স্বলাতের বিবিধ জ্ঞাতব্য

স্বলাতের বিবিধ জ্ঞাতব্য (مسائل متفرقة فى الصلاة)
সূত্র :: স্বলাতুর রাসূল (ﷺ)
আসাদুল্লাহ আল গালিব

১. পরিবহনে স্বলাত (الصلاة فى المركب)

পরিবহনে কিংবা ভীতিকর অবস্থায় ক্বিবলামুখী না হ’লেও চলবে।[1] অবশ্য পরিবহনে ক্বিবলামুখী হয়ে স্বলাত শুরু করা বাঞ্ছনীয়।[2] যখন পরিবহনে রুকূ-সিজদা করা অসুবিধা মনে হবে, তখন কেবল তাকবীর দিয়ে ও মাথার ইশারায় স্বলাত আদায় করবে। সিজদার সময় মাথা রুকূর চেয়ে কিছুটা বেশী নীচু করবে।[3] যখন ক্বিবলা ঠিক করা অসম্ভব বিবেচিত হবে, কিংবা সন্দেহে পতিত হবে, তখন নিশ্চিত ধারণার ভিত্তিতে ক্বিবলার নিয়তে একদিকে ফিরে সামনে সুৎরা রেখে স্বলাত আদায় করবে।[4] নৌকায় দাঁড়িয়ে স্বলাত আদায় করবে, যদি ডুবে যাওয়ার ভয় না থাকে।[5] এ সময় বা অন্য যে কোন সময় কষ্টকর দাঁড়ানোর জন্য কিছুতে ঠেস দেওয়া যাবে। [6]

২. রোগীর স্বলাত (صلاة المريض) স্বলাতের বিবিধ জ্ঞাতব্য

পীড়িতাবস্থায় দাঁড়াতে অক্ষম হ’লে কিংবা রোগবৃদ্ধির আশংকা থাকলে বসে, শুয়ে বা কাত হয়ে স্বলাত আদায় করবে।[7] সিজদার জন্য সামনে বালিশ, টুল বা উঁচু কিছু নেওয়া যাবে না। যদি মাটিতে সিজদা করা অসম্ভব হয়, তাহ’লে ইশারায় স্বলাত আদায় করবে। সিজদার সময় রুকূর চেয়ে মাথা কিছুটা বেশী নীচু করবে।[8] জানা আবশ্যক যে, শারঈ ওযর ব্যতীত ‘বসা মুছল্লী দাঁড়ানো মুছল্লীর অর্ধেক নেকী পেয়ে থাকেন’।[9]

৩. সুৎরার বিবরণ (السترة)

মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে যাওয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত যে, এতে তার কত বড় পাপ রয়েছে, তাহ’লে তার জন্য সেখানে চল্লিশ দিন বা চল্লিশ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হ’ত অতিক্রম করে চলে যাওয়ার চাইতে।[10] ইমাম ও সুৎরার মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারীকে হাদীছে ‘শয়তান’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।[11] এজন্য কিবলার দিকে লাঠি, দেওয়াল, মানুষ বা যেকোন বস্ত্ত দ্বারা মুছল্লীর সম্মুখে সুৎরা বা আড়াল করতে হয়।[12] তবে জামা‘আত চলা অবস্থায় অনিবার্য কারণে মুক্তাদীদের কাতারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে।[13] সিজদার স্থান থেকে সুৎরার মধ্যে একটি বকরী যাওয়ার মত ফাঁকা রাখা আবশ্যক।[14] অতএব মসজিদে বা খোলা স্থানে মুছল্লীর সিজদার স্থান হ’তে একটি বকরী যাওয়ার মত দূরত্ব রেখে অতিক্রম করা যেতে পারে। তবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাই উত্তম। উল্লেখ্য যে, সুৎরা না পেলে সম্মুখে রেখা টানার হাদীছ ‘যঈফ’। [15] আজকাল বিভিন্ন মসজিদে সুৎরা বানিয়ে রাখা হয়। যা মুছল্লীর সামনে রেখে যাতায়াত করা হয়। এটি সামনে দিয়ে যাবার শামিল এবং শরী‘আতে এর কোন প্রমাণ নেই।

৪. যাদের ইমামতি সিদ্ধ (من تصح إمامتهم)

(১) বুঝদার বালক (২) অন্ধ ব্যক্তি (৩) বসা ব্যক্তির ইমামত দাঁড়ানো ব্যক্তির জন্য (৪) দাঁড়ানো ব্যক্তির ইমামত বসা ব্যক্তির জন্য (৫) নফল আদায়কারীর ইমামত ফরয আদায়কারীর জন্য(৬) ফরয আদায়কারীর ইমামত নফল আদায়কারীর জন্য (৭)তায়াম্মুমকারীর ইমামত ওযূকারীর জন্য (৮) ওযূকারীর ইমামত তায়াম্মুমকারীর জন্য (৯) মুক্বীমের ইমামত মুসাফিরের জন্য(১০) মুসাফিরের ইমামত মুক্বীমের জন্য।[16]

৫. ফাসিক ও বিদ‘আতীর ইমামত (إمامة الفاسق والمبتدع)

ফাসিক ও বিদ‘আতীর পিছনে স্বলাত আদায় করা মাকরূহ।[17] তবে বাধ্যগত অবস্থায় জায়েয আছে। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেন, يُصَلُّوْنَ لَكُمْ فَإِنْ أَصَابُوْا فَلَكُمْ وَإِنْ أَخْطَئُوْا فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ ‘ইমামগণ তোমাদের স্বলাতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এক্ষণে তারা সঠিকভাবে স্বলাত আদায় করালে তোমাদের জন্য নেকী রয়েছে। আর তারা ভুল করলে তোমাদের জন্য রয়েছে নেকী, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে গোনাহ’। [18] এ বিষয়ে মহান খলীফা ওছমান (রাঃ)-কে বিদ্রোহীদের দ্বারা গৃহে অবরুদ্ধ অবস্থায় জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, الصلاةُ أحسنُ ما يعملُ الناسُ فإذا أحسنَ الناسُ فأَحْسِنْ معهم وإذا أَسَاؤُا فَاجْتَنِبْ إِسَاءَتَهُمْ ‘মানুষের শ্রেষ্ঠ আমল হ’ল স্বলাত। অতএব যখন তারা ভাল কাজ করে, তখন তুমি তাদের সাথী হও। আর যখন তারা মন্দ কাজ করে, তখন তুমি তাদের মন্দ কাজ থেকে দূরে থাক’। হাসান বছরীকে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, صَلِّ و عليه بِدْعَتُهُ ‘তুমি তার পিছনে স্বলাত আদায় কর। আর বিদ‘আতের গোনাহ বিদ‘আতীর উপরে বর্তাবে’। যুহরী বলেন, বাধ্যগত অবস্থায় ব্যতীত আমরা এটা জায়েয মনে করতাম না’।[19] আল্লাহ বলেন, مَعَ الرَّاكِعِيْنَ وَارْكَعُوْا ‘তোমরা রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর’(বাক্বারাহ ২/৪৩)। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন যে, তিন ব্যক্তির স্বলাত কবুল হয়না। তার মধ্যে একজন হ’ল ঐ ইমাম, যাকে মুছল্লীরা পসন্দ করে না’। [20]

সুন্নাত অমান্যকারী ব্যক্তিকে ইমাম বানানো যাবে না। এমনকি ফাসিক ও বিদ‘আতী কোন লোককে মসজিদ কমিটির সভাপতি বা সদস্য করা যাবে না। কেননা এতে তাকে সম্মান দেখনো হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ‘মুনকার’ কিছু দেখলে তা যেন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান।[21]

৬. মহিলাদের স্বলাত ও ইমামত (صلاة النساء وإمامتهن)

(ক) পুরুষ ও মহিলাদের স্বলাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই। স্বলাতে নারীরা পুরুষের অনুগামী।[22] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নারী-পুরুষ সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা সেভাবে স্বলাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে স্বলাত আদায় করতে দেখছ’।[23] মসজিদে নববীতে নারী-পুরুষ সকলে তাঁর পিছনে একই নিয়মে পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ও জুম‘আ আদায় করেছেন।[24]

(খ) তবে মসজিদে পুরুষের জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ও জুম‘আ আদায় করা তাদের জন্য ফরয নয়। [25] অবশ্য মসজিদে যেতে তাদেরকে বাধা দেওয়াও যাবে না। এ সময় তারা সুগন্ধি মেখে (বা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে) মসজিদে জামা‘আতে যেতে পারবে না।[26] মহিলাদের জন্য বাড়ীতে গৃহকোণে নিভৃতে একাকী বা জামা‘আতের সাথে স্বলাত আদায় করা উত্তম।[27]

(গ) মহিলাগণ (নিম্নস্বরে) আযান ও ইক্বামত দিবেন এবং মহিলা জামা‘আতের প্রথম কাতারের মধ্যস্থলে সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে ইমামতি করবেন।[28] ফরয ও তারাবীহর জামা‘আতে তাদের ইমামতি করার স্পষ্ট দলীল রয়েছে।[29] মা আয়েশা (রাঃ) ও উম্মে সালামাহ (রাঃ) প্রমুখ মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতি করতেন। [30] বদর যুদ্ধের সময় উম্মে ওয়ারাক্বাহ (রাঃ)-কে তার পরিবারের ইমামতি করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তার জন্য একজন বৃদ্ধ মুওয়াযযিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।[31] অন্য বর্ণনায় খাছভাবে এসেছে যে, রাসূল (ﷺ) তাকে তার পরিবারের মহিলাদের ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন’।[32] (ঘ) মহিলারা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না।[33] কেননা আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’ (নিসা ৪/৩৪)। তাছাড়া এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ)-এর কোন নির্দেশ নেই এবং তাঁর ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এর কোন নযীর বা প্রচলন নেই। আর এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় যা দ্বীন ছিল না, পরে তা দ্বীন হিসাবে গৃহীত হবে না।[34]

৭. অন্ধ, গোলাম ও বালকদের ইমামত (إمامة الأعمى والمملوك والصبى)

(ক) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-কে দু’বার মদীনার ইমামতির দায়িত্ব দেন।[35] অন্ধ ছাহাবী উৎবান বিন মালেক (রাঃ) তার কওমের ইমামতি করতেন। [36]

(খ) আবু হুযায়ফা (রাঃ)-এর গোলাম সালেম ক্বোবা-র ‘আছবাহ (العصبة) নামক স্থানে হিজরতের পূর্বে মুসলিমদের ইমামতি করতেন। হযরত ওমর ও আবু সালামা (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী তার মুক্তাদী হ’তেন।[37] হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর গোলাম আবু ‘আমর মুক্ত হওয়ার পূর্বে লোকদের ইমামতি করতেন (মুসনাদে শাফেঈ)।

(গ) ‘আমর বিন সালামাহ বিন ক্বায়েস (রাঃ) ভাল ক্বারী হওয়ার কারণে ৬, ৭ বা ৮ বছর বয়সে ইমামতি করেছেন।[38]

৮. ইমামতের হকদার (الأحق بالإمامة)

(১) বালক বা কিশোর হ’লেও ক্বিরাআতে পারদর্শী ব্যক্তিই ইমামতির প্রথম হকদার।

(২) ইলমে হাদীছে পারদর্শী ও সুন্নাতের পাবন্দ ব্যক্তি।

(৩) সেদিকে সমান হ’লে বয়সে যিনি বড় তিনিই ইমাম হবেন।[39]

৯. ইমামের অনুসরণ (متابعة الإمام)

ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ‘ইমাম নিযুক্ত করা হয়, কেবল তাঁকে অনুসরণ করার জন্য’।[40] ইমামের পিছে পিছে মুক্তাদী তাকবীর, রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম ফিরাবে। [41] বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিজদায় গিয়ে মাটিতে চেহারা না রাখা পর্যন্ত আমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পিঠ ঝুঁকাতো না।[42] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘মুক্তাদী যদি ইমামের আগে মাথা উঠায় (অর্থাৎ রুকূ-সিজদা থেকে বা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়), তবে (ক্বিয়ামতের দিন) তার মাথা হবে গাধার মাথা’ (অর্থাৎ তার স্বলাত কবুল হবে না)। [43]

ইমামের অনুসরণ হবে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যাওয়ার জন্য। যেমন তাকবীর, রুকূ, ক্বিয়াম, সুজূদ, সালাম ইত্যাদি সময়ে। এর অর্থ এটা নয় যে, ইমাম সুন্নাত তরক করলে মুক্তাদীকেও সুন্নাত তরক করতে হবে। অতএব ইমাম বুকে হাত না বাঁধলে বা সশব্দে আমীন না বললে বা রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করলেও মুক্তাদী সহিহ হাদীছ অনুযায়ী সেগুলি আমল করবেন। এর ফলে তিনি সুন্নাত অনুসরণের নেকী পাবেন। ওযরের কারণে ইমাম বা কোন মুক্তাদী বসে পড়তে পারেন। কিন্তু অন্যেরা দাঁড়িয়ে পড়বেন। [44] ইমাম অবশ্যই প্রথম রাক‘আত তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ করবেন। ওযূ টুটে গেলে তিনি তাঁর পিছন থেকে একজনকে ইমামতি দিয়ে বেরিয়ে যাবেন। ইমাম যদি ভুলবশত: নাপাক অবস্থায় ইমামতি করে থাকেন, তাহ’লে জামা‘আত শেষে পাক হয়ে তিনি তা পুনরায় পড়বেন। কিন্তু মুক্তাদীদের পুনরায় পড়তে হবে না।[45]

১০. মুসাফিরের ইমামত (إمامة المسافر)

ইমাম ক্বছর করলে মুক্বীম পুরা পড়বেন এবং ইমাম পুরা পড়লে মুসাফির পুরা পড়বেন। যদিও কিছু অংশ পান।[46] কেউ কোথাও গেলে সেই এলাকার লোকই ইমামতি করবেন।[47] তবে তাদের অনুমতিক্রমে তিনি ইমামতি করতে পারবেন। [48]

১১. জামা‘আত ও কাতার (الجماعة والصف)

(ক) দু’জন মুছল্লী হ’লে জামা‘আত হবে। ইমাম বামে ও মুক্তাদী ডাইনে দাঁড়াবে।[49] তিনজন মুছল্লী হ’লে ইমাম সম্মুখে এবং দু’জন মুক্তাদী পিছনে দাঁড়াবে।[50] তবে বিশেষ কারণে ইমামের দু’পাশে দু’জন সমান্তরালভাবে দাঁড়াতে পারেন। তার বেশী হ’লে অবশ্যই পিছনে কাতার দিবেন।[51] সামনের কাতারে পুরুষগণ ও পিছনের কাতারে মহিলাগণ দাঁড়াবেন। [52] পুরুষ সকলের ইমাম হবেন। কিন্তু নারী কখনো পুরুষের ইমাম হবেন না। নারী ও পুরুষ কখনোই পাশাপাশি দাঁড়াবেন না। দু’জন বয়স্ক পুরুষ, একটি বালক ও একজন মহিলা মুছল্লী হ’লে বয়স্ক একজন পুরুষ ইমাম হবেন। তাঁর পিছনে উক্ত পুরুষ ও বালকটি এবং সকলের পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। আর যদি দু’জন পুরুষ ও একজন মহিলা হন, তাহ’লে ইমামের ডাইনে পুরুষ মুক্তাদী দাঁড়াবেন এবং পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। [53] একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হ’লে সামনে পুরুষ ও পিছনে মাহিলা দাঁড়াবেন। ইমামকে মধ্যবর্তী ধরে কাতার ডাইনে ও বামে সমান করতে হবে। তবে ডাইনে সামান্য বৃদ্ধি হবে। কিন্তু কোনক্রমেই ডান প্রান্ত থেকে বা মসজিদের উত্তর দেওয়াল থেকে ২য় ও পরবর্তী কাতার সমূহ শুরু করা যাবে না। প্রয়োজনে ইমাম উঁচুতে ও মুক্তাদীগণ নীচে দাঁড়াতে পারেন।[54] ইমামের আওয়ায পৌঁছলে এবং ইক্তেদা সম্ভব হ’লে ইবনু হাজার বলেন, ইমাম নীচে থাকুন বা উপরে থাকুন স্বলাত আদায় করা জায়েয।[55] তবে ইমামের নীচে থাকাই উত্তম। এক ব্যক্তি দ্বিতীয়বার জামা‘আতে ইমাম বা মুক্তাদী হিসাবে যোগদান করতে পারেন। তখন দ্বিতীয়টি তার জন্য নফল হবে। [56] ইমাম অতি দীর্ঘ করলে কিংবা অন্য কোন বাধ্যগত কারণে মুক্তাদী সালাম ফিরিয়ে জামা‘আত ত্যাগ করে একাকী শুরু থেকে স্বলাত আদায় করতে পারবেন।[57]

(খ) কাতার সোজা করা (تسوية الصفوف)

