শিয়া সম্পর্কে জানুন

শিয়া সম্পর্কে জানুন।

লিখেছেনঃ Abdur Raquib

শিয়া আকীদা তথা ধর্ম বিশ্বাস ???
১-ইমামাহ বা নেতৃত্বঃ তাদের মতে নেতৃত্ব দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হতে হবে। অর্থাৎ পূর্বের নেতা পরের নেতাকে নির্দিষ্টরূপে নির্ধারণ করবেন; তার গুণাগুণ বর্ণনার মাধ্যমে নয়। নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে নেতৃত্বহীন অবস্থায় ছেড়ে মারা যাবেন তা হয় না; বরং তাঁর জন্য কোনো এক ব্যক্তিকে নির্ধারণ করা জরুরি ছিল, যাঁর দিকে পরবর্তী লোকেরা প্রত্যাবর্তন করবে এবং তাঁর প্রতি ভরসা করবে।

তারা এই বিষয়ে বলে থাকে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘গদীরে খাম’ দিবসে স্পষ্টই আলীর ইমামত নির্দিষ্ট করে দিয়ে ঘোষণা করেন যে, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরে ইমাম বা খলীফা হবেন। অবশ্য গদীরে খাম নামক ঘটনায় এমন নির্ধারণের বিষয়টি আহলে সুন্নাতের মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকদের নিকট অস্বীকৃত ও অসাব্যস্ত।

তারা মনে করে, আলী তাঁর দুই পুত্র হাসান ও হুসাইনের নেতৃত নির্ধারণ করেছিলেন। এভাবে অন্য ইমামরাও। তাই প্রত্যেক ইমাম তার পরের ইমামকে নির্ধারণ করবে আর এটা হবে তার অসীয়ত স্বরূপ। তারা তাদের ‘আউস্বিয়া’ (অসিয়তকৃত ব্যক্তিবর্গ) নামে আখ্যায়িত করে থাকে।

২-ইসমত বা ইমামদের নিষ্পাপতায় বিশ্বাস:

তাদের বিশ্বাস যে, তাদের সকল ইমাম ছোট-বড় সকল প্রকার পাপ থেকে পবিত্র এবং নিস্পাপ।

৩-ইলমে লাদুন্নীর আক্বীদাঃ (আধ্যাতিক জ্ঞান)

তাদের প্রত্যেক ইমামকে ইলমে লাদুন্নী তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট থেকে আধ্যাতিক জ্ঞান দেওয়া হয়েছে যা দ্বারা তারা শরীয়ত পরিপূর্ণ করে থাকে। তারা ইলমে লাদুন্নীর অধিকারী, তাদের ও নবীদের মধ্যে এছাড়া কোনো পার্থক্য নেই যে, নবীদের কাছে অহী আসে আর তাদের কাছে অহী হয় না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের শরীয়তের গোপন ভেদ দিয়ে গেছেন, যেন তারা সময়ের দাবী অনুযায়ী সাধারণ লোকদের বর্ণনা দেয়।

৪-ইমামের অলৌকিক শক্তির প্রতি বিশ্বাসঃ

ইমামের হাতে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। এসব কে তারা মুজিযা বলে থাকে। যদি কোনো ক্ষেত্রে পূর্বের ইমাম পরের ইমামকে নির্ধারণ না করে থাকে তাহলে এমতাবস্থায় পরের ইমাম অলৌকিকতার মাধ্যমে নির্ধারণ হবে।

৫-গায়েব বা অনুপস্থিতির আকীদা:

তারা বিশ্বাস করে যে, কোনো যুগ হুজ্জাতুল্লাহ থেকে শূন্য হতে পারে না। ‌এই বিশ্বাসের ফলস্বরূপ তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের বারোতম ইমাম তাঁর সুড়ঙ্গে গায়েব হয়ে গেছে বা আত্মগোপন করেছে। তারা আবার এই বিষয়টিকে ছোট আত্মগোপন ও বড় আত্মগোপনে বিভিক্ত করে থাকে, যা মূলত: তাদের কল্প-কাহিনীর অন্তর্ভুক্ত।

৬-রাজআ’ত বা প্রত্যাবর্তনে বিশ্বাসঃ

তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের দ্বাদশ ইমাম হাসান আসকারী শেষ যামানায় পূণরায় ফিরে আসবেন যখন আল্লাহ তাকে পাতাল কুঠরি থেকে বের হওয়ার আদেশ দিবেন। তিনি এসে জুলুম ও অত্যাচারে পরিপূর্ণ পৃথিবীকে ন্যায় ও সুবিচারে ভরে দিবেন এবং শিয়া বিরোধীদের বদলা নিবেন।

৭ ‘তাকিয়া’ (গোপনীয়তা) নীতি অবলম্বন:

তাকিয়া মনে গোপনীয়তা। তারা সওয়াবের কাজ মনে অন্তরের মূল বিশ্বাসকে গোপন করে শিয়া ছাড়া অন্যদের সামনে ভিন্ন মত প্রকাশ করে। এটাই তাকিয়া নীতি। তারা এমন করাকে দ্বীনের মৌলিক বিধান মনে করে এবং তাকিয়া পরিত্যাগ করাকে নামায পরিত্যাগ করার মত পাপ মনে করে। তাদের শেষ ইমাম পৃথিবীতে পুণরায় আগমনের পূর্বে এই বিধান পালন করা ওয়াজিব। যে তার পূর্বে তা পরিত্যাগ করবে সে দ্বীন থেকে এবং ইমামিয়া মতবাদ থেকে বের হয়ে যাবে। তাদের পঞ্চম ইমাম আবু জাফর এর বরাতে তারা উল্লেখ করেছে, “আকিয়া আমার দ্বীন এবং আমার পূর্ববর্তীদের দ্বীন, যার তাকিয়া নেই তার ঈমান নেই”।

৮-‘মুত্ আহ’ করা (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কন্ট্রাক্ট বিবাহ করা):

তারা মহিলার সাথে মুতআহ সম্পর্ক করাকে উত্তম স্বভাব এবং অতিউত্তম নৈকট্যের কাজ মনে করে এবং এর স্বপক্ষে কুরআনের এই দলীল উপস্থাপন করে। “অতঃপর তাদের মধ্যে যাদের তোমরা সম্ভোগ করেছ, তাদেরকে তাদের ধার্যকৃত মহর প্রদান কর।” [নিসা/২৪]

এই প্রকার বিবাহকে ইসলাম হারাম করেছে, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু বিনিময়ে করা হয়। অধিকাংশ আহলুস্ সুন্নাহ বিবাহে শর্তারোপ করেছে যে, তা যেন অনির্দিষ্টকালের নিয়তে হয়। তাছাড়া মুতআহ বিবাহের রয়েছে কিছু সামাজিক কুপ্রভাব, যা তা নিষিদ্ধতার মতকে দৃঢ়তা প্রদান করে।

৯-বর্তমান কুরআন ছাড়াও ফাতেমী মুসহাফ বা ফাতেমী কুরআন থাকার দাবী:

তারা মনে করে, তাদের নিকট বর্তমান কুরআন ছাড়াও ফাতেমী মুসহাফ নামে অন্য একটি কুরআন রয়েছে। এ কথাটি কুলায়নী তার আল কাফী গ্রন্থের ৫৭ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, জাফর সাদেক থেকে বর্ণিত “আমাদের নিকট রয়েছে ফাতেমী মুসহাফ। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি বললামঃ ফাতেমার মুসহাফ কি? তিনি বললেনঃ তা এমন মুসহাফ (কুরআন) যা তোমাদের এই কুরআনের তিনগুণ। আল্লাহর কসম তাতে তোমাদের কুরআনের একটি অক্ষরও নেই”।

১০-বারাআত বা সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা করাঃ

তারা তিন খলীফা আবু বাকর, উমার এবং উসমান (রাযিঃ) হতে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয় এবং তাদের জঘন্য বিশেষণে আখ্যায়িত করে। তারা মনে করে, উক্ত তিন ব্যক্তি আলী (রাযিঃ) এর খেলাফত অবৈধ পন্থায় জবরদখলকারী! এই কারণে তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ না বলে আবু বকর ও উমর রা. এর প্রতি লানত (অভিশাপ) দেওয়ার মাধ্যমে শুরু করে। এছাড়াও তারা বহু সাহাবী এমনকি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাযিঃ) কে জঘন্য ভাষায় অভিশাপ দেয় এবং তাদের মান-সম্মানে আঘাত করে।

১১-আলী রা. এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনঃ

তাদের অনেকে আলী (রাযিঃ) সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করে থাকে। অনেকে তাকে মাবুদের স্তরেও পৌঁছিয়েছে যেমন সাবাঈ শিয়ারা। তাদের অনেকে বলেছে যে, জিবরীল ফেরেশতা ভুল করে আলী রা. এর পরিবর্তে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম এর নিকট রেসালাত নিয়ে অবতরণ করে; কারণ আলী দেখতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম এর মত ছিল যেমন কাক কাকের মত হয় এই জন্য তাকে তারা গুরাবিয়্যাহ (কাক সদৃশ্য ) নামকরণ করে।

১২-গদীরে খাম ঈদ-উৎসব পালনঃ

তারা প্রতিবছর ১৮ই যুলহজ্জ তারিখে এই ঈদ-উৎসব পালন করে এবং তারা এই ঈদকে ইদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা থেকে প্রাধান্য দেয় এবং ঈদুল আকবার (সবচেয়ে বড় ঈদ) আখ্যা দেয়। এই দিনে রোযা রাখা তাদের নিকট সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। তারা বিশ্বাস করে যে, এই দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম আলী (রাযিঃ) কে তার পরবর্তী খলীফা হিসেবে অসিয়ত করেছিলেন।

এছাড়া তাদের আরও একটি ঈদ রয়েছে যা তারা রবিউল আউয়াল মাসের নবম তারিখে উদযাপন করে। সেটা তাদের বাবা শুজাউদ্দীনের ঈদ। এটা প্রকৃতপক্ষে অগ্নীপূজক আবু লুলু এর কবর। এই অগ্নীপূজক ছিল উমর বিন খাত্তাব (রাযিঃ) এর হত্যাকারী।

১৩-শোকপালন

তারা শোক পালনের অনুষ্ঠান করে, মৃতকে স্মরণ করে বিলাপ করে কাঁদে, বুক চাপড়ায়, ধারাল অস্ত্র দ্বারা পিঠ আঘাত করে রক্তাক্ত করে। এই প্রকার কাজ তারা মুহররম মাসের প্রথম দশকে সওয়াবের আশায় করে এবং পাপের কাফ্ফারা মনে করে। বর্তমানে যদি কেউ তাদের পবিত্র স্থানাদি (!!) যেমন কারবালা, নাজাফ, কুম ইত্যাদি এলাকা ভ্রমন করে, তাহলে আরও অনেক আশ্চর্য্য জনক কার্যকলাপ দেখতে পারে। [অবশ্য তাদের এসব কার্যক্রম বর্তমানে নেট মারফতও দেখা যায়]

[উপরোক্ত আকীদা পোষণ করার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন বড় শির্কে লিপ্ত। যেমন, আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টির কাছে দুআ করা, তাদের নিকট আশা-ভরসা করা, তাদের জন্য নযর-মানত করা, সাজদা করা, তাওয়াফ করা প্রভৃতি]