ভাইয়া, আমি যাকে ভালোবাসি, তার পরিবার অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না (নাসীহাহ)

ভাইয়া, আমি যাকে ভালোবাসি, তার পরিবার অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না।
– ঠিক আছে। আগে বল, কিসে পড় তুমি?
: এমবিএ করছি।
– তোমার ইচ্ছে কি ছিল পড়ার?
: ইঞ্জিনিয়ারিং।
– তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে পারোনি বলে কি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিলে?
: না ভাইয়া।
– তুমি এর অল্টারনেটিভ হিসেবে বিবিএ তে ভর্তি হয়েছ। এখন এমবিএ করছ। জীবনে সবকিছুই নিজের চাওয়া মত পাওয়া যায় না। ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তির ইচ্ছা পুরন না হলেও তুমি ঠিকই কিন্তু লেখাপড়া করছ। ধর, তুমি এমবিএ শেষ করলে। এরপর কি প্ল্যান?
.
: ভাল কর্পোরেট কোম্পানিতে জব করা।
– ধর, তুমি ভাল কোম্পানিতে জব পেলে না? তাহলে কি বেকার বসে থাকবে? না, অন্য কোন চাকুরী জুটে নেওয়ার চেষ্টা করবে?
: অন্য চাকুরী খুঁজার চেষ্টা করব।
– হ্যা, এটাই হল জীবন। তুমি তো এখন বড় হয়েছ। ছোটবেলা থেকে তোমার মনের অনেক ইচ্ছে বা চাওয়া পাওয়া ছিল। কিন্তু সেগুলোর কি সব পুরন হয়েছে?
: না হয় নি।
– তোমার সব ইচ্ছে চাওয়া পাওয়া পুরন না হলেও তুমি কিন্তু ঠিকই জীবন পার করে এতোদুর এসেছ। এবার আমাকে দুটো তথ্য দাও। প্রথম তথ্য হল, এর আগে কোন জিনিস না পাওয়ার পর তোমার মনে হয়েছিল জীবন আর রাখবে না?
: হাইস্কুলে থাকতে সাইকেল চেয়েছিলাম। তখন আব্বা দেয় নি, উল্টা অনেক ঝাড়ি দিয়েছিল। তখন একবার ভেবেছিলাম সুইসাইড করব।
– ওকে। এবার বল, এরপর জীবনে কোন জিনিস পেয়ে তোমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে?
.
: বিবিএ পড়ার সময় মোটরসাইকেল যখন কিনি তখন। আমি বাইকের অনেক স্টান্টও পারি ভাইয়া।
– তাহলে নিজেই চিন্তা করে দেখ, সাইকেলের জন্য ছোট কষ্টের কারনে যদি তখন আত্মহত্যা করতে তাহলে এই মোটরসাইকেল পাওয়ার মত বড় আনন্দ থেকে আগেই বঞ্চিত হতে।
আজ যে মেয়েটিকে না পাওয়ার কষ্টে তোমার সুইসাইড করার ইচ্ছে হচ্ছে, আগামীতে এর চেয়ে বেশি আনন্দ তোমার জন্য যে অপেক্ষা করছে না, সেটা নিশ্চিত হলে কি করে?
: কিন্তু ভাইয়া মেয়েটিকে আমি ভালবাসি।
– যদি এমন হত, এই মেয়েকে না পেলে তোমার জীবন থেমে থাকবে, সময় আর এগুবে না, তাহলে ভিন্ন কথা ছিল। তুমি তাকে পাও বা না পাও, জীবন জীবনের মতই সামনে এগুবে… এর সাথে তোমার নিজেকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে…
_______
.
আল্লাহ জীবন সঙ্গী তাকেই বানান যে তার জন্য পার্ফেক্ট হয়। সে তোমার জন্য হয়তো পার্ফেক্ট ছিল না, তাই আল্লাহ তাকে দেন নি। তুমি হয়তো বর্তমান জান, কিন্তু আল্লাহ ভবিষ্যৎ জানেন।
আল্লাহ (সুবাহানাহু ওয়া তা’আলা) নিজেই বলেছেন-
.
“হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যানকর। বস্তুত আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২১৬)
:
:
আজ হয়তো মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে, কিন্তু ভবিষ্যৎ এ নিশ্চিত থাক এর চেয়ে ভাল কিছু অপেক্ষা করছে তোমার জন্য…
.
যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি যার জন্য যেটা বেস্ট সেটাই দেন। কাউকে হয়তো একটু আগে দেন, কাউকে একটু পরে… আসলে এটা আগে-পরেও না… যার জন্য যে সময় উত্তম, তাকে সে সময়েই দেন। আমাদের কাজ চেষ্টা করা আর ধৈর্য ধরা…!!!!!
:
:
“And Allah is the best of planners.”
“নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সবচেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী।”
(সুরা আনফাল, আয়াত ৩০)
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
লেখাঃ ডাঃ তারাকী হাসান মেহেদী (আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিন!)