ভারতীয় অশ্লীল সংস্কৃতির সামাজিক কুপ্রভাব: উত্তরণের উপায়

ভারতীয় অশ্লীল সংস্কৃতির সামাজিক কুপ্রভাব: উত্তরণের উপায়

আলী হাসান তৈয়ব

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 

ভালো-মন্দ সব দেশেই আছে। কোনো দেশের প্রতি নির্বিচার বিদ্বেষ সমর্থনযোগ্য নয়। বাক্য দুটি মাথায় রেখেই বলতে হচ্ছে, বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী ভারত, তোমাকে প্রিয় ভাবতে পারি না বলে দুঃখিত। হ্যা, যে ভারত অনেকের প্রিয় দল, অনেকের প্রিয় ব্রান্ড, অনেকের প্রিয় সিনেমানির্মাতা, অনেকের পছন্দের নাটক বা সিরিয়ালের জন্মদাতা- অনেকের অনেক অনেক কারণে পছন্দের, অনেকের ভক্তি ও ভালোবাসার, আমি তাকে সামান্য ভালোবাসতে পারি না। হিন্দুস্তানের প্রতি মনে কোনোরূপ দুর্বলতা বোধ করি না। অবশ্য ব্যক্তিগত সম্মান আছে অনেক ভারতীয়ের প্রতি। গুণী বা সজ্জন যেখানেই থাকুন, তাঁর প্রতি সম্মান দেখাতে কোনো কার্পণ্য নেই। আজকের লেখার উদ্দেশ্য কোনো দেশের প্রতি মানুষকে বিদ্বেষপরায়ণ বানানো নয়, অন্যায় মেনে নেবার প্রবণতায় আঘাত হানা।

প্রতিবেশী হিসেবে অসৎ হওয়া ছাড়াও ভারতকে অপছন্দ করার বিবিধ কারণ রয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণের পর, ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ নানা অঙ্গনে বৈষম্য এর অন্যতম। আর তা এতোটাই যে, যে কাজে আমার সমর্থন নেই তাও চোখ এড়ায় না। যেমন বন্ধু রাষ্ট্রের দাবিদার হয়েও বাংলাদেশের কোনো চ্যানেল ভারতে প্রবেশানুমতি পায় না। অথচ ভারতের জনপ্রিয় সব চ্যানেলই ছেয়ে ফেলছে সারা দেশ। ক্রিকেটে বারবার বাংলাদেশে আমন্ত্রিত হয়েও ভারত ন্যূনতম সৌজন্যের পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় নি। বিশ্বের সবচে প্রতাপশালী ক্রিকেট খেলুড়ে অস্ট্রেলিয়াও যেখানে একাধিকবার বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, সেখানে ভারত আইসিসির পঞ্চবার্ষিক সিরিজবিনিময় নিয়মেও বাংলাদেশের আতিথ্য গ্রহণে সম্মত হয় নি! আর ভালো মাল সব বাইরে পাঠিয়ে বাংলাদেশের গরীবদের মধ্যে রদ্দিগুলো চালান করার কথা নাইবা বললাম।

একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে বর্তমান ভারত অপছন্দ হওয়ার সবচে বড় কারণ সম্পর্কে বলা যাক। যে অশ্লীলতা দীর্ঘদিন পর্যন্ত হলিউড গেলাতে পারে নি মুসলিমপ্রধান দেশগুলোকে। বলিউড একাই তা পেরেছে অতি অল্প সময়ে। মধ্যপ্রাচ্যের কোন মুসলিম দেশ আছে যেখানে বলিউডের শিল্পিত অশ্লীলতা সম্মতি পায় নি। ভারত শুধু বলিউড দিয়েই অশ্লীলতা ছড়ায় নি। আজকাল তারা তাদের বাংলা সিরিয়াল ও নানা রিয়েলিটি শো দিয়েও অশ্লীলতাকে সমাজে গা সওয়া করে দিয়েছে। ঢালিউডের বাংলা নাটক-সিনেমাও কম যায় না। ভারতীয় হিন্দি-বাংলা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকাদের রুচিহীন অসভ্য পোশাক সংক্রামক ব্যধির মতো দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছে প্রিয় মাতৃভূমির প্রিয়তম বোনদের মধ্যে। নাচ-গানের প্রতিভা বিকাশের নামে দ্রুততর সময়ে অনুসৃত হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের অশ্লীলতা শেখা ও প্রদর্শনের অনুষ্ঠান।

অশ্লীলতা বিস্তারে ভারতের সর্বশেষ অবদান উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ভার্সন টি-২০ তে চিয়ার্স গার্লদের সংযোজন। সোনার ডিমপাড়া টি-২০ সিরিজ আইপিএলের জনপ্রিয়তা দেখে অন্যসব টেস্ট খেলুড়ে দেশও যখন একই আদলে নিজ দেশে সিরিজ আয়োজন করছে, তারাও যুগপৎ বিস্ময়কর ও দুঃখজনকভাবে আর সব অনুষঙ্গের মতো চিয়ার্স লেডিদের আমদানি করছে! এরচে বড় বিস্ময়ের ব্যাপার, বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও ভারতের অন্ধ অনুগমন-অনুসরণ করছে। টি-২০ বিশ্বকাপ যেখানেই আয়োজন হোক না কেন চিয়ার্স লেডি নামের বাদরমুখীদের সস্তা শরীরকলা প্রদর্শনের ব্যবস্থাও রাখতে হবে! কী অদ্ভুত কাণ্ড! মাত্র কয়েক বছরে ক্রিকেটের ব্যাট, বল আর প্যাড-গ্লাভসের মতো বাদরনর্তকীও অপরিহার্য হয়ে দাঁড়াল! সাহাবীদের স্মৃতিধন্য আরব ভূমির অংশ আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় সব টি-২০ তেও ছাড় নেই। আবুধাবির শেখ যায়েদ স্টেডিয়াম কিংবা শারজায় খেলা হলেও মাফ নেই বাঁদরনাচন। সেখানে ওদের দেখা যায় উরু ঢেকে অপেক্ষাকৃত শালিন (?) পোশাকে নাচতে। দর্শক টানতে আজকাল তাহলে কি চার-ছক্কা যথেষ্ট নয়? চার-ছক্কার সঙ্গে বোনাস বাঁদরনাচনও চাই-ই চাই?

দৃঢ় নৈতিকতাসম্পন্ন ইসলামী আদর্শের যেসব ধারক-প্রচারক এসবের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বা কলম ধরেছেন, এতদিন মিডিয়া তাদের প্রতিক্রিয়াশীল বা গোঁড়া মৌলবাদী বলে রুখতে চেয়েছে। পক্ষান্তরে শিল্পচর্চা আর প্রতিভা বিকাশের নামে অশ্লীলতাকে মিডিয়া শুধু উৎসাহিতই করে নি, নিছক বস্তুগত স্বার্থের টানে নির্লজ্জ পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়েছে। স্পন্সর খুঁজে এনে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো আজকাল ক্লোজ আপ ওয়ানের নামে গানে, লাক্স ফটো সুন্দরি প্রতিযোগিতার নামে সুন্দরী প্রতিযোগিতায়, খুদে গানরাজ প্রতিযোগিতার নামে শিশুদের গানে মাতাল করা থেকে নিয়ে শিল্পকলার নামে শরীরকলার হেন আইটেম নেই যার আয়োজন করা হচ্ছে না।

হিন্দুস্তানের দিল্লী সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেয়েছে ধর্ষণের রাজধানী হিসেবে। সর্বশেষ দিবালোকে চলন্ত বাসে একটি মেয়ে ধর্ষিতা এবং পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ঘটনায় এ খ্যাতি আরও পোক্ত হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়া পুরো ভারত জেগে উঠেছে। সর্বশ্রেণীর নারী-পুরুষ ফুঁসে ওঠেছে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে। ভারত সরকারও নড়ে উঠেছে। বিক্ষুব্ধ জাতিকে শান্ত করতে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে হয়েছে জাতির উদ্দেশে ভাষণ। সমাজচিন্তক ও বুদ্ধিজীবীরা নড়েচড়ে বসেছেন। সবার ভেতর থেকে আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে, অনেক হয়েছে এবার একটু অশ্লীলতার রাশ টেনে ধরা দরকার। এর প্রতিক্রিয়ায় কিছু অশ্লীল গানের বিরুদ্ধে কোনো কোনো রাজ্যসরকারকে সামান্য পদক্ষেপ নিতে দেখা গেল। তবে প্রচণ্ড হাসি পেল যখন দেখলাম বলিউডের স্টার অমিতাভ বচ্চন আর কিং শাহরুখ খান পাশবিক নির্যাতনে নিহত দামিনীর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বিবৃতি দিলেন। অশ্লীলতার জনক, মূল আমদানিকারক আর বাজারজাতকারীরাই যখন এর বিরুদ্ধে আওয়ায তোলেন তখন কার না হাসি পায়।

এতদিন ভারত যে অশ্লীলতায় সয়লাব করেছে মুসলিমপ্রধান মধ্যপ্রাচ্যকে, আজ তার কিছু নগদ ফল পেতে শুরু করেছে। সেখানকার মিডিয়ায় যতটুকু ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের খবর প্রকাশ হয় বলা বাহুল্য অপ্রকাশিত থাকে তারচে কয়েকগুণ বেশি। ভারত থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত যে বাংলাদেশ অশ্লীলতাকে বরণ করে নিয়েছে, গড্ডালিকায় গা ভাসিয়েছে, সেখানেও এর নগদ ফল প্রকাশ হতে শুরু করেছে। এরই প্রমাণ দিতেই কিনা ভারতে দামিনী নির্যাতনের পরপরই বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে তরুণী ধর্ষণের আলোচিত ঘটনার জন্ম হলো। বাজার চাহিদার কথা ভেবে এ দেশের তাবৎ মিডিয়া হন্যে হয়ে রোজ ধর্ষণের সংবাদ সংগ্রহ করতে লাগলো। দেখা গেল ভারতের চেয়ে বাংলাদেশও কম যায় না। হিন্দুস্তানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও ঘটছে অসংখ্য নারী নির্যাতনের ঘটনা।

তবে দুঃখজনক সত্য হলো, হিন্দুপ্রধান ভারতের যতটুকু হুঁশ ফিরেছে মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের ততটুকু ফেরে নি। বাংলাদেশ কি তবে ধর্মনিরপেক্ষতায়/ধর্মহীনতায় ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে! ভারতের মিডিয়া এবং নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে, কিন্তু বাংলাদেশের নারী সংগঠন আর মানবাধিকার কর্মীদের যেন এখনো ঘুম ভাঙে নি। বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন মানে নারীদের উন্নয়ন বা নির্যাতন প্রতিরোধ বা প্রতিহত করা নয়, নেত্রীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় পদে প্রতিষ্ঠা লাভ।

এ দেশে নির্যাতন প্রতিরোধ বাদ দিয়ে তাই নারীর ক্ষমতায়ন নিয়েই যত ব্যস্ততা। নয়তো প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের প্রধান, সংসদীয় উপনেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক সর্বোচ্চ পদে নারী থাকার পরও কেন রোজ নারী নির্যাতনের হার বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ সব পেশা-পদের পর একান্ত পুরুষদের পেশা-পদেও সমানতালে নারীর উপস্থিতির পরও কেন নির্যাতনকারীদের শাস্তি হবে না। ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন থেকে নিয়ে সব খেলায় আজ নারীরা সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সাইকেল, গাড়ি ও রেলের ড্রাইভার থেকে নিয়ে বিমানের পাইলট পর্যন্ত হচ্ছে। পুলিশ, আর্মি থেকে নিয়ে নৌবাহিনীতে পর্যন্ত নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তারপরও কেন নারীর সামাজিক নিরাপত্তা দৃঢ় না হয়ে দিনদিন আরও নাজুক হচ্ছে?

