বিদায়াত প্রসঙ্গে,,,সংক্ষিপ্ত পরিসরে

বিদায়াতের পরিচিত সংক্রান্ত নিচে একটি তাহক্বীককৃত হাদীস রয়েছে এবং পরবর্তীতে ✘বিদায়াতের✘ ভয়াবহ পরিনতির ব্যপারে কিছু হাদীস ←
[ সহীহ্ বুখারী তাওঃ পাবঃ হাদীস নং ৭২৭৭] ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সর্বোত্তম কালাম হল আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমূহ। ‘‘তোমাদের কাছে যার ও‘য়াদা দেয়া হচ্ছে তা ঘটবেই, তোমরা ব্যর্থ করতে পারবে না’’- (সূরাহ আন‘আম ৬/১৩৪)।[1] [৬০৯৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮১)
[1] বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ হল : ﺍَﻟﺸَّﻲْﺀُ ﺍﻟْﻤُﺨْﺘَﺮَﻉُ ﻋَﻠٰﻰ ﻏَﻴْﺮِ ﻣِﺜَﺎﻝٍ ﺳَﺎﺑِﻖٍ অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোন নমুনা ছাড়াই নতুন আবিষ্কৃত বিষয়। [আন-নিহায়াহ, পৃঃ ৬৯, কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ১৭] আর শরীয়তের পরিভাষায়- ﻣَﺎ ﺃُﺣْﺪِﺙَ ﻓِﻰ ﺩِﻳْﻦِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻪُ ﺃَﺻْﻞٌ ﻋَﺎﻡٌ ﻭَﻻَﺧَﺎﺹٌّ ﻳَﺪُﻝُّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ . অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরীয়তের কোন ব্যাপক ও সাধারণ কিংবা খাস ও সুনির্দিষ্ট দলীল নেই। [কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ২৪] এ সংজ্ঞটিতে তিনটি বিষয় লক্ষণীয় : ১. নতুনভাবে প্রচলন অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে এর কোন প্রচলন ছিল না এবং এর কোন নমুনাও ছিল না। ২. এ নব প্রচলিত বিষয়টিকে দ্বীনের মধ্যে সংযোজন করা এবং ধারণা করা যে, এটি দ্বীনের অংশ। ৩. নব প্রচলিত এ বিষয়টি শরীয়তের কোন ‘আম বা খাস দলীল ছাড়াই চালু ও উদ্ভাবন করা। সংজ্ঞার এ তিনটি বিষয়ের একত্রিত রূপ হল বিদআত, যা থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ শরীয়তে এসেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার এ বিষয়টি হাদীসে বারবার উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, (ﻭَﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﻣُﺤْﺪَﺛَﺎﺕِ ﺍﻷُ (রাঃ) ﻣُﻮْﺭِ ﻓَﺈِﻥَّ ﻛُﻞَّ ﻣُﺤْﺪَﺛَﺔٍ ﺑِﺪْﻋَﺔٌ ﻭَﻛُﻞَّ ﺑِﺪْﻋَﺔٍ ﺿَﻼَﻟَﺔٌ ) ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﻗﺎﻝ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ . ‘‘তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা’’। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।] নবী (সাঃ) তাঁর এক খুতবায় বলেছেন : ﺇِﻥَّ ﺃَﺻْﺪَﻕَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻛِﺘَﺎﺏُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺃَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻬَﺪْﻱِ ﻫَﺪْﻱُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﺷَﺮُّ ﺍﻷُﻣُﻮْﺭِ ﻣُﺤْﺪَﺛَﺎﺗُﻬَﺎ ﻭَﻛُﻞُّ ﻣُﺤْﺪَﺛَﺔٍ ﺑِﺪْﻋَﺔٌ ﻭَﻛُﻞُّ ﺑِﺪْﻋَﺔٍ ﺿَﻼَﻟَﺔٌ ﻭَﻛُﻞُّ ﺿَﻼَﻟَﺔٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﻭﺍﻟﻠﻔﻆ ﻟﻠﻨﺴﺎﺋﻰ . ‘‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।] বিদআতের বৈশিষ্ট্য বিদআতের চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে : ১. বিদআতকে বিদআত হিসেবে চেনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দলীল পাওয়া যায় না; তবে তা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মূলনীতিগত ‘আম ও সাধারণ দলীল পাওয়া যায়। ২. বিদআত সবসময়ই শরীয়তের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও মাকাসিদ এর বিপরীত ও বিরোধী অবস্থানে থাকে। আর এ বিষয়টিই বিদআত নিকৃষ্ট ও বাতিল হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ জন্যই হাদীসে বিদআতকে ভ্রষ্টতা বলে অভিহিত করা হয়েছে। ৩. অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদআত এমন সব কার্যাবলী সম্পাদনের মাধ্যমে হয়ে থাকে যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবাদের যুগে প্রচলিত ছিল না। ইমাম ইবনুল জাওযী রহ: বলেন, ﺍﻟﺒِﺪْﻋَﺔُ ﻋِﺒﺎﺭﺓٌ ﻋَﻦْ ﻓِﻌﻞٍ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻓﺎﺑﺘُﺪِﻉَ ‘বিদআত বলতে বুঝায় এমন কাজকে যা ছিল না, অতঃপর তা উদ্ভাবন করা হয়েছে’। [তালবীসু ইবলীস, পৃ: ১৬] ৪. বিদআতের সাথে শরীয়তের কোন কোন ইবাদাতের কিছু মিল থাকে। দু’টো ব্যাপারে এ মিলগুলো লক্ষ্য করা যায়: প্রথমত : দলীলের দিক থেকে এভাবে মিল রয়েছে যে, কোন একটি ‘আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণার ভিত্তিতে বিদআতটি প্রচলিত হয় এবং খাস ও নির্দিষ্ট দলীলকে পাশ কাটিয়ে এ ‘আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণাটিকে বিদআতের সহীহ ও সঠিক দলীল বলে মনে করা হয়। দ্বিতীয়ত : শরীয়ত প্রণীত ইবাদাতের রূপরেখা ও পদ্ধতির সাথে বিদআতের মিল তৈরী করা হয় সংখ্যা, আকার-আকৃতি, সময় বা স্থানের দিক থেকে কিংবা হুকুমের দিক থেকে। এ মিলগুলোর কারণে অনেকে একে বিদআত মনে না করে ইবাদাত বলে গণ্য করে থাকেন। বিদআত নির্ধারণে মানুষের মতপার্থক্য বিদআত নির্ধারণে মানুষ সাধারণতঃ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত : এক : দলীল পাওয়া যায় না এমন প্রতিটি বিষয়কে এক শ্রেণীর মানুষ বিদআত হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং এক্ষেত্রে তারা বিশেষ বাছ-বিচার না করেই সব কিছুকে (এমন কি মু‘আমালার বিষয়কেও) বিদআত বলে অভিহিত করছে। এদের কাছে বিদআতের সীমানা বহুদূর বিস্তৃত। দুই : যারা দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত সকল বিষয়কে বিদআত বলতে রাজী নয়; বরং বড় বড় নতুন কয়েকটিকে বিদআত বলে বাকী সবকিছু শরীয়তভুক্ত বলে তারা মনে করে। এদের কাছে বিদআতের সীমানা খুবই ক্ষুদ্র। তিন : যারা যাচাই-বাছাই করে শুধুমাত্র প্রকৃত বিদআতকেই বিদআত বলে অভিহিত করে থাকেন। এরা মধ্যম পন্থাবলম্বী এবং হকপন্থী। বিদআতের মৌলিক নীতিমালা বিদআতের তিনটি মৌলিক নীতিমালা রয়েছে। সেগুলো হল : ১.এমন ‘আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করা যা শরীয়ত সিদ্ধ নয়। কেননা শরীয়তের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হল- এমন আমল দ্বারা আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করতে হবে যা কুরআনে আল্লাহ নিজে কিংবা সহীহ হাদীসে তাঁর রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) অনুমোদন করেছেন। তাহলেই কাজটি ইবাদাত বলে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) যে আমল অনুমোদন করেননি সে আমলের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা হবে বিদআত। ২.দ্বীনের অনুমোদিত ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাইরে অন্য ব্যবস্থার অনুসরণ ও স্বীকৃতি প্রদান। ইসলামে একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, শরীয়তের বেঁধে দেয়া পদ্ধতি ও বিধানের মধ্যে থাকা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি ইসলামী শরীয়ত ব্যতীত অন্য বিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করল ও তার প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করল সে বিদআতে লিপ্ত হল। ৩) যে সকল কর্মকান্ড সরাসরি বিদআত না হলেও বিদআতের দিকে পরিচালিত করে এবং পরিশেষে মানুষকে বিদআতে লিপ্ত করে, সেগুলোর হুকুম বিদআতেরই অনুরূপ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

⏩“ রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন. তোমরা আমার সুন্নাত ও খোলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাতকে শক্তভাবে আকড়ে, ধর দীন ইসলামের মধ্যে নতুন কিছু উদ্বাবন (সংযোজন বিয়োজন) থেকে বেচে থাক, নিশ্চই প্রত্যেক নব আবিষ্কার বিদায়াত প্রত্যেক বিদায়াতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা, অন্য আরেক রেওয়ায়েতে আছে প্রত্যেক পথভ্রষ্টতাই জাহান্নামী ”
★[সুনানু নাসাঈ : হাঃ ১৫৭৯ সনদ হাসান – আহমদ, আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্ – সনদ হাসান – মিশকাত হাঃ ১৬৫ বংগানুবাদ ১ম খন্ড হাঃ ১৫৮]★
⏩“ রাসুল (সা) বলেন আমাদের দীনে যদি কেউ নতুন কিছু (নিয়ম, কানুুন, রেওয়াজ, আমল, ইবাদত ইত্যাদি) উদ্বাবন করবে তা প্রত্যাখাত (বাতিল),, ★[সহীহ্ বুখারী হাঃ ২৬৯৭, — মুসলিম হাঃ ৪৫৭৯, — আবু দাঊদ হাঃ ৪৬০৭]★
⏩“ রাসুল (সা) বলেন দীনে প্রত্যেক নব প্রবর্তিত বিষয়ই বিদায়াত প্রত্যেক বিদায়াতহ পথভ্রষ্টতা ”
★[সহীহ্ মুসলীম হাঃ ৪৬০৯, ইবনু মাজাহ্ হাঃ ৪২]★
⏩“ আয়েশা (রা) হতে বর্নিত রাসুল (সা) বলেন কেউ যদি কোন আমল করে আর সে আমল (কাজের) উপর আমার কোন নির্দেশনা নেই তাহলে তা প্রত্যাখাত (বাতিল) ”
★[সহীহ্ বুখারী ২/১০৯২ পৃঃ — মুসলীম হাঃ ৪৪৬৮ মীমাংসা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ নাম্বার ০৮]★
⏩“ কেউ যদি কোন কথা আমার দিকে ধাবিত করে যা আমি বলিনি সে যেন তার থাকার জায়গা জাহান্নামে তৈরী করে নেয় ”
★[সহীহ্ বুখারী তাওঃ পাবঃ হাঃ ১০৯ ইফাঃ হাঃ ১১০, আধুঃ হাঃ ১০৭]★
⏩“ আল্লাহ্ বিদায়াতির আমল প্রত্যাখ্যান করেন যতক্ষণ না সে বিদায়াত পরিহার করে ”
★[সুনানে ইবনু মাজাহ্ হাঃ ৫০, তাবাজু আত্ হাঃ ২৫]★
⏩“ নিশ্চই আল্লাহ প্রত্যেক বিদায়াতির তাওবা প্রত্যাখ্যান করেন ”
★[সহীহুল জামে হাঃ নং ১৬৯৯]★
⏩“ নিশ্চই আল্লাহ প্রত্যেক বিদায়াতিদের থেকে তাওবাকে আড়াল করে রাখেন যতক্ষণ না সে বিদায়াত পরিহার করে ”
★[তাবারানী : সহীহ্ তারগীব হাঃ ৫৪,]★
⏩“ যে বিদায়াতিকে আশ্রয় দিল তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ ”
★[সহীহ্ মুসলীম হাঃ ১৯৭৮, মিশকাত হাঃ ৪০৭০]★
⏩“ যে বিদায়াতিকে সন্মান করলো সে ইসলাম ধংসে সাহায্যে করলো ”
★[মিশকাত হাঃ ১৮৯, তাবাজু আত্ হাঃ ৫৯]★
⏩“ যে কোন বিদায়াতিকে সাহায্য করে আল্লাহ তাকে লা’নত করেন ”
★[সহীহ্ মুসলীম হাঃ ১৩৬৬]★
⏩“ রাসুল (সা) বিদায়াত কারিকে হাউজে কাউসারের পানি পান করতে দিবেন না ! ”
★[সহীহ্ বুখারী হাঃ ৬৫৬১]★
⏩“ বিদায়াত কারির চুড়ান্ত পরিণতি জাহান্নাম ”
★[সুনানে নাসাঈ হাঃ ১৫৭৮]★
⏩“ বিদায়াত কারি অভিশপ্ত তাই তাদের কোন দোয়া কবুল হয় না ”
★[সহীহ্ বুখারী হাঃ ৬৭৯০]★