কাযা নামাযের বিধি-বিধান

কেউ যথাসময়ে নামায পড়তে ঘুমিয়ে অথবা ভুলে গেলে এবং তার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে, পরে যখনই তার চেতন হবে অথবা মনে পড়বে তখনই ঐ (ফরয) নামায কাযা পড়া জরুরী।

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে তার কাফফারা হল স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া।” অন্য এক বর্ণনায় বলেন, “এ ছাড়া তার আর কোন কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) নেই।”

তিন আরো বলেন, “নিদ্রা অবস্থায় কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তো জাগ্রত অবস্থায় হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার উচিত, স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া। কেন না, আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামায কায়েম কর।”

অতএব কাযা নামায পড়ার জন্য কোন সময়-অসময় নেই। দিবা-রাত্রের যে কোন সময়ে চেতন হলে বা মনে পড়লেই উঠে সর্বাগ্রে নামায পড়ে নেওয়া জরুরী। অন্যথা পরবর্তী সময়ের অপেক্ষা বৈধ নয়।

বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিলে বা সুযোগ ও সময় থাকা সত্ত্বেও না পড়ে অন্য ওয়াক্ত এসে গেলে পাপ তো হবেই; পরন্তু সে নামাযের আর কাযা নেই। পড়লেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। বিনা ওজরে যথাসময়ে নামায না পড়ে অন্য সময়ে কাযা পড়ায় কোন লাভ নেই। বরং যে ব্যক্তি এমন করে ফেলেছে তার উচিত, বিশুদ্ধচিত্তে তওবা করা এবং তারপর যথাসময়ে নামায পড়ায় যত্নবান হওয়ার সাথে সাথে নফল নামায বেশী বেশী করে পড়া।

কেউ অজ্ঞান থাকলে জ্ঞান ফিরার পূর্বের নামায কাযা পড়তে হবে না। কারণ, সে জ্ঞানহীন পাগলের পর্যