বর্তমান যুগে মুসলিমদের মাঝে বড় একটা বিভ্রান্তি হচ্ছেঃ প্রকৃত আলেমদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা

বর্তমান যুগে মুসলিমদের মাঝে বড় একটা বিভ্রান্তি হচ্ছেঃ প্রকৃত আলেমদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এবং অল্প শিক্ষিত ইসলামিক বক্তা ও লিখকদেরকে বিশাল বড় আলেম বলে মনে করা, তাদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা। এর প্রধান কারণ হচ্ছেঃ আলেম কে, কে আলেম আর কে আলেম নয়, মানুষ এটা জানেনা। নিজের অল্প ইলম নিয়ে জাহেলরা আলেমদের র‍্যাংকিং নির্ধারণ করে।
.
আজকাল মানুষ যাদেরকে “আলেম” বলে মনে করেঃ
(১) টিভিতে কাউকে কুরআন ও হাদীস নিয়ে কিছু কথা বলতে দেখলে,
(২) কুরআন হাদীসের মনগড়া ব্যখ্যা করে কিছু লেখালিখি করতে পারলে,
(৩) ইউটিউব বা ইন্টারনেটে কিছু ওয়াজ-লেকচার ছেড়ে জনপ্রিয়তা পেলে,
(৪) ফেইসবুক, টুইটারে কয়েক লক্ষ লাইক, ফলোয়ার বা একনিষ্ঠ মুরীদ জোটাতে পারলে,
(৫) বড় কোন মাদ্রাসা বা সংগঠনে পজিশান বা ক্ষমতা দখল করে বসে থাকলে,
(৬) মুফতি, মুহাদ্দিস হিসেবে সার্টিফিকেট নিতে পারলে অথবা নামের পূর্বে মাওলানা, শায়খ ইত্যাদি টাইটেলে যোগ করলে,
(৭) হৃদয় গলানো বা গরম গরম আবেগী বক্তৃতা দিয়ে বা মনভুলানো কিছু লেখালিখি করে মানুষের মগজ ধোলাই করতে পারলে।
যাই হোক, এইগুলো কি আসলেই কারো “আলেম” হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ?
.
‘আলেম’ কে? একজন ‘আলেম’ এর কি কি যোগ্যতা থাকা চাই?
লিখেছেনঃ শায়খ আব্দুর রাকীব বুখারী (হা’ফিজাহুল্লাহ),
দ্বাইয়ী, খাফজী ইসলামিক সেন্টার সৌদি আরাবিয়া
.
‘আলেম’ কে? একজন ‘আলেম’ এর কি কি যোগ্যতা থাকা চাই?
এই বিষয়টির উপর ৪০০ হিজরীর একজন বড় আলেম, ইমাম আব্দুল বার (রাহিমাহুল্লাহ) তার ‘জামি বায়ানুল ইলম ওয়াল-ফাজলি’ নামক কিতাবে একজন ‘আলেম’ হওয়ার জন্য যে সমস্ত শর্ত আরোপ করেছেন, নিম্নে তা উল্লেখ করা হল।
(১) ক্বুরআনুল কারীম সম্পর্কে জ্ঞানঃ
হাফেজে কিতাবুল্লাহ, ৩০ পারা অর্থাৎ সম্পূর্ণ ক্বুরানুল কারীম তার মুখস্থ থাকতে হবে। কোন ব্যক্তির আলেম হওয়ার জন্য এটা আব্যশক, তবে ওয়াজিব নয়।
=> জরুরী হল আয়াতে আহকাম অর্থাৎ যে সমস্ত আয়াতগুলো হুকুম (আদেশ-নিষেধ) আছে সেগুলো হিফজ করা।
=> আয়াতের শানে নুজুল ও তাফসির জানা।
=> ক্বুরান বোঝার জন্য সকল উৎস জানা।
=> নূন্যতম ১০ পারা হিফজ করা।
(২) হাদীস বা ‘সুন্নাহ’ সম্পর্কে জ্ঞানঃ
কুতুবে সিত্তাহ তথা প্রসিদ্ধ ছয়টি হাদীসের কিতাব আর সেইগুলো হচ্ছে,
ক. সহীহ বুখারী,
খ. সহীহ মুসিলীম,
গ. জামি তিরমিজি,
ঘ. সুনানে আবু দাউদ,
ঙ. সুনানে নাসাঈ,
চ. সুনানে ইবনে মাজাহ।
(এবং) অন্যান্য হাদীসের কিতাবগুলো যেমন, সুনানে দারেমি, মুসনাদে আহমাদ বাইহাক্বী ও সহীহ ইবনে খুজাইমা।
এই সমস্ত কিতাবের সবগুলো হাদিসে কারিমা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, কোনটা সহীহ, কোনটা জাল বা জয়ীফ বিস্তারিত ‘তাহকীক’ সহ।
(৩) পাঁচটি কিতাব সম্পর্কে জ্ঞানঃ
উপরে বর্ণিত হাদীসের কিতাবগুলো থেকে সংকলন করা গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদীস নিয়ে পাঁচ জন ইমামের লিখিত পাঁচটি কিতাব সম্পর্কে একজন আলেম এর ইলম থাকা জরুরী। সেই কিতাবগুলো হচ্ছে –
ক. বুলুগুল মারআ’ম মিন আদিল্লাতীন আহকাম।
খ. উমদাতু আল-আহকাম
গ. আল মোহাররার হাদিসিল আহকাম।
ঘ. আল ইলমাম।
ঙ. মিশাকাতুল মাসাবিহ
(৪) উসুলে হাদিসের ইলম বা হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞান
(৫) উসুলে ফিকহের ইলম বা ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞান
(৬) আরবি গ্রামার এর ইলম
(৭) নাসেখ, মানসুখের ইলম
(৮) নাহু ছরফের ইলম
(৯) ইজমা এ উম্মাহ বা উম্মতের ঐক্যমতের দলিল জানা ইত্যাদি
সমাপ্ত
পরিশেষে বলছি, এই গুণগুলোর অধিকারী এমন ব্যক্তি যাকে একজন ‘আলেম’ হিসাবে মানা যায়, আমাদের দেশে এই রকম কেউ আছে বলে আমি (আব্দুর রাকীব বুখারী) জনিনা।
.
লেখাটা এডমিন কর্তৃক কিছুটা সম্পাদিত। আপনারা আরো জানার জন্য শায়খের এই লেকচারটা দেখুন –
“আলেম কাকে বলে এবং আলেমদের পরিহাস করা কেমন?”
https://www.youtube.com/watch?v=byX8867pyvk&feature=youtube_gdata_player

 

>>>কৃতজ্ঞতাঃ- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও<<<