসার ব্যাপারটি আমরা সবাই বুঝি কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারটি অনেক সময় বুঝা কষ্টকর। বাবা মার কাছ থেকেও সন্তানের উপর অত্যধিক আদরের কারণে তা পরতে পারে। এইজন্য কারো ভালো কিছু দেখলে সব সময় তার জন্য দুয়া করা দরকার। যেন আমার চোখের কারণে কারো ক্ষতি না হয়।
৪১) মুসা(আঃ) এর তার উম্মতসহ নীলনদ পার হওয়া। উত্তরঃ নীলনদ নয়, বরং মহান আল্লাহ্‌ ফিরাউনের বাহিনীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মুসা(আঃ) ও উনার উম্মত বনী ইসরাইলের জন্য লোহিত সাগরের উপর দিয়ে ১২টি রাস্তা করে দেন। অথচ আমরা ছোটবেলা থেকেই নীলনদ শুনে বড় হয়েছি।
৪২) স্কুলের বইয়ে পড়া বুড়ির কাহিনী। যে আল্লাহ্‌র রাসূল(স)এর চলার পথে কাটা বিছিয়ে রাখতো। পরে সে অসুস্থ হয়ে পরলে আল্লাহর রাসূল(স) তাকে দেখতে যান। উত্তরঃ এই ঘটনার কোন ভিত্তি নেই। না হাদিসে বা ইতিহাসের কোন কিতাবে। এটি বানোয়াট গল্প।
৪৩) অমুখ কাজ করলে বা না করলে “আল্লাহ্‌র আরশ কেঁপে উঠবে”/”আল্লাহ সইবে না” এই জাতীয় কথা বলা। উত্তরঃ এটি সম্পূর্ণ জাহেলি কথা। এই ধরণের কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪৪) “এভাবে কাজটা করলে আমার ক্ষতি হতো না”, “আরেকটু চেষ্টা করলে আরও ভালো করতে পারতাম” ইত্যাদি কথা বলা। উত্তরঃ যেটা হয়েছে তা হওয়ারই ছিল, যা হওয়ার ছিল না তা হয়নি এবং কখনো হবে না। এটাই তাক্বদির, যার উপর বিশ্বাস করা মুসলিম হওয়ার একটি অন্যতম শর্ত। ভাগ্যকে দোষারোপ করা মানেই আল্লাহ্‌কে দোষারোপ করা, আপনি মৃত্যু পর্যন্ত যা করবেন তা মহান আল্লাহ্‌ তাঁর অসীম জ্ঞানের বলে আগে থেকেই জানতেন তাই তা আপনার তাক্বদিরে লিখে দিয়েছেন। এর বাহিরে যাওয়ার কারো সাধ্য নেই।
৪৫) জামাত শুরু হয়ে যাওয়ার পর ইমাম সাহেব সিজদায় গেলে বা বসা অবস্থায় থাকলে ইমাম সাহেবের দাঁড়ানোর জন্য অপেক্ষা করা। উত্তরঃ জামাতে শামিল হওয়ার নিয়ম হল ইমামকে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে ওই অবস্থায় শরিক হতে হবে যদিও ওই রাকাত আমার ধর্তব্য না হয়। কেননা রাকাত ধর্তব্য হওয়ার জন্য রুকু পাওয়া শর্ত। (হানাফি ফিক্বহ মতে) একটি সিজদার মূল্য কতোখানি তা যদি আমরা জানতাম তাহলে ইমাম সাহেবের দাঁড়ানোর জন্য অপেক্ষা না করেই আমরা জামায়াতে শরীক হতাম।
৪৬) ঈদের দিন কোলাকুলি করাকে নিয়ম বানিয়ে ফেলা। উত্তরঃ মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করার সুন্নাহ হল অনেকদিন পর কারো সাথে দেখা হলে শুধুমাত্র ডানদিকে একবার করা। ঈদের দিনের জন্য নয়। যদি ঈদের দিন কারো সাথে অনেকদিন পর দেখা হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ঈদের দিন নিয়ম মনে করে করলে এটি বিদয়াত হবে।
৪৭) ১৮ হাজার মাখলুকাত বলে বিশ্বাস করা। উত্তরঃ মাখলুকাতের এই নির্দিষ্ট সংখ্যা না কুরআনে আছে, না কোনো হাদীসে। বাস্তবতা হল, আল্লাহ তাআলা অগণিত মাখলুক পয়দা করেছেন। জলে ও স্থলে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাখলুক আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। মানুষের জানার বাইরেও রয়েছে অসংখ্য মাখলুক। আল্লাহ তাআলা অসংখ্য অগণিত মাখলুক পয়দা করেছেন, যা আমরা গুণে ও হিসাব করে শেষ করতে পারব না।
৪৮) গায়ে পা লাগলে বা বই পরে গেলে সালাম করা। উত্তরঃ এটি সামাজিক কুপ্রথা। তবে কুরআন বা হাদিসের বই পড়ে গেলে কয়েকবার ইস্তিফগার করে নিতে পারেন। এটি তাকওয়ার পরিচয়। ৪৯) “ধান ভানতে শিবের গীত” জাতীয় কথা বলা। উত্তরঃ এটি একটি কুফুরি কথা। অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা বুঝাতে অনেকেই উপরের কথাটি ব্যবহার করেন। অথচ এটি মুশরিকদের বানানো প্রবাদ।
৫০) আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা উত্তরঃ কথিত আছে এইদিন রাসূল(স) রোগ থেকে মুক্তি পান। এজন্য অনেকে এই দিনকে ফযিলতের মনে করে। অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল। এইদিন রাসূল(স) রোগ থেকে মুক্তি পেলেও তা ইবাদাতের বা ফজিলতের কোন দিন নয়। কুরআন ও হাদিসে পালনীয় দিবসের ব্যাপারে যা এসেছে অতোটুকু মানাই হল ইবাদাত। এর বাহিরে নব আবিষ্কৃত ইবাদাতের নামে, ফজিলতের নামে প্রতিটি দিবসই বিদয়াত। আখেরি চাহার সোম্বা হল তেমন একটি বিদয়াত।
৫১) ফাতিহা-ই- ইয়াজদাহম পালন করা। – এটি বিদয়াত। ৫২) আযানের পূর্বে মাইকে দরুদ শরীফ পড়া। -এটি বিদয়াত ৫৩) স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত -জাল হাদিস ৫৪) ভালো খাবার রান্না করার পর সূরা ফাতিহা বা অন্যান্য কিছু দুয়া পড়ে মৃত ব্যক্তিদের কবরের সওয়াব পৌঁছানো। উত্তরঃ এটি বিদয়াত। মৃত ব্যক্তির জন্য সূরা ফাতিহা বা অন্য যেকোন দুয়া পড়ে সওয়াব পাঠানো যায়। এটি প্রশংসনীয় কাজ। কিন্তু খাবার রান্নার পরে এটিকে নিয়ম বানিয়ে ফেলা মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয়।
৫৫) তাওবা করার পর একই গুনাহ আবার করলে তা ৭০ গুণ বেড়ে যায়। ৫৬) হজের পর গুনাহ করলে তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। ৫৭) বিধবা নারীকে সাদা কাপড় পরিধান করতে হবে। ৫৮) প্রতিটি দাড়িতে ৭০জন ফেরেশতা থাকেন। – এটি সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন কথা।
৫৯) বন্ধু মহলে কয়েকজন বসে গল্প-গুজব করছে, তখন তাদের মধ্যে অনুপস্থিত কাউকে নিয়ে কথা চলছে, এমতাবস্থায় সে উপস্থিত হলে, কেউ কেউ বলে উঠে “দোস্ত তোর হায়াত আছে।” কারণ একটু আগেই তোর কথা বলছিলাম। উত্তরঃ এর কোন ভিত্তি নেই। এই ধরণের কথা পরিহার করতে হবে।
৬০) শুক্রবার আরাফার দিন হলে তাকে “আকবরি” হজ তথা বড় হজ বলা। উত্তরঃ এর কোন ভিত্তি নেই। এটি মানুষের বানানো। ৬১) রাতে নখ কাটলে গরীব হয়ে যায়।
৬২) অলৌকিকভাবে কাজটি হয়ে গেল বা সে বেঁচে গেল এই জাতীয় কথা বলা। উত্তরঃ অলৌকিকভাবে হওয়ার বিশ্বাস মুশরিকদের ও নাস্তিকদের। মুসলিমরা বলবে আল্লাহ্‌র কারণেই বেঁচে গেছি বা কাজটি হয়ে গিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ্‌।
৬৩) “প্রাকৃতিক দুর্যোগ” মোকাবেলা করতে হবে। উত্তরঃ এটি সম্পূর্ণ শির্কি কথা। এর মানে হল আল্লাহ্‌র দেয়া গযবের মোকাবেলা করার সামর্থ্য মানুষ রাখে, অথচ তা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
৬৪) জামায়াত শুরু হলে দৌড়াদৌড়ি করে জামাতে শরীক হওয়া। উত্তরঃ সালাতের জন্য মসজিদের জন্য ঘর থেকে বের হলেই সওয়াব লিখা শুরু হয়, এমনকি হাদিসে এসেছে জামাত না পেলেও সে জামাতের সওয়াব পেয়ে যাবে। আলহামদুলিল্লাহ্‌। কিন্তু আমরা হাঁসফাঁস করতে করতে জামাতে শরীক হই যা আদাবের খেলাফ,এই ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। জামাত মিস হয়ে গেলেও যদি সওয়াব থেকে বঞ্চিত না হই তবে আদাবের খেলাফ করে জামাতে শরীক হওয়ার চেয়ে ধীরে সুস্থে জামাতে শরীক হওয়াই উত্তম।
৬৫) “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই” এই জাতীয় কথা বলা। উত্তরঃ এটি সুস্পষ্ট শির্ক। এটি কমিউনিস্ট নাস্তিকদের স্লোগান। কোন মুসলিম এই ধরণের কথা বলতে পারে না। যদি বলে তাহলে বুঝবেন সে মুরতাদ।
