প্রত্যেক মুসলিমদের তিনটি মূলনীতি জানা অবশ্য কর্তব্য।

সেই মূলনীতি তিনটি কি কি?

যে তিনটি মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা, সেগুলো কার্যে পরিণত করা তথা বাস্তবায়ন করা প্রত্যেক মুসলিমদের অবশ্য কর্তব্য (ফরয)

সে তিনটি মূলনীতি হলো :
(১)প্রত্যেক মুসলিমদের উপর অবশ্য তার একমাত্র রবের পরিচয় লাভ করা এবং এককভাবে তারই এবাদত করা।
(২) তাঁর মনোনীত একমাত্র দ্বীন-ইসলামের পরিচয় লাভ করা
(৩) তাঁর সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবন ও কর্ম পরিচয় লাভ করা।

১) রবের পরিচয়ঃ
=============
আমাদের একমাত্র রব হলেন আল্লাহ্। যিনি আমাকে এবং সমগ্র বিশ্বকে তাঁর অশেষ নিয়ামাত (দান ও অনুগ্রহ) দ্বারা প্রতিপালন করছেন। তিনিই হলেন আমাদের একমাত্র সার্বভৌম মালিক, সার্বভৌম আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা, তিনি ব্যতীত দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা লাভের সত্তা আর কেউ নেই।

এ কথার প্রমাণ হলো আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র এ বাণী:
“যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্ তা‘আলার, যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের রব্ব।” (সূরা আল ফাতিহা ১:১)
একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যতীত সকল কিছুই হলো তাঁর সৃষ্টি। আসমান ও জমীনের মধ্যবর্তী যা কিছু রয়েছে সে সবের দ্বারা আমরা আমাদের মহান রব্বের পরিচয় লাভ করেছি।
কুরআনুল কারীমের সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে রয়েছে রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদাহ করো না, চন্দ্রকেও না। তোমরা সিজদাহ করো সেই আল্লাহকে যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা বাস্তবিকই কেবল তাঁরই ইবাদাতকারী হও।” (ছূরা হা-মীম আস সিজদাহ/ফুসসিলাত ৪১:৩৭)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরো ইরশাদ করেছেন:
“প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ই তোমাদের রব্ব, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি রাতকে দিনের উপর সমাচ্ছন্ন করে দেন এমতাবস্থায় যে, রাত দ্রুত গতিতে দিনের অনুসরণ করে চলে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র, এগুলো তাঁর নির্দেশে পরিচালিত। জেনে রাখো, সৃষ্টি করা এবং আদেশ প্রদানের মালিক তিনিই। আল্লাহ্ বরকতময় যিনি বিশ্ব জগতের রব্ব।” (সূরা আল আ‘রাফ ৭:৫৪)

-রব্ব বলতে বুঝায়: সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা, শৃংখলা বিধানকারী, পূর্ণতাদানকারী, হাশরের ময়দানে একত্রে জমাকারী, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, বিধানদাতা, নিরংকুশ কর্তা, মালিক, প্রভু, প্রতিপালক।

সমগ্র সৃষ্টি দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনার মাধ্যমে শুধুমাত্র রব্বেরই ইবাদাত করা।
এ মর্মে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র এ বাণী:
“হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের রব্বের ইবাদাত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। আশা করা যায় তাতে হয়তো তোমরা তাক্ওয়া অর্জন করতে পারবে।” (সূরা আল বাক্বারাহ ২:২১)
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার রব্ব এবং তোমাদেরও রব্ব; কাজেই তোমরা তাঁর ইবাদাত করো। এটিই সরল-সঠিক পথ। (সূরা আলে ইমরান ৩:৫১, সূরা মারিয়াম ১৯:৩৬, সূরা যুখরুফ ৪৩:৬৪)

ইবাদাত বলতে কি বুঝায়?
—————————————–
-ইবাদাত হলো চুড়ান্ত বিনয় ও বশ্যতা প্রদর্শন, দাসত্ব, আনুগত্য ও উপাসনা এবং সাথে সাথে যার প্রতি এরূপ বশ্যতা ও বিনয় প্রদর্শন করা হবে, যার দাসত্ব, আনুগত্য ও উপাসনা করা হবে তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ ভালবাসা ও সুগভীর আন্তরিক সম্পর্ক পোষণ। অন্য কথায়, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন, দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্য যতসব কাজ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ভালবাসেন বা পছন্দ করেন সেসব কাজের সামষ্টিক নাম হলো ইবাদাত। আর সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র মহান রব্ব আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র জন্যই সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত।

এ কথার প্রমাণ হলো আল্লাহ্ তা‘আলা’র এ বাণী:
“এবং নিশ্চয়ই মাসজিদ সমূহ আল্লাহ’র জন্যে, সুতরাং তোমরা আল্লাহ’র সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” (সূরা আল জ্বিন ৭২:১৮)
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরো ইরশাদ করেছেন:
“তোমার রব্ব ফায়সালা করে দিয়েছেন যে, তোমরা একমাত্র তাঁর ইবাদাত ব্যতীত আর কারো ইবাদাত করো না।” (সূরা বণী ইসরাঈল ১৭:২৩)
‘আমি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদাত করার জন্য।’ (সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬)
“(হে নবী!) বলো, হে আহলে কিতাবরা! এসো এমন একটি কথার ওপর আমরা একমত হই, যে ব্যাপারে তোমাদের ও আমাদের মাঝে কোন বিরোধ নেই। তা হলো- আমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত-দাসত্ব, আনুগত্য ও উপাসনা করবো না। তার সাথে কাউকে শরীক করবো না। আর আমরা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে রব্ব হিসেবে গ্রহণ করবো না।” (সূরা আলে-ইমরান ৩:৬৪)

(২)তাঁর মনোনীত একমাত্র দ্বীন-ইসলামের পরিচয় লাভ করা
=========================================
-আমাদের দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার নাম হল ইসলাম। ইসলাম মানে হল, আল্লাহকে ভয় করে, তাঁর প্রতি ভালবাসা রেখে এবং তাঁর কাছেই আশা ও আকাংখা নিয়ে পরিপূর্ণভাবে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।

ইসলাম কাকে বলে?
——————————
ইসলাম অর্থ, আত্মসমর্পন। পরিভাষায়ঃ তাওহীদ ও আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করা এবং শির্ক ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা।

আমাদের কর্তব্য হল, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করব যাতে সবটুকু ইবাদত শুধু তাঁর জন্যই নিবেদিত হয়। অন্য কোন সৃষ্টিকে তাঁর সাথে শরীক বা অংশিদার করা না হয়।

ইসলামের মূল স্তম্ভ কয়টি ও কী কী?
—————————————————
ইসলামের মূল স্তম্ভ ৫টি। সেগুলো হলঃ
১) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল- এ কথার স্বীকৃতি প্রদান করা।
২) নামায প্রতিষ্ঠা করা।
৩) যাকাত আদায় করা।
৪) রামাযান মাসে রোযা পালন করা।
৫) যে ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম তার জন্য হজ্জ সম্পাদন করা।

৩) তাঁর সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবন ও কর্ম পরিচয় লাভ করা।
=====================================
-আমার নবী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আবদে মানাফ। তাঁকে আল্লাহ ইসমাঈল-এর উত্তরসূরী কুরাইশ বংশ থেকে মনোনীত করে মানব এবং জিন জাতির নিকট নবী হিসাবে প্রেরণ করেন। আর তার উপর অবতীর্ণ করেন অহি। ফলে তিনি মানুষকে একমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত করার উদাত্ত আহ্বান জানান। পক্ষান্তরে আল্লাহ ছাড়া তারা যেসব প্রতিমা, পাথর, গাছ-গাছালি, নবী-রাসূল, নেককার ব্যক্তি, ফেরেশতা ইত্যাদির ইবাদত করত, তা ছেড়ে দিতে আহ্বান জানান। এক কথায় তিনি শির্ক বর্জন করে খালেছ তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

সাথে সাথে তিনি একথাও ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কল্যাণ সাধন বা অকল্যাণ দূরীকরণে সক্ষম নন।
মহান আল্লাহ বলেন,
“কে নিরূপায়ের ডাকে সাড়া দেন, যখন সে ডাকে এবং কে কষ্ট দূরীভূত করেন? আর কে তোমাদেরকে পৃথিবীতে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? সুতরাং আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর” (নামল ৬২)। অনুরূপভাবে তিনি মানুষকে একথাও অবগত করেছেন যে, কল্যাণ সাধন এবং অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্‌র নিকটেই। এক্ষেত্রে নবী-রাসূল, ফেরেশতামণ্ডলী, অলী-আউলিয়া কারো কোনো ক্ষমতা নেই। এরশাদ হচ্ছে,
“আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ্‌র ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয়ও অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফেরেশতা”(আন‘আম ৫০)।

নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এ সর্ম্পকে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক-

১. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম)নূর থেকে সৃষ্টি নয়,
আদম সন্তান যে উপাদানে সৃষ্টি, তিনিও সেই উপাদানে সৃষ্টি।(সূরা কাহাফঃ ১১০)
২. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম)
কোন গায়েব জানতেন না। (সূরা আনআমঃ ৫০)

৩. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম)জীবিত নয়, তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। সূরা যুমারঃ৩০)

৪. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) হাযের-নাযের (অর্থাৎ সবখানে তিনি উপসি’ত হতে পারেন, এরূপ বিশ্বাস করা কুফরী।

৫. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) কারো উপকার-অপকারের ক্ষমতা রাখেন না। (সূরা জিনঃ ২১)