যে ইমামের সাথে এক রাকাত ব্যাতীত জুমু’আহ পেলোনা, অথবা শুধু এক রাকাত পেল, অথবা শুধু বৈঠক পেল

অনুবাদঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী

 

বিষয়ঃ যে ইমামের সাথে এক রাকাত ব্যাতীত জুমুআহ পেলোনা, অথবা শুধু এক রাকাত পেল, অথবা শুধু বৈঠক পেল, তখন সে তার সাথে প্রবেশ করবে এবং যদি সে এক রাকাত পায়, তবে এক রাকাত কাযা পড়বে। আর যদি সে বৈঠক পায়, তবে সে শুধু দুই রাকাত পড়বে।

 

আবু হানিফাহ ও আবু সুলাইমান এভাবেই বলেছেন।

মালিক ও শাফি’য়ি বলেন, যদি এক রাকাত পায়, তবে অপর রাকাত কাযা পড়বে, আর যদি সে রাকাত হতে মাথা উঠানো ব্যতীত কিছু না পায়, তবে এর পর সে চার রাকাত সালাত পড়বে।

‘আতা, তা’উস ও মুজাহিদ – এবং আমরা আরও উল্লেখ করেছি উমার ইবনু খাত্তাব হতে, যে খুতবার কিছুই পেলো না সে যেন চার রাকাত সালাত পড়ে।

আর যারা এ মত অনুযায়ী গিয়েছেন, তারা প্রমান দিয়েছেন, খুতবা দুই রাকাতের পরিবর্তে। সুতরাং যারা এ কথা বলেছেন, তারা এ মতে রয়েছেন যে যার প্রথম খুতবা ছুটে গিয়েছে এবং সে দ্বিতীয় খুতবা পেয়েছে, সে যেন এক রাকাত কাযা পড়ে। আর এ বক্তব্যের পক্ষে না কুরান না সুন্নাহ রয়েছে।

মালিক ও শাফিয়ী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বক্তব্য দ্বারা প্রমান দিয়েছেন,

” যে ইমামের সাথে এক রাকাত সালাত পেয়েছে, সে পুরো সালাত পেয়েছে। ”

আবু মুহাম্মাদ (ইবনু হাযম) বলেন, এ খবরটি সাহীহ। আর এতে এই নেই যে, যে এক রাকাতের কম পেল, সে সালাত পেল না।

বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে প্রমানিত, (অনুবাদকঃ লম্বা সানাদ বাদ দিয়ে শুধু শেষ অংশ দিলাম) আবু হুরাইরাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন,

“যদি তোমরা সালাতে আস, তবে তোমরা দৌড়ুতে দৌড়ুতে আসবে না, বরং তোমরা এতে এসো হেঁটে হেঁটে। তোমাদের জন্যে এই যে তোমরা যেন শান্তির সাথে থাক (অনুবাদকঃ অর্থাৎ ধীরে শান্ত ভাবে যাও)। এর পর তোমরা যা পাবে, তা পড়। আর যা তোমাদের কাছ থেকে ছুটে গিয়েছে, তা কাযা কর। ”

কাতাদাহ বলেন, তাঁর পিতা হতে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর সাথে যখন সালাত পড়ছিলাম, তখন তিনি লোকেদের শোরগোল শুনতে পেলেন। যখন সালাত শেষ হল, তখন বললেন, “তোমাদের বিষয় কি?” তারা বলল, “আমরা সালাতের দিকে তাড়াহুরো করছিলাম।” তিনি বললেন, “সে ক্ষেত্রে তোমরা এমনটি করনা। যদি তোমরা সালাতে আস, তবে তোমাদের জন্যে এই যে তোমরা যেন শান্তির উপর থাক (অনুবাদকঃ অর্থাৎ ধীরে শান্ত ভাবে যাও)। এর পর তোমরা যা পাবে, তা পড়। আর যা তোমাদের কাছ থেকে ছুটে গিয়েছে, তা তোমরা পূরণ কর।”

সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আদেশ করেছেন ইমামের সাথে যা পাওয়া যায় তা পড়বার ব্যাপারে। আর এ ব্যপারটি তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম খাস করেননি। আর সালাতের মধ্য হতে যে কিছু পেয়েছে, তাকে সালাত পেয়ে যাওয়া ব্যক্তি বলে নামাঙ্কিত করেছেন। সুতরাং যে ইমামকে বসা অবস্থায় পাবে, অথবা সিজদারত অবস্থায়, তখন তার কর্তব্য হচ্ছে সে যেন ঐ অবস্থায় তার মত করে এবং ইমামের ইমামতির সাথেই যুক্ত হয়। আর এ বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে জামাতবদ্ধ সালাতের মধ্যেও প্রবেশ করে। সুতরাং সে তার যতটুকু ছুটে গিয়েছে, শুধু সে অংশটুকু কাযা করবে এবং সেই সালাতকে পূর্ণ করবে। আর তার কাছ থেকে দু রাকাত ব্যতীত কিছু বাদ যায়নি। আর জুমুআতের সালাত দু রাকাত, সুতরাং এ দু রাকাত ব্যতীত আর কোন সালাত পড়বেন না।

আর এ দুটি খবর যেখানে “যে এক রাকাত পেল” রয়েছে তার উপর অতিরিক্ত (যিয়াদাহ)। আর অতিরিক্তকে তরক করা যায় না, আর আল্লাহর কাছ থেকেই তাওফিক।

আমরা শু’বাহ হতে বর্ণনা করেছি, আমি হুকুম ইবনু আতিয়্যাহ কে জিজ্ঞেস করলাম সে ব্যাক্তির ব্যাপারে যে জুমুআর দিনে ইমামকে পেল বৈঠক্রত অবস্থায়। তিনি বললেন, তবে সে দুই রাকাত পড়বে। শু’বাহ বললেন, আমরা তাঁকে বললাম, ইবরাহীম হতে এ কথা হাম্মাদ ব্যাতীত আর কেউ বলেন নি। আল হুকুম বললেন, আর হাম্মাদের মত আর কে রয়েছে?

মা’মার বলেন, হাম্মাদ ইবনু সুলাইমান বলেন, যদি তাদের জুমুআর দিনে সালাতের শেষভাগে বৈঠক্রত অবস্থায় পাও, তবে দুই রাকাত পড়।

আবু মুহাম্মাদ বলেন, কিন্তু এ ব্যাতীত যে এ বিষয়ে হানাফিরা বিতর্ক করেছে। কেননা তাদের উসুল – যাকে তারা দীনে পরিণত করেছে – তাতে রয়েছে – কোন সাহাবীর বক্তব্য যার বিরুদ্ধে অন্য কোন সাহাবীর আপত্তি পাওয়া যায়নি, তবে তার বিরোধিতা করা হালাল নয়।

আমরা মা’মার হতে উল্লেখ করেছি, আইয়ুব আস সাখতিয়ানি হতে, নাফি’ হতে বর্ণিত ইবনু উমার বলেন, যদি কোন ব্যক্তি জুমুআর দিনে এক রাকাত পায়, তবে সে এর উদ্দেশ্যে আরেক রাকাত পড়বে। আর যদি কাওমকে বৈঠক্রত অবস্থায় পায়, তবে সে চার রাকাত পড়বে।

সুফইয়ান আত থাউরী হতে, আবু ইসহাক হতে, আবুল আহওয়াস হতে বর্ণিত ইবনু মাসউদ বলেন, যে শুধু এক রাকাত পেল, সে জুমুআহ পেল। আর যে এক রাকাত পেল না, সে যেন চার রাকাত পড়ে।

