শুধরে নিন সংজ্ঞা গুলো ইসলামের আলোকে

যতটুকু জানেন হয়তো আংশিক বা ত্রুটিপূর্ণ কিংবা বিপরীত। জেনে নিন নীম্নোক্ত হাদিসগুলোর মাধ্যমে আলেমদের থেকে প্রাপ্ত ফিকহ বা দীনের উপলব্ধি।

* অহংকার (কিবির) কি?

– ১) নিজেকে উত্তম মনে করে অন্যকে হেয়-তুচ্ছজ্ঞান করা, ছোট করা, অপমান করা এবং ২) সত্য জানার পরও তা প্রত্যাখান করা,মেনে না নেওয়া।
— দলীল: সহিহ মুসলিম, হাদিস- ১৬৬

* সুদের পাপী কারা কারা?

– যে সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের হিসাব রাখে ও সুদের সাক্ষী থাকে। মোট কথা, সরাসরি খাওয়া-না খাওয়া ছাড়াও বাকি সকলেই যারা কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত তারাও এ ভয়াবহ পাপে আক্রান্ত।
— দলীল: সুনান আবু দাউদ, হাদিস- ৩৩৩৩

*নিঃসন্তান কাকে বলে?

– সে নয় যার কাছে কোন সন্তান নেই, বরং যাদের সন্তান বালেগ হওয়ার পূর্বে অথবা রূহ পাবার পর মৃত্যু হয়নি এবং সে কারণে আল্লাহর হেফাযতেও তার কোন সন্তান এভাবে মৃত্যুবরণের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নেই, মূলত সেইই নিঃসন্তান।
— দলীল: সহিহ বুখারী, হাদিস- ৬৫৩৫

*শক্তিশালী বীর কে?

– সে নয় যে অন্যকে রেসলিং কিংবা বক্সিং রিং এ হারিয়েছে কিংবা মারামারি তে পরাজিত করেছে পেশী শক্তির বলে, বরং প্রকৃত শক্তিশালী বীর সে,যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম হয়েছে, নিজেকে দমন করতে সক্ষম হয়েছে।
— দলীল: সহিহ বুখারী, হাদিস- ৬৫৩৫

*আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা অর্থ কি?

– আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখা বা রক্ষা করা অর্থ এই নয় যে আপনার আত্মীয় আপনার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে, সদ্ব্যবহার করে তাই আপনিও অনুরূপ করেন। বরং, ইসলামে মূলত: আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা বলতে বুঝায়, যে আপনার আত্মীয় আপনার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেনা, সদ্ব্যবহার করেনা কিন্তু এরপরো আপনি তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। মূলত এরই নাম ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা। — দলীল: জামে আত-তিরিমিযি, হাদিস- ১৯০৮

*শাহীদ কারা?-

যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, ইসলামের কালিমা সমুন্নত করার জন্য যে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যায়। এমনিভাবে আল্লাহর পথে সংগ্রামরত প্রাণ হারানো ব্যক্তিও শাহীদ।
এছাড়াও মহামারীতে, পেটের অসুখে বা বিষ ফোঁড়ায়, দূর্ঘটনায় ভারী কোন কিছুর চাপায়, আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা গেলেও শাহীদের মৃত্যু বলে বিবেচিত ইসলামে। তবে জেনে রাখা জরুরী, আল্লাহ যাদের কে শাহীদ হিসেবে কবুল করেছেন তারা প্রত্যেকেই এই সাত উপায়েই মৃত্যুবরণকারী, কিন্তু এই সাত উপায়ে মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেকেই শাহীদ নন। এছাড়াও ইসলামী প্রতিরক্ষাজনিত পাহারার কাজে নিয়োজিত অবস্থায় এবং আল্লাহ তা’আলা মানুষের তার নিয়্যাত অনুযায়ী শাহীদের মর্যাদা দিয়ে থাকেন, তা সে নিজ ঘরের বিছানায় পড়ে মৃত্যু হলেও। কোন পাল-রায়-বসু-চন্দ্র-ঘোষ কিংবা মার্টিন-স্টিফেন রা কখনো শাহীদ হয়না। তাদের মৃত্যুকে বড় জোর আত্মোৎসর্গ, আত্মাহুতি বা বলিদান বলা যেতে পারে।

– দলীল: সুনান নাসাঈ, হাদিস – ১৮৪৬, ৩১৬৭, ৩১৬৪, ৩১৬২, সহিহ মুসলিম, হাদিস – ৪৮৩৫

*নিঃস্ব নিঃস্বম্বল (মুফলিস) মূলত কারা?

– নিঃস্ব বলতে রাসূল ﷺ বুঝতেন যাদের কে তারা ওরা নয় যাদের অর্থ সম্পদ, জমি-বাড়ি নেই সহায় স্বম্বলহীন,বরং তারা যারা কিয়ামাতের ময়দানে বিপুল পরিমাণ স্বালাত,সিয়াম সহ অনেক পূন্য-নেক আমল নিয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। কিন্তু, দুনিয়াতে থাকাকালীন সে কখনো গীবত করে, অপবাদ দিয়ে, কুৎসা রটিয়ে, চুরি করে, আত্মসাৎ করে, গালি দিয়ে, মারধর করে,অপমান অপদস্থ করে ইত্যাদির কোনো উপায়ে উক্ত বান্দার হক্ব নষ্ট করেছে এবং তার কারণে উক্ত ব্যক্তির কাছে থেকে ক্ষমাও চায়নি। আর বান্দার হক্ব নষ্ট করলে যতক্ষণ না উক্ত ব্যক্তির নিকট ক্ষমা চাওয়া হয় ততক্ষণ আল্লাহ তাকে ঐ পাপ থেকে নিষ্কৃতি দেন না। সুতরাং, কিয়ামাতের ঐ দিন আল্লাহ তার আমল থেকে নেক আমলসমূহ কেটে কেটে ঐ সমস্ত পাওনাদার বান্দাদের কে বন্টন করে দেবেন যাদের হক্ব সে উপরিল্লিখিত উপায়ে নষ্ট করেছে। এভাবে বন্টন করতে করতে এক সময় তার সমস্ত আমল একে একে নিঃশেষ হয়ে যাবে, তখন তার থেকে নেক আমল কেটে বন্টন করে দেওয়ার মত কোন আমল বেঁচে থাকবেনা। কিন্তু তখনো পাওনাদার দের লাইন থাকবে লম্বা। তখন আল্লাহ পাক ঐ সমস্ত পাওনাদারদের কৃত পাপ বা গুনাহ গুলো কেটে নিয়ে তার ঘাঁড়ে চাপাতে থাকবেন এবং এভাবে দিতে দিতে তাকে এক সময় টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। আমল শুন্য এমন ব্যক্তিই হোলো প্রকৃত নিঃস্ব হতভাগা।

– দলীল: রিয়াযুস স্বলেহীন, হাদিস- ২২৩, জামে আত-তিরমিযি, হাদিস-২৪১৮

*গীবাহ বা গীবত কি?

গীবাহ বা গীবত অর্থ পরনিন্দা। কিন্তু ইসলামে কারো পেছনে অর্থাৎ অনুপস্থিতি তে তার ব্যপারে অন্যের কাছে এমন কিছু বলা বা আলোচনা করা যা সে সামনে থাকলে এবং শুনলে পছন্দ করতো না। যদি তার কোন অন্যায় খারাপ দিক নিয়েও আলোচনা করা হয় যা সত্য,তাহলেই তা গীবত। আর আলোচনার কথা যদি মিথ্যা হয় তবে তা হবে বোহতান বা অপবাদ যা আরো জঘন্য অপরাধ। গীবত করা মানে বান্দার হক্ব নষ্ট করা যা ঐ ব্যক্তির ক্ষমা ছাড়া আল্লাহ ক্ষমা করেন না যার পরিণতির অংশ বিশেষ ইতোমধ্যে উপরের আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট আশা করি। এছাড়াও এ পাপ কে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মত জঘন্য, বর্বর কাজ হিসেবে আল্লাহ কুর’আনে এবং রাসূল ﷺ এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি।এছাড়াও নারীদের অধিক হারে যে পাপগুলো জাহান্নামে ঠেলে দেয় গীবত তার মধ্যে প্রধান। মিরাজের ভ্রমণে রাসূল ﷺ কে দেখানো হয়েছে যে গীবতকারী ব্যক্তি তামার বা মেটালের তৈরী ধাঁরালো নখ দিয়ে তাদের মুখে ও বুকে হাঁচড় দিতে থাকবে আর ওয়ায়েল নামক জাহান্নাম হবে তাদের বাসস্থান।

-দলীল: সূরাহ হুজুরাত ৪৯:১১-১২, সূরাহ হুমাযাহ ১০৪:১, সুনান আবু দাউদ, হাদিস- ২৮৭৪, ৪৮৭৮, ৪৮৮০, জামে আত-তিরমিযি, হাদিস-২৪১৮, সুনান নাসাঈ,হাদিস-১৫৭৫