আমাদের পরিবারের কর্তা, সমাজপতি আর রাষ্ট্রের কর্ণধাররা কবে বুঝবেন গ্রহ তার কক্ষপথ হারিয়ে ফেলেছে। আপন কক্ষপথে না ফিরলে কখনো তার মঙ্গল নিশ্চিত হতে পারে না। আমাদের মা-বোনরা কবে বুঝবেন যারা তাদের ঘরের বাইরে নিয়ে পুরুষের সঙ্গে লড়াইয়ে লাগিয়ে দিয়েছেন তারা হামিলনের বাঁশিওয়ালা। তারা কখনো পিতা, স্বামী বা ভাইয়ের মতো স্বার্থহীনভাবে নারীর কল্যাণ নিয়ে ভাবেন নি। বস্তুগত লাভালাভ আর আর্থিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এরা নানা মধুর বাক্য ও শ্লোগানে নারীকে ঘরের বাইরে বের হতে উৎসাহ দিয়েছে। নারীকে তার সম্মান ও নিরাপত্তার নিয়ামক পর্দার প্রতি বীতশ্রদ্ধ বানিয়েছে। এরাই অশ্লীল বিজ্ঞাপন ও ফ্যাশনের নামে নারীকে পণ্য বানিয়েছে। তাই পুরুষের লুঙ্গি-প্যান্ট আর শেভিং ক্রিমের বিজ্ঞাপন হয় না নারীকে ছাড়া! কম্পিউটার, মোবাইল কিংবা গাড়ি প্রদর্শনী সার্থক (?) হয় না যদি না তার পাশে দু’জন মডেল কন্যাকে দাঁড় করানো যায়!

চোখ কান খোলা নাগরিক বলতেই জানেন, সমাজে আজ নারীর নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। স্কুল, কলেজ, যানবাহন, কর্মস্থল থেকে নিয়ে কোথাও নিরাপদ নয়। যত তিক্ত মনে হোক আজ এ সত্য আমরা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারব না যে সমাজে নারীদের এহেন দুরাবস্থার জন্য দায়ী প্রধানত আমরাই। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ ظَهَرَ ٱلۡفَسَادُ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ بِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِي ٱلنَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعۡضَ ٱلَّذِي عَمِلُواْ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٤١ ﴾ [الروم: ٤١]

‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ {সূরা আর-রূম, আয়াত : ৪১}

আর এ থেকে উত্তরণে আমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের মহান স্রষ্টা দয়ালু আল্লাহর নির্দেশনা এবং সবচে কল্যাণকামী রহমতের নবী আল্লাহর রাসূলের দেখানো পথে। আল্লাহ ইরশাদ করেন,

﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ ﴾ [الاسراء: ٣٢]

‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ২৩}

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣ ﴾ [الاحزاب : ٣٢،  ٣٣]

‘হে নবী পত্নীগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩২-৩৩}

এখানে নবীপত্নীগণ ও তাঁদের পরবর্তী সকল মুমিন নারীকে সম্বোধন করা হয়েছে। ইসলাম এ পন্থা অবলম্বন করেছে পর্দা, পবিত্রতা ও লজ্জার প্রচারে। অবনত দৃষ্টি, লজ্জাস্থান হেফাজত, নারী-পুরুষের আত্মিক শূচি রক্ষায়। নারীর প্রতি যৌন লোলুপতা রুখতে। ফিতনা-ফাসাদ ও সন্দেহ-অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝি থেকে তাকে দূরে রাখতে।

আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে। আপন ইজ্জত রক্ষা করে এবং আকর্ষণীয় অঙ্গগুলো আবৃত রাখে। যাতে কোনো অসুস্থ অন্তর বা অসংযত দৃষ্টির অধিকারী পুরুষ তার টিকিটিও স্পর্শ করতে না পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ ﴾ [النور : ٣١]

‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১}

পরিশেষ বলতে হয়, নারীর সম্মান ও মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন প্রথম সামাজিকভাবে তাকওয়ার চর্চা। পাশাপাশি আরও প্রয়োজন সামাজিকভাবে ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, সব ধারার শিক্ষায় পাঠ্যবইয়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। পরিবারে ইসলামী শিক্ষা ও শিষ্টাচারের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। সব ধরনের অশ্লীলতা এবং অশ্লীল কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে রুখে দাঁড়ানো। সকল অশ্লীল ও উগ্র বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা। আল্লাহ আমাদের বুঝা ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।