আর এ বিষয়ে সাহাবীদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) তরফ হতে কোন বিরোধিতার কথা জানা যায় না। জী হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবে আমি এতে কিছু আথার উল্লেখ করেছি যা নাবিধ (গম দ্বারা তৈরী মদ) দ্বারা ওযু করবার হাদিসের চাইতে দূর্বল নয়, অথবা সালাতের মধ্যে মুচকি হাসি, অথবা নাক হতে রক্তপাত ও বমির কারণে ওযু করা বিষয়ে – কিন্তু তারা এ সকলের বিরোধিতা করেছে যদি আবু হানিফাহ সে সকল বিষয়ের বিরোধিতা করে থাকেন – আর তা হাজ্জাজ ইবনু আরতাহ হতে, ইবনু উমার হতে, অথবা অন্য কোন পথে হতে যা যুহরী হতে যা আবু সালামাহ হতে যা আবু হুরাইরাহ হতে বর্ণিত দুটি মুস্নাদ। আর এখানে তারা দ্বিমত পোষণ করছে!

আবু মুহাম্মাদ বলেন, আর আমাদের তরফ হতে, আমাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ব্যাতীত আর কেউ হুজ্জাহ বা দলিল নয়। আর যদি এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম হতে এ আথারটি প্রমানিত হত, তবে এর দ্বারাই আমরা বলতাম এবং এর খেলাপ করতাম না।

(আল মুহাল্লা, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৮১-৮৪, মাক্তাবাতুল মা’আরিফ)

————————

এ অংশটুকু শাইখ আইনুল বারী আল আলিয়াবী হাফিযাহুল্লাহর বই “আইনী তুহফা সলাতে মুস্তফা” বই হতেঃ

“যে মুসল্লী নামাযে ইমামের সাথে এক রাকাতও পায়, সে জুমুআ পেয়ে যায়।” এই হাদিসটির ব্যাখ্যায় ভারতের বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আল্লামা ওবায়দুল্লাহ রহমানী মুবারাকপুরী বলেন, আমার মত এই যে, যদি কোন ব্যক্তি শেষ রাকাতের তাশাহহুদও পায়, তাহলে সে ইমামের সালাম ফেরার পড় বাকিটা অর্থাৎ দু রাকাতই পড়ে নেবে এবং যোহরের চার রাকাত পড়বে না। কারণ, মাসবুকের নামাযের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন যে, ইমামের সাথে যতটা পাও ততটা পড়ে নাও এবং বাকিটা ইমামের সালাম ফেরার পর পূরণ করে নাও। ইবনু হাযমও তাই বলেন। (মিরআত, ২য় খণ্ড ৩১৩ পৃষ্ঠা)

হানাফীরাও এই মতের সমর্থক। কিন্তু শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বালীরা বলেন যে, যদি কেউ শেষ রাকাতের সেজদা বা তাশাহহুদ পায় তাহলে সে জুমুআ পায় না। তাকে যোহরের চার রাকাত পড়তে হবে – এ কথার প্রমাণে আমি কোন সাহীহ হাদিস পাইনি। তবে শাফেয়ী ও অন্যান্যেরা তাদের মতের প্রমাণে দারা কুত্নী রিওয়ায়াতকৃত আবু হুরাইরার হাদিসটি পেশ করে, যদ্দারা বোঝা যায় যে কেউ যদি শেষ রাকাতের রুকুও না পায় বরং সেজদা বা তাশাহহুদ পায় তাহলে তাঁকে যোহরের চার রাকাত পড়তে হবে। তার জওয়াব হল এই যে, ঐ হাদিসটি যয়ীফ বা দুর্বল। আর যয়ীফ হাদিস দলিলের যোগ্য হতে পারে না। (মিরআত, ২য় খণ্ড ৩১৩ পৃষ্ঠা)

দারাকুতনীর রেওয়ায়ত সম্পর্কে হাফেয ইবনু হাজার তালখীসুল হাবীরের ১২৭ পৃষ্ঠায় বলেন, এই হাদিসটির অনেকগুলো সনদ আছে, কিন্তু সব কটি সনদই আপত্তিকর। ইবনু আবী হাতীম এলাল গ্রন্থে তাঁর পিতা থেকে বলেন যে, এই হাদিসটির কোন ভিত্তিই নেই। (মিরআত, ২য় খণ্ড ৩১৩ পৃষ্ঠা)

 

>>>>>Special Courtesy:- www.darhadith.com<<<<<