ভাল হয়ে যাওয়া যতদিন পর্যন্ত সামনের সময়ের জন্য জমা রাখবেন ততদিন আর হবে না । শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলতে থাকবে

বিয়ের পরে ভালো হয়ে যাব ।
.
এই রমজান মাস আসলে ভালো হয়ে যাব ।
.
একটা চাকুরী পেলেই ভালো হয়ে যাব ।
.
এই সেমিস্টার ফাইনালের পরে ভাল হয়ে যাব ।
.
আজকেই খাওয়া শেষ, কাল থেকে ভাল হয়ে যাব ।
.
থার্টি ফার্স্ট নাইটের পরে ভাল হয়ে যাব ।
.
হজ্ব করে এসে ভালো হয়ে যাব ।
.
খিলাফত কায়েম হলে ভালো হয়ে যাব ।
.
হিজরত করে ভাল হয়ে যাব ।
.
এটাই শেষ সিগারেট । এরপরেই সিগারেট ছেড়ে দিব।
.
এল. আর. বি’এর কনসার্ট কেন, আর কোনো কনসার্টেই জীবনে যাব না, আজই শেষ।
.
পাশ দিয়ে যে মেয়েটা হেঁটে গেল, তাকে আরেকবার দেখি, আর জীবনেও কারো দিকে তাকাবো না, এরপরেই ভাল হয়ে যাব………
.
.
এভাবে আমাদের আর ভাল হয়ে ওঠা হয় না । প্রতিদিন আমরা পরাজিত হয়ে ঘুমাতে যাই । শয়তানকে জিতিয়ে দিয়ে আল্লাহকে নাখোশ করে ঘুমাতে যাই । পরের দিন আবার সেই একই কিছুর পুনরাবৃত্তি।
.
মদীনা শহরে তখনও মদ হারাম হয় নি । অনেক সাহাবী মদ এর ব্যাবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন । মদের কেনাবেচা দেদারসে চলত । আল্লাহ ওহী পাঠালেন, মদ হারাম হওয়া নিয়েঃ
.
“হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের নাপাক কর্ম ছাড়া আর কিছুই নয় । অতএব এগুলো থেকে বিরত হও । তাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হবে । শয়তান তো কেবল চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে পরস্পরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত হতে তোমাদেরকে বাধা প্রদান করতে । অতএব তোমরা নিবৃত্ত হবে কি?” (সুরা মায়েদাহঃ ৯০-৯১)
.
এরপর যা হল তা কল্পনাতীত । যিনি যে অবস্থাতে ছিলেন সেখানেই মদ ছেড়ে দিলেন । যাদের স্টোর রুম ভর্তি মদের বোতল ছিল, সব ভেঙ্গে চুরমার করে ফেললেন । এত টাকার ক্ষতি করেও মদের বন্যায় ভাসিয়ে দিলেন মদীনার রাস্তা।
.
আমরা তাঁদের নামের শেষে অযথা রাদি’আল্লাহু তা’আলা আনহুম বলি না । আল্লাহ তাঁদের উপরে আসলেই রাজী হয়ে গিয়েছিলেন । তাঁদের “শুনলাম আর মেনে নিলাম” এই মনোভাব আল্লাহ বেশি করে পছন্দ করে নিয়েছিলেন । আমাদের এই সময়ের মানুষ হলে হয়তো জায়েজ, নাজায়েজ, মাকরুহ ইত্যাদির ফতোয়া খুঁজত । বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা খুঁজত। অন্য কোন উপায় খুঁজত ।

কিন্তু সেই সময়ে তাঁদের কাছে খবর পৌঁছাতে হয়ত সময় লাগত, মেনে নিতে দেরি হত না । কোন গড়িমসি করতেন না ।
.
গভীর রাতের সময় টা অন্যরকম । আমরা আমাদের প্রিয়জনের জন্য গভীর রাত অব্দি খাবার নিয়ে জেগে থাকি। কখন আসে সেই অপেক্ষা করি । আমরা অসুস্থ হয়ে গেলে কেউ যদি ফোন করে অথবা সশরীরে এসে খবর নেয়, আমরা খুব আনন্দিত হই।
.
তেমনিভাবে আল্লাহর কাছে প্রিয় সময়টা হল গভীর রাত। তাহাজ্জুদের সময় । আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন এই সময়টায় । বান্দার কিছু চাওয়ার আছে কিনা জানতে চান । আর তাহাজ্জুদের দুয়াগুলো হল অব্যার্থ তীরের মত, এইকথা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন ।
.
আল্লাহ সবাইকে এই উপহার দেন না । যারা দিনের বেলায় নানারকম গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে তাদের আল্লাহ রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠার সুযোগ দেন না। এই সময়টা আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাড়িয়ে তোলার সবচেয়ে ভাল সময়।
.
“ভাল হয়ে যাওয়া” যতদিন পর্যন্ত সামনের সময়ের জন্য জমা রাখবেন ততদিন আর হবে না । শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলতে থাকবে । আপনি পরাজিত হয়ে ফিরবেন । তাই যারা নামাজ শুরু করব করব করে করতে পারছেন না, তারা আল্লাহর নাম নিয়ে নামাজীদের কাতারে দাঁড়িয়ে যান । যারা সিগারেট ছাড়তে পারছেন না, ইনশাআল্লাহ ছেড়ে দিন। অনেক ভাইকে দেখেছি তারা এক ঝটকায় সব ছেড়ে দিয়েছেন । আমি নিজে এক সময়ে প্রতিদিনে কমপক্ষে দুই প্যাকেট গোল্ডলিফ খেতাম, আমিও ছাড়তে পেরেছি । আজ ডাক্তার যদি আপনার জন্য সিগারেট হারাম করে দেয়, আপনিও ছাড়তে পারবেন । অথচ আজ সেটা কেন ছাড়তে পারছেন না, এর কারণ খুঁজে বের করুন ।
.
যারা হারাম জিনিসের ব্যাবসায় জড়িত, ছেড়ে দিন । আল্লাহ হালালের পথ খুলে দিবেন ইনশাআল্লাহ । আমরা মানুষের মনের খবর জানি না। কিন্তু প্রতিটা মানুষ নিজে অন্তত জানে, সে যে কাজটি করছে তা হয়ত আল্লাহ পছন্দ করেন না ।
.
আল্লাহ একইভাবে সবার পরীক্ষা নেন না । আমি যে পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাচ্ছি তা আপনার জন্যে কিছুই না। আবার আপনি যে পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন আমার জন্যে কিছুই না। একারণেই আল্লাহ আমাদের এভাবে পরীক্ষা নেন । অন্য একজন ভাই যিনি এসব পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন, বের হয়ে আসতে চাইছেন কিন্তু পারছেন না । তাকে নিয়ে ঠাট্টা করা কখনই উচিৎ নয়। বরং তার কাজে হাত লাগানো দরকার, যাতে সে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারে। আর একান্তই কিছু না পারলে তার মঙ্গল কামনা করে দোয়া করা উচিৎ ।

যাইহোক, এই পার্থিব সময় বড়ই অল্প । আপনার সমবয়সী বা জুনিয়র পরিচিত অনেকেই কিভাবে মারা গেছেন, স্মরণ করুন । তাদের কবরে কি হচ্ছে, আল্লাহ আলাম । আপনি আগামীকাল বেঁচে থাকবেন কিনা, কোনো গ্যারান্টি নাই । তাই একটু ভাবুন, এখনো বেঁচে আছেন, তাই সুযোগ আছে, ফিরে আসুন, তওবা করুন । জীবনের বাকীটা আল্লাহ্‌র রাস্তায় চলার জন্য প্রতিজ্ঞা করুন । আল্লাহ্ আমাদেরকে সঠিকভাবে বুঝার ক্ষমতা দিন ।