৬৬) ঠোঁট না নাড়িয়ে সালাত আদায় করা। উত্তরঃ সালাতে যা পড়া হচ্ছে তা ঠোঁট নাড়িয়েই পড়তে হবে। মনে মনে পড়লে হবে না। উলামারা বলেন, তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাঁধার সময় “আল্লাহু আকবার” বলা এবং সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করাসহ সকল রুকনের তাসবীহ এমনভাবে পড়তে হবে যেন নিজের কানে শুনা যায়।
৬৭) চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করা। উত্তরঃ চোখ খোলা রেখেই আদায় করতে হবে, এটিই বিধান। তবে বিশেষ প্রয়োজনে বা মনোযোগ ধরে রাখার জন্য কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করতে আপত্তি নেই।
৬৮) রাসূল(স) গায়েব জানতেন এই আকিদা পোষণ করা। উত্তরঃ এই আকিদা রাখলে তা সম্পূর্ণ শির্ক হবে। তবে মহান আল্লাহ্‌ উনাকে অদৃশ্য জগতের যতোটুকু জানিয়েছেন তিনি ততোটুকুই জানতেন। এর বেশি উনি জানতেন না। এটিকে গায়েব জানা বলে না।
৬৯) কবর পাকা করা বা মাজার তৈরি করা। উত্তরঃ এটি সম্পূর্ণ হারাম, যদিও কবরে সিজদা করা না হোক না কেন বা কবরওয়ালার কাছে কিছু চাওয়া না হোক না কেন। কবর পাকা করা বা কবরের উপর মসজিদ বানানোর নিষেধাজ্ঞার উপরে প্রায় এক ডজন সহীহ হাদিস রয়েছে। যদি কেউ কবরওয়ালার কাছে কিছু চায় বা মনের বাসনা পূর্ণ হওয়ার আশায় মাজারে যায় বা মাজারের জন্য মান্নত করে তবে তা সুস্পষ্টত শির্ক হবে।
৭০) কোন পীর বা ওয়ালীকে “গাউসুল আজম” বলা। উত্তরঃ এটি সম্পূর্ণ শির্ক। গাউস অর্থ ত্রাণকর্তা, আজম মানে সবচেয়ে বড়। এর অর্থ দাঁড়ায় সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা, যা একমাত্র মহান আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। এখানে অন্য কোন মানুষকে বা সৃষ্টিকে এই উপাধি দেয়া মানে মহান আল্লাহর সাথে শির্ক করার শামিল।
৭১) মাথা ছুঁয়ে কসম করা। উত্তরঃ কসম হতে হবে একমাত্র আল্লাহর নামে। এভাবে মাথা ছুঁয়ে কসম করা মূর্খতা। আল্লাহ ছাড়া আর কারো নামে বা কোন বস্তুর নামে কসম খাওয়া যাবে না।
৭২) চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলা কিছু কাটলে বা কাপড় সেলাই করলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার বিশ্বাস রাখা। যেমনঃ কানকাটা বা ঠোঁটকাটা অবস্থায় জন্ম নেয়ার বিশ্বাস রাখা। উত্তরঃ এটি একটি ভুল বিশ্বাস। বাস্তবতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। শরীয়াতে যেমন এর কোনো ভিত্তি নেই তেমনি বিবেক বুদ্ধিও এ ধরনের অলীক ধারণা সমর্থন করে না। অতএব এ ধরনের বিশ্বাস পোষণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৭৩) শিক্ষক ছাত্রকে শরীরের যে স্থানে আঘাত করবে তা জান্নাতে যাবে! -বানোয়াট কথা।
৭৪) এক মূহুর্তের আখিরাতের ধ্যান ৬০ বছর ইবাদাত অপেক্ষা উত্তম। -জাল হাদিস।
৭৫) আল্লাহ ক্ষমা করলেও আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না। –এই জাতীয় কথা বলা। উত্তরঃ এটি মারাত্মক শির্কি কথা। এই কথা বলার দ্বারা সে নিজেকে মহান আল্লাহর ক্ষমা করার ক্ষমতাকে ছোট হিসেবে দেখেছে, নিজেকে সে আল্লাহর চেয়েও বেশি ক্ষমতাধর মনে করেছে। এই ধরণের জাহেলি কথা অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
৭৬) মৃত্যুর ফিরিশতাকে “আযরাইল” বলা। উত্তরঃ মৃত্যুর ফিরিশতাকে কুরআন এবং হাদিসে “মালাকুল মাউত” বলা হয়েছে এবং এটি বলাই উচিত। আযরাইল নামটি এসেছে কিছু ইজরাইলি বর্ণনা থেকে। তাই আমরা এই নাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকবো।
৭৭) জানাযার পর আলাদা করে সম্মিলিত মুনাজাতকে নিয়ম বানিয়ে ফেলা। উত্তরঃ জানাযা হল মৃত ব্যক্তির জন্য দুয়ার সালাত। এরপর আলাদা করে মুনাজাত করার কোন প্রয়োজন নেই। কেউ ব্যক্তিগতভাবে পরে করতে পারে। তবে নিয়ম বানিয়ে ফেললে বিদয়াত সাব্যস্ত হবে।