শয়তান আল্লাহ তা’লার কাছে চারটি ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে।

সূরা আন নিসা’র ১১৯ নাম্বার আয়াতে শয়তানের ৪ টি প্রতিজ্ঞার ব্যাপারে জানা যায়।

অঙ্গীকার নম্বর-০১

“And I will surely mislead them…”
[ “আমি তাদেরকে অবশ্যই পথভ্রষ্ট করবো”]

শয়তান শপথ নিলো যে, সে আমাদেরকে অবশ্যই পথভ্রষ্ট করবে।
আমরা কীভাবে পথভ্রষ্ট হবো? যখন আমরা দ্বীন ভুলে যাবো, দ্বীন থেকে দূরে সরে যাবো।
চাকচিক্যময় পৃথিবীকেই যখন আমরা আপন করে নিয়ে পরকালের কথা ভুলে যাবো, তখনই আমরা পথভ্রষ্ট হবো।

অঙ্গীকার নম্বর-০২

“and I will surely arouse (sinful) desires in them…”
[ “এবং তাদের মধ্যে আমি দুনিয়াবি কামনা বাসনা বাড়িয়ে দেবো”]

দেখুন, আজকে আমাদের ‘Aim in life’ হলো কোটিপতি হওয়া। এই লাখপতি, কোটিপতি হবার জন্যে পৃথিবীতে যা যা করা লাগে তার সবটাই আমরা করি। ঘুষ খাওয়া, সুদ খাওয়া, মানুষ খুন, চুরি,ডাকাতি সহ এমন কোন নিকৃষ্ট কাজ নেই যা আমরা করতে দ্বিধা বোধ করি না। কারণ, শয়তান আমাদের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, যেকোন মূল্যেই হোক, আমাকে লাখপতি হতে হবে। কোটিপতি হতে হবে। আমার কয়েকটা বাড়ি থাকতে হবে, গাড়ি থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণে ব্যাংক-ব্যালেন্স থাকতে হবে। তবেই আমি জীবনে সফল।
শুধু তাই নয়, শয়তান আমাদেরকে ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, সারারাত বসে বসে নেট ব্রাউজিং করো। পর্ণ দেখো, মদ খাও, গাঁজা খাও, ড্রাগ নাও। পার্টি করো, লিভ টুগেদার করো। মুভি দেখো, গান শোনো। তারকাদের রগরগে শরীর দেখে উত্তেজিত হও। সিগারেট খাও।
This is the life. Enjoy it.
নামাজের চিন্তা? আরে বাবা, সল্যুশান আছে। শুক্রবারে জুমার নামাজে গিয়ে একদম সামনের কাতারে বসবা। ঈমাম সাহেব যখন ফরজ নামাজ শেষ করে হাত তুলে মোনাজাত ধরবে- তখন জোরে জোরে আ-মীন বলা শুরু করবা,ব্যস! গুনাহ মাফ। এরপর আবার শুরু করো…….

অঙ্গীকার নম্বর-০৩

“…. and I will surely order them so they will surely cut off the ears of the cattle…”
[ “এবং আমি তাদেরকে নির্দেশ দেবো, ফলে তারা জন্তু জানোয়ারদের কান ছেদন করবে ”]

এই লাইনটার একটা গূঢ় অর্থ আছে। প্রাক-ইসলামী যুগে প্যাগানরা করতো কী, জন্তু-জানোয়ারদের কান কেটে নিয়ে, তাদের বিদঘুটে করে, এরপর সেই জন্তু জানোয়ারদের পূজা করতো। সেই জন্তু জানোয়ারদের ‘স্রষ্টা’ হিসেবে প্রচার করতো।
মোদ্দাকথা, ধর্মকে বিকৃতি সাধন করাই ছিলো তাদের কাজ।
শয়তান তাদের উপমা টেনে বলছে, সেও আমাদের দিয়ে এভাবে ধর্মের বিকৃতি সাধন ঘটিয়ে ছাড়বে।
আজকে আমরা ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ এর নামে নতুন ধর্ম, নতুন মতাদর্শের দেখা পাচ্ছি।
আমরাই বলছি- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
আমরাই পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফাস্ট নাইট, লাভ ডে, কিস ডে, হাগ ডে নামের বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ধর্মের সাথে সমান্তরাল ভেবে বসেছি। আমরা বলি, এসব করলে ধর্মের তো কোন ক্ষতি নেই।
আমি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালালাম, হাতি ঘোঁড়া, পেঁচার প্রতিকৃতি মাথায় নিয়ে মিছিল করে মঙ্গল অণ্বেষণ করলাম, আবার নিজেকে মুসলমানও দাবি করলাম। এটাই হচ্ছে শয়তানের অঙ্গীকার..
এখানেই শেষ নয়। দ্বীনের মধ্যে নতুন নতুন তরীকা, নতুন নতুন ইবাদাত, নতুন নতুন ফর্মুলা সংযোজন করে ভাবি,- ‘আহ! আমি তো সাচ্চা ঈমানদার আছি।’
এভাবে বিদাতে পরিপূর্ণ আজ আমাদের সমাজ। শয়তান তার অঙ্গীকারে অটল…

অঙ্গীকার নম্বর-০৪

“….. and I will surely order them so they will surely change the creation of Allah.”
[ “এবং, আমি অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ দেবো এবং তারা আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি ঘটাবে ”]

খুবই সত্য প্রতিশ্রুতি। আমরা কী আজ আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে বিকৃতি ঘটাচ্ছি না?
ছেলেরা আজকাল এমনভাবে, এতো লম্বা করে, ঝুঁটি বেঁধে চুল রাখে, দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সে আসলে ছেলে। মনে হয় কোন মেয়ে মানুষ হেঁটে যাচ্ছে।
এরপর, হাতে চুড়ি, বালা, কানে দুল পরা, গায়ে ট্যাটু করা তো আজকালকার মডার্ণ ছেলেদের কাছে ফ্যাশনের অংশ।
মেয়েরা ব্রু প্ল্যাক করে, ছেলেদের জামা কাপড় পরে এমন অবস্থায় বের হয়, দেখে বোঝার উপায় নেই সে ছেলে না মেয়ে…
এছাড়াও, আজকাল অনেক ছেলেরা সার্জারি করে মেয়ে হয়ে যাচ্ছে, অনেক মেয়েরা সার্জারি করে ছেলে হয়ে যাচ্ছে… এসব নাকী আধুনিকতা!
নাহ! এসব ধোঁকা! শয়তানের ধোঁকা।

শয়তান তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
আর, যারাই শয়তানের ফাঁদে পা দিবে, তাদের জন্য বলা হচ্ছে-

“And whoever takes Shaytan as a friend besides Allah, then surely he has suffered a manifest lost.”

“আর, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে শয়তানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে (তাকে অনুসরণ করে), সে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত…….. ”

***আরিফ আজাদ***