মন জয় করার ১১টি সহজ উপায়

??মন জয় করার ১১টি সহজ উপায়??

-আপনি কি চান আপনার সহকর্মীরা আপনাকে ভালবাসুক?
– আপনি কি চান আপনার অধিনস্তরা আপনাকে ভালবাসুক?
– আপনি কি চান তারা আপনার দেয়া কাজ গুলো সুন্দর ভাবে আদায় করুক?
– আপনি কি চান আপনার ছাত্রদেরকে আপনার মনের মত করে গড়ে তুলবেন?
– আপনি কি আপনার দাওয়াত অন্যের মাঝে সহজে ছড়িয়ে দিতে চান?
তাহলে ১১টি গোপন চাবি আপনার হাতে তুলে দিলাম। এগুলো দ্বারা সহজে অন্যের হৃদয় রাজ্যে গোপনে প্রবেশ করে তাদের স্বপ্নের রাজা হয়ে যেতে পারেন আপনিও, ইনশাআল্লাহ! তো আর কথা নয়…

১.উত্তম চরিত্র: এর দ্বারা অধীনস্থদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি অর্জন করা যায়। ফলে তাদের দ্বারা লক্ষ বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। কারণ, মানুষ যখন ঊর্ধ্বতনদের পক্ষ হতে মানবিক ও অমায়িক আচরণে মুগ্ধ হয় তখনি তারা ঝরঝরা মনোভাব নিয়ে কাজ আঞ্জাম দেয়।
২.কথা ও কাজে মিল রাখুন : আপনি যে কাজ করতে আদেশ কিংবা নিষেধ করবেন, নীতিগত ভাবে নিজে অবশ্যই তার উপর আমল করবেন। যেমন জামায়াতে নামায পড়ার উপর আপনি খুব উপদেশ এবং কড়াকড়ি করেন কিন্তু তিনি নিজেই মাঝে-মধ্যে ফজরের জামায়াত ফেল করেন। অনুরূপ আপনি টিভির আজে-বাজে প্রোগ্রাম দেখতে নিষেধ করেন, অথচ নিজেই টিভিতে বাজে প্রোগ্রাম দেখেন। এ অভ্যাস দূর করতে হবে। আপনি আদর্শ হতে এক চুলও নড়বেন না। তাহলে সাথীরা আপনার অনুসরণ করবে। এভাবে সবার আস্থা অর্জন করা যায় এবং সমালোচনা এড়ানো যায়।
৩.সাম্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা: স্বজন প্রীতি, বন্ধু প্রীতি, আত্নীয় করণ, দলীয় করণ ইত্যাদির সীমানা পেরিয়ে আপনাকে হতে হবে সবার জন্য সমান। কথা, কাজ, বেতন, পুরষ্কার, তিরস্কার সর্বক্ষেত্রে ইনসাফের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তাহলে অধীনস্থরা মানস পটে সঞ্চিত সংকীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে উদারতা ও আত্ন-শক্তি অর্জন করবে। একই সাথে তারা আপনাকে উপহার দেবে নিষ্ঠা ও প্রাণবন্ততা। আর হ্যাঁ, ভালোদেরকে ভালো বলবেন এবং মূল্যায়ন করবেন এবং উৎসাহ দিবেন ভুলবেন না! কারণ যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও ত্যাগের মূল্যায়ন না হলে উদ্যমী কর্মীরা মনোবল হারিয়ে ফেলে।
৪.ক্ষমা প্রদর্শন ও পজেটিভ হোন: অনেক সময় প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা প্রদর্শন করলে ভুলকারী অধিক শিক্ষা পায়, ভুল সংশোধনের প্রতি অধিক প্রয়াসী হয় এবং তার হৃদয়ে আপনার প্রতি স্বচ্ছ ও বর্ধিত ভালবাসা সৃষ্টি হয়। এভাবে আপনি অপরাধীকে সংশোধন করে নিজের ভক্তে পরিণত করতে পারেন।
৫.সংযত আত্নার অধিকারী হোন: আপনাকে অর্থ, নারী, বিলাসিতা অলসতা ও অন্যান্য ফেতনা থেকে দূরে থাকতে হবে। তাহলে অধীনস্থদের প্রতি দৃঢ়তা এবং প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন।
৬.সবসময় নিজের মতামতকে চাপিয়ে দিবেন না: বরং সবার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
৭.কল্যাণ কামী হওয়া: রাসূলূল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন :

( ما مِنْ عَبْدٍ اسْتَرْعاهُ اللهُ رَعِيَّةً فَلَمْ يَحُطْها بِنَصيحَةٍ إِلاّ لَمْ يَجِدْ رائِحَةَ الْجَنَّةِ (أخرجه البخاري

“আল্লাহ তায়ালা যাকে কোন জনসমষ্টির দায়িত্বশীল করলেন আর সে তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করল না, সে জান্নাতের গন্ধও পাবেনা।” (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আহকাম)

৮.আমিত্ব পরিহার করুন: কারণ এতে আর যাই হোক, অন্যের হৃদয় রাজ্যে গড়ে উঠা ভালবাসা, মর্যাদা আর ব্যক্তিত্বের পাহাড় বরফের মত গলে গলে নি:শেষ হয়ে যায়।
৯.জ্ঞান ও প্রজ্ঞা: আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে থাকেন তবে সেখানকার সকল বিভাগের কাজ-কর্ম সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকতে হবে। কুরআন-হাদীসের পাশাপাশি হিসাব, ইংরেজি, ম্যানেজম্যান্ট, কম্পিউটার ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে যে, সুপার ভাইজার যদি নিজেই কাজ না বুঝে, তাহলে তার দ্বারা সবসময় অর্ধেক সাফল্য আশা করতে হবে। গভীর দৃষ্টি, সূক্ষ্ম চিন্তাশক্তি, দ্রুত সমস্যা উপলব্ধি এবং দ্রুত সমাধান, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান এসবগুলোকে এক কথায় প্রজ্ঞা বলে।
১০.প্রতিভা , বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা : যার মধ্যে এই গুণগুলো রয়েছে তার মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত অফুরন্ত কল্যাণের সমাহার ঘটেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا

“যাকে হেকমত বা প্রজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাকে দেয়া হয়েছে প্রভূত কল্যাণ।” (সূরা বাকারা: ২৬৯)

পক্ষান্তরে এই গুণ যার মধ্যে নেই, সাফল্য তাকে ধরা দিবে না।

১১. ধৈর্য ও সহনশীলতা: এটি বিরোধীদের মোকাবেলা এবং নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এই গুণটিকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলা যায়।

তাছাড়া, মানুষকে তার সুন্দর নাম ধরে ডাকা, পূর্বের কোন ঘটনার খোজ খবর নেয়া, হাসি মুখে কথা বলা, চা-নাস্তার আসর বসানো, উপকার করা, নিজেকে তার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা, কোমলতা, উদারতা, ওয়াদা ঠিক রাখা এসবই মানুষকে মানুষের কাছে এনে দেয়। তবে সবকিছুর আগে খুলুসিয়াত কথা যেন ভুলে না যাই।

লেখক: আব্দুল্লাহ আল বাকী

দাঈ, পূর্ব জেদ্দা ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব