মিথ্যা বলা ত্যাগ করা

আখলাক বা সচ্চরিত্রের একটি নোংরা দিক হলো মিথ্যা কথা বলা। যার ফলে পরিবার ও সমাজে অশান্তি বিরাজ করছে। ইহা একটি ফিৎনা অর্থাৎ পরীক্ষা আর আল্লাহ বলেন;
وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ
আর আমি তাদের পূর্ববর্তীদের (ফিৎনায় ফেলেছি) পরীক্ষা করেছি, অত:পর আল্লাহ অবশ্যই অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী। (আল-আনকাবূত, ২৯/৩)
.
মিথ্যা হলো ঘৃণিত চরিত্রঃ
আয়শা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন;
مَا كَانَ خُلُقٌ أَبْغَضَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْكَذِبِ وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُحَدِّثُ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْكِذْبَةِ فَمَا يَزَالُ فِي نَفْسِهِ حَتَّى يَعْلَمَ أَنَّهُ قَدْ أَحْدَثَ مِنْهَا تَوْبَةً
মিথ্যা হতে অধিক ঘৃণিত চরিত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আর কিছুই ছিল না। কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে মিথ্যা বললে তা অবিরত তার মনে থাকত, যে পর্যন্ত না তিনি জানতে পারতেন যে, মিথ্যাবাদী তার মিথ্যা বলা হতে তাওবাহ করেছে। (তিরমিযী: ১৯৭৩)
.
যারা মিথ্যা বলে তাদের অন্তর রোগাক্রান্ত তাই তারা মিথ্যা বলে; আল্লাহ বলেন;
فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি, তাই আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব কারণ তারা মিথ্যা বলে। (আল-বাকারাহ, ২/১০)
.
যারা মিথ্যা বলে তাদের অন্তরে নিফাকী বিদ্যমানঃ
فَأَعْقَبَهُمْ نِفَاقًا فِي قُلُوبِهِمْ إِلَى يَوْمِ يَلْقَوْنَهُ بِمَا أَخْلَفُوا اللَّهَ مَا وَعَدُوهُ وَبِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
সুতরাং তাদের অন্তরসমূহে নিফাক/মুনাফেকী বদ্ধমূল করে দিলেন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে, এ কারণে যে, তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করেছে আর তারা যে মিথ্যা বলেছিল তার কারণে। আত্-তাওবাহ, ৯/৭৭
.
আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ
চারটি স্বভাব যার মধ্যে রয়েছে সে খাঁটি মুনাফেক; যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে সে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকের একটি স্বভাব থেকে যায়। ১. তার কাছে আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে; ২. যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে; ৩. সে ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ৪. সে বিবাদে লিপ্ত হলে কটূক্তি করে। সহীহুল (বুখারী: ৩৪, ২৪৫৯, ৩১৭৮; সহীহ মুসলিম: ১১৩)
.
চোগলখোরী করার মাধ্যমেও মানুষ মিথ্যা বলে;
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ هِيَ النَّمِيمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ وَإِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏إِنَّ الرَّجُلَ يَصْدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ صِدِّيقًا وَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ كَذَّابًا
আমি কি তোমাদের হুশিয়ার করব না, চোগলখোরী কী? তা হচ্ছে কুৎসা রটনা করা, যা মানুষের মধ্যে বৈরিতার সৃষ্টি করে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, নিশ্চয়ই কোন ব্যক্তি সত্য কথা বলায় সত্যবাদী লিপিবদ্ধ হয়; আবার কেউ মিথ্যা কথা বলায় মিথ্যাবাদী লিপিবদ্ধ হয়। (সহীহ মুসলিম: ৬৫৩০)
.
মিথ্যা বলার শাস্তিঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্বপ্নে মিথ্যুকের শাস্তি দেখানো হয়েছে যে, মিথ্যুকের এক চোয়াল থেকে আরেক চোয়াল পর্যন্ত মাথা বাঁকা লোহার অস্ত্র দিয়ে চিরে ফেলা হবে; অতঃপর তা ভাল হয়ে যাবে। আবার চেরা হবে। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত তার শাস্তি চলতে থাকবে। (সহীহুল বুখারী: ১৩৮৬)
.
মিথ্যা ত্যাগ করার ফলাফলঃ
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
مَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَهُوَ بَاطِلٌ بُنِيَ لَهُ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ وَمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَهُوَ مُحِقٌّ بُنِيَ لَهُ فِي وَسَطِهَا وَمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ بُنِيَ لَهُ فِي أَعْلاَهَا
যে ব্যক্তি বাতিল ও মিথ্যা বলা ছেড়ে দিল, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে এক পাশে প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। যে ব্যক্তি ন্যায়ানুগ হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া-বিবাদ ছেড়ে দিল, তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। যে ব্যক্তি নিজের চরিত্র উন্নত করে তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ জায়গাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। (তিরমিযী: ১৯৯৩; ইবনে মাজাহ; ৫১; আবু দাঊদ: ৪৮০০; আবূ ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান)
.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ صِدِّيقًا وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا ‏
তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধর। কেননা সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতের দিকে পরিচালিত করে। কোন ব্যক্তি সর্বদা সত্য বলার অভ্যাস রপ্ত করলে ও সত্যের উপর সংকল্পবদ্ধ হলে আল্লাহর কাছে সে (সিদ্দিক) সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে সাবধান থাকো! কেননা মিথ্যা পাপের দিকে পরিচালিত করে। আর পাপ নিশ্চিত জাহান্নামের অগ্নির দিকে পরিচালিত করে। কোন ব্যক্তি মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে এবং মিথ্যার উপর সংকল্পবদ্ধ হলে তার নাম আল্লাহর কাছে (কাযযাব) মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। (সহীহ মুসলিম: ৬৫৩৩)
.
পরিশেষে বলব, আমাদের সবাইকে মিথ্যা বলা ছেড়ে সত্যের দিকে ফিরে আসা উচিত। নতুবা উপরে উল্লেখিত হাদীসের পরিণাম ভোগ করতে হবে।।