লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর গুরুত্ব এবং অর্থ

ব্যাখ্যা সংকলনঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী
স্বত্বাধিকারীর অনুমতিদাতাঃ যুলফিকার ইবরাহীম মেমোন আল আথারী।

ব্যাখ্যা সংকলনঃ

 

 لا إله إلا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত)

গুরুত্বঃ

শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দিল্লাহ বিন বায বলেন,

এই বাক্যটি দীনের মূল এবং ধর্মের ভিত্তি। এ হচ্ছে সেই বাণী যার দ্বারা আল্লাহ কাফির আর মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। আর এই হচ্ছে সে বাণী যার দিকে সকল রাসুলগণ দাওয়াত দিয়েছেন। আর এর কারণেই কিতাব সমূহ নাযিল হয়েছে। আর এর কারণেই বুদ্ধি-ভিত্তিক দুটি জাতিকে সৃষ্টি করেছেন, অর্থাৎ জীন এবং মানবজাতিকে। এর প্রতিই দাওয়াত দিয়েছেন আমাদের বাবা আদম, আল্লাহর সালাত এবং সালাম তাঁর উপর এবং এর উপরই ছিলেন তিনি এবং তাঁর সন্তানেরা নূহ আলাইহিস সালামের সময় পর্যন্ত। এর পর নূহ আলাইহিস সালাম এর কাওমের মাঝে শিরক দেখা দেয় আর আল্লাহ তাদের জন্যে নূহ আলাইহি সালাত … কে পাঠান, যিনি তাদের আল্লাহর তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেন এবং বলেন,
يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ

ও আমার জাতি, আল্লাহর ইবাদাত কর, তোমাদের জন্যে তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। (৭ঃ৫৯)

আর এভাবেই হুদ, সালেহ, ইবরাহীম, লুত, শু’আইব আর রাসুলগণের মধ্য হতে অন্যান্যেরা – এরা সকলেই তাদের যার যার উম্মতকে এই কালিমার দিকেই দাওয়াত দিয়েছেন। তাঁরা দাওয়াত দিয়েছেন আল্লাহর একত্ববাদের দিকে, তাঁর প্রতি ইখলাস, তাঁর ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদাত বাদ দেওয়ার দিকে ডেকেছিলেন। তাদের সর্বশেষ, সর্বোত্তম হচ্ছেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু …। আল্লাহ তাঁকে তাঁর কাওমের কাছে পাঠিয়েছেন এই কালিমাসহ। আর তিনি তাদের বলেছেন, “ও কাওম, তোমরা বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ যাতে তোমরা সাফল্য অর্জন করতে পারো।” আর তিনি তাদের আদেশ করেছেন একমাত্র আল্লাহর প্রতিই ইবাদাতের ইখলাস রাখতে, আর এই দাওয়াত দেওয়া যে তাদের পিতৃবর্গ এবং পূর্বপুরুষেরা যার উপর ছিল তা আল্লাহর সাথে শিরক, মূর্তি পূজা, জড় পদার্থের পূজা, বৃক্ষ পূজা, পাথর পূজা এবং অন্যান্য কিছু পূজা। আর মুশরিকেরা তা অস্বীকার করল আর বললো,

أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ

সে কি ইলাহ সমূহকে একজন ইলাহ বানিয়ে দিয়েছে, নিশ্চয়ই তা এক আজব বিষয়। (৩৮ঃ৫)

কেননা নিশ্চিতভাবে তারা অভ্যস্ত ছিলো মূর্তি, জড় পদার্থের, ওয়ালী, গাছ এবং অন্যান্যের পূজা এবং তাদের জন্যে জবাই করা, তাদের জন্যে মান্নত করা, তাদের কোন ইচ্ছা পূরণের লক্ষ্যে আহ্বান করা, দুঃখ হতে মুক্তি লাভের প্রার্থনা ইত্যাদিতে। সুতরাং তারা এই বাক্যকে (শাহাদাতের বাণীকে) অস্বীকার করলো। কেননা তা তাদের ইলাহ এবং মা’বুদ সমূহ কে বাতিল করে।

আর আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তা’আলা বলেছেন,

إنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ * وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ

নিশ্চয়ই যদি তাদের বলা হয়, নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত (অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তবে তারা অহংকার করে। আর বলে, আমরা কি আমাদের ইলাহ সমূহকে এক উদ্ভ্রান্ত কবির জন্যে পরিত্যাগ করব? (৩৭ঃ৩৫-৩৬)

তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামকে তাদের নিজেদের অজ্ঞতা, পথভ্রষ্টতা, জেদ ইত্যাদির কারনে নাম দিলো কবি ও পাগল অথচ তারা জানতো তিনি সকল মানুষের চাইতে সত্যবাদী। আর তিনি আল-আমীন (পরম বিশ্বস্ত), তিনি সকল মানুষ হতে অধিক আকল সম্পন্ন। আর তিনি কবি নন। সুতরাং বরং তা (এই অপবাদ) মানুষের (এ ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) উপর অজ্ঞতা, জুলুম, অবাধ্যতা, ত্রুটি, মিথ্যাচার এবং সন্দেহ। সুতরাং যে কেই এই বাণীর ব্যপারে সত্যায়ন না করবে, যদিও সে এই বাণীর অর্থ জানে এবং তা অনুযায়ী আমল করে, তবুও সে মুসলিম নয়।

(সংক্ষেপিত, http://www.binbaz.org.sa/article/37)

 

অর্থঃ

শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন বলেন لا إله الا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর অর্থঃ নেই কোন حق (হাক, সত্য) উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত। এবং এ বক্তব্যকে উপযুক্ত করেছে “حق” (সত্য) শব্দটি, যা এই প্রশ্নের জবাব দেয়: এ কথা কিভাবে বলা হয় لا إله الا الله অথচ অন্য কোন উপাস্য বিদ্যমান যাদের উপাসনা করা হয় আল্লাহ ব্যতীত? নিশ্চিতভাবে আল্লাহ এদের آلهه (আলিহাহ, সংজ্ঞা নিচে দেখুন) নামকরন করেছেন এবং এদের উপাসকদেরও নামকরন آلهه । আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمْ آلِهَتُهُمُ الَّتِي يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ
বস্তুত তাদের কোনই উপকার করে নাই তাদের সেই آلهه (উপাস্যগুলি), যাদের তারা উপাসনা করত আল্লাহ্কে ব্যতীত। (১১ঃ১০১)

أَمْ لَهُمْ آلِهَةٌ تَمْنَعُهُمْ مِنْ دُونِنَا لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَ أَنْفُسِهِمْ وَلَا هُمْ مِنَّا يُصْحَبُونَ
তবে কি আমি ব্যাতীত তাদের এমন দেব-দেবীও আছে যারা তাদেরকে রক্ষা করতে পারে? তারা তো নিজেদেরকেই সাহায্য করতে পারে না এবং আমার বিরুদ্ধে তাদের সাহায্যকারীও থাকবে না। (২১ঃ৪৩)

وَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ
তুমি আল্লাহ্র সাথে অন্য মা’বুদকে ডেকো না। (২১ঃ৪৩)

সুতরাং لا الاه الا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তে যে সংবাদ রয়েছে তার প্রসঙ্গে আমরা বলি, এই সকল آلهه (ইলাহ এর বহুবচন) আল্লাহ কে বাদ দিয়ে যাদেরকে পূজা করা হয়, তারা ইলাহ, কিন্তু তারা বাতিল (অকার্যকর)। তারা সত্যিকার ইলাহ নয়। এবং তাদের الوهية (উলুহিয়্যাহ, উপাস্য হবার বৈশিষ্ট্য) তে কোন প্রকার অধিকার নেই। এবং একথাই নির্দেশ করে আল্লাহ তা’আলা এর বক্তব্য:

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ
আর এটি এজন্য যে, আল্লাহ, তিনিই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে ওটা তো অসত্য এবং আল্লাহ, তিনিই তো সমুচ্চ, মহান। (২২ঃ৬২)

সুতরাং যদি কোন মুশরিক কোন মূর্তির নিকট আসে যার সে উপাসনা করে তার প্রতি রুকু, সিজদা, চিৎকার করে কান্না, একাগ্রতা প্রদর্শন করবার মাধ্যমে, হয়ত সে তাকে ঢেকে রাখে , তবে তার ইবাদাত বাতিল, আর বাতিল তার উপাস্যও।

(شرح الاربعين النووية , মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ২৯-৩০, দার থারয়া লিল নাশর)

 

স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com।