পরিবর্তনের দিকে প্রভাবিত হলে সমাজে যেসব বাঁধাবিপত্তি এসে দাড়ায়

সচরাচর পরিবর্তন, সংশোধন , ইস্লা শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ,
মূলত পরিবর্তন বলতে সব সময় ভাল কিছুর দিকে ইঙ্গিত করে যেমন, পরিবর্তন হবে, হয়ে যাবে, হতে হবে ইত্যাদি । কিন্তু পরিবর্তনের দিকে প্রভাবিত হলে সমাজে অনেক বাঁধাবিপত্তি এসে দাড়ায় , যেমন

আপনি পূর্বে খারাপ ছিলেন আর বর্তমানে ভালোর দিকে আগ্রসর হচ্ছেন ‘এই পরিবর্তন ভাল চিন্তার মানুষের মধ্যে সমস্যা দেখা না দিলেও এমন কিছু সমালোচক আছে যারা কথায় কথায় বলে ‘ দুই দিন হয়নাই ভাল হয়েছো অথবা বলে এখন সূফী হয়েছে অথবা বলে অনেক দেখেছি দুইদিন পর যে লাউ সেই কদু; ইত্যাদি।

অথচ এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,”কোন মানুষের অমঙ্গলের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে নিজ মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করবে”(মুসলিম)।

এই সব নিরুৎসাহিত কথা সব সময় একজন পরিবর্তনশীল মানুষের জজবা ধ্বংস করতে থাকে। এই ধ্বংসের ভার অনেকে কঠিন হয়ে যায় অনেকে ভেঙ্গে চুরমাচুর হয়ে পরিবর্তন থেকে পালিয়ে বেড়ায়।
সেই সব সমালোচক অন্যের সমালোচনা ঠিকই করে নিজেরটা দেখেওনা নিজে পরিবর্তনও হয়না। তাদের মুল রোগ হচ্ছে প্রতিহিংসা, অহংকার, গীবত ।

 প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা একে অপরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ কর না” (বুখারী)।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন,
“دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الْأُمَمِ قَبْلَكُمْ اَلْبَغْضَاءُ وَالْحَسَدُ وَالْبَغْضَآءُ هِىَ الْحَالِقَةُ, لَيْسَ حَالِقَةُ الشَّعْرِ, وَلَكِنَّ حَالِقَةَ الدِّيْنِ”
(أحمد, ترمذى, صحيح الجامع رقمالحديث ৩৩৬১).
অর্থঃ “তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করেছে তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির রোগ তথা হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা। আর এ ঘৃণাবোধ হলো মুণ্ডনকারী বিষয়। এটা চুল মুণ্ডনকারী নয়; বরং দ্বীন অর্থাৎ ইসলাম ধর্মকে মুণ্ডনকারী”
(আহমাদ, তিরমিযী, ছহীহুল জামে হাদীছ নং ৩৩৬১)।

#অথচ আরেকজনের পরিবর্তনে বাঁধা দিতে গিয়ে নিজের ঠিকানা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া মানে তার পরিবর্তন হওয়ার মানষিকতা নেই ।

অর্থাৎ খেল-তামাসা ও ঠাট্টা-মশকারা করতে গিয়ে বিনা প্রয়োজনে অনেক সময় মানুষ অন্য লোকের দোষ বর্ণনা করতে থাকে। আবার অনেকে এই সমালোচনা দ্বারা নিজের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করে থাকে।

নাবী কারীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম) এই ধরণের লোকদের সম্পর্কে বলেছেন,
“وَيْلٌ لِلَّذِىْ يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ”
(أحمد,أبوداد, ترمذى, حاكم, صحيح الجامع رقم الحديث ৭১৩৬).
অর্থঃ “দুর্ভোগ ঐ ব্যক্তির জন্য, যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। দুর্ভোগ তার, দুর্ভোগ তার”
(আহমাদ, আবূদাঊদ, তিরমিযী, হাকেম, ছহীহুল জামে হাদীছ নং ৭১৩৬)।

#অথচ ইসলামী শরী’আত মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। আর সেই সাথে সাথে ইসলামী শরী’আত ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব নষ্টকারী সকল কর্ম হ’তে বিরত থাকতে সকলকে জোর তাকীদ দিয়েছে। সমাজে যে সব বিষয়ে ফাটল ধরাতে আর ঐক্যের সিসাঢালা প্রাসাদকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে পারে এমন বিষয়গুলির অন্যতম হলো ‘গীবত’ বা ‘পরনিন্দা’।

আর এই গীবতের মাধ্যমেই শয়তান মানব সমাজে ফাটল ধরিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿وَيْلُ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ﴾
অর্থঃ “পিছনে ও সামনে পরনিন্দাকারীদের জন্য দুর্ভোগ” (হুমাযাহ,১)।

পবিত্র কুরআন ও হাদীছে এই ঘৃণিত আচরণ সম্পর্কে মানুষদেরকে বিভিন্নভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
হিংসা বা রাগ ও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে অনেকে গীবত করে থাকে। অথচ রাগ দমন করা একটি মহৎ গুণ।

#এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ﴾
(آل عمران :১৩৪)
অর্থঃ “যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় দান করে থাকে, ক্রোধকে সংবরণ করে থাকে আর মানুষের অপরাধকে মার্জনা করে থাকে, মহান আল্লাহ এই জাতীয় সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন” (আলে-ইমরান,১৩৪)।

#রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি (কোন বিষয়ে রাগ হ’লে) তার রাগকে দমন করে নিবে অথচ সে ঐ বিষয়ে তার রাগকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, একারণে আল্লাহ তা’আলা পরকালে তাকে সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে ডেকে “হুরদের ব্যাপারে তাকে স্বাধীনতা দিবেন। সে যত সংখ্যক হুর চাইবে আল্লাহ তা’আলা তাকে তাদের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন”
(সুনান চতুষ্টয়, মুসনাদে আহমাদ, ত্বাবারাণী, ছাগীর, ছহীহুল জামে হাদীছ নং ৬৫২২)।

তাহলে কি পরিবর্তন হবোনা? অবশ্যয় হবো কাওকে দেখানোর জন্যনা , একমাত্র আল্লাহ্‌কে রাজি-খুশির উদ্দেশ্যে আমরা নিজেদের পরিবর্তন করবো ইন-শাহ –আল্লাহ্‌
আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন – আমিন

 

কৃতজ্ঞতাঃ এহসানুল করিম ভাই