যে দাওয়াতের কারণে ঝড় সৃষ্টি হয়ার কথা, সেই দাওয়াতের মহাসাগরে একটা ঢেউও নেই !

দীনের দাওয়াত মানুষের কাছে প্রচার করা, পৌঁছে দেয়া, সেদিকে প্রকাশ্যে আহবান করা, তাগুতকে চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করা, উত্তেজিত করা, সত্যের পথে টিকে থাকার কাজটি পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কষ্টকর কাজ। এই কাজের কারণে প্রত্যেক নবী তাদের সমাজের প্রভাবশালী মানূষদের কাছে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, অথচ এই দাওয়াত প্রদানের আগ পর্যন্ত সবাই তাদেরকে পছন্দ করত। আল্লাহ বলেন,

“এমনিভাবে প্রত্যেক নবীর জন্যে আমি অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু করেছি। আপনার জন্যে আপনার পালনকর্তা পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারীরূপে যথেষ্ট”। (Al-Furqaan: 31)

“এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে…। ” আনয়াম ১১২

” বান্দাদের জন্যে আক্ষেপ যে, তাদের কাছে এমন কোন রসূলই আগমন করেনি যাদের প্রতি তারা বিদ্রুপ করে না। (Yaseen: 30)

অথচ, বর্তমানে দাওয়াহর কাজটি পৃথিবীর অন্যতম আরামদায়ক কাজে পরিণত হয়েছে। দাওয়াহ’র কাজকে নিজেদের ক্যারিয়ার অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। অথচ আল্লাহর নবীরা দাওয়াত প্রদানের সময় বলেছেন,

“আমি তোমাদের কাছে এর জন্যে প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো পালনকর্তা দেবেন”। -সূরা শুয়ারার একাধিক আয়াত। অথচ, এখন ইসলামী বই সিডির কাভারে লেখা থাকে কপিরাইট আইনের কড়া সতর্কবার্তা !

সূরা ইয়াসিনে জনৈক মুমিনের উক্তিকে আল্লাহ আমাদের কাছে উপস্থাপন করছেন,

‘অতঃপর শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা রসূলগণের অনুসরণ কর। অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত’। (Yaseen: 20-21)

শুধু ফ্রিতে আহবান করলেই হবে না, বরং বিনিময় কামনা না করার সাথে সাথে হতে হবে সুপথ প্রাপ্ত।

দাওয়াহ প্রদানের কাজটি একটি আরামদায়ক কাজ- যখন-

১) আপনি শুধু তাই বলবেন যা মানুষ শুনতে পছন্দ করে

২) আল্লাহ ওহী নাযিল করেছেন মানূষের সমস্যা সমাধানের জন্য-

অথচ মানুষের যা সমস্যা তা নিয়ে আপনি কথা বলবেন না, এড়িয়ে যাবেন- যেমন কারো গান বাজনার প্রতি আসক্তি- আপনি তাকে এই বিষয়ে না বলে বলবেন -টাখনুর উপর কাপড পড়া নিয়ে, কারো আসক্তি নজরের পবিত্রতা রক্ষা না করায়- আপনি তাকে বলছেন-গান বাজনা কেন হারাম এটা নিয়ে- কারো সমস্যা সুদ নিয়ে- আপনি তাকে বলছেন সালাত নিয়ে-

৩) মোটকথা, যদি আমরা সত্য এড়িয়ে যাই বা সত্যকে গোপন করি- ইসলামের মধ্যে পানি ঢেলে দেয়া হল, নিরামিষ ইসলাম ! যে ইসলামে দুনিয়ার সমস্যার কোন সমাধান নেই, খালি আসমানের উপরের নইলে যমীনের নিচের কথা ! কাফেররা আনন্দে হাত তালি দিবে !

ইসলামের দাওয়াত মানূষের চিন্তাভাবনার মধ্যে একটা বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি করে, ঝড় সৃষ্টি করে।

যে শোনে সে ভাবতে বাধ্য !

যে ভাবে সে মানতে বাধ্য!যে মানে সে পালন করতে বাধ্য !

যে পালন করে সে প্রকাশ্যে মানুষকে আহবান করতে বাধ্য !আর যারা সমাজের ব্যধির বিরুদ্ধে মানুষকে প্রকাশ্যে পবিত্রতার দিকে আহবান করেতাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতেও এক শ্রেণীর লোক বাধ্য !

ইসলাম মানুষের মন মগজ ধরে সজোরে নাড়া দেয়, এই ধাক্কার জোরে সে নিজেকে বদলে নেয়।

আজকে সমাজে যে দাওয়াত চলছে সেটাকে দাওয়াতের মহাসমুদ্র বললেও কম বলা হবে, হাজার হাজার বক্তার মাহফিলে-ওয়াজে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়, রেডিও টিভি, পত্রিকা ইন্টারনেট বই পুস্তক সিডি মোবাইল কোথাই নেই সেই দাওয়াত ! শুধু মসজিদ ই আছে বাংলাদেশে ৩ লক্ষ ! অথচ, যদি কারো অনিদ্রা রোগ থাকে সেই লোকটিকেও দেখা যার জুমার দিনে খতীবের বক্তব্য শুনে ঢূলতে, এমনকি ঘুমের ঠেলায় একজন আরেকজন গায়ের উপর পড়ে যাচ্ছে, অযু ছুটে যাচ্ছে, এভাবেই একটু পর এই বে অযু লোকদের নিয়ে ইমাম সাহেব জুমার সালাত আদায় করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন!

যে দাওয়াতের কারণে ঝড় সৃষ্টি হয়ার কথা, সেই দাওয়াতের মহাসাগরে একটা ঢেউও নেই !এতটুকুও আলোড়ন নেই। নীরব, নিথর, নিস্তরংগ এক মৃত সাগর সেটা! কাউকে আকর্ষণও করেনা, কাউকে বিকর্ষণও করেনা।ইসলামের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার কাজটা সবাই খুব আনন্দে করে যাচ্ছে।

সমস্যা কি ?

সমস্যা হল- আমরা সত্যকে গোপন করেছি।

নিরামিষ ইসলাম তৈরি করেছি, যে ইসলাম জুমার সালাতের আগে ঘুম ধরায়।

এই সমস্যা নতুন কোন সমস্যা নয়, পূর্বের জাতিগুলো এই কাজই করেছে, ইহুদী খ্রিস্টানদেরকে আমরা নকল করব বলে জানিয়েছেন নবী সা), গুইসাপের গর্তে ঢুকা পর্যন্ত ।আমরা সেই কাজই করছি, তারা তাদের ধর্মগ্রন্থের ইলমকে গোপন করত, মানুষের কাছ থেকে গোপন রাখত, ঘুরিয়ে বলত, অর্থ পালটে ফেলত, শাসকদের খুশি করে চলার চেষ্টা করত। যা বলার দরকার সবচে বেশি, যা নিয়ে আলোচনা করা দরকার, মানুষকে প্রশিক্ষিত করা দরকার, উত্তেজিত করা দরকার তা না বলে শুধু আধ্যাত্মিক আর অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা চালানোর নাম অর্থ কামাই করা হতে পারে, বেতনভুক্ত ইমাম হতে পারে, দাওয়াহ ইলাল্লাহ কখনো নয়।

আমরাও আজকে ইসলামের শিক্ষাকে নিজে জেনে, অন্যের কাছে প্রচার না করে, গোপন করে বড় বক্তা দায়ী কলাম লেখক, ফেসবুক ইউজার হয়েছি,কিন্তু যে ঝড় সৃষ্টি হবার কথা তা অনুপস্থিত।

রাষ্ট্রীয় শিরক, রব এর পরিচয়, মানুষ কিভাবে নিজেকে রব দাবী করে, গণতন্ত্র কেন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, ১৩০০ বছর টিকে থাকা খিলাফত রাষ্ট্র কেন দরকার আবার ফিরিয়ে আনার, ইসলামী আইন পরিবর্তনকারী শাসক এর ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি, মযলুম মুসলিম দের ব্যাপারে আমাদের কি করার আছে, ইরাক আফগান থেকে পৃথিবীর সর্বত্র কাফেররা মুসলিমদের রক্ত ঝড়াচ্ছে- আমরা কি করব- এগুলো নিয়ে কোন আলোচনা নেই।

জিহাদ সম্পর্কে কিছু বলতে শুনি না, মানব রচিত মতবাদ,জাতীয়তাবাদ, অশ্লীলতা, গান বাজনা , কাফেরদের সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক, আল ওয়ালা ওয়াল বারাহ সম্পর্কে কিছু বলতে শুনি না।

সত্য গোপন করার বিষয়টী যদি আমরা বুঝে থাকি, মানুষকে দোষ দিয়ে কোন ফায়দা নেই, নিজেকেই বাকি কাজটা করতে হবে।

যারা করছে না, তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে। আল্লাহ সহজ করেন, অপ্রাসঙ্গিক কাজ না করে মূল কাজে দৃঢ় থাকার তাওফিক দান করেন। আমিন !