ভ্রান্ত আক্বীদাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নূরের তৈরী জানা

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর; সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সকল অনুসারীদের উপর।

কিছু লোক নবী (সঃ) কে নূর প্রমাণ করতে যেয়ে দলীলস্বরুপ সুস্পষ্ট কিতাব আল-কুরআনুল কারীম থেকে কতিপয় আয়াত পেশ করে থাকে। যেমন, মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ

আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (৩:১০৩)

আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (৩:১০৩)

قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ [٥:١٥]…

তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ।

يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ [٥:١٦]

এর দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন। [সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫: ১৫-১৬]

{

(৫:১৫-১৬) সউদী আরবের ‘লাজনাহ দায়িমাহ’ তথা ‘ফাৎওয়া প্রদান স্থায়ী কমিটি’ এর মতে, ‘এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে’ মর্মের কথাটি প্রাগুক্ত ‘নূর’ এর ব্যাখ্যা স্বরুপ। তথা (وَكِتَابٌ مُّبِينٌ) বাক্যটি আতফল খাস আলাল আম। অর্থাৎ খাছকে আমের উপর আতফ করা হয়েছে। অতএব, ইহা প্রাগুক্ত নূর এর ব্যাখ্যাস্বরুপ। সুতরাং, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট নূর এসেছে’ – এর অর্থই হলো ‘জ্যোতিময় স্পষ্ট কিতাব এসেছে’। ‘নূর’ দ্বারা এখানে নবী (সঃ) উদ্দেশ্য নন; বরং ‘আল-কুরআন’ ই উদ্দেশ্য। [ফাৎওয়াল লাজনাহ আদ-দায়িমাহ, নং-৫৭৮২, প্রশ্ন নং-১৩]দেখা যায়, পরবর্তীতে (يَهْدِي بِهِ) অংশে দমীর টি দ্বি-বচন না হয়ে এক বচন হয়েছে। এখানে আল্লাহ (ه)দমীর টিকে দ্বি-বচন করেন নি। বরং এক বচন (يَهْدِي بِهِ) ব্যবহার করেছেন, যা দ্বারা উদ্দেশ্য হল – ‘কিতাব’। কারণ এটিই হলো (للضمير مرجع اقرب) সর্বনামটির প্রত্যাবর্তনের সর্বাধিক নিকটবর্তী স্থান। ওয়াল্লাহু আ’লাম।

}

এভাবে মহান আল্লাহ, সূরাহ আহযাব (৩৩: ৪৫-৪৬) আয়াতে নবী (সঃ) কে বলেনঃঅত্র আয়াতে নবীর গুণস্বরুপ তাকে ‘নূর’ বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে নূর বলা হয়নি। আর যেভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন – তা সাথে সাথে পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا [٣٣:٤٥]

হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।

وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا [٣٣:٤٦]

এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।

নবী (সঃ) যে গুণগতভাবেই নূর- তা এই আয়াতেই স্পষ্ট। সৃষ্টিগতভাবে তিনি নূর নন। তিনি হলেন আলোর দিশারী, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আহ্বানকারী।

মহান আল্লাহ আল-কুরআনকেও নূর – জ্যোতি বলে আখ্যা দিয়েছেনঃ

فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنزَلْنَا ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ [٦٤:٨]

অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং অবতীর্ন নূরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরাহ আত-তাগাবুন ৬৪:৮)

فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنزِلَ مَعَهُ ۙ أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ [٧:١٥٧]

সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।

উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহতায়ালা নাযিলকৃত কুরআনকে নূর – জ্যোতি বলেছেন।

আল্লাহতায়ালা তাঁর দ্বীনকেও নূর বা জ্যোতি বলে আখ্যা দিয়েছেনঃ

يُرِيدُونَ أَن يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلَّا أَن يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ [٩:٣٢]

তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। (সূরাহ আত-তাওবাহ ৯:৩২)

আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক জানার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমীন

সংকলকঃ আবূ মু’আয সুহাইল বিন সুলতান।।

 

>>>>>Special Courtesy:- dararqam.com<<<<<