শাইখ মুকবিলের নারী সংক্রান্ত ফাতাওয়া – সকল পর্ব একত্রে

মূল বইঃ শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদি’ইয়ি
অনুবাদঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী।

প্রশ্নঃ একজন জ্ঞানের শিক্ষার্থিনী যিনি মাসজিদ হতে শিক্ষা গ্রহণ করেন, যদি তিনি বাড়ি ফেরত যান, তার উপর এটি দায়িত্ব যে তিনি যা শিখেছেন তা পুনঃপাঠ করবেন। আর এর জন্যে অনেক সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু তিনি জানেন তার বাড়ীর ব্যস্ততা তার জন্যে অপেক্ষা করছে। সুতরাং তার দায়িত্ব তার মাকে সাহায্য করা, আর বাড়ীর কাজ তার সব সময় দখল করে নেয়। আর জ্ঞানের শিক্ষার জন্যে অনেক খালি সময় প্রয়োজন। সুতরাং যদি তিনি ঘরে শিক্ষা গ্রহণ করেন, তবে খুব বেশী জ্ঞানার্জন করতে পারেন না। কিভাবে তিনি এ পরিস্থিতির এবং জ্ঞানের জন্যে খালি সময় রাখাবার বিষয়টির সাথে সম্পর্ক টানবেন?

শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদি’ইয়িঃ যদি উনার পক্ষে সম্ভব দুনিয়ার কাজ বাদ দেওয়া, তবে তিনি তা করতে পারেন। আমি উনাকে এই পরামর্শ দিই। আর যদি তিনি তা না পারেন, তখন তার উপর এ দায়িত্ব যে সে তার সময়ের সঠিক বিন্যাস করবে। আর সময়ের সবচাইতে বড় অংশ জ্ঞান চর্চার জন্যে রাখবেন, আর কিয়দাংশ দুনিয়ার কাজের জন্যে রাখবেন। আর কেউ কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করতে পারে না এ ব্যতীত যে দুনিয়ার গুরুত্ব জ্ঞানের পরে হবে। আর যদি জ্ঞান  দুনিয়ার পরে হয়, তবে না (অর্থাৎ এ কাজ অসম্ভব), আর আল্লাহই আমাদের সাহায্যকারী।

মূল বইঃ শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদি’ইয়ি
অনুবাদঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী।

প্রশ্নঃ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীয়াগত বা শারীয়া বহির্ভূত জ্ঞানার্জন হয়ে থাকে, আর যদি এতে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে তা পরিষ্কারভাবে হারাম বর্ণনাকৃত। কিন্তু যদি এতে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা না থাকে, তবে সেক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্তের প্রমান কোথায়? সুতরাং অনেক মুসলিম নারী এই মনে করেন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা থেকে দূরে থাকাই সঠিক সিদ্ধান্ত যে কারণে অনেকেই এখন পর্যন্ত তাদের বাড়ি হতে বাহির হন না, আমি আশা করি আপনি এ বিষয়টি পরিষ্কার করবেন।

শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদি’ইয়িঃ এ ক্ষেত্রে প্রমাণ হচ্ছেঃ ঘরে অবস্থান করা। আরে এতে কোন প্রকার সমস্যা বা দ্বিমত নেই। আর আল্লাহ তা’আলার এই বক্তব্যঃ

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ

এবং তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে। (৩৩ঃ৩৩)

(অনুবাদকঃ একই আয়াতের পরের অংশও গুরুত্বপূর্ণ, লক্ষ্য করুনঃ وَلا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ (প্রাচীন জাহিলী যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।) (৩৩ঃ৩৩))

যা নিজ অবস্থান আর এর উদ্দেশ্য অবস্থান কর তোমাদের নিজেদের বাড়িতে। এবং তার জন্যে এটি জায়েয যে সে জরুরী কাজে বাহির হবে।

এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিষয়ে, এক্ষেত্রে সঠিক হচ্ছে এ সকল প্রতিষ্ঠান বরং অনেক নারীকে কল্যাণকর জ্ঞানার্জন (অর্থাৎ দীনের জ্ঞান) হতে বাধা দেয়, আর তাদের বিয়ে শাদীর ক্ষেত্রেও বাধার সৃষ্টি করে। হয়ত কোন নারী ততক্ষণ পর্যন্ত বিয়ে করবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে। হয়ত সে যদি বিয়ে করে পঁচিশ বছর পর, যা হয়ত কোন নারীর তুলনায় যে বিশ বছরের, যার হয়ত ইতিমধ্যে তিন জন সন্তান রয়েছে। সুতরাং সঠিক মত হচ্ছে একে বাধাপ্রদানকারী হিসেবেই বর্ণনা করা হয়। এ তথ্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ, বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ এবং একই ভাবে আমাদের চিকিৎসালয় সমূহ ইসলামিক ভিত্তিতে স্থাপিত নয়, বরং এ সকল প্রতিষ্ঠান ইসলামের শত্রুদের অন্ধ অনুসরণের উপর স্থাপিত।

সুতরাং আমি উপদেশ দিই বাড়িতে অবস্থান করবার জন্যে। আর নিশ্চিতভাবে আপনারা (বোনেরা) শুনেছেন নবী ﷺ এর বাণীঃ

المرأة عورة, فإذا خرجت استشرفها الشيطان

নারী আওরাহ, সুতরাং যদি সে বাহিরে যায়, তবে শয়তান তাকে পর্যবেক্ষণ করায়। (তিরমিযী খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৩৭)

অর্থাৎ তাকে বলে, তুমি কারো দ্বারা পরীক্ষিত হবে না এ ব্যতীত যে সে তোমার প্রতি আশ্চর্যানবিত (অর্থাৎ গভীরভাবে আকর্ষিত) হবে।

এবং নবী ﷺ বলেছেন,

ما تركت بعدي فتنة اضر على الرجال من النساء

আমি আমার পরে পুরুষদের জন্যে নারী অপেক্ষা আর কোন কিছু ক্ষতিকর রেখে যাইনি।  (বুখারী  ৫০৯৬)

বিষয়টি অত্যন্ত বিপজ্জনক। সুতরাং আমাদের উপদেশ হচ্ছে বাড়িতে অবস্থান করা, আর আপনারা বাড়ি হতে বাহির হবেন না যদি না কোন দরকার পরে।

মূল বইঃ শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদি’ইয়ি
অনুবাদঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী।

প্রশ্নঃ যদি কোন নারী তার বাড়িতেই অবস্থান করে, এবং সেখানে অবস্থান করাই উত্তম মনে করে আর তাই সে এমনকি মসজিদেও যায় না, এটা কি ভালো? নাকি এ নারী ভালো যে জ্ঞান অন্বেষণ করে এবং মাসজিদে যেতে চায়?

শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদি’ইয়িঃ যে নারী তার ঘরে থাকে, আর তার ঘরে জ্ঞানার্জন করাই ভালো, কেননা নবী ﷺ বলেছেন,

لا تمنعوا إماء الله مساجد الله, بيوتهن خير لهن

তোমরা আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মাসজিদে যেতে বারণ কর না, (কিন্তু) তাদের বাড়ি তাদের জন্যে উত্তম। (আবু দাউদ ৫৬৭)

প্রশ্নঃ সে নারীর উপর ইসলামের হুকুম কি যার জন্যে বাড়িতে জ্ঞান অন্বেষণের সকল শর্ত পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু এ সত্ত্বেও সে মাসজিদের জন্যে বাড়ি হতে বাহির হয়, আল্লাহর পথে তার অন্য বোনদের সাথে দেখা করবার জন্যে, অথবা তার কাছে যা জ্ঞান রয়েছে তা বিতরণ করতে?

শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদি’ইয়িঃ সে যদি মাসজিদের উদ্দেশ্যে বাহির হয়, আর সে তার নিজেকে ফিতনা হতে সংরক্ষণ করবে, আর সে তার ধারেকাছের পুরুষদেরকে ফিতনা থেকে সংরক্ষণ করবে, তবে তাতে কোন সমস্যা নেই। সে ক্ষেত্রে এটি ভালো কাজ। আর যদি নারীরা তার নিকট আসে তার বাড়িতে, সেটি তার জন্যে অধিকতর নিরাপদ। যাই হোক একটি বড় ওয়াজিব রয়েছে, অর্থাৎঃ যার উপর উত্তম সালেহ নারীরা কায়েম থাকে, এই দায়িত্বভার অত্যন্ত বড়। কেননা তা নারীদের পারস্পরিক সংমিশ্রণে দ্বারা বিশাল ফ্যাসাদ ইসলামিক জমায়েতে প্রবেশ করেছে, এর পর ইসলামের শত্রুরা তাদের দাওয়াত দিয়েছে তাবাররুজ (নিজের রূপ যাহির করবার জন্যে সাজগোজ), নিজেকে যাহির করবার জন্যে আস সুফুর (অধিক জামা কাপড়) এর দিকে দাওয়াত দিয়েছে এবং অগ্রসর হয়েছে এ ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে।

আমাদের জমায়েতে ভয়াবহ খারাপ কিছু প্রবেশ করেছে নারীদের অংশ গ্রহনের দ্বারা, আর সোমালিয়াতে উলামাদের নারী ব্যতীত আর কোন কারণ ধ্বংস করেনি। ঠিক এভাবেই সানা’আ (ইয়েমেনের রাজধানী) রিয়াদ, আর এমনি আরও অনেক স্থান রয়েছে যেখানে তারা বাহিরে গিয়েছে ইসলামের শত্রুদের পক্ষে সমর্থনে মুযাহারাত (মিছিল-জমায়েত) এর উদ্দেশ্যে। আর বিদ’আতীদের মুযাহারাত যেখানে তা নারী এবং পুরুষের জন্যে, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি الإلحاد الخميني في ارض الحرمين বইয়ে।

সুতরাং অত্যন্ত গুরুত্ব এবং ইজতিহাদের সাথে, আমি আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি যেন তিনি তোমাদের তাওফিক দান করেন আর যেন তিনি ইসলাম এবং মুসলিমদের কল্যাণ করেন তোমাদের মাধ্যমে।

মূল বইঃ শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদি’ইয়ি
অনুবাদঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী।

প্রশ্নঃ শারিয়াতের জ্ঞান কি যা নারীদের জন্যে অর্জন করা ওয়াজিব?

শাইখ মুকবিল বিন হাদী আল ওয়াদি’ইয়িঃ তার জন্যে ওয়াজিব হচ্ছে আল কুরআন এবং আস সুন্নাহ হতে আকিদার শিক্ষা অর্জন করা। এর পর সালাত – রাসুল কিভাবে সালাত আদায় করেছেন। যদি সে ধনবতী হয়, তবে সে শিক্ষা গ্রহন করবে তার উপর যে যাকাত আল্লাহ ওয়াজিব করেছেন সে ব্যপারে। যদি সে পেশাগত ভাবে ক্রয় বিক্রয় করে থাকে, তবে সে ক্রয় বিক্রয়ের হুকুম সমূহ শিখবে। এভাবেই সে যে কাজেই নিয়োজিত থাকবে, তার উপর ওয়াজিব সেই কাজের হুকুমসমূহ জানা। আর এটিই রাসুলুল্লাহ ﷺ এর হাদিসঃ

طلب العلم فريضة على كل مسلم

জ্ঞানান্বেষণ প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফারদ। [১]

হাদিসের ব্যাখ্যা। আর এভাবেই যদি সে চিকিৎসক হয়, তবে সে ক্ষেত্রে তার জন্যে ওয়াজিব তা অধ্যায়ন করা।

তার জন্যে কি পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা করা জায়েয? আর তার জন্যে কি ওষুধ দেওয়া জায়েয কেবল তার মাহরামের উপস্থিতিতেই? তার জন্যে আবশ্যক যে কাজসমূহে সে নিয়োজিত রয়েছে, তা সম্বন্ধে আল কুরআন এবং আস সুন্নাহ হতে অধ্যায়ন করা। আমি বুঝাতে চাইঃ আল কুরআন এবং আস সুন্নাহ হতে দলীল সহকারে। আমি এ কথা বুঝাচ্ছি না যে সে তার চিকিৎসা বিদ্যাকে আল কুরআন এবং আস সুন্নাহ হতেই নেওয়ার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকবে।[২]

পাদটীকা

[১] এর সানাদের অনেকগুলো তারিকাহ বা পথ রয়েছে; কখনো আনাস কখনো অন্য কেউ হতে। আর এর সকলগুলোই দুর্বল। কিন্তু এরা একে অপরকে শক্তিশালী করেছে। লক্ষ্য করুনঃ المقاصد الحسنة , পৃষ্ঠা ৬৬০।

[২] অনুবাদকঃ অর্থাৎ শাইখ বুঝাতে চাইছেন যে ঐ কাজ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আল কুরআন এবং আল হাদিসে বা তার আলোকে রয়েছে তা খুঁজে বাহির করা।

স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com।