যাদুর বিধান কী? এবং যাদুকরের শাস্তি কী ?

উত্তর: যাদুর বিধান হলো: কাবীরাহ গোনাহ, আর কখনো কুফরী। অবস্থা পরিপ্রেক্ষিতে যাদুকর কখনো মুশরিক, কখনো কাফির আবার কখনো ফিৎনা সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। যাদুকরের কার্যক্রম অনুযায়ী কখনো তার শাস্তি হিসেবে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ﴾
অর্থ:‘কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করেছিল, আর তারা মানুষদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত। (বাক্বারাহ: ১০২)।
৩২. প্রশ্ন: গণক ও জ্যোতিষীরা কি গায়েবের খবর রাখে? এবং গণক ও জ্যোতিষীদের কথা বিশ্বাস করার বিধান কী ?
উত্তর: না, গণক ও জ্যোতিষীরা গায়েবের খবর রাখে না। আল্লাহ তাআলার কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন,
﴿قُلْ لاَّ يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَيْبَ إِلاَّ اللهُ ﴾
অর্থ:‘(হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলেদিন, একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া আসমান ও যমীনে আর যারা থাকে তাদের কেহই গায়েবের খবর রাখে না, এমনকি তারা এটাও জানে না যে কবে তাদেরকে কবর থেকে উঠানো হবে। (সূরা নামল: ৬৫
* গণক ও জ্যোতিষীদের কথা বিশ্বাস করার বিধান হলো, তা আল্লাহর সাথে কুফুরী করা। যেমন এ প্রসঙ্গে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“مَنْ أَتَى عَرَّافاً،أَوْكَاهِناً، فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ”. (صحيح -رواه أحمد)
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি গণক অথবা জ্যোতিষীদের নিকট গেল, অত:পর তারা যা বলল তা বিশ্বাস করল, তাহলে সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যে ‘কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে তার সাথে কুফুরী করল। (অর্থাৎ সে আল্লাহর সাথেই কুফুরী করল) ( সহীহ, আহমাদ)
৩৩. প্রশ্ন: আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা কি জায়েয ?
উত্তরঃ না, আল্লাহ ছাড়া আর কারো নামে কসম করা বা শপথ করা জায়েয নয়। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ أَشْرَكَ” (صحيح رواه أحمد)
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল, সে আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করল। (আহমাদ)
৩৪. প্রশ্ন: বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তির জন্য এবং মানুষের বদ নযর হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ধাতু দ্বারা নির্মিত যেমন স্বর্ণ, রৌপ্য, পাথর, তামা ও লোহার আংটি, মাদুলি, বালা ব্যবহার করা। এমনিভাবে কাপড়ের টুকরা, ফিতা ও সূতার কায়তান এবং এ জাতীয় আরো অন্যকিছু ব্যবহার করা। এ ছাড়া কুরআন শরীফের আয়াত, বা আয়াতের নাম্বার জাফরানের কালি দিয়ে লিখে এবং বিভিন্ন ধরনের নকশা এঁকে দু‘আ, তাবিজ ও কবয বানিয়ে তা হাতে, কোমরে, গলা ও মাথায় ঝুলানোর বিধান কী?
উত্তরঃ বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যে এবং মানুষের বদ নযর হতে রক্ষা পাওয়ার জন্যে উল্লেখিত বিভিন্ন ধরনের আংটি, মাদুলী, বালা, কাপড়ের টুকরা, সুতার কায়তান এবং কুরআন শরীফের আয়াত বা নাম্বার লিখে অথবা কোন নকসা এঁকে তার দ্বারা তাবিয ও কবচ বানিয়ে হাতে, কোমরে, গলা ও মাথায় ব্যবহার করা বা ঝুলানো পরিষ্কার শিরক। আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন:
﴿وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ﴾
অর্থঃ ‘(হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ যদি আপনার উপর কোন কষ্ট ও বিপদ-আপদ আরোপ করেন, তাহলে একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেউ তা দূর করতে পারে না। (আনআম: ১৭)
৩৫. প্রশ্নঃ কোন কোন জিনিসের দ্বারা আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি ?
উত্তরঃ আমরা ৩টি জিনিসের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। যেমন:
১. বিভিন্ন ধরনের সৎ আমলের দ্বারা।
২. মহান আল্লাহর সুন্দরতম ও গুণবাচক নাম সমূহের দ্বারা।
৩. আর নেককার জীবিত ব্যক্তিদের দু‘আর মাধ্যমে। আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন:
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَابْتَغُوْا إِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ﴾
অর্থঃ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর সান্নিধ্য অন্বেষণ কর (নেক আমলের মাধ্যমে)। (মায়িদাহ: ৩৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَ ِللهِ الأَسْمَآءُ الْحُسْنَى فَادْعُوْهُ بِهَا﴾
অর্থ:‘আর আল্লাহর জন্যে সুন্দর সুন্দর ও ভাল নাম রয়েছে সুতরাং তোমরা তাকে সে সব নাম ধরেই ডাকবে। ( আ‘রাফ: ১৮০)
৩৬. প্রশ্নঃ কোন কোন জিনিসের অসীলা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য চেষ্টা করা নিষেধ ?
উত্তরঃ যে সমস্ত জিনিসের অসীলা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্ট করা নিষেধ তার মধ্য হতে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
১. মৃত ব্যক্তিদের অসীলা করা।
২. অনুপস্থিত জীবিত ব্যক্তিদের অসীলা করা।
৩. পীর-মুর্শিদ ওলী-আউলিয়া এমন কি নাবী-রাসূলগণের ব্যক্তি জাত বা সত্তা দ্বারা অসীলা করা।
৩৭. প্রশ্নঃ জীবিত মানুষের নিকটে দু‘আ চাওয়া কি জায়েয?
উত্তরঃ হাঁ, জীবিত মানুষের নিকটে দু‘আ চাওয়া জায়েয। আল্লাহ তা‘আলার কথাই এর দলীল, যেমন তিনি বলেন,
﴿وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ﴾
অর্থঃ ‘(হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি প্রথমে আপনার গোনাহ-খাতার জন্য এরপর মুমিন নারী ও পুরুষদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। (মুহাম্মাদ: ১)
৩৮. প্রশ্নঃ জীবিত মানুষের দ্বারা সুপারিশ চাওয়া কি জায়েয ?
উত্তর: হাঁ জায়েয, দুনিয়াবী বিষয়ে জীবিত মানুষের দ্বারা সুপারিশ চাওয়া জায়েয। আল্লাহর কথাই এর দলীল, যেমন তিনে বলেন:
﴿مَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُنْ لَّهُ نَصِيْبٌ مِّنْهَا وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُنْ لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا﴾
অর্থ:‘যে ব্যক্তি কারো জন্যে ভাল কাজের সুপারিশ করবে সে তার থেকে অংশ পাবে, আর যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজের জন্য সুপারিশ করবে সেও তা থেকে অংশ পাবে। (আন্ নিসা: ৮৫)
৩৯.প্রশ্ন: ধর্মীয় ব্যাপারে কোন মতানৈক্য দেখা দিলে তার ফায়ছালা কি ভাবে করতে হবে?
উত্তর: ধর্মীয় ব্যাপারে কোন মতানৈক্য দেখা দিলে, তার ফায়সালার জন্য আল্লাহর কুরআন এবং তাঁর রাসূলের সহীহ হাদীসের ফায়সালার দিকে ফিরে যেতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলে:
﴿فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ﴾
অর্থ: ‘অত:পর তোমারা যদি পরস্পরে কোন বিষয়ে মতানৈক্যে উপনীত হও, তাহলে তোমরা (ফায়ছালার জন্য) উক্ত বিষষটিকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (বিধানের) দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি ঈমান এনে থাক। (নিসা: ৫৯)

প্রণয়নেঃ আবুল কালাম আযাদ
সম্পাদনায়: আব্দুন নূর আব্দুল জব্বার