নিজের মন্দ আচরণ থেকে লোকেদের মুক্ত রাখাও সাদাকাহ

নিজের মন্দ আচরণ থেকে লোকেদের মুক্ত রাখাও সাদাকাহঃ-

আবূ রাবী’ আয যাহরানী এবং খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) ….. আবূ যার (রাযিঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সর্বোত্তম ‘আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। আমি আবার প্রশ্ন করলামঃ কোন ধরনের গোলাম আযাদ করা উত্তম? তিনি বললেন, সে গোলাম আযাদ করা উত্তম যে মুনিবের কাছে অধিক প্রিয় এবং অধিক মূল্যবান। আমি আরজ করলাম, আমি যদি তা করতে না পারি। তিনি বললেন, তাহলে অন্যের কর্মে সাহায্য করবে অথবা কর্মহীনের কাজ করে দিবে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমি এমন কোন কাজ করতে অক্ষম হই? তিনি বললেন, তোমার মন্দ আচরণ থেকে লোকেদের মুক্ত রাখবে। এ হলো তোমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি সাদাকাহ।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমীঃ ১৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ . ১৫২, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৫৮)

জিহাদের নামে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা কবীরা গুনাহ। আর এধরনের কাজে লিপ্ত ব্যক্তি জান্নাত তো দুরের কথা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। বরং জাহান্নাম তাদের ঠিকানা। বিস্তারিত –

ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ….. আনাস (রাযিঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কাবীরাহ গুনাহ সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তা হলো, আল্লাহর সাথে শারীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমীঃ ১৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬২, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৬৮)

হারূন ইবনু সাঈদ আল আইলী (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ধ্বংসকারী সাতটি কাজ থেকে তোমরা বেঁচে থেকো। প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন : (১) আল্লাহর সাথে শারীক করা; (২) যাদু করা; (৩) আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা; (৪) ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা; (৫) সুদ খাওয়া; (৬) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা এবং (৭) সাধবী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা। (সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমীঃ ১৬৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৬৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৭০)

আহনাফ ইবনু কায়স (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (সিফফীনের যুদ্ধে) এ ব্যক্তিকে [আলী (রাযি.)-কে] সাহায্য করতে যাচিছলাম। আবূ বাকরাহ্ (রাযি.)-এর সঙ্গে আমার দেখা হলে তিনি বললেনঃ ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ আমি বললাম, ‘আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছি।’ তিনি বললেনঃ ‘ফিরে যাও। কারণ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, দু’জন মুসলমান তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল্! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী), কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন, (নিশ্চয়ই) সেও তার সাথীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), অধ্যায়ঃ ২/ঈমান (বিশ্বাস), হাদিসঃ ৩১, মুসলিম ৫২/৪ হাঃ ২৮৮৮, আহমাদ ২০৪৪৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৯)

যুবায়দ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবূ ওয়াইল (রহ.)-কে মুরজিআ’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, ‘‘আবদুল্লাহ (ইব্ন মাস‘ঊদ) আমার নিকট বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), অধ্যায়ঃ ২/ঈমান (বিশ্বাস), হাদিসঃ ৪৮, মুসলিম ১/২৮, হাঃ ৬৪, আহমাদ ৩৬৪৭ ) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬)

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে-ই মুসলিম, যার জিহ্বা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে। [সহীহ বুখারী, প্রথম খণ্ড, হাদিস নং- ১০; তাওহীদ পাবলিকেশন]

কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

… যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। তাদের কাছে আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছেন। বস্তুতঃ এরপরও তাদের অনেক লোক পৃথিবীতে সীমাতিক্রম করে। (…whoever kills a soul unless for a soul or for corruption [done] in the land – it is as if he had slain mankind entirely. And whoever saves one – it is as if he had saved mankind entirely. And our messengers had certainly come to them with clear proofs. Then indeed many of them, [even] after that, throughout the land, were transgressors.) [সূরা আল-মায়িদাহঃ ৩২]

আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না। (And if any one of the polytheists seeks your protection, then grant him protection so that he may hear the words of Allah. Then deliver him to his place of safety. That is because they are a people who do not know.) [সূরা আত-তউবাঃ ৬]

নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। [সূরা আল-বাকারাঃ ২৭৭]