সম্মুখের কাতারগুলি আগে পূর্ণ করতে হবে।[58] কেননা ফেরেশতাগণ আল্লাহর সম্মুখে এভাবেই কাতার দিয়ে থাকেন। [59] কাতার সোজা করতে হবে এবং কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاَةِ ‘তোমরা কাতার সোজা কর, কেননা কাতার সোজা করা স্বলাত প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত’। [60] আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বলাতের শুরুতে আমাদের কাঁধগুলিতে হাত দিয়ে পরস্পরে মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ ‘তোমরা কাতার সোজা কর, বিভক্ত হয়ে দাঁড়িয়ো না। তাতে তোমাদের অন্তরগুলি বিভক্ত হয়ে যাবে’।[61] আনাস (রাঃ) বলেন, وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَ قَدَمَهُ بِقَدَمِهِ ‘আমাদের মধ্য থেকে একজন পরস্পরের কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে দিতেন’। ছাহাবী নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) বলেন, فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَرُكْبَتَهُ بِرُكْبَةِ صَاحِبِهِ وَكَعْبَهُ بِكَعْبِهِ ‘অতঃপর দেখলাম যে, একজন ব্যক্তি মুছল্লীদের পরস্পরের কাঁধে কাঁধ, হাঁটুতে হাঁটু ও গোড়ালিতে গোড়ালি মিলিয়ে দিচ্ছেন’।[62] যার ভিত্তিতে ইমাম বুখারী অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে- بَابُ إِلْزَاقِ الْمَنْكِبِ بِالْمَنْكِبِ وَالْقَدَمِ بِالْقَدَمِ فِى الصَّفِّ ‘স্বলাতের কাতারে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলানো অনুচ্ছেদ’। [63]

এখানে পা মিলানো অর্থ পায়ের সাথে পা লাগিয়ে দেওয়া। যাতে কোনরূপ ফাঁক না থাকে এবং কাতারও সোজা হয়। বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَ تَرَاصُّوْا ‘তোমরা কাতার সোজা কর এবং পরস্পরে ভালভাবে (কাঁধ ও পা) মিলাও’।[64] আবুদাঊদের অন্য বর্ণনায় এসেছে, حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ… وَلاَ تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ ‘কাঁধগুলি সমান কর ও ফাঁক বন্ধ কর এবং শয়তানের জন্য কোন জায়গা খালি ছেড়োনা’। ‘কেননা আমি দেখি যে, শয়তান ছোট কালো বকরীর ন্যায় (كأَنَّها الْحَذَفُ) তোমাদের মাঝে ঢুকে পড়ে’। [65] ইবনু হাজার বলেন, নু‘মান বিন বাশীরের বর্ণনার শেষাংশে كَعْبَه بكَعْبِه ‘গোড়ালির সাথে গোড়ালি’ কথাটি এসেছে। এর দ্বারা পায়ের পার্শ্ব বুঝানো হয়েছে, পায়ের পিছন অংশ নয়, যেমন অনেকে ধারণা করেন’।[66] এখানে মুখ্য বিষয় হ’ল দু’টি: কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা। অতএব পায়ের সম্মুখভাগ সমান্তরাল রেখে পাশাপাশি মিলানোই উত্তম।

পুরুষ ও মহিলা মুছল্লী স্ব স্ব কাতারে দু’পা স্বাভাবিক ফাঁক করে দাঁড়াবেন। যাতে পায়ের মাঝখানে নিজের জুতা জোড়া রাখা যায়। [67] দেহের ভারসাম্যের অধিক পা ফাঁক করবেন না। মহিলা মুছল্লী তার দুই গোড়ালি একত্রিত করে দাঁড়াবেন না। এগুলি স্রেফ কুসংস্কার মাত্র। পরস্পরে কাঁধ, হাঁটু ও গোড়ালি মিলানোর কঠোর নির্দেশ উপেক্ষা করে বানোয়াট যুক্তিতে নিয়মিতভাবে পরস্পরে পা ফাঁক করে কাতার দাঁড়ানোর মধ্যে কোন নেকী নেই, স্রেফ গোনাহ রয়েছে। এই বাতিল রেওয়াজ থেকে দ্রুত তওবা করে পায়ে পা ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাই ভাই হয়ে কাতার দাঁড়ানো কর্তব্য।

উল্লেখ্য যে, দুই পিলারের মাঝখানে কাতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।[68]

(গ) ১ম কাতারের নেকী :

১ম কাতারে নেকী বেশী। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যদি লোকেরা জানতো ১ম কাতারে কি নেকী আছে, তাহ’লে তারা লটারী করত। [69] তিনি বলেন, ‘প্রথম কাতার হ’ল ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা জানতে এর ফযীলত কত বেশী, তাহ’লে তোমরা এখানে আসার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে উঠতে’।[70] অবশ্য ১ম কাতারে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিগণ ইমামের নিকটবর্তী থাকবেন, অতঃপর মর্যাদা অনুযায়ী অন্যান্যগণ। এ সময় মসজিদে বাজারের মত শোরগোল করা নিষেধ (إِيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الأَسْوَاقِ)। [71]

(ঘ) একাকী কাতারের পিছনে না দাঁড়ানো :

কাতারের পিছনে একাকী দাঁড়াবে না। কেননা অনুরূপভাবে স্বলাত আদায়ের কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক ব্যক্তিকে পুনরায় স্বলাত আদায় করতে বলেন।[72] তবে সামনের কাতারে জায়গা না থাকলে বাধ্যগত অবস্থায় পিছনে একাকী দাঁড়ানো জায়েয আছে। [73]

১২. আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করা (عقد التسابيح بالأنامل)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, وَأَعْقِدْنَ بِالأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولاَتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ ‘তোমরা তাসবীহ সমূহ আঙ্গুলে গণনা কর। কেননা আঙ্গুল সমূহ ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে এবং তারা কথা বলবে’।[74] দানা বা কংকর দিয়ে তাসবীহ গণনার হাদীছটি যঈফ [75] এবং ‘তাসবীহ মালায় গণনাকারী ব্যক্তি কতই না সুন্দর’ (نِعْمَ الْمُذَكِّرُ السُّبْحَةَ) মর্মে বর্ণিত মরফূ হাদীছটি মওযূ বা জাল।[76] অতএব প্রচলিত তাসবীহ মালায় বা অন্য কিছু দ্বারা তাসবীহ গণনা করা সুন্নাত বিরোধী আমল। তাছাড়া এতে ‘রিয়া’ অর্থাৎ লোক দেখানোর সম্ভাবনা বেশী থাকে। আর ‘রিয়া’ হ’ল ছোট শিরক’।[77] ফলে তাসবীহ পাঠের সকল নেকী বরবাদ হবার সম্ভাবনা থাকবে।

তাসবীহ দু’হাতে বা বাম হাতে নয়। বরং ডান হাতে গণনা করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খানাপিনাসহ সকল শুভ ও পবিত্র কাজ ডান হাতে করতেন এবং পায়খানা-পেশাব ও অন্যান্য কাজ বামহাতে করতেন।[78] আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি।[79] আর এটা স্বত:সিদ্ধ কথা যে, ডান হাতের গণনা কড়ে আঙ্গুল দিয়ে শুরু করতে হয়, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নয়। কেননা ডান হাতের ডান পাশ কড়ে আঙ্গুল দিয়েই শুরু হয়েছে এবং এ আঙ্গুল দিয়ে গণনা শুরু করাটাই সহজ ও স্বভাবগত।

১৩. আয়াত সমূহের জওয়াব (إجابة آيات القرآن)

(১) সূরা আ‘লা-তে ‘সাবিবহিস্মা রবিবকাল আ‘লা’-এর জওয়াবে ‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’ (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক, যিনি সর্বোচ্চ)। [80]

(২) সূরা ক্বিয়ামাহ-এর শেষ আয়াতের জওয়াবে ‘সুবহা-নাকা ফা বালা’ (মহাপবিত্র আপনি! অতঃপর হাঁ, আপনিই মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন)। [81]

(৩) সূরা গাশিয়া-র শেষে ‘আল্লা-হুম্মা হা-সিবনী হিসা-বাঁই ইয়াসীরা’ বলে প্রার্থনা করা (অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি সহজভাবে আমার হিসাব গ্রহণ কর’)। [82] হাদীছে নির্দিষ্ট কোন সূরার নাম বলা হয়নি। তবে অর্থের বিবেচনায় এখানে অত্র দো‘আ পাঠ করা হয়ে থাকে। অন্য আয়াতে ‘হিসাব’-এর বিবরণ আসলে সেখানেও এ দো‘আ পড়া যাবে।

(৪) সূরা রহমান-য়ে ‘ফাবে আইয়ে আ-লা-য়ে রাবিবকুমা তুকায্যিবা-ন’-এর জওয়াবে ‘লা বেশাইয়িম মিন নি‘আমিকা রববানা নুকায্যিবু ফালাকাল হাম্দ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার কোন একটি নে‘মতকেও আমরা অস্বীকার করি না। অতঃপর তোমার জন্যই সকল প্রশংসা)।[83]

উল্লেখ্য যে, (ক) সূরা তীন-এর শেষে ‘বালা ওয়া আনা ‘আলা যা-লিকা মিনাশ শা-হেদীন’ এবং (খ) সূরায়ে মুরস্বলাত-এর শেষে ‘আ-মান্না বিল্লাহ’ বলার হাদীছ ‘যঈফ’।[84] (গ) সূরা বাক্বারাহর শেষে ‘আমীন’ বলার হাদীছ ‘যঈফ’। [85] (ঘ) সূরা মুল্কের শেষে দো‘আ পাঠের কোন ভিত্তি নেই।

মিশকাত-এর ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, স্বলাতের মধ্যে হৌক বা বাইরে হৌক, পাঠকারীর জন্য উপরোক্ত আয়াত সমূহের জওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব। যা বর্ণিত হাদীছ সমূহে উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু শ্রোতা বা মুক্তাদীর জন্য উপরোক্ত আয়াত সমূহের জওয়াব দেওয়ার প্রমাণে স্পষ্ট কোন মরফূ হাদীছ আমি অবগত নই। তবে আয়াত গুলিতে প্রশ্ন রয়েছে। সেকারণ জওয়াবের মুখাপেক্ষী। কাজেই পাঠকারী ও শ্রোতা উভয়ের জন্য উত্তর দেওয়া বাঞ্ছনীয়। [86] শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, বক্তব্যটি মুৎলাক্ব অর্থাৎ সাধারণ ভাবে এসেছে। অতএব তা স্বলাত ও স্বলাতের বাইরে এবং ফরয ও নফল সব স্বলাতকে শামিল করে। তিনি ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা’র বরাতে একটি ‘আছার’ উদ্ধৃত করেন এই মর্মে যে, ছাহাবী আবু মূসা আশ‘আরী ও মুগীরা বিন শো‘বা (রাঃ) ফরয স্বলাতে উক্ত জওয়াব দিতেন। ওমর ও আলী (রাঃ) সাধারণভাবে সকল অবস্থায় জওয়াব দিতেন। [87]

১৪. সিজদায়ে সহো (سجود السهو)

স্বলাতে ভুলক্রমে কোন ‘ওয়াজিব’ তরক হয়ে গেলে শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদ শেষে সালাম ফিরানোর পূর্বে ‘সিজদায়ে সহো’ দিতে হয়। রাক‘আতের গণনায় ভুল হ’লে বা সন্দেহ হ’লে বা কম বেশী হয়ে গেলে বা ১ম বৈঠকে না বসে দাঁড়িয়ে গেলে ইত্যাদি কারণে এবং মুক্তাদীগণের মাধ্যমে ভুল সংশোধিত হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ আবশ্যক হয়। শাওকানী বলেন, ওয়াজিব তরক হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ ওয়াজিব হবে এবং সুন্নাত তরক হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ সুন্নাত হবে।[88] অতএব স্বলাতে ক্বিরাআত ভুল হ’লে বা সের্রী স্বলাতে ভুলবশত ক্বিরাআত জোরে বা তার বিপরীত হয়ে গেলে সহো সিজদার প্রয়োজন নেই।

নিয়ম : (১) যদি ইমাম স্বলাতরত অবস্থায় নিজের ভুল সম্পর্কে নিশ্চিত হন কিংবা সরবে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার মাধ্যমে লোকমা দিয়ে মুক্তাদীগণ ভুল ধরিয়ে দেন, তবে তিনি শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদ শেষে তাকবীর দিয়ে পরপর দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিবেন। অতঃপর সালাম ফিরাবেন।[89]

(২) যদি রাক‘আত বেশী পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন, অতঃপর ভুল ধরা পড়ে, তখন (পূর্বের ন্যায় বসে) তাকবীর দিয়ে ‘সিজদায়ে সহো’ করে সালাম ফিরাবেন। [90]

(৩) যদি রাক‘আত কম করে সালাম ফিরিয়ে দেন। তখন তাকবীর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাকী স্বলাত আদায় করবেন ও সালাম ফিরাবেন। অতঃপর (তাকবীর সহ) দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিয়ে পুনরায় সালাম ফিরাবেন।[91]

(৪) স্বলাতের কমবেশী যাই-ই হৌক সালামের আগে বা পরে দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিবেন।[92]

মোট কথা ‘সিজদায়ে সহো’ সালামের পূর্বে ও পরে দু’ভাবেই জায়েয আছে। কিন্তু তাশাহহুদ শেষে কেবল ডাইনে একটি সালাম দিয়ে দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ করে পুনরায় তাশাহ্হুদ ও দরূদ পড়ে দু’দিকে সালাম ফিরানোর প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই।[93] সিজদায়ে সহো-র পরে ‘তাশাহ্হুদ’ পড়ার বিষয়ে ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) হ’তে যে হাদীছটি এসেছে, সেটি ‘যঈফ’।[94] তাছাড়া একই রাবী কর্তৃক বর্ণিত বুখারী ও মুসলিমের সহিহ হাদীছের বিরোধী। কেননা সেখানে তাশাহ্হুদের কথা নেই।[95]

ইমামের ভুল হ’লে পুরুষ মুক্তাদী সরবে ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলে এবং মহিলা মুক্তাদী হাতের পিঠে হাত মেরে শব্দ করে ‘লোকমা’ দিবে (কুরতুবী)। [96] অর্থাৎ ভুল স্মরণ করিয়ে দিবে। এখানে নারী ও পুরুষের লোকমা দানের পৃথক পদ্ধতির কারণ হ’ল এই যে, নারীর কণ্ঠস্বরটাও লজ্জার অন্তর্ভুক্ত (لِأَنَّ صَوْتَهُنَّ عَوْرَةٌ)। যা প্রকাশ পেলে পুরুষের মধ্যে ফিৎনার সৃষ্টি হ’তে পারে। বস্ত্তত: একারণেই নারীদের উচ্চকণ্ঠে আযান দিতে নিষেধ করা হয়েছে।[97]

১৫. সিজদায়ে তেলাওয়াত (سجدة الةلاوة)

পবিত্র কুরআনে এমন কতকগুলি আয়াত রয়েছে, যেগুলি তেলাওয়াত করলে বা শুনলে মুমিন পাঠক ও শ্রোতা সকলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি সিজদা করতে হয়। এই সিজদা যেহেতু স্বলাত নয়, সেকারণে এর জন্য ওযূ বা ক্বিবলা শর্ত নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে মুশরিকরাও একবার সিজদা দিয়েছিল। এক স্থানে দীর্ঘক্ষণ থাকলে এ সিজদা সঙ্গে সঙ্গে না করে কিছু পরেও করা যায়। স্থান পরিবর্তন হ’লে আর সিজদা করতে হয় না, ক্বাযাও আদায় করতে হয় না। জেহরী বা সের্রী স্বলাতে তেলাওয়াত করলেও এ সিজদা দিতে হয়। একই আয়াত বারবার পড়লে তেলাওয়াত শেষে একবার সিজদা দিলেই যথেষ্ট হবে। গাড়ীতে চলা অবস্থায় সিজদার আয়াত পড়লে বা শুনলে ইশারায় বা নিজের হাতের উপরে সিজদা করবে। এই সিজদা ফরয নয়। করলে নেকী আছে, না করলে গোনাহ নেই।

নিয়ম : প্রথমে তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবে। অতঃপর দো‘আ পড়বে এবং পুনরায় তাকবীর দিয়ে মাথা উঠাবে।[98] সিজদা মাত্র একটি হবে। এতে তাশাহ্হুদ নেই, সালামও নেই।[99]

ফযীলত : সিজদার আয়াত শুনে বনু আদম সিজদায় চলে গেলে শয়তান কাঁদতে থাকে আর বলে যে, হায়! বনু আদমকে সিজদার আদেশ দিলে সে সিজদা করল ও জান্নাতী হ’ল। আর আমাকে সিজদার আদেশ দিলে আমি অবাধ্যতা করলাম ও জাহান্নামী হ’লাম।[100] একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সূরায়ে নাজম তেলাওয়াত শেষে সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা করলে ঐ সময় কা‘বা চত্বরে উপস্থিত মুশরিক কুরায়েশরা সবাই সিজদায় পড়ে যায়। কিন্তু একজন বৃদ্ধ কুরায়েশ নেতা একমুঠো মাটি কপালে ঠেকিয়ে বলে যে, আমার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি তাকে পরে কাফের অবস্থায় নিহত হ’তে দেখেছি। [101] এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বাকী যারা ঐদিন সিজদা করেছিল, পরবর্তীতে তারা সবাই ইসলাম কবুলের সৌভাগ্য লাভ করেন।

সিজদায়ে তেলাওয়াতের দো‘আ : অন্যান্য সিজদার ন্যায় ‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’ বলা যাবে। তবে আয়েশা (রাঃ) প্রমুখাৎ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে একটি খাছ দো‘আ বর্ণিত হয়েছে, যা তিনি রাত্রির স্বলাতে সিজদায়ে তেলাওয়াতে পাঠ করতেন। যেমন-

سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهُ وَ شَقَّ سَمْعَهُ وَ بَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَ قُوَّتِهِ فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ-
‘সাজাদা ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহূ ওয়া শাক্ক্বা সাম‘আহূ ওয়া বাছারাহূ বেহাওলিহী ওয়া কুওয়াতিহী; ফাতাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লেক্বীন ।

অর্থ : আমার চেহারা সিজদা করছে সেই মহান সত্তার জন্য যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় ক্ষমতা ও শক্তি বলে এতে কর্ণ ও চক্ষু সন্নিবেশ করেছেন। অতএব মহাপবিত্র আল্লাহ যিনি সুন্দরতম সৃষ্টিকর্তা (মুমিনূন ২৩/১৪)।[102]

পবিত্র কুরআনে সিজদার আয়াত সমূহ ১৫টি।[103] যা নিম্নরূপ : [104]

আ‘রাফ ২০৬, রা‘দ ১৫, নাহ্ল ৫০, ইস্রা/বনু ইস্রাঈল ১০৯, মারিয়াম ৫৮, হজ্জ ১৮, ৭৭, ফুরক্বান ৬০, নমল ২৬, সাজদাহ ১৫, ছোয়াদ ২৪, ফুছছিলাত/হামীম সাজদাহ ৩৮, নাজম ৬২, ইনশিক্বাক্ব ২১, ‘আলাক্ব ১৯।

১৬. সিজদায়ে শুক্র (سجدة الشكر)

কোন খুশীর ব্যাপার ঘটলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য সিজদায় পড়ে যেতেন।[105] সিজদায়ে তেলাওয়াতের ন্যায় এখানেও একটি সিজদা হবে এবং এই সিজদাতেও ওযূ বা ক্বিবলা শর্ত নয়। হাদীছে তাকবীর দেওয়ার স্পষ্ট বক্তব্য নেই। তবে সম্ভবতঃ অন্যান্য সিজদার উপরে ভিত্তি করে ছাহেবে ‘বাহরুর রায়েক্ব’ তাকবীর দেওয়ার কথা বলেছেন।[106]

১৭. স্বলাত বিষয়ে অন্যান্য জ্ঞাতব্য (معلومات أخرى فى الصلاة)

(১) মসজিদে প্রবেশের দো‘আ : প্রথমে ডান পা রেখে বলবে,

اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ-

(আল্লা-হুম্মাফ্তাহ্লী আবওয়া-বা রহ্মাতিকা) ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও’।[107] অন্য বর্ণনায় শুরুতে দরূদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। যেমন, اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّسَلِّمْ (আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া সাল্লিম) ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর’।[108] ইমাম নববী বলেন, বাড়ীতে প্রবেশকালে সেখানে লোক থাক বা না থাক, যেভাবে সালাম দেওয়া মুস্তাহাব (নূর ২৪/২৭, ৬১), তেমনিভাবে মসজিদে মুছল্লী থাক বা না থাক, সালাম দিয়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব। [109]

(২) মসজিদ থেকে বের হওয়ার দো‘আ : প্রথমে বাম পা রেখে বলবে,

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ-

(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিকা) ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি’।[110] অন্য বর্ণনায় শুরুতে দরূদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। যেমন, اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّسَلِّمْ (আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া সাল্লিম) ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর’।[111]

(৩) যখন খাদ্য হাযির হবে, ওদিকে জামা‘আতের এক্বামত হবে, তখন প্রথমে খাওয়া সেরে নিতে পারবে।[112]

(৪) জামা‘আতে স্বলাত দীর্ঘায়িত করা উচিত নয়। কেননা সেখানে কোন রোগী, দুর্বল ও বয়স্ক ব্যক্তি বা যরূরী কাজে ব্যস্ত ব্যক্তি থাকতে পারেন। তবে একাকী যত খুশী দীর্ঘ করা যাবে।[113] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জামা‘আত অবস্থায় কোন শিশুর কান্না শুনলে স্বলাত সংক্ষেপ করতেন। যাতে বাচ্চার মা সমস্যায় না পড়ে।[114] অতএব জামা‘আত চলাকালে লোডশেডিং বা অনুরূপ হঠাৎ কোন সমস্যা দেখা দিলে ইমাম স্বলাত সংক্ষেপ করবেন।

(৫) ফরয বা সুন্নাত-নফল পড়া অবস্থায় প্রয়োজনে ক্বিবলার দিকের দরজা খুলে দেওয়া যাবে’।[115] অতএব যরূরী প্রয়োজনে (ডাইনে-বামে না তাকিয়ে) সম্মুখ দিকের বিদ্যুতের সুইচ অন বা অফ করার মত ছোট-খাট কাজ করা যাবে।

(৬) ওযূ করে স্বলাতের জন্য মসজিদে যাওয়া অবস্থায় (সম্মুখ দিয়ে হউক বা পিছন দিক দিয়ে হৌক) দু’হাতের আঙ্গুল পরস্পরের মধ্যে ঢুকানো অর্থাৎ ‘তাশবীক’ করা যাবেনা’। কেননা সে তখন স্বলাতের মধ্যে থাকে। অথচ এতে স্বলাতের প্রতি অনীহা প্রকাশ পায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একে শয়তানী কাজ বলে অভিহিত করেছেন।[116] স্বলাতের মধ্যে আঙ্গুল মটকানো যাবে না। [117] তাছাড়া স্বলাতে হাস্য করা, নাক-মুখ চুলকানো, বারবার কাপড় গুছানো বা ঘুমানো সবই অমনোযোগিতার পর্যায়ে পড়ে।

(৭) স্বলাত অবস্থায় পুরুষের জন্য জামার হাতা সমূহ বা কাপড় গুটিয়ে রাখা যাবে না। বরং খোলামেলা ছেড়ে দিতে হবে।[118] তবে পুরুষের কাপড় স্বলাত ও স্বলাতের বাইরে সর্বদা টাখনুর উপরে রাখতে হবে।[119] কেননা টাখনুর নীচে যতটুকু যাবে, ততটুকু জাহান্নামে পুড়বে’। [120]

(৮) স্বলাত অবস্থায় কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ানো[121] কিংবা আসমানের দিকে বা ডানে-বাঁয়ে তাকানো নিষেধ। [122]

(৯) সিজদার স্থান একবার ছাফ করা যাবে।[123] সেখানে প্রচন্ড গরম থাকলে বা অন্য কোন সমস্যা থাকলে পরিহিত কাপড়ের একাংশ বিছিয়ে বা অন্য কিছু রেখে তার উপর সিজদা করা যাবে।[124]

(১০) অনেকে দু’হাঁটুর উপর অথবা মুষ্টিবদ্ধ হাতের উপর ভর করে সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ান। এটা ঠিক নয়। কেননা এর দ্বারা মাটিতে পুরা ভর করা যায় না। ইবনু ওমরের হাদীছে كَانَ يَعْجِنُ শব্দ এসেছে। যার অর্থ আটার খামীর যেমন হাতের পুরা চাপ দিয়ে করতে হয়, অনুরূপভাবে মাটিতে হাতের পুরা চাপ দিয়ে উঠতে হয়। [125]

(১১) হাই উঠলে ‘হা’ করে শব্দ করা যাবে না। তাতে শয়তান হাসে অথবা মুখে ঢুকে পড়ে। এ সময় মুখে হাত দিয়ে চেপে রাখতে হবে। [126] কারণ এতে স্বলাতে ক্লান্তি প্রকাশ পায়। একইভাবে হাঁচি-কাশির শব্দ চেপে রাখতে হবে। কেননা তা অন্যের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়।

(১২) স্বলাতরত অবস্থায় সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি ক্ষতিকর প্রাণী মারা যাবে।[127] এ অবস্থায় চোর ধরার জন্য স্বলাত ছেড়ে দেওয়া যাবে।[128]

(১৩) হাঁচি এলে ‘আলহাম্দুলিল্লা-হ’ বলা যাবে।[129] তবে হাঁচির জওয়াব দেওয়া যাবে না।[130] মুখে সালামের জওয়াব দেওয়া যাবে না। তবে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় জওয়াব দেওয়া যাবে। [131]

(১৪) বাচ্চা কোলে নিয়েও স্বলাত আদায় করা যাবে।[132]

(১৫) কবরের দিকে ফিরে স্বলাত আদায় করা যাবে না এবং কবরের উপরে বসা যাবে না।[133] যে কবরে পূজা হয় এবং কবরবাসীর কাছে কিছু চাওয়া হয়, তার পাশে মসজিদ থাকলে সেখানে স্বলাত আদায় করা যাবে না।

(১৬) মুছল্লীদের নিকটে আওয়ায পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে ইমামের তাকবীরের পিছে পিছে ‘মুকাবিবর’ উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দিতে পারবে। অসুস্থ রাসূল (ﷺ)-এর তাকবীরের পিছে পিছে আবুবকর (রাঃ) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ‘মুকাবিবর’।[134]

(১৭) যে সব স্বলাতের শেষে সুন্নাত নেই, অর্থাৎ ফজর ও আছরের শেষে মুছল্লীদের দিকে ফিরে বসা এবং অন্য সময় না বসা, একইভাবে কেবল ফরয স্বলাতে ইমামের পাগড়ী মাথায় দেওয়া এবং সালাম ফিরানোর পরে তা খুলে রাখা, সম্পূর্ণরূপে সুন্নাত পরিপন্থী কাজ।

(১৮) পোষাক, টুপী ও পাগড়ীতে অমুসলিমদের এবং শিরক ও বিদ‘আতপন্থীদের অনুকরণ করা নিষেধ।[135]

(১৯) মেয়েদের পুরুষালী পোষাক এবং পুরুষদের মেয়েলী পোষাক পরা নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এসব লোককে ঘর থেকে বের করে দিতে বলেছেন। [136]

(২০) ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে স্বলাত শুরু করতে হবে।[137] ‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া’… বলে মুখে নিয়ত পাঠের মাধ্যমে স্বলাত শুরু করা বিদ‘আত। যারা একে ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ বলেন, তাদের জবাবে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, ইবাদতের ক্ষেত্রে সৃষ্ট ‘সকল বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’। আর ‘সকল ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’।[138]

(২১) তাকবীর দ্বারা স্বলাত শুরু হয় এবং সালাম দ্বারা শেষ হয়।[139] অনুরূপভাবে স্বলাতে প্রবেশকালে তাকবীর দিয়ে বাম হাতের উপর ডান হাত বুকে বাঁধতে হয়’।[140] বুকে হাত বাঁধা ব্যতীত অন্যভাবে স্বলাত আদায় করা হয় ভিত্তিহীন, না হয় যঈফ।[141]

(২২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বলাতের মধ্যে তিনটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন : (১) মোরগের মত ঠোকর দিয়ে দ্রুত স্বলাত আদায় করা (২) বানর বা কুকুরের মত চার হাত-পা একত্র করে বসা (৩) শৃগালের মত এদিক-ওদিক তাকানো।[142]

(২৩) স্বলাতের সময় নকশা করা পোষাক পরিধান করা উচিত নয়, যা নিজের বা অন্য মুছল্লীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।[143] মুছাল্লা বা জায়নামাজের ব্যাপারেও একই কথা বলা যেতে পারে। ডান, বাম বা সম্মুখ থেকে ছবিযুক্ত সবকিছু দৃষ্টির আড়ালে সরিয়ে ফেলতে হবে। [144]

(২৪) ‘বাচ্চাদের মসজিদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখো’ বলে যে হাদীছ প্রচলিত আছে, তা যঈফ।[145] একইভাবে বাচ্চাদের পৃথকভাবে পিছনের কাতারে দাঁড়ানোর হাদীছও যঈফ।[146]

(২৫) ‘যে ব্যক্তি স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে, তার স্বলাত বিনষ্ট হবে’ এবং ‘যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে, তার মুখ আগুন দিয়ে ভরে দেওয়া হবে’ বলে যেসব হাদীছ প্রচলিত আছে, তা ‘মওযূ’ বা জাল[147] এবং মাটি দিয়ে ভরে দেওয়ার হাদীছ ‘মওকূফ’ ও যঈফ। [148]

(২৬) ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কথা বলার আগেই ছয় রাক‘আত (নফল) স্বলাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পঞ্চাশ বছরের গোনাহ মাফ হবে’। ‘যে ব্যক্তি ঐ ছয় রাক‘আতের মধ্যে কোন মন্দ কথা বলবে না, সে ব্যক্তি বারো বছরের ইবাদতের সমান নেকী পাবে’। ‘মাগরিব ও এশার মধ্যে যে ব্যক্তি বিশ রাক‘আত স্বলাত আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীছ সমূহ অত্যন্ত যঈফ।[149] মাগরিব হ’তে এশার মধ্যে পঠিত নফল স্বলাত সমূহকে ‘স্বলাতুল আউওয়াবীন’ বলার হাদীছটিও যঈফ।[150] বরং স্বলাতুয যোহাকেই রাসূল (ﷺ) ‘স্বলাতুল আউয়াবীন’ বলেছেন’।[151]

(২৭) সারা রাত্রি ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়া যাবে না।[152] আল্লাহ বলেন, ‘তুমি রাত্রিতে স্বলাত আদায় কর কিছু অংশ বাদ দিয়ে’ (মুযযাম্মিল ৭৩/২-৪)। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কদাচিৎ পুরা রাত্রি জাগরণ করেছেন।[153] তিনি কখনো একরাতে কুরআন খতম করেননি।[154] এক্ষণে ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হিঃ/৬৯৯-৭৬৭ খৃঃ) একরাতে কুরআন খতম করতেন ও তাতে এক হাযার রাক‘আত স্বলাত আদায় করতেন’। ‘তিনি যেখানে মৃত্যুবরণ করেন, সেখানে সাত হাযার বার কুরআন খতম করেন’। ‘তিনি একটানা ৪০ বছর এশার ওযূতে ফজরের স্বলাত আদায় করেছেন’ এবং ‘প্রতি রাক‘আতে কুরআন খতম করেছেন[155] ইত্যাদি যেসব কথা প্রচারিত হয়েছে, তা স্রেফ অতিভক্তির বাড়াবাড়ি ও ইমামের নামে মিথ্যা অপবাদ মাত্র।[156]

(২৮) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, সবচেয়ে বড় চোর হ’ল ‘স্বলাত চোর’। সে হ’ল ঐ ব্যক্তি যে স্বলাতে রুকূ ও সিজদা পূর্ণ করে না’। [157] তিনি বলেন, যদি সে ঐ অবস্থায় মারা যায়, তবে সে ‘মুহাম্মাদী মিল্লাতের বহির্ভূত (مَاتَ عَلَى غَيْرِ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ) হিসাবে মৃত্যুবরণ করবে’।[158]

(২৯) ফরয ও নফলের মধ্যে কথা বলা বা বের হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পার্থক্য করা উচিত।[159] অমনিভাবে ফরয স্বলাত আদায়ের স্থান হ’তে কিছুটা সরে গিয়ে সুন্নাত-নফল স্বলাত আদায় করা মুস্তাহাব।[160] ইমাম বুখারী ও ইমাম বাগাভী বলেন, এর দ্বারা ইবাদতের স্থানের সংখ্যা বেশী হয় এবং সিজদার স্থান সমূহ আল্লাহর নিকটে সাক্ষী হয়। যেমন সূরায়ে যিলযালের ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন যমীন নিজেই আল্লাহর হুকুমে (তার উপরে কৃত বান্দার আমল সম্পর্কে) খবর দিবে’। অনুরূপভাবে সূরা দুখান ২৯ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে যে, কোন মুমিন মারা গেলে তার সিজদার স্থান সমূহ কাঁদতে থাকে এবং তার সৎকর্ম সমূহ আসমানে উঠানো হয়। কিন্তু আসমান ও যমীন কোন কাফেরের জন্য কাঁদবেনা। [161] কারণ ওরা কখনো আল্লাহর উদ্দেশ্যে মাটিতে সিজদা করেনি।

(৩০) চোখে দেখা বা কানে শোনার মাধ্যমে যদি ইমামের ইক্বতিদা করা সম্ভব হয়, তবে কাছাকাছি হ’লে তাঁর ইক্বতিদা করা জায়েয। যদিও সেটা মসজিদের বাইরে হয় কিংবা উভয়ের মধ্যে কোন দেওয়াল, রাস্তা বা অনুরূপ কোন প্রতিবন্ধক থাকে।[162]

(৩১) স্বলাতের মধ্যে আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় ক্বিরাআত ও তাসবীহ পাঠ করা যাবে না। মুখস্থ না থাকায় যদি কেউ কুরআনের কিছুই পড়তে না পারে অথবা অনারব হওয়ার কারণে কুরআন না জানে, তখন সে কেবল সুবহানাল্লাহ, ওয়াল-হামদুলিল্লাহ, অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, অলা হাওলা অলা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে। ঐসঙ্গে এ দো‘আও করতে পারবে, আল্লা-হুম্মারহামনী, ওয়া ‘আফেনী, ওয়াহদেনী, ওয়ারঝুক্বনী (হে আল্লাহ! আমাকে অনুগ্রহ কর, আমাকে সুস্থতা দাও, আমাকে সঠিক পথ দেখাও এবং আমাকে রূযী দাও!)।[163] তবে এটি স্রেফ একবার অথবা সাময়িক কালের জন্য। কেননা সূরায়ে ফাতিহা ব্যতীত স্বলাত সিদ্ধ হয় না।[164]

