সাক্ষ্য দেওয়া

মূলঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন জামীল যাইনু
ব্যাখ্যা সংকলনঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী
স্বত্বাধিকারীর অনুমতিদাতাঃ যুলফিকার ইবরাহীম মেমোন আল আথারী।

 

ব্যাখ্যা সংকলনঃ

 

الشهادة (আশ শাহাদাহ)

 

সাক্ষ্য দেওয়াঃ আরবী ভাষায় الشهادة (আশ শাহাদাহ) শব্দটির অর্থ হচ্ছে সাক্ষ্য।

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

সাক্ষ্য দেওয়া সঠিকভাবে প্রকাশিত নয় যদিনা এতে চারটি স্তুর বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট হয়ঃ

১। যে বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে জ্ঞান থাকা, এর ব্যপারে সচেতনতা থাকা, যে বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে এবং এর প্রমাণাদি – এ সকলের সত্যতা বিশ্বাস করা।

২। সাক্ষীর এ ব্যপারে কথা বলা এবং এর দ্বারা (সাক্ষ্য) উচ্চারণ করা।

৩। সাক্ষী যে বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে তার অপর (উল্টো) বিষয় সম্বন্ধে অবগত, এ ব্যপারে সে জানায় এবং বিষয়টি পরিষ্কার করে।

৪। এতে (সাক্ষ্যে) যা কিছু সংশ্লিষ্ট তাকে আঁকড়ে ধরা এবং যা দ্বারা সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে সে বিষয় অপরের জন্যে আবশ্যিক করা, এ দ্বারা আদেশ করা, এ দ্বারাই বিচার আচার করা।

সুতরাং আল্লাহর তার নিজের একত্ব এবং ন্যায়বিচারে কায়িম হওয়ার ব্যপারে সাক্ষ্য এ চারটি স্তরকে সংশ্লিষ্ট করে এ ব্যপারে তার জ্ঞান থাকা, এ ব্যপারে তার বক্তব্য থাকা, তার ফরমান, প্রকাশ, তাঁর সৃষ্টি জগতের জন্যে বর্ণনা এবং তাদের এর দ্বারা আদেশ এবং একে আবশ্যিক করা। এমনিভাবে মুসলিমের তাওহীদের ব্যপারে শাহাদাতও আবশ্যিকভাবে এ চারটি স্তরের উপর থাকা জরুরী, যেভাবে এতে একমত হয়েছে আহলুস সুন্নাহ, এবং এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন ইবনুল কায়্যিম এবং ইবনু আবি ইযয।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ৭৯, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

শাইখ শিহাবুদ্দিন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ আলহাইতামী আশ শাফি’য়ি বলেন,

যদিও নিম্নোক্ত দলিলে تشهد (তাশহাদু, তুমি সাক্ষ্য দাও) শব্দটির অর্থ تعلم (তা’লামু, তুমি জানো) শব্দের মাধ্যমে আসেনি,

َاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ

সুতরাং তুমি জান যে, আল্লাহ ব্যতীত (সত্য) কোনো মা’বুদ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমার ত্রুটির জন্য এবং মু’মিন নর-নারীদের ত্রুটির জন্যে। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছেন। (৪৭ঃ১৯)

তবুও ইসলামের জন্যে أشهد (আশহাদু, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি) শব্দটি অবশ্য প্রয়োজনীয়, যেখানে কেউ বলবে,

أشهد أن لا إله إلا الله, وأشهد أن محمدا رسول الله

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।

 

সুতরাং যদি কেউ أشهد(আশহাদু, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি) এর বদলে أعلم (আ’লামু, আমি জানি) শব্দটি বলে, অথবা এ দুটোকেই বাদ দিয়ে বলে,

لا إله إلا الله, محمد رسول الله

নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।

তবে সে ক্ষেত্রে সে মুসলিম হয়নি। আর এর সাথে একমত হয়েছে এই রিওয়ায়াহঃ

أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله ، وأن محمدا رسول الله ، ويقيموا الصلاة ، ويؤتوا الزكاة ، فإذا فعلوا ذلك ، عصموا مني دماءهم وأموالهم ، إلا بحق الإسلام ، وحسابهم على الله تعالى

আমাকে আদেশ করা হয়েছে লোকেদের সাথে যুদ্ধ করবার জন্যে যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা সাক্ষ্য দেবে নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর সালাত কায়েম করবে, এবং যাকাত আদায় করবে। সুতরাং যদি তারা এরূপ করে, তবে আমার হতে তারা রক্ষা করবে তাদের রক্তকে এবং মালামাল সমূহকে, শুধু এ ব্যতীত যা ইসলামের অধিকারের অন্তর্ভূক্ত। আর তার হিসাব আল্লাহর উপর। (বুখারী ২৫) (মুসলিম ২২, ৩৬)

 

আর এটিই হচ্ছে তা যাতে স্থির হয়েছেন আমাদের মধ্য হতে কতিপয় পরবর্তী লোকেরা। আর এ ধারণাকে সাহায্য করেছে শারীয়া প্রদানকারী ইবাদাত স্বরূপ শাহাদাহ আদায়ের ক্ষেত্রে নির্ধারণ করেছেন আশহাদু শব্দটিকে। সুতরাং আ’লামু বা এ রকম অন্য কোন শব্দ এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। আর যদিও তা আশহাদু শব্দটি সাধারণভাবে ই’লম বা জ্ঞানের সমার্থক হয়ে থাকে, তবুও তারা একই নয়। কেননা শাহাদাহ জ্ঞান হতেও খাস। সুতরাং প্রত্যেক শাহাদাহ ই’লম, কিন্তু এর বিপরীতটি সত্য নয় (অর্থাৎ প্রত্যেক ই’লম শাহাদাহ নয়)। আর এ ব্যপারে প্রমান স্থাপিত হয়েছে, কাফফারাহ এর ক্ষেত্রে الروضة গ্রন্থে। (এটি الروضة الطالبين গ্রন্থের ৮ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৮৩ এ দ্রষ্টব্য)

(الفتح المبين, শিহাবুদ্দিন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হাজার আলহাইতামী আশ শাফি’য়ি, পৃষ্ঠা ১৪৫, দারুল মিনহাজ)

 

 

শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন উল্লেখ করেন:
এক্ষেত্রে تشهد (আপনার এই সাক্ষ্য দেওয়া) শব্দের অর্থ আপনার একমত হওয়া এবং মুখে ও অন্তরে স্বীকারোক্তি দেওয়া। সুতরাং শুধু মুখে স্বীকার করা যথেষ্ট নয়। বরঞ্চ মুখ এবং অন্তর উভয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ বলেছেন:

وَلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

আল্লাহর পরিবর্তে তাঁরা যাদেরকে দাকে, শাফায়াতের ক্ষমতা তাদের নেই, তবে যারা সত্য উপলদ্ধি করে আর সাক্ষ্য দেয় তারা ব্যাতীত। (৪৩ঃ৮৬)

(شرح الاربعين النووية , মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ৬৭, দার থারয়া লিল নাশর )