বিষন্ন হবেন না- দুশ্চিন্তা দূর করুন

অলসতা ধ্বংসাত্মক এবং যারা উদ্বিগ্নতা ও দুশ্চিন্তায় ভোগে তাদের অধিকাংশই অলস এবং অকর্মী। যারা অর্থবহ ও সফল কাজ হতে রিক্তহস্ত গুজব আর গল্পই তাদের একমাত্র পুঁজি।
নিজেকে কোন কাজে নিয়োজিত করুন এবং সে কাজে কঠোর প্রচেষ্টা চালান। পড়ুন, আবৃত্তি (তেলাওয়াত) করুন এবং আপনার প্রতিপালকের (সপ্রশংস মহিমা কীর্তন) করুন। লিখুন, বন্ধুদের দেখতে যান এবং নিজের সময়কে কাজে লাগান। সংক্ষেপে, এক মিনিট সময়ও অলসতায় নষ্ট করবেন না। আপনার জীবনের প্রতিটি দিনেই (যে দিনটি আপনি কাটাচ্ছেন তাতেই) দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা দেখা দিবে। কুসংস্কার ও কুমন্ত্রণা আপনার অন্তরে ঢুকে আপনাকে শয়তানের খেলার মাঠ হতে দিবে।
যে লোককে আপনি একদা কোন উপকার করেছেন কিন্তু সে উপকারের কথা বেমালুম ভুলে যায় বা অস্বীকার করে এমন লোকের ব্যাপারে দুঃখ করবেন না; কেননা, একমাত্র আল্লাহর পুরস্কারের জন্যই আপনার আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত। আমলে সালেহ বিশুদ্ধভাবে ও একনিষ্ঠ হয়ে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করুন এবং কারো অভিবাদন বা ধন্যবাদ পাবার আশায় করবেন না। আপনি যদি কারো কোন উপকার করে থাকেন আর সে যদি এর মূল্যায়ন না করে অকৃতজ্ঞ হয় তবে মনে ব্যথা পাবেন না। আল্লাহ তা’আলার নিকট আপনার পুরস্কার চান। মহান আল্লাহ তার নেক বান্দাদের সম্বন্ধে বলেন-
“তারা আল্লাহর দান ও সন্তুষ্টি কামনা করে।” (সূরাহ আল হাশর: আয়াত-৮)
“বলুন, এজন্য আমি তোমাদের নিকট কোন পারিতোষিক বা বকশিস চাই না।” (সূরাহ আল ফুরকান: আয়াত-৫৭, ৩৪ : ৪৭, ৩৮ : ৮৬)
“আমরাতো তোমাদেরকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই খাওয়াই; তোমাদের কাছ থেকে আমরা কোন প্রতিদান বা ধন্যবাদ আশা করি না।” (সূরাহ আদ দাহর বা ইনসান : আয়াত-৯)
অতএব, আপনার লেনদেন শুধুমাত্র আল্লাহর সাথেই করুন। যেহেতু, তিনিই পুর্ণকর্মের বা আমলে সালেহের প্রতিদান দেন, যারা সৎকাজ বা নেক আমল করে তাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে পুরস্কৃত করেন এবং যারা পাপ কাজ বা মন্দ আমল করে তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন ।
শহীদদেরকে যখন কান্দাহারে হত্যা করা হয় তখন উমর (রাঃ) তার সঙ্গীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কে নিহত হলো?” তারা তার কাছে কতিপয় নাম বললেন এবং তারপর বললেন: “এবং এমন কিছু লোক যাদেরকে আপনি চিনেন না।” ওমরের আঁখিদ্বয় অশ্রুতে টলটলে হয়ে গেল এবং তিনি বললেন, “কিন্তু আল্লাহ তো তাদেরকে চিনেন।” (অর্থাৎ যাদেরকে আল্লাহ প্রতিদান দিবেন, তাদেরকে আমরা না চিনলেও আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ভালোভাবেই চিনেন।)
একজন ধাৰ্মিক ব্যক্তি এক অন্ধ ব্যক্তিকে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে সুন্দর খাবার খাওয়াল। তার স্ত্রী বলল, “এ অন্ধ লোকটিতো জানেনা যে সে কী খাচ্ছে (সুতরাং তাকে নিম্নমানের কিছু খেতে দিন)” তিনি উত্তর দিলেন। “কিন্তু আল্লাহ তো জানেন।”
যেহেতু আল্লাহ তা’আলা আপনার কাজ (অর্থাৎ আপনি যা করেন তা) জানেন, আপনি যে ভালো কাজ করেন এবং অন্যদেরকে যে সাহায্য করেন তা (তিনি) জানেন, সেহেতু মানুষ কী ভাবছে সে বিষয়ে নিরুদ্বিগ্ন, দুশ্চিন্তাহীন ও প্রশান্ত থাকুন।
——————–
গ্রন্থঃ লা-তাহযান (হতাশ হবেন না)