সুন্নত মানা কি শুধুই “সুন্নত” নাকি, কখনো কখনো সুন্নত মানা “ফরয” হয়?

সুন্নত মানা কি শুধুই “সুন্নত” নাকি, কখনো কখনো সুন্নত মানা “ফরয” হয়?

==============================================
আমরা সকলেই জানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে দাঁড়ি রাখার জন্য আদেশ দিয়েছেন, অর্থাৎ তিনি আমাদের জন্য এটাকে ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক বলে আদেশ দিয়েছেন। এইভাই প্রশ্ন করেছেনঃ “দাঁড়ির ব্যপারে কুরআনে কি বলা হয়েছে?” এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পূর্বে একটা জিনিস জানতে হবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যে আদেশ দিয়েছেন সেটা মানা স্বয়ং আল্লাহও আদেশ করেছেন।
যেমন আল্লাহ বলেছেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসুলের আনুগত্য কর।” (সুরা নিসাঃ ৫৯)।
আল্লাহ আরো বলেছেন, “রাসুল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” সুরা হাশরঃ ৭।
এই আয়াতগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাহ আমাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় সরাসরি আদেশ করেছেন, রাসুল আমাদেরকে যা আদেশ করেন তা মান্য করার জন্য এবং তিনি যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার জন্য। শুধু তাইনা, রাসুলের আনুগত্যের ব্যপারে আমাদেরকে তিনি সতর্কও করে দিয়েছেন, আমরা যেন আল্লাহকে ভয় করি, কারণ তিনি হচ্ছেন কঠোর শাস্তিদাতা। আর, এজন্য আল্লাহ তাআ’লা রাসুলের আদেশকে তাঁর নিজের আদেশের সমান বলে আখ্যায়িত করেছেন,
“যে ব্যক্তি রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।” (নিসাঃ ৮০)
সুতরাং, রাসুল যা আদেশ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা আমাদের জন্য সেটা মান্য করা ফরয করে দিয়েছেন। এখানে দুইটা ব্যপার উল্লেখ করা জরুরী।
(১) রাসুল কোনো কিছু নিজে থেকে এমনি এমনি আমাদেরকে করতে আদেশ বা নিষেধ করতেন না। বরং তাঁর কাছে আল্লাহ ওয়াহী করতেন, সেই অনুযায়ী তিনি আমাদেরকে আদেশ বা নিষেধ করতেন। এ কথার দলীল হচ্ছেঃ
“আর তিনি (রাসুল) নিজের মনগড়া কোন কথা বলেন না, বরং যা তাঁকে ওয়াহী করা হয় তাই বলেন।” (সুরা নাজমঃ ৩-৪)
রাসুলের কাছে যেই ওয়াহী করা হতো যেইগুলো কুরআনে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যেইগুলোকে আমরা কুরআনের আয়াত বলি। এছাড়াও এমন আরেক প্রকার ওয়াহী আছে, যেইগুলো কুরআনে লিপিবদ্ধ নয়, কারণ সেইগুলো আদেশ আল্লাহর কিন্তু সেই ওয়াহীর ভাষা হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর। মানে আল্লাহ রাসুল (সাঃ) কে জিব্রাইল (আঃ) মারফত আদেশ করেছেন, আপনার উম্মতদেরকে এই কাজ করতে আদেশ করেন বা এই কাজ থেকে নিষেধ করেন। সেই আদেশ বা নিষেধ তিনি নিজের ভাষায় আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, এইগুলোকে আমরা হাদীস বলি। পক্ষান্তরে, ক্বুরানুল কারীম হচ্ছে আল্লাহর আদেশ, এবং কুরানের কথাগুলো স্বয়ং আল্লাহর।
(২) দ্বিতীয় ব্যপার হচ্ছে, রাসুলের সব আদেশই আমাদের জন্য আদর্শ, আমরা নিজেদের দুনিয়াবি ও আখেরাতের কল্যানের জন্য সাধ্য অনুযায়ী সেইগুলো মানার চেষ্টা করবো, কিন্তু সুন্নতের সবগুলো “ফরয” পর্যায়ের নয়। কিছু আদেশ আছে তিনি আমাদেরকে করতে উতসাহিত করেছেন, কিন্তু করা বাধ্যতামূলক করে দেন নি। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“আমার উম্মাতের উপর যদি কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় দাঁতন (মেসওয়াক) করার আদেশ করতাম।” (বুখারীঃ ৮৮৭, মুসলিমঃ ৫৮৯)।
এই হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে, তিনি মিসওয়াক করতে আমাদেরকে আদেশ করেছেন কিন্তু এই আদেশ ফরয বা ওয়াজিব নয়। এইগুলোকেই আমরা “সুন্নাহ” বলি, যা পালন করলে অনেক সওয়াব, কিন্তু মান্য না করলে গুনাহ নেই। আর কিছু আদেশ আছে যেইগুলো তিনি আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন। এদের মধ্যে এমন হচ্ছে পুরুষদের জন্য টাখনুর উপরে কাপড় পড়া, দাড়ি রাখা ইত্যাদি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পাপ থেকে মুক্ত করবেন না, এমনকি তাদের প্রতি তাকাবেন না।
(১) টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী,
(২) উপকার করে খোটাদানকারী,
(৩) মিথ্যা কসম করে দ্রব্য বিক্রয়কারী।”
সহীহ মুসলিম।
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে (পুরুষেরা) টাখনুর নিচে কাপড় পড়লে জাহান্নামে যাবে, সুতরাং এটা হারাম এবং কবীরা গুনাহ। এথেকে বোঝা যায় পুরুষদের জন্য কাপড় টাখনুর উপরে রাখা ফরয। অনুরূপভাবে অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা এটাও প্রমানিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ি রাখা আমাদের জন্য ফরয/ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) করে দিয়েছেন।