দয়া সূলভ ও নম্র আচরণের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কয়েকটি বাণী

দয়া সূলভ ও নম্র আচরণের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কয়েকটি বাণী
?⚪?⚪?⚪?⚪?⚪
?১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আল্লাহ তাআলা দয়ালু, তিনি দয়াশীলতাকে ভালবাসেন। নম্র আচরণে আল্লাহ যা দেন কঠিন আচরণ বা অন্য কোন পন্থায় তা দেন না।”(সহীহ মুসলিম)
?২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রা.কে বলেন: “দয়া সুলভ আচরণ করবে। রূঢ় ও অশালীন আচরণ থেকে দূরে থাকবে। যে কোন জিনিসে ধীরস্থীরতা ও নম্রতা থাকলে তা সৌন্দর্য মণ্ডিত হয়। আর কোন জিনিসে ধীরস্থীরতা ও নম্রতা না থাকলে তার সৌন্দর্য্যহানী ঘটে।” (সহীহ মুসলিম)
?৩) “হে আয়েশা নম্র হও। আল্লাহ তাআলা আহলে বায়ত তথা নবী পরিবারের কল্যাণ চেয়েছেন বিধায় তাদের মধ্যে নম্রতা দিয়েছেন।” (মুসনাদ আহমদ-সহীহ)
?৪) “যার মধ্যে নম্রতা নেই সে সব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।” (সহীহ মুসলিম)
?৫) “যার ভাগ্যে নম্রতা দেয়া হয়েছে সে বিরাট কল্যাণের অধিকারী। আর যার ভাগ্যে নম্রতা দেয়া হয় নি সে অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।” (আহমদ, তিরমিযী। আরনাবুত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
?৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কাজে সাহাবীদেরকে প্রেরণ করলে বলতেন, “তোমরা মানুষকে সু সংবাদ দাও। তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিও না। সহজ ও নম্র আচরণ কর, কঠিন করিও না।” (বুখারী ও মুসলিম)
?৭) তিনি বলেন: “আমি নামায শুরু করার পর ইচ্ছা থাকে নামায লম্বা করব কিন্তু যখন শিশুর কান্নার আওয়াজ কানে আসে তখন নামায তাড়াতাড়ি শেষ করি। কারণ আমি জানি শিশুর আওয়াজে তার মায়ের মানসিক কত কষ্ট হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
??????????

******************************************************************************************************************************************************************************************************************************************************************************************

☄?☄?☄?☄?☄?
?১) আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
“তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী,মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল,দয়াময়।” (সূরা তাওবাঃ ১২৮)
?২) আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে (মদিনার) মসজিদে বসেছিলাম। ইত্যবসরে এক বেদুঈন এসে মসজিদের ভেতর পেশাব করতে লাগল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ (চিৎকার করে): এই…থাম! থাম!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: তোমরা থাম, তার পেশাব বন্ধ কর না।
সাহাবীগণ তাকে পেশাব শেষ করতে দিলেন।
এবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদুঈনকে কাছে ডাকলেন।
অতঃপর বললেন: “মসজিদের ভেতর এভাবে পেশাব-পায়খানা করা বা ময়লা-আবর্জনা ফেলা ঠিক নয়। মসজিদ হল আল্লাহ যিকির-আযকার,নামায ও কুরআন তেলাওয়াতের স্থান।”
আর সাহাবীদেরকে বললেন: তোমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে এজন্য যে,তোমরা সহজ করবে,কঠিন করার জন্য নয়।
বেদুঈন: হে আল্লাহ,আমাকে ও মুহাম্মদকে দয়া কর। আমাদের সাথে আর কাউকে দয়া কর না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: তুমি প্রশস্ত জিনিস কে সংকীর্ণ করে দিলে। (বুখারী ও মুসলিম)
?৩) মুয়াবিয়া বিন হাকাম সুলামী রা. হতে বর্ণিত,তিনি বলেন: আমরা একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে নামায আদায় করছিলাম। হঠাৎ মুসল্লিদের মধ্য থেকে এক লোক হাঁচি দিল।
মুয়াবিয়া রা. (হাঁচির উত্তরে): “ইয়ারহামুকাল্লাহ” (আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন)।
অন্যান্য মুসল্লিগণ আমার এ কাজের প্রতিবাদে সবাই আমার দিকে তাকাতে লাগল।
মুয়াবিয়া (মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে): কী ব্যাপার? আপনারা আমার দিকে তাকাচ্ছেন কেন?
একথা শুনে মুসল্লিগণ তাদের রানের উপর হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগল যাতে সে নামাযে কথা না বলে। যখন তিনি দেখল যে সবাই তাকে চুপ হতে বলছে তখন তিনি চুপ হয়ে গেলেন।
যাহোক এভাবে নামায শেষ হল।
মুয়াবিয়া (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসায়): আমার বাবা-মা তার জন্য উৎসর্গ হোক। আমি তাঁর আগে বা পরে কখনই কোন শিক্ষককে তাঁর চেয়ে উত্তম পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে দেখি নি। কারণ-আল্লাহর কসম করে বলছি-তিনি আমাকে ধমকালেন না, মারলেন না বা গালিও দিলেন না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নামায শেষে): “নামাযের মধ্যে মানুষের কোন কথা বলা ঠিক নয়। বরং নামাযে শুধু আল্লাহর গুণগান, আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা আর কুরআন তেলাওয়াত করতে হয়।”
মুআবিয়া: হে আল্লাহর রাসূল! আমি জাহেলী যুগের খুব কাছের লোক। আল্লাহ তাআলা আমাকে ইসলামে এনেছেন (অর্থাৎ আমি একজন নতুন মুসলিম)। আমাদের কিছু লোক গণকদের নিকট যাতায়াত করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: তবে তুমি গণকদের কাছে যেও না।
মুআবিয়া: আমাদের কিছু লোক কুলক্ষণে বিশ্বাস করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: এটা একটা কুচিন্তা যা মানুষের মনের মধ্যে জাগ্রত হয়। এ কুচিন্তা যেন তাদেরকে কাজে বাঁধা না দেয়। (অর্থাৎ এ ধরণের কুচিন্তা মনে আসলে তা যেন তাদেরকে কাজে বাঁধা না দেয়। কারণ তা ভালো-মন্দ কোন কাজেই প্রভাব ফেলতে পারে না)। (সহীহ মুসলিম)
?৪) আয়েশা রা. হতে বর্ণিত,তিনি বলেন: কয়েকজন ইহুদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আগমন করল।
ইহুদীরা: আসসামু আলাইকা (তোমার মৃত্যু হোক)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: ও আলাইকুম (তোমাদেরও)।
আয়েশা: তোমাদের মৃত্যু হোক, তোমাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক, তোমাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ নেমে আসুক।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: আয়েশা, থাম, নম্র হও। কঠোর ও অশালীন আচরণ থেকে দূরে থাক।
আয়েশা: তারা কি বলল আপনি কি শুনেন নি?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: তুমি কি শুনো নি আমি কী বলেছি? আমি তাদের কথার উত্তর দিয়েছি। আমার কথা আল্লাহ কবুল করবেন কিন্তু আমার ব্যাপারে তারা যা বলেছে তা কবুল হবে না। (সহীহ বুখারী)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রা.কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “অশালীন হয়ো না। আল্লাহ তাআলা অশালীনতাকে এবং যারা অশালীন আচরণ করে তাদেরকে ভালবাসেন না।” (সহীহ মুসলিম)
????????
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল