হাদীসে ক্বুদসী’ কি

‘হাদীসে ক্বুদসী’ কি?
‘ক্বুদস’ শব্দের অর্থ হচ্ছে – পবিত্র, যা দোষ-ক্রটি থেকে মুক্ত। এটা আল্লাহ তাআ’লার ‘আসমাউল হুসনা’ বা গুনবাচক নাম সমূহের একটি নাম।
হাদীসে ক্বুদসীর সংজ্ঞাঃ যে হাদীসের মূল কথা সরাসরি আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ থেকে এসেছে, সেই হাদীসকেই ‘হাদীসে ক্বুদসী’ বলা হয়।
ব্যখ্যাঃ আল্লাহ তাআ’লার যেই কথাগুলো ক্বুরানুল কারীমের ‘আয়াত’ হিসেবে নাযিল করা হয়নি বরং, আল্লাহ তাআ’লা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে স্বপ্নের মাধ্যমে অথবা তাঁর অন্তরে ‘ইলহাম’ করে পাঠিয়েছেন, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কথাগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নিজ ভাষায় তাঁর উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন, সেইগুলোকে হাদীসে ক্বুদসী বলা হয়।
যেহেতু এই হাদীসগুলো সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত, তাই এগুলোকে ‘হাদীসে ক্বুদসী’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
হাদীসে ক্বুদসীর কথাগুলো আল্লাহর, কিন্তু তার ভাষা বা বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে। অপরদিকে, ক্বুরানুল কারীমের আয়াতগুলোর কথা এবং ভাষা – সমস্তটাই স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লার।
হাদীসে ক্বুদসীগুলো বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ সহ অন্যান্য হাদীসের কিতাবগুলোতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। হাদীসে ক্বুদসী চেনার উপায় হচ্ছে, এই হাদীসগুলোতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এইভাবে বলেন, “আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, বলেন বা বলবেন”।
উল্লেখ্য, অনেকে মনে করেন হাদীসে ক্বুদসী হিসেবে যেইগুলো বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলোই বুঝি সহীহ! এটা ঠিক নয়। অন্য হাদীসের মতো, হাদীসে ক্বুদসীর সনদ বা রাবীর উপর নির্ভর করে হাদীসে ক্বুদসীও সহীহ, হাসান, জয়ীফ অথবা জাল হতে পারে। আজ একটি বিখ্যাত ‘সহীহ’ হাদীসে ক্বুদসী ও একটি কুখ্যাত ‘জাল’ হাদীসে ক্বুদসী আপনাদের জন্যে উপস্থাপন করছি।
___________________________
একটি বিখ্যাত ‘সহীহ’ হাদীসে ক্বুদসীঃ
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ আযযা ওয়া-যাল কিয়ামতের দিন বলবেন,
“হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসনি।”
মানুষ তখন বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে দেখতে যাব, আপনি হচ্ছেন সারা জাহানের পালনকর্তা?”
তখন আল্লাহ বলবেন, “তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে?”
(আল্লাহ আরো বলবেন) “হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি।”
মানুষ তখন বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে খাবার দেব, আপনি তো হচ্ছেন সারা জাহানের প্রভু?”
তখন আল্লাহ বলবেন, “তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাবার দিতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে?”
(আল্লাহ আরো বলবেন) “হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি।”
বান্দা বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে পানি পান করাবো, আপনি তো হচ্ছেন সমগ্র জগতের পালনকর্তা?’
তখন আল্লাহ বলবেন, “আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমাকে কাছে পেতে?”
সহীহ মুসলিমঃ ২৫৬৯; মুসনাদে আহমাদঃ ৮৯৮৯।
রিয়াদুস সালেহীন, অধ্যায়ঃ ৭/ রোগীদর্শন ও জানাযায় অংশগ্রহণ, হাদীস নং-৯০১।
___________________________
একটি কুখ্যাত ‘জাল’ হাদীসে ক্বুদসীঃ
“হে নবী! আমি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম এই বিশ্ব জগতের কিছুই সৃষ্টি করতাম না।”
আমাদের দেশের পীরপন্থী সূফীরা এই কথাটিকে আল্লাহর কথা বলে প্রচার করে থাকে, অথচ এটা একটা বানোয়াট বা জাল কথা, যার কোন সঠিক দলিল প্রমান নেই।
ইমাম আয-যাহাবি (রহঃ), ইমাম ইবন হিব্বান (রহঃ), ইমাম নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ) সহ অনেক আলেমরা এই জাল কথাটির ব্যপারে সতর্ক করেছেন।
ইমাম মুহাম্মদ বিন আলী আশ-শওকানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“ইমাম আল-সানআনী (রহঃ) বলেছেন, “এটা একটা মওজু বা জাল হাদীস।”
আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমুয়াহ ফিল আহাদীস আল-মাওজুয়াহঃ পৃষ্ঠা ৩২৬।
শায়খ মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,
“এটা একটা মওজু বা জাল হাদীস।”
সিলসিলাহ আল-জয়ীফাহঃ ২৮২।
_______________________