কুলক্ষণ সম্পর্কীয় বিবরণ

কুলক্ষণ সম্পর্কীয় বিবরণ !!!

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,

أَلَا إِنَّمَا طَائِرُهُمْ عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ﴿ألاعراف:১৩১﴾

“মনে রেখো, আল্লাহর কাছেই রয়েছে তাদের কুলক্ষণসমূহের চাবিকাঠি। কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই তা বুঝে না। (আরাফ: ১৩১)

২। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন .

قالو طائركم معكم (يس : ১৯)

“তারা বললো, তোমাদের দুর্ভাগ্য তোমাদের সাথেই রয়েছে।” (ইয়াসিন : ১৯)

৩। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,

لا عدوى ولا طيرة، ولا هامة ولا صفر، (أخرحاه)

“দ্বীন ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ বা দুর্ভাগ্য, কথার কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই।” (বুখারি ও মুসলিম)

[মুসলিমের হাদীসে ‘নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টিপাত, রাক্ষস বা দৈত্য বলতে কিছুই নেই’ এ কথাটুকু অতিরিক্ত আছে]

৪। বুখারি ও মুসলিমে আনাস (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,

لا عدوى وطيرة ويعجبني الفال্তু قالوا: مالفال؟ قال الكلمة الطيبة.

“ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি আর কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই। তবে ‘ফাল’ আমাকে অবাক করে [অর্থাৎ আমার কাছে ভাল লাগে।] সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফাল’ কি জিনিস? জবাবে তিনি বললেন, ‘উত্তম কথা’। [যে কথা শিরকমুক্ত]

৫। উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কুলক্ষণ বা দূর্ভাগ্যের বিষয়টি রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উল্লেখ করা হলো। জবাবে তিনি বললেন,

أحسنها الفال، ولا ترد مسلما، فإذا رأى أحدكم ما يكره فليقل:

এগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে ‘ফাল’। কুলক্ষণ কোন মুসলমানকে স্বীয় কর্তব্য পালনে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। তোমাদের কেউ যদি অপছন্দনীয় কোন কিছু প্রত্যক্ষ করে তখন সে যেন বলে,

أللهم لا يأتي بالحسنات إلا أنت ولا يدفع السيئات إلا أنت ولا حول ولا قوة إلا بك،

“হে আল্লাহ তুমি ছাড়া কেউ কল্যাণ দিতে পারে না। তুমি ছাড়া কেউ অকল্যাণ ও দূরাবস্থা দূর করতে পারে না। ক্ষমতা ও শক্তির আধার একমাত্র তুমিই।” (আবু দাউদ)

৬। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে ‘মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে, পাখি উড়িয়ে ভাগ্য গণনা করা শেরেকী কাজ, পাখি উড়িয়ে লক্ষণ নির্ধারণ করা শেরেকী কাজ, একাজ আমাদের নয়। আল্লাহ তাআলা তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে মুসলিমের দুশ্চিন্তাকে দূর করে দেন। (আবু দাউদ, তিরমিজী)

৭। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, ‘কুলক্ষণ বা দুর্ভাগ্যের ধারণা যে ব্যক্তিকে তার স্বীয় প্রয়োজন, দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে দূরে রাখলো, সে মূলতঃ শিরক করলো। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, এর কাফ্‌ফারা কি? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা এ দোয়া পড়বে,

أللهم لا خير إلا خيرك ولا طير إلا طيرك ولا إله غيرك (أحمد)

“হে আল্লাহ, তোমার মঙ্গল ব্যতীত কোন মঙ্গল নেই। তোমার অকল্যাণ ছাড়া কোন অকল্যাণ নেই। আর তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। (আহমদ)

৮। ফজল বিন আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে طيرة[তিয়ারাহ] অর্থাৎ কুলক্ষণ হচ্ছে এমন জিনিস যা তোমাকে কোন অন্যায় কাজের দিকে ধাবিত করে অথবা কোন ন্যায় কাজ থেকে তোমাকে বিরত রাখে।” (আহমাদ)

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় :

১। ألا إنما طائرهم عند الله [জেনে রেখো তাদের দুর্ভাগ্য আল্লাহর কাছে নিহিত] এবং طائركم معكم [তোমাদের দুর্ভাগ্য তোমাদের সাথেই রয়েছে] এ আয়াত দু’টির ব্যাপারে সতর্কীকরণ।

২। সংক্রামক রোগের অস্বীকৃতি।

৩। কুলক্ষণের অস্বীকৃতি।

৪। দুর্ভাগ্যের ব্যাপারে অস্বীকৃতি [অর্থাৎ দুর্ভাগ্য বলতে ইসলামে কোন কিছু নেই]

৫। কুলক্ষণ ‘সফর’ এর অস্বীকৃতি জ্ঞাপন [অর্থাৎ কুলক্ষণে ‘সফর মাস’ বলতে কিছুই নেই। জাহেলী যুগে সফর মাসকে কুলক্ষুণ মনে করা হতো, ইসলাম এ ধারণাকে বাতিল ঘোষণা করেছে।]

৬। ‘ফাল’ উপরোক্ত নিষিদ্ধ বা অপছন্দনীয় জিনিসের অন্তর্ভূক্ত নয়। বরং এটা মোস্তাহাব।

৭। ‘ফাল’ এর ব্যাখ্যা।

ইনশাআল্লাহ্‌ চলবে……

সংকলন: শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহহাব

تأليف: شيخ الإسلام محمد بن عبد الوهاب رحمه الله
অনুবাদক: উলামাদের একটি দল
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক’
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করেআপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। “কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা” [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]