যে সব ভুল-ভ্রান্তির কারণে দু’আ কবুল হয়না

দু’আ করার সময় অনেক ভুলভ্রান্তি ঘটে এবং সেগুলো দু’আকে কবুল হওয়া থেকে বিরত করে। এই ভুলভ্রান্তিগুলো কি কি?

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য,

দু’আ করার ক্ষেত্রে কৃত ভুলের সংখ্যা অনেক, যেগুলোর অধিকাংশই ‘সীমালঙ্ঘন’ শিরোনামের আওতাভুক্ত যেমনঃ

১. যখন দু’আর মধ্যে আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন তথা শিরক করা হয়-

যেমনঃ আল্লাহর সাথে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর নাম ধরে কোন কিছু চাওয়া হয়, সেটা হতে পারে কোন ব্যক্তি কিংবা গাছ অথবা কবর, কারণ দু’আ হচ্ছে একটি ইবাদাত আর এটাকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে করা হলো শিরক আর শিরক হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম অপরাধ যেটার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করা হয়। হাদীসে বর্ণিত আছে যেঃ

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ কোনটি? আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন-‘আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে বানানো অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’।”(বুখারী ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত)

২. যখন দু’আ করার সময় কোন নতুন পদ্ধতির তাওয়াসসুল(আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়) প্রবর্তন করা হয়-

যেমনঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর ব্যক্তিসত্তা কিংবা তাঁর মর্যাদার তাওয়াসসুল করা। ইসলাম ধর্ম হচ্ছে অনুসরণ করার জন্য , বিদ’আত তৈরির জন্য নয়।

৩. কারো ওপর বিপদ পতিত হওয়ার দরূণ মৃত্যুকামনা করা-

খাব্বাব(রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছেঃ

যদি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে মৃত্যুকামনা করতে নিষেধ না করতেন, আমি মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করতাম।”(বুখারী-৬৩৫০, মুসলিম-২৬৮১)

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যেঃ

“তোমাদের কেউ যেন তার ওপর বিপদ আসার কারণে মৃত্যুকামনা না করে। যদি সে একান্তই তা করতে চায় তবে যেন বলে: ‘ও আল্লাহ্! আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর এবং আমাকে মৃত্যুদান করুন যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর ’।”(বুখারী-৬৫৩১, মুসলিম-২৬৮০)

৪. শাস্তি তাড়াতাড়ি প্রদানের প্রার্থনা করা-

আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতে যাতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকা যায়, সেই দু’আ করা উচিত। একবার রাসূল (সাঃ) এক মুসলিম ব্যক্তিকে অসুস্থ ও মুরগির মত দুর্বল অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি(সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ

“তুমি কি কোন কিছুর জন্য দু’আ করেছিলে অথবা এই অবস্থার জন্য প্রার্থণা করেছিলে?” সে বললঃ “হ্যাঁ, আমি বলতাম: ‘ও আল্লাহ্! আখিরাতে আপনি আমাকে যে শাস্তি দেওয়া নির্ধারণ করেছেন, আমাকে তা এই দুনিয়াতেই প্রদান করুন।’ রাসূল (সাঃ) বললেনঃ “সুবহানাল্লাহ্! তুমি এটা সহ্য করতে পারবে না। তুমি কেন বললে না যে, ও আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে আমাদের হেফাযত করুন?” তারপর তিনি আল্লাহর কাছে তার জন্য দু’আ করলেন এবং আল্লাহ্ তাকে আরোগ্য করলেন। (মুসলিমঃ২৬৮৮)

৫. কারো পরিবার এবং সম্পদের বিরুদ্ধে দু’আ করা-

হাদীসে বর্ণিত আছে যেঃ

“নিজেদের বিরুদ্ধে দু’আ করো না, তোমাদের সন্তানাদির বিরুদ্ধে দু’আ করো না, এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে দু’আ করো না; কেননা এই আশঙ্কা হতে পারে যে এটা এমন এক সময়ের সাথে মিলে যেতে পারে যখন আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাওয়া হয় আর তিনি তা কবুল করে নেন।”(মুসলিমঃ৩০০৯)

৬. পারিবারিক বন্ধন ছিন্নকরণের জন্য দু’আ করা- যেমনঃ কারো বিরুদ্ধে দু’আ করা এবং তার ও তার আত্নীয়-স্বজন অথবা স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক যাতে ছেদ হয়, সেই জন্য দু’আ করা।

৭. সীমিত রহমতের জন্য দু’আ করা- যেমনঃ ও আল্লাহ্! কেবল আমাদের যমীনে বৃষ্টি বর্ষণ করুন এবং এরকম কিছু।

৮. আল্লাহর কাছে দু’আ করার ক্ষেত্রে সঠিক আচরণ পালনে ব্যর্থতা- যেমনঃ এমনভাবে দু’আ করা যেটা সঠিক নয়। আল-খাত্তাবি বলেছেনঃ

“এইভাবে বলা ঠিক নয় যে ও কুকুরসমূহের সৃষ্টিকর্তা অথবা ও বানর ও শূকরসমূহের সৃষ্টিকর্তা, যদিও সকল সৃষ্টি আল্লাহ্ কর্তৃক সৃষ্ট এবং এদের সকলের উপর তাঁর কর্তৃত্ব রয়েছে।”(শা’ন আল-দু’আঃ১৫৩)

আল্লাহর কাছে দু’আ করার সময় যতটুকু সম্ভব সঠিক আচরণ পালন করা এবং যথাসম্ভব উচিত বেমানান কোন কিছু বলা পরিহার করা। দু’আ করার দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত বিনয় ও আনুগত্যপূর্ণ।

আল্লাহ্ রাসূল(সাঃ) তাঁর দু’আর সময় আল্লাহকে এত অধিক পরিমাণে প্রশংসা করতেন যে মনে হত তিনি যথেষ্টভাবে আল্লাহকে প্রশংসা করছেন না। তিনি বলতেনঃ “আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই; আমি আপনার যথেষ্ট প্রশংসা করতে পারিনা।”

৯. দু’আ করার সময় অন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়া-

আপনি দেখতে পাবেন যে কিছু লোক রয়েছে যারা নিজেরা গোনাহগার এই মর্মে নিজেরা আল্লাহর কাছে দু’আ করে না, তাই তারা সর্বদা অন্যদেরকে তাদের জন্য দু’আ করতে বলে ।