নারীর শারীরিক সৌন্দর্য গ্রহণ করার বিধান

নারীর শারীরিক সৌন্দর্য গ্রহণ করার বিধান:-

১. নারীরা তাদের শরীর ও নারীত্বের সাথে উপযোগী সৌন্দর্য গ্রহণ করবে:
যেমন, নখ কাটা বরং নিয়মিত নখ কাটা সকল আহলে ইলমের ঐকমত্যে বিশুদ্ধ সুন্নত এবং হাদীসে বর্ণিত মনুষ্য স্বভাবের দাবি এটিই। অধিকন্তু নখ কাটা সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা এবং নখ না-কাটা বিকৃতি ও হিংস্র প্রাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অনেক সময় লম্বা নখের অভ্যন্তরে ময়লা জমে তাই সেখানে পানি পৌঁছায় না। কতক মুসলিম নারী কাফেরদের অনুকরণ ও সুন্নত না-জানার কারণে নখ লম্বা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলেছে যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
নারীর বগল ও নাভির নিচের পশম দূর করা সুন্নত। কারণ, হাদীসে তার নির্দেশ রয়েছে, এতেই তাদের সৌন্দর্য। তবে উত্তম হচ্ছে প্রতি সপ্তাহ পরিচ্ছন্ন হওয়া, অন্যথায় চল্লিশ দিনের ভেতর অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হওয়া।

২. নারীর মাথার চুল, চোখের ভ্রু, খেযাব ও রঙ ব্যবহার করার বিধান:

ক. মুসলিম নারীর মাথার চুল বড় করা ইসলামের দাবি, বিনা প্রয়োজনে মাথা মুণ্ডন করা হারাম।
সৌদি আরবের মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ. বলেন: “নারীর চুল কাটা বৈধ নয়। কারণ, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইমাম নাসাঈ স্বীয় সুনান গ্রন্থে, উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইমাম বাযযার স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে এবং ইকরিমাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইবন জারির তাবারি স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে মাথা মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন”।[তিরমিযি: (৯১৪), নাসাঈ, হাদীস নং৫০৪৯)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিষেধাজ্ঞার অর্থ হারাম, যদি তার বিপরীত দলীল না থাকে।
মোল্লা আলী ক্বারী মিশকাতের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাত’-এ বলেন: “নারীর মাথা মুণ্ডনের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণ: পুরুষের পুরুষত্ব ও সৌন্দর্যের জন্য দাঁড়ি যেরূপ নারীর নারীত্ব ও সৌন্দর্যের জন্য চুল/মাথার বেণী সেরূপ”।[মাজমুউল ফতোয়া শাইখ ইবরাহীম ইবন মুহাম্মাদ: (২/৪৯)]
মাথার চুল কাঁটা যদি সৌন্দর্য ছাড়া কোনো প্রয়োজনে হয়, যেমন চুল বহন করা কঠিন ঠেকে অথবা বেশি বড় হওয়ার কারণে পরিচর্যা করা কষ্টকর হয়, তাহলে প্রয়োজন মোতাবেক কাটা সমস্যা নয়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তার কতক স্ত্রী চুল ছোট করতেন। কারণ, তার মৃত্যুর পর তারা সৌন্দর্য পরিহার করতেন, তাই চুল বড় রাখা তাদের প্রয়োজন ছিল না।
নারীর চুল কাটার উদ্দেশ্য যদি হয় কাফির ও ফাসিক নারী বা পুরুষদের সাথে সামঞ্জস্য গ্রহণ করা, তাহলে নিঃসন্দেহে তা হারাম। কারণ, কাফিরদের সামঞ্জস্য গ্রহণ না করাই ইসলামের সাধারণ নির্দেশ। অনুরূপ নারীদের জন্য পুরুষদের সামঞ্জস্য গ্রহণ করা হারাম, যদি সৌন্দর্যের উদ্দেশ্য গ্রহণ করা হয় তবুও হারাম।
আমাদের শাইখ মুহাম্মাদ আমীন শানকিতি রহ. ‘আদওয়াউল বায়ান’ গ্রন্থে বলেন: “অনেক দেশে নারীরা মাথার কাছ থেকে চুল কাঁটার যে অভ্যাস গড়ে নিয়েছে -তা পশ্চিমা ও ইউরোপীয় রীতি। এ স্বভাব ইসলাম ও ইসলাম পূর্ব যুগে আরবদের নারীদের ছিল না। উম্মতের মাঝে ধর্মীয়, চারিত্রিক ও বৈশিষ্ট্যে সেসব বিকৃতি ও পদস্খলন মহামারির আকার ধারণ করেছে এটা তারই অংশ। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত হাদীস সম্পর্কে বলেন:
»أن أزواج النبي صلى الله عليه وسلم يأخذن من رؤوسهن حنى تكون كالوفرة«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ কানের লতি পর্যন্ত তাদের মাথার চুল কর্তন করতেন”।[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২০]
এরূপ করেছেন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর, তার জীবিতাবস্থায় তারা সৌন্দর্য গ্রহণ করতেন, যার অন্যতম অংশ ছিল চুল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তাদের জন্য বিশেষ বিধান হয়, যে বিধানে পৃথিবীর কোনো নারী তাদের শরীক নয়। সেটা হচ্ছে বিবাহের আশা তাদের একেবারেই ত্যাগ করা। এমনভাবে ত্যাগ করা যে, কোনো অবস্থায় বিবাহ সম্ভব নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তারা আমৃত্যু ইদ্দত পালনকারী নারীর মত ছিলেন। ইদ্দত পালনকারী নারীর মতো তাদের পক্ষে বিবাহ করা বৈধ ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَا كَانَ لَكُمۡ أَن تُؤۡذُواْ رَسُولَ ٱللَّهِ وَلَآ أَن تَنكِحُوٓاْ أَزۡوَٰجَهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦٓ أَبَدًاۚ إِنَّ ذَٰلِكُمۡ كَانَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمًا﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া এবং তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
অতএব, একেবারে পুরুষদের সঙ্ঘ থেকে নিরাশ হওয়ার ফলে সৌন্দর্য গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাদের কিছুটা ছাড় রয়েছে, যেভাবে নিরাশ হওয়া অন্যান্য নারীদের জন্য বৈধ নয়।[আদওয়াউল বায়ান: (৫/৫৯৮-৬০১) স্বামী যদি চুল কাঁটার নির্দেশ দেয় তবুও তার পক্ষে চুল কাঁটা বৈধ নয়, কারণ স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোনো অনুকরণ নেই।]
তাই নারীর ওপর কর্তব্য হচ্ছে, মাথার চুল সংরক্ষণ করা, চুলের যত্ন নেওয়া ও লম্বা বেণী বানিয়ে রাখা, মাথার ওপর বা ঘাড়ে জমা করে রাখা নিষেধ।
শাইখুল শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন: “কতক অসৎ নারী দুই কাঁধের মাঝে চুলের একটি খোঁপা বা বেণী বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখে”।[ মাজমুউল ফতোয়া: (২২/১৪৫)]
সৌদি আরবের মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ. বলেন: “এ যুগে কতক মুসলিম নারী, মাথার চুলকে যেভাবে একপাশে নিয়ে ঘাড়ের নিকট খোপা বানিয়ে রাখে অথবা মাথার ওপর স্তূপ করে রাখে, যেরূপ পশ্চিমা ও ইউরোপীয় নারীরা করে তা বৈধ নয়। কারণ, এতে কাফিরদের নারীদের সাথে সামঞ্জস্য হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত একটি লম্বা হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا«
“দু’প্রকার জাহান্নামী লোক যাদের আমি এখনো দেখি নি: এক প্রকার লোকের সাথে গরুর লেজের ন্যায় লাঠি থাকবে, তা দিয়ে তারা মানুষদের পেটাবে। আর পোশাক পরিহিত বিবস্ত্র নারী, তারা নিজেরা ধাবিত হয় ও অপরকে ধাবিত করে। তাদের মাথা উটের ঝুঁকে পড়া কুজের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার গন্ধও পাবে না, যদিও তার গন্ধ এত এত দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়”।[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১২৮; আহমদ (২/৪৪০); ইমাম মালিক, হাদীস নং ১৬৯৪]
“ধাবিত হয় ও ধাবিত করে” কথার ব্যাখ্যায় কতক আলেম বলেন: “তারা নিজেরা এমনভাবে চিরুনি করে যা আবেদনময়ী ও অপরকে আকৃষ্টকারী এবং অপরকেও তারা সেভাবে চিরুনি করে দেয়, যা নষ্ট নারীদের চিরুনি করার রীতি। পশ্চিমা নারী এবং তাদের অনুসারী বিপথগামী মুসলিম নারীদের চিরুনি করার এটিই রীতি।[মাজমুউল ফতোয়া: (২/৪২), আরো দেখুন: ঈদাহ ও আত-তাবঈন: (পৃ. ৮৫) লি শাইখ হামুদ তুওয়াইজিরি।]
যেরূপ নিষেধ বিনা প্রয়োজনে মুসলিম নারীর মাথার চুল কর্তন অথবা ছোট করা, সেরূপ নিষেধ তার চুলের সাথে অপরের চুল যুক্ত করা ও অপরের চুল দ্বারা তার চুল বর্ধিত করা। কারণ, সহীহ বুখারী বুখারী ও মুসলিমে এসেছে:
»لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم الواصلة والمستوصلة«
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াসিলাহ ও মুসতাওসিলাহকে অভিসম্পাত করেছেন”।[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১২৪; তিরমিযী, হাদীস নং ১৭৫৯, নাসাঈ, হাদীস নং ৫০৯৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৬৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৯৮৭; আহমদ (২/২১)]
‘ওয়াসিলাহ’ সে নারীকে বলা হয়, যে নিজের চুলের সাথে অপরের চুল যোগ করে, আর যে নারী চুল যোগ করার কাজ করে তাকে বলা হয় মুসতাওসিলাহ। এ কাজ ও পেশায় মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা হয় তাই হারাম। চুল যোগ করার পর্যায়ে পড়ে বারুকা তথা ‘পরচুলা’ পরিধান করা। বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেন: মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মদিনায় এসে খুৎবা প্রদান করেন, তখন তিনি চুলের একটি খোঁপা অথবা চুলের কিছু অংশ বের করেন এবং বলেন: তোমাদের নারীদের কী হলো, তারা তাদের মাথা এরূপ করে? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
»مَا مِنِ امْرَأَةٍ تَجْعَلُ فِي رَأْسِهَا شَعْرًا مِنْ شَعْرِ غَيْرِهَا، إِلا كَانَ زُورًا«
“যে কোনো নারী নিজের মাথায় অপরের চুল রাখবে সে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণকারী”।
‘বারুকা’ বা ‘পরচুলা’ একপ্রকার কৃত্রিম চুল, যা দেখতে মাথার চুলের ন্যায়। এগুলো পরিধান করাও মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করার শামিল।

খ. চেঁছে অথবা ছেঁটে অথবা লোম নাশক দ্রব্য ব্যবহার করে ভ্রুর পশম সম্পূর্ণ বা আংশিক দূর করা মুসলিম নারীর জন্য হারাম।
কারণ, এটাকে আরবিতে ‘নামস’ বলে, যা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারণ করেছেন। ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেন:
»لعن صلى الله عليه وسلم النامصة والمتنمصة«
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামিসাহ ও মুতানাম্মিসাহকে লা‘নত করেছেন”।[নাসাঈ, হাদীস নং ৫১০১]
‘নামিসাহ’ সে নারীকে বলা হয়, যে নিজের ধারণায় সৌন্দর্য চর্চা করতে গিয়ে পূর্ণ ভ্রু বা আংশিক ভ্রু ফেলে দেয়। আর যে এ কাজ করে তাকে ‘মুতানাম্মিসাহ’ বলা হয়। এ জাতীয় কাজ আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনার শামিল, যা থেকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে, আর শয়তান বনী আদমকে দিয়ে এ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করার প্রতিজ্ঞা করে এসেছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَأٓمُرَنَّهُمۡ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلۡقَ ٱللَّهِۚ﴾ [النساء: ١١٩]
“আমরা অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ করব, যেন তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৯]
অনুরূপ সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»لعن الله الواشمات والمستوشمات والنامصات والمتنمصات والمتفلجات للحسن، المغيرات خلق الله«
“আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন উল্কি গ্রহণকারী ও উল্কি অঙ্কনকারী। কৃত্রিম চুল সংযোগকারী ও কৃত্রিম চুল সংযোজন পেশায় নিয়োজিত নারীকে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত ফাঁক করে, আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে”।[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১২৫; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৮২; নাসাঈ হাদীস নং ৫০৯৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৬৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৯৮৯; আহমদ (১/৪৩৪), দারেমী, হাদীস নং ২৬৪৭]
অতঃপর ইবন মা‘সউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে লা‘নত করেছেন আমি কি তাদেরকে লা‘নত করব না অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার নির্দেশ আল্লাহর কিতাবে রয়েছে?! আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْ﴾ [الحشر: ٧]
“আর রাসূল যা তোমাদেরকে দিয়েছে তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তিনি তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন, তোমরা (তা থেকে) বিরত থাক”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]
ইবন কাসির রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে এ আলোচনা করেছেন।[ (২/৩৫৯), দারুল উন্দুলুস প্রকাশিত।]
বর্তমান যুগে বিপদজনক এ কবিরাহ গুনাহতে অনেক নারীই লিপ্ত, কৃত্রিম চুল সংযোজন করা তাদের নিত্যদিনের সাজ-সজ্জার অন্তর্ভুক্ত। অথচ এ জাতীয় কর্মের নির্দেশ যদি স্বামী করে, তবুও তার অনুসরণ করা বৈধ নয়। কারণ, এটা পাপ।

গ. সৌন্দর্যের জন্য মুসলিম নারীর দাঁত ফাঁক করা হারাম।
যেমন, সুন্দর করার উদ্দেশ্যে রেত দিয়ে ঘষা, যাতে দাঁত সামান্য ফাঁক হয়। হ্যাঁ, দাঁত যদি বক্র হয় ও তাতে বিকৃতি থাকে, তবে অপারেশন দ্বারা ঠিক করা বৈধ। অথবা দাঁতে পোকা হলে দূর করা দুরস্ত আছে। কারণ, এটা চিকিৎসা ও বিকৃতি দূর করার শামিল, যা দন্ত চিকিৎসকের কাজ।

ঘ. শরীরে উল্কি আঁকা নারীর জন্য হারাম।
কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্কি গ্রহণকারী ও উল্কি অঙ্কনকারী উভয়কে লা‘নত করেছেন। হাদীসে অভিশপ্ত الواشمة ‘ওয়াশিমা’ ঐ নারীকে বলা হয়, যে সুঁই দ্বারা হাত অথবা চেহারা ছিদ্র করে, অতঃপর তা সুরমা বা কালি দিয়ে ভরাট বা ফিলিং করে দেয়, আর অভিশপ্ত المستوشمة ঐ নারীকে বলা হয়, যার সাথে এসব করা হয়। এ জাতীয় কাজ হারাম ও কবিরা গুনাহ। এসব গ্রহণকারী ও সম্পাদনকারী উভয়কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন, আর কবিরা গুনাহ ব্যতীত কোনো গুনাহর জন্য লা‘নত করা হয় না।

ঙ. নারীদের চুল রঙিন করা এবং স্বর্ণ ও খেজাব ব্যবহার করার বিধান:

১. খেযাব বা মেহেদির ব্যবহার:
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. বলেন: “বিবাহিত নারীর দুই হাত ও দুই পা মেহেদী দ্বারা খেযাব করা মুস্তাহাব। কারণ, এ মর্মে অনেক প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে”।[আল-মাজমু: (১/৩২৪)] প্রসিদ্ধ হাদীস দ্বারা তিনি আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসের দিকে ইঙ্গিত করেছেন:
»أن امرأة سألت عائشة رضي الله عنها عن خضاب الحناء، فقالت: لا بأس به، ولكني أكرهه، كان حبيبي رسول الله صلى الله عليه وسلم يكره ريحه«
“জনৈকা নারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মেহেদীর খেজাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি বলেন: এতে সমস্যা নেই, তবে আমি তা পছন্দ করি না। কারণ আমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পছন্দ করতেন না”।[আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৬৪, নাসাঈ, হাদীস নং ৫০৯০; আহমদ: (৬/১১৭)]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ‘আনহা থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন:
»أومأت امرأة من وراء ستر – بيدها كتاب – إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقبض النبي صلى الله عليه وسلم يده وقال: ما أدري أيد رجل أم يد امرأة ؟ قالت: بل يد امرأة: قال: لو كنت امرأة لغيرت أظفارك – يعني: بالحناء«
“জনৈকা নারী হাতে কিতাব নিয়ে পর্দার আড়াল থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে ইশারা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে বলেন: আমি জানি না এটা পুরুষের হাত না নারীর হাত? সে বলল: বরং নারীর হাত। তিনি বলেন: তুমি নারী হলে অবশ্যই তোমার নখ পরিবর্তন করতে- অর্থাৎ মেহেদী দিয়ে”।[নাসাঈ, হাদীস নং ৫০৮৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৬৬; আহমদ (৬/২৬২)]
তবে এমন বস্তু দিয়ে রঙ করবে না, যা জমে যায় ও পবিত্রতা অর্জনে বাঁধা হয়।[উদাহরণত, সেসব রঙ যার দ্বারা রঙ করলে নখের উপর প্রলেপ পড়ে যায় এবং তার অভ্যন্তরে পানি পৌঁছে না। যেমন লখ পালিশ।]

২. নারীর চুল রঙ্গিন করার বিধান:
নারী যদি বৃদ্ধা হয়, তাহলে কালো ব্যতীত যে কোনো রঙ্গ দ্বারা তার চুল রঙ্গিন করা বৈধ। কারণ, কালো রঙ ব্যবহার করা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘রিয়াদুস সালিহীন’ গ্রন্থে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, যার শিরোনাম: “নারী ও পুরুষের চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করা নিষেধ”।[সিয়াদুস সালিহীন: (৬২৬)]
তিনি আল-মাজমু‘ গ্রন্থে বলেন: “নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা নিষেধ, এতে কোনো পার্থক্য নেই। এটিই আমাদের মাযহাব”।[আল-মাযমু: (১/৩২৪)]
যুবতী নারীর কালো চুল অন্য রঙ দ্বারা রঙ্গিন করা আমার দৃষ্টিতে বৈধ নয়, তার কোনো প্রয়োজনও নেই। কারণ, চুলের ক্ষেত্রে কালোই সৌন্দর্য। চুলের কালো রঙ বিকৃতি নয় যে, পরিবর্তন করতে হবে। দ্বিতীয়ত এতে কাফির নারীদের সাথে সামঞ্জস্য হয়।

৩. স্বর্ণ ও রূপার ব্যবহার:
সমাজে প্রচলিত রীতি মোতাবেক স্বর্ণ ও রূপা দ্বারা নারীর সৌন্দর্য গ্রহণ করা বৈধ। এটা আলেমদের ঐকমত্যে। তবে পর-পুরুষের জন্য তার অলঙ্কার প্রকাশ করা বৈধ নয়, তাদের থেকে আড়ালে রাখবে, বিশেষভাবে যখন সে ঘর থেকে বের হয় ও পুরুষদের দৃষ্টির নাগালে থাকে। কারণ, এতে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য নারীর পায়ের নিচে কাপড়ের আড়ালে থাকা অলঙ্কারের আওয়াজও পুরুষকে শুনাতে নিষেধ করা হয়েছে।[আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তারা যেন নিজেদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে”। সূরা নূর: (৩১)] অতএব, প্রকাশ্য অলঙ্কারের হুকুম সহজে অনুমেয়?