কিছু কাজে রিয়া বা লোক দেখানো বলে মনে হয়, মূলত তা নয়

ব্যক্তির ইচ্ছা ছিল ইবাদত গোপনভাবে করা এবং একমাত্র আল্লাহর জন্যই করা, কিন্তু মানুষ যদি জেনে যায় তবে বুঝতে হবে আল্লাহ তা‘আলা তার ইবাদতের সৌন্দর্য মানুষের মাঝে প্রকাশ করেছেন, তখন মানুষের প্রশংসা ও সম্মানের আশা না করে আল্লাহর এ সুন্দর কাজে খুশি হওয়া এবং আল্লাহ তার গুনাহ গোপন করায় আনন্দিত হওয়া প্রয়োজন।
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: قِيلَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَرَأَيْتَ الرَّجُلَ يَعْمَلُ الْعَمَلَ مِنَ الْخَيْرِ، وَيَحْمَدُهُ النَّاسُ عَلَيْهِ؟ قَالَ: «تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى الْمُؤْمِنِ»
আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করা হল, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কি অভিমত, যে নেক আমল করে এবং লোকেরা তার প্রশংসা করে? তিনি বললেন, এতো মুমিন ব্যক্তির জন্য তা আগাম সুসংবাদ (এতে কাজটি কবুল হওয়ার লক্ষণ বুঝা যায়)।[মুসলিম, হাদীস নং ২৬৪২।]

ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, যে ব্যক্তির নিয়মিত দুহা (চাশত) এর সালাত বা তাহাজ্জুদ বা অন্য সালাতের অভ্যাস আছে সে যেখানেই থাকুক সে সালাত পড়ে নিবে। লোক দেখানো ও ইখলাসের পরিপন্থী না হলে শুধুমাত্র মানুষের মাঝে থাকার তারা তার এ গোপন ইবাদতের কথা জেনে যাবে এ কথা ভেবে উক্ত ইবাদত বাদ দেওয়া উচিত নয়।

তিনি আরো বলেন, কেউ শুধুমাত্র রিয়ার ধারণা করে জায়েয কাজ থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করলে তা নিন্মোক্ত কারণে গ্রহণযোগ্য হবে না:
১- কোনো জায়েয কাজ শুধুমাত্র রিয়ার ভয়ে বাদ দেওয়া যাবে না, বরং তা ইখলাসের সাথে করতে আদেশ দেওয়া হবে।

২- শরি‘আত যা নিষেধ করেছে শুধু তাই নিষেধ করা যাবে।
«إِنِّي لَمْ أُومَرْ أَنْ أَنْقُبَ عَنْ قُلُوبِ النَّاسِ وَلاَ أَشُقَّ بُطُونَهُمْ»
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট ফেঁড়ে (ঈমানের উপস্থিতি) দেখার জন্য বলা হয় নি”।[বুখারী, হাদীস নং ৪৩৫১, মুসলিম, হাদীস নং ১০৬৪।]

৩- এভাবে করতে অনুমতি দিলে শির্ক ও বাতিলপন্থীরা দীনদার ও সৎ লোকের শরি‘আতসিদ্ধ ভালো কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। যখনই তারা কোনো জায়েয কাজ দেখবে তখন তারা বলে বেড়াবে ‘এটা লোক দেখানোর জন্য করা হচ্ছে’। ফলে হকপন্থীরা জায়েয কাজটি প্রকাশ পেয়ে যাবে এ ভয়ে ছেড়ে দিবে। এভাবে ভালো কাজ বাদ পড়ে যাবে।

৪- তাছাড়া এটা মুনাফিকের চরিত্র। তাদের অভ্যাস হলো, যারা ভালো কাজ প্রকাশ্যভাবে করে তাদেরকে দোষারোপ করা।
﴿ ٱلَّذِينَ يَلۡمِزُونَ ٱلۡمُطَّوِّعِينَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ وَٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهۡدَهُمۡ فَيَسۡخَرُونَ مِنۡهُمۡ سَخِرَ ٱللَّهُ مِنۡهُمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٧٩ ﴾ [التوبة: ٧٩]
“যারা দোষারোপ করে সদাকার ব্যাপারে মুমিনদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাদানকারীদেরকে এবং তাদেরকে যারা তাদের পরিশ্রম ছাড়া কিছুই পায় না। অতঃপর তারা তাদেরকে নিয়ে উপহাস করে, আল্লাহও তাদেরকে নিয়ে উপহাস করেন এবং তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব”। [আত্-তাওবা: ৭৯]

শাইখ ইবন ‘উসাইমীন রহ. বলেন, ইবাদত নষ্টকারী হিসেবে রিয়া দু’প্রকার:
প্রথমত: যেটা মূল ইবাদতের মধ্যে হবে। এ ধরণের হলে তার আমল বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য হবে।
দ্বিতীয়ত: যা কোনো কারণবশত ইবাদতের মধ্যে পাওয়া গেছে। এ ধরণের রিয়া আবার দু’প্রকার:
প্রথম: রিয়াটি দূর করা হবে। এতে কোনো ক্ষতি হবে না।
দ্বিতীয়: রিয়াটি ইবাদতের সঙ্গে থাকবে। রিয়াটি যদি ইবাদতের সঙ্গে যুক্ত থাকে তা আবার দু’প্রকার:
প্রথমটি: যে সব ইবাদতের শেষ অবস্থা শুরু অবস্থার উপর নির্ভরশীল, যেমন সালাত। তাহলে উক্ত ইবাদতটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
দ্বিতীয়ত: ইবাদতের শেষ অবস্থা যদি শুরুর উপর নির্ভরশীল না হয়, বরং স্বতন্ত্র, যেমন সাদাকা। এক্ষেত্রে যেটি ইখলাসের সাথে করা হবে তা গ্রহণযোগ্য হবে আর যেটি ইখলাস ছাড়া শির্কের সাথে করা হবে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।[ দেখুন, আল কাওলুল মুফিদ ফি কিতাবিত তাওহীদ।]
———————————