যাদের কথা ও কাজে মিল নেই আল্লাহ তাদের প্রতি নারাজ

শুধু ইসলাম কেন, পৃথিবীর কোনো ধর্মই কথা ও কাজের মিল না থাকাকে সমর্থন করে না

ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক কাজ থেকে শুরু করে একজন মানুষকে প্রাত্যহিক জীবনে নানা কাজ করতে হয়। এসব কাজ করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারার ওপরই নির্ভর করে সফলতা। এক কথায়, জীবনচলার পথে হাজারো কাজের মাঝে এমন কিছু মৌলিক কাজ আছে যেগুলোতে ভারসাম্য রক্ষা করা অতীব জরুরি। তার মধ্যে সর্বাগ্রে প্রয়োজন কথা ও কাজের ভারসাম্য রক্ষা করা। কারণ কথা ও কাজের ভারসাম্যহীনতা গোটা জীবনকে বিফল ও মর্যাদাহীন করে দেয়।

কথা বলা আর কাজ করা দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কথা বলা মানে কাজ করা নয় বরং এ দু’য়ের মাঝে পার্থক্য অনেক বিস্তর। শুধু তা-ই নয়, কথা বলা আর কাজ করার মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করার মধ্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। শুধু কথায় কাজের সাফল্য অর্জিত হয় না। কোনো কথা বললে, কিংবা কোনো কাজের জন্য মনোভাব প্রকাশ করলেই যে কাজ হয়ে যাচ্ছে- এরূপ মনে করার কোনো কারণ নেই।

আমরা অনেককেই দেখি কথায় খুব পণ্ডিত, কিন্তু কাজের বেলায় আমড়া কাঠের ঢেঁকি। শুধু কথার পাণ্ডিত্য দিয়ে সাফল্য অর্জিত হয় না, কাজের মাধ্যমে সম্ভব সাফল্য অর্জন। সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি হলো- কথায় ও কাজে ভারসাম্য রক্ষা করা। কথা ও কাজের ক্ষেত্রে যার ভারসাম্য নেই সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রেও তিনি থাকেন ভারসাম্যহীন। ভারসাম্যহীনতা সফলতার পরিবর্তে ব্যর্থতা ডেকে আনে।

কথা ও কাজসহ জীবনের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ের ভারসাম্যহীনতা সফলতার সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করে দেয়। চাই সেটা কথা ও কাজের মধ্যে কিংবা জীবনাচরণের অন্য কোনো মৌলিক বিষয়ে হোক।

পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা নিজেদের সফল এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে করেন এবং লোকজনও তাদেরকে সফল মানুষ বলেই ভাবে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দেখা যায় তাদের কথা ও কাজের ভারসাম্যহীনতা তাদেরকে পতনের গহবরে নিয়ে গেছে।

কথা ও কাজের ভারসাম্যহীনতা যেমন মানুষের পতন ডেকে আনে তেমনি সম্পদের ভারসাম্যহীন খরচ বিত্তশালীকে দেউলিয়া বানিয়ে দেয়, ভারসাম্যহীন খাওয়া-দাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যহানী ঘটে, ভারসাম্যহীন আচরণের কারণে মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। আর এ কথাতো সবারই জানা যে, আমাদের সমাজে ভারসাম্যহীন কথাবার্তা যে বলে তাকে সবাই পাগল বলে ডাকে। আর সমাজে পাগলের অবস্থান কোথায়- সেটা সবারই জানা।

ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থার নাম। মুসলিম জাতিকে আল্লাহতায়ালা ভারসাম্যপূর্ণ জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। কোরআনে কারিমেও এটা বলা হয়েছে। আর ইসলামের বিধান মতে, কথা দিয়ে তা ভঙ্গ করা তথা কথা ও কাজে ভারসাম্যহীনতার কোনো সুযোগ নেই। এমনটি ভীষণ পাপের কাজ। শুধু ইসলাম কেন, পৃথিবীর কোনো ধর্মই কথা ও কাজের মিল না থাকাকে সমর্থন করে না।

পবিত্র কোরআনে ওয়াদা পালনের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কোরআনে কারিমে এসেছে, ‘আর সত্যপরায়ণ তারাই যারা ওয়াদা দিয়ে তা পূর্ণ করে।’ -সূরা বাকারা: ১৭৭

কোরআনে কারিমে আরও এসেছে, ‘এবং প্রতিশ্রুতি পালন করবে, প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে কিয়ামতের দিন অবশ্যই কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ -সূরা বনি ইসরাইল: ৩৪

কথা ও কাজে ভারসাম্যহীনতাকে সরাসরি মিথ্যাই বলা চলে। ইসলামের দৃষ্টিতে মিথ্যা একটি মারাত্মক অপরাধ। এটাকে কবিরা গোনাহ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আর মিথ্যা মোনাফেকির একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত। সমাজে সাফল্য পেতে ইচ্ছুক কারো চরিত্রে যদি মোনাফিক থাকে তাহলে তার অর্জিত সাফল্য ধ্বংস হতে বাধ্য।

হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মোনাফিকের ৩টি লক্ষণ উল্লেখ করেছেন- ১. যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. ওয়াদা করলে বরখেলাপ করে এবং ৩. আমানতের খিয়ানত করে। -সহিহ বোখারি শরিফ

সমাজে এ রকম অনেক মানুষ আছেন যারা কথা ও কাজে ভারসাম্য রাখেন না এবং হরহামেশা মিথ্যা বলেন। তারা ভাবেন তাদের কথা ও কাজের ভারসাম্যহীন এই আচরণ কেউ কখনও ধরতে পারবে না। এমন মানুষকে মন থেকে কেউ কখনও ভালোবাসে না কিংবা শ্রদ্ধা করে না। কোনোভাবে দুনিয়ার জীবনে পার পেলেও পরকালীন জীবনে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। কারণ আর কেউ তাদের আচরণ না বুঝুক কিন্তু আল্লাহতায়ালা তো তাদের ঠিকই দেখছেন। যারা নিজেরা যা বলে তা করে না, তাদের প্রতি আল্লাহর রয়েছে প্রচণ্ড ক্রোধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা যা বলো তা নিজেরা করো না কেন? আল্লাহর নিকট অত্যন্ত ক্রোধ উদ্বেগকারী ব্যাপার এই যে, তোমরা যা বলো তা বাস্তবে করো না।’ -সূরা সফ: ২