টীকা ::

[1] . বাক্বারাহ ২/২৩৮; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ইরওয়া হা/৫৮৮; ইবনু মাজাহ হা/১০২০; নায়ল ২/২৪৯।

[2] . আবুদাঊদ হা/১২২৪-২৮; নায়ল ২/২৯১ পৃঃ।

[3] . আবুদাঊদ হা/১২২৭; বায়হাক্বী, আহমাদ, তিরমিযী, ছিফাত ৫৫-৫৬ পৃঃ।

[4] . দারাকুৎনী, হাকেম, বায়হাক্বী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, ইরওয়া হা/২৯১।

[5] . বাযযার, দারাকুৎনী, হাকেম, ছিফাত, পৃঃ ৫৯; সহিহুল জামে‘ হা/৩৭৭৭; নায়ল ৪/১১২।

[6] . আবুদাঊদ, হাকেম, সিলসিলা সহিহাহ হা/৩১৯; ইরওয়া হা/৩৮৩।

[7] . বুখারী, মিশকাত হা/১২৪৮ ‘কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বন’ অনুচ্ছেদ-৩৪; সুনান, নায়ল ‘রোগীর স্বলাত’ অনুচ্ছেদ, ৪/১১০ পৃঃ।

[8] . ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী, সিলসিলা সহিহাহ হা/৩২৩।

[9] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১২৪৯, ১২৫২, ‘কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বন’ অনুচ্ছেদ-৩৪; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৯৮ ‘রাতের স্বলাত’ অনুচ্ছেদ-৩১।

[10] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৭৬, ‘স্বলাত’ অধ্যায়-৪, ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ-৯।

[11] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৭৭।

[12] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৭৩,৭৭৯,৭৭৭ ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ-৯।

[13] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৮০।

[14] . বুখারী হা/৪৯৬; মুসলিম হা/১১৩৪; ছিফাত, পৃঃ ৬২।

[15] . আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৭৮১।

[16] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭৬ পৃঃ।

[17] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭৭ পৃঃ; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৪৭, ‘মসজিদ ও স্বলাতের স্থানসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।

[18] . বুখারী, মিশকাত হা/১১৩৩, ‘ইমামের কর্তব্য’ অনুচ্ছেদ-২৭।

[19] . বুখারী হা/৬৯৫-৯৬ (ফাৎহুল বারী সহ), ‘আযান’ অধ্যায়-১০, ‘বিদ‘আতী ও ফিৎনা গ্রস্তের ইমামতি’ অনুচ্ছেদ-৫৬, ২/২২০-২৩।

[20] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১১২২-২৩, ১১২৮, সনদ হাসান, ‘ইমামত’ অনুচ্ছেদ-২৬।

[21] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৭, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ’ অনুচ্ছেদ-২২।

[22] . মির‘আত ৩/৫৯; নায়ল ৩/১৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৯।

[23] . বুখারী, মিশকাত হা/৬৮৩ ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ-৬।

[24] . বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮ ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৯ ‘খুৎবা ও স্বলাত’ অনুচ্ছেদ-৪৫।

[25] . আবুদাঊদ হা/৫৬৭, ৫৭০; আহমাদ হা/২৭১৩৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭১।

[26] . আবুদাঊদ হা/৫৬৫; মুসলিম, মিশকাত হা/১০৫৯-৬১ ‘জামা‘আতে স্বলাত ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭১।

[27] . আবুদাঊদ হা/৫৬৭, ৫৭০; মিশকাত হা/১০৬২-৬৩।

[28] . ভূপালী, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ (ছান‘আ, ইয়ামন : ১৪১১/১৯৯১) ১/৩২২ পৃঃ।

[29] . আবুদাঊদ হা/৫৯১, দারাকুৎনী প্রভৃতি ইরওয়া হা/৪৯৩; নায়ল ৪/৬৩।

[30] . বায়হাক্বী, ১/৪০৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১, ১৭৭।

[31] . আবুদাঊদ হা/৫৯১-৯২; সহিহ ইবনু খুযায়মা, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩২২; নায়ল ৪/৬৩ ; ইরওয়া হা/৪৯৩।

[32] . দারাকুৎনী হা/১০৭১, সনদ যঈফ।

[33] . আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩১২।

[34] . আহমাদ, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/১৬৫ ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ-৫।

[35] . আহমাদ, আবুদাঊদ হা/৫৯৫; মিশকাত হা/১১২১ ‘ইমামত’ অনুচ্ছেদ-২৬।

[36] . বুখারী, নাসাঈ, নায়লুল আওত্বার ৪/৫৭-৫৮, ‘অন্ধের ইমামত’ অনুচ্ছেদ।

[37] . বুখারী, মিশকাত হা/১১২৭ ‘ইমামত’ অনুচ্ছেদ-২৬; নায়লুল আওত্বার ৪/৫৯।

[38] . আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ প্রভৃতি; নায়ল ৪/৬৩; বুখারী, মিশকাত হা/১১২৬।

[39] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১১৭; বুখারী, মিশকাত হা/১১২৬।

[40] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৩৯ ‘মুক্তাদীর কর্তব্য ও মাসবূকের হুকুম’ অনুচ্ছেদ-২৮।

[41] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৭।

[42] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৩৬।

[43] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৪১, ১১৩৮।

[44] . বুখারী, মিশকাত হা/১১৩৯; মির‘আত ৪/৮৯।

[45] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৮০।

[46] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭৭।

[47] . মুসলিম, আবুদাঊদ হা/৫৯৬; মিশকাত হা/১১২০।

[48] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১১৭, ‘ইমামত’ অনুচ্ছেদ-২৬।

[49] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১০৬, ‘দাঁড়ানোর স্থান’ অনুচ্ছেদ-২৫; আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩০৮।

[50] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১০৭, অনু-২৫।

[51] . নাসাঈ হা/১০২৯; আবুদাঊদ হা/৬১৩।

[52] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৯২; আবুদাঊদ হা/৬৭৮ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৮।

[53] . মুসলিম, মিশকাত হা/১১০৮, ১১০৯, অনুচ্ছেদ-২৫; আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩০৮।

[54] . আবুদাঊদ হা/৫৯৭, অনুচ্ছেদ-৬৭।

[55] . ‘আওনুল মা‘বূদ হা/৫৮৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭৯-৮০।

[56] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭৮।

[57] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৩৩ ‘স্বলাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; মির‘আত ৪/১৩৯।

[58] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১০৯৪, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।

[59] . আবুদাঊদ হা/৬৬১ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৪।

[60] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৭, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।

[61] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৮, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।

[62] . আবুদাঊদ হা/৬৬২ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৪।

[63] . বুখারী হা/৭২৫, ফৎহুল বারী, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৭৬।

[64] . বুখারী হা/৭১৯, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৭২; ঐ, মিশকাত হা/১০৮৬ ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪; মির‘আত ৪/৪।

[65] . আবুদাঊদ হা/৬৬৬-৬৭; মিশকাত হা/১১০২, ১০৯৩, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।

[66] . আবুদাঊদ হা/৬৬২; বুখারী হা/৭২৫; ফাৎহুল বারী, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, ‘কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলানো’ অনুচ্ছেদ-৭৬, ২/২৪৭ পৃঃ।

[67] . আবুদাঊদ হা/৬৫৪-৫৫ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯০।

[68] . আবুদাঊদ হা/৬৭৩, ‘স্বলাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৫।

[69] . বুখারী হা/৭২১ (ফাৎহুল বারী সহ), মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৮, ‘স্বলাতের ফযীলতসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।

[70] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০৬৬ ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।

[71] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৮৮-৮৯ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-৪, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।

[72] . আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১১০৫ ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।

[73] . বাক্বারাহ ২/২৮৬, তাগাবুন ৬৪/১৬; নায়ল ৪/৯২-৯৩ পৃঃ।

[74] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৩১৬ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৩।

[75] . আবুদাঊদ হা/১৫০০, ‘স্বলাত’ অধ্যায়-২, ‘কংকর দ্বারা তাসবীহ গণনা’ অনুচ্ছেদ-৩৫৯; মিশকাত হা/২৩১১।

[76] . মুসনাদে দায়লামী; যঈফাহ হা/৮৩।

[77] . আহমাদ, মিশকাত হা/৫৩৩৪ ‘ ‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-২৬, ‘লোক দেখানো ও শুনানো’ অনুচ্ছেদ-৫; সহিহাহ হা/৯৫১।

[78] . আবুদাঊদ হা/৩২-৩৩; ঐ, মিশকাত হা/৩৪৮, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩।

[79] . বায়হাক্বী ২/১৮৭; আবুদাঊদ হা/১৫০২ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৩৫৯।

[80] . আহমাদ, আবুদাঊদ হা/৮৮৩, মিশকাত হা/৮৫৯ ‘স্বলাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২।

[81] . বায়হাক্বী, আবুদাঊদ হা/৮৮৪, ‘স্বলাতে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৫৪; হাদীছ সহিহ।

[82] . আহমাদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/৫৫৬২ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়-২৮, ‘হিসাব ও মীযান’ অনুচ্ছেদ-৩, হাদীছ হাসান।

[83] . তিরমিযী হা/৩৫২২; মিশকাত হা/৮৬১; সিলসিলা সহিহাহ হা/২১৫০।

[84] . আবুদাঊদ হা/৮৮৭, মিশকাত হা/৮৬০, ‘স্বলাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; হাদীছ যঈফ।

[85] . তাফসীর ইবনে জারীর হা/৬৫৪১, তাহক্বীক্ব তাফসীর ইবনে কাছীর।

[86] . মির‘আত (বেনারস, ভারত ১৪১৫/১৯৯৫) ৩/১৭৫ পৃঃ।

[87] . আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, পৃঃ ৮৬ হাশিয়া।

[88] . শাওকানী, আস-সায়লুল জাররা-র (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ১/২৭৪ পৃঃ।

[89] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০১৫; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৮ ‘সহো’ অনুচ্ছেদ-২০।

[90] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৬ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-৪, ‘সহো’ অনুচ্ছেদ-২০।

[91] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৭ ; মুসলিম, মিশকাত হা/১০২১।

[92] . মুসলিম হা/১২৮৭ (৫৭২), ‘সহো’ অনুচ্ছেদ-১৯; নায়লুল আওত্বার ৩/৪১১ পৃঃ।

[93] . মির‘আতুল মাফাতীহ ২/৩২-৩৩ পৃঃ ; ঐ, ৩/৪০৭, হা/১০২৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

[94] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইরওয়াউল গালীল হা/৪০৩, ২/১২৮-২৯ পৃঃ।

[95] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৭ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-৪, ‘সহো’ অনুচ্ছেদ-২০।

[96] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৮৮ ‘স্বলাতে সিদ্ধ ও অসিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯; মির‘আত ৩/৩৫৭।

[97] . মির‘আত ৩/৩৫৭-৫৮; اَلْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১০৯ ‘বিবাহ’ অধ্যায়-১৩; فَلاَ تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ… আহযাব ৩৩/৩২।

[98] . মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৫৯৩০; বায়হাক্বী ২/৩২৫, সনদ সহিহ; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ২৬৯ পৃঃ।

[99] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৪।

[100] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৫; আহমাদ, ইবনু মাজাহ, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৪ পৃঃ।

[101] . সহিহ বুখারীতে বর্ধিতভাবে এসেছে যে, ঐ ব্যক্তি ছিল উমাইয়া বিন খালাফ। -বুখারী, মিশকাত হা/১০২৩; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৩৭ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-৪, ‘সিজদায়ে তেলাওয়াত’ অনুচ্ছেদ-২১; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৪-৬৭।

[102] . হাকেম ১/২২০ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৭; মির‘আত ৩/৪৪৭; নায়ল ৩/৩৯৮।

[103] . দারাকুৎনী হা/১৫০৭; আহমাদ হা/১৭৪৪৮; হাকেম ২/৩৯০-৯১ ‘তাফসীর সূরা হজ্জ’; মির‘আত ৩/৪৪০-৪৩; নায়ল ৩/৩৮৬-৯১; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৫; তামামুল মিন্নাহ, ২৭০ পৃঃ।

[104] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৫-৬৬ পৃঃ।

[105] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৪৯৪ ‘সিজদায়ে শুক্র’ অনুচ্ছেদ-৫১।

[106] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৮ পৃঃ।

[107] . হাকেম ১/২১৮; মুসলিম, মিশকাত হা/৭০৩, ‘মসজিদ ও স্বলাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।

[108] . আবুদাঊদ হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৭৭২-৭৩; বায়হাক্বী ২/৪৪২; সিলসিলা সহিহাহ হা/২৪৭৮।

[109] . আল-আযকার (বৈরূত : ১৪১৪/১৯৯৪) ১/২৫৮।

[110] . হাকেম ১/২১৮; মুসলিম, মিশকাত হা/৭০৩ ‘মসজিদ ও স্বলাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।

[111] . আবুদাঊদ হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৭৭৩; বায়হাক্বী ২/৪৪২; সিলসিলা সহিহাহ হা/২৪৭৮।

[112] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৫৬, ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।

[113] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩১, ১১৩৪ ‘ইমামের কর্তব্য সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২৭।

[114] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/১১২৯-৩০।

[115] . বুখারী হা/৭৫৩, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৯৪; আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০০৫ ‘স্বলাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্মসমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।

[116] . আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৯৪; মির‘আত হা/১০০১, ৩/৩৬৫ পৃঃ।

[117] . মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, ইরওয়া হা/৩৭৮-এর শেষে দ্রষ্টব্য।

[118] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৭, ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪; ছিফাত পৃ: ১২৫।

[119] . আবুদাঊদ হা/৬৩৭ ‘স্বলাত’ অধ্যায়-২, ‘স্বলাতে কাপড় ঝুলানো’ অনুচ্ছেদ-৮৩।

[120] . বুখারী, মিশকাত হা/৪৩১৪ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২।

[121] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৮১, অনুচ্ছেদ-১৯; মির‘আত ৩/৩৪৮-৪৯ পৃঃ।

[122] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮২-৮৩, ‘স্বলাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।

[123] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৮০ ‘স্বলাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।

[124] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মির‘আত ৩/৩৯১; আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০১১, অনুচ্ছেদ-১৯।

[125] . ছিফাত পৃঃ ১৩৭; সহিহাহ হা/২৬৭৪; যঈফাহ হা/৯৬৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

[126] . বুখারী, মিশকাত হা/৯৮৬; মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮৫, অনুচ্ছেদ-১৯; মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৩৭ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘হাঁচি দেওয়া ও হাই তোলা’ অনুচ্ছেদ-৬।

[127] . আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১০০৪, ‘স্বলাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।

[128] . বুখারী হা/১২১১, অধ্যায়-২১, অনুচ্ছেদ-১১।

[129] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯৯২, অনুচ্ছেদ-১৯।

[130] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৭৮, অনুচ্ছেদ-১৯।

[131] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৯১; মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১০১৩, অনুচ্ছেদ-১৯।

[132] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৮৪ ‘স্বলাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।

[133] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৯৮-৯৯, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, ‘মৃতের দাফন’ অনুচ্ছেদ-৬।

[134] . মুসলিম, নাসাঈ হা/১২৪০; আবুদাঊদ, আহমাদ, ইবনু মাজাহ, ছিফাত, ৬৭ পৃঃ।

[135] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩২৭; আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭, ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২।

[136] . বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৮, ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২।

[137] . মুসলিম, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৭৯১, ৮০১, ৩১২; ছিফাত, ৬৬ পৃঃ।

[138] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১ ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘কিতাব ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ-২ নাসাঈ হা/১৫৭৯ ‘ঈদায়নের স্বলাত’ অধ্যায়, ‘কিভাবে খুৎবা দিতে হবে’ অনুচ্ছেদ; সহিহ ইবনু খুযায়মা হা/১৭৮৫।

[139] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩১২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযূ ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১; ইরওয়া হা/৩০১।

[140] . বুখারী, মিশকাত হা/৭৯৮, ‘স্বলাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; আবুদাঊদ হা/৭৫৫, ৭৫৯, ‘স্বলাত’ অধ্যায়, ১২১ অনুচ্ছেদ।

[141] . আলবানী, হাশিয়া ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, ৬৯ পৃঃ।

[142] . আহমাদ, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, সহিহ আত-তারগীব হা/৫৫৩; ছিফাত পৃঃ ৭০, ১১২।

[143] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৭, ‘সতর’ অনুচ্ছেদ-৮; ঐ, হা/৯৮২, অনুচ্ছেদ-১৯; ইরওয়া হা/৩৭৬।

[144] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৭৫৭-৫৮ ‘স্বলাত’ অধ্যায়, ‘সতর’ অনুচ্ছেদ-৮।

[145] . ইবনু মাজাহ হা/৭৫০, ‘মসজিদ ও জামা‘আত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৫; ছিফাতু ছালা-তিন্নবী হাশিয়া, ৮৩ পৃঃ ।

[146] . আবুদাঊদ হা/৬৭৭; ঐ, মিশকাত হা/১১১৫ ‘দাঁড়ানোর স্থান’ অনুচ্ছেদ-২৫।

[147] . আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৮-৬৯।

[148] . মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৩, পৃ: ২/২৮১।

[149] . সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৭-৪৬৯; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১১৭৩-৭৪ ‘সুন্নাত স্বলাত সমূহ ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ ৩০।

[150] . সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬১৭।

[151] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১২ ‘স্বলাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮।

[152] . মুত্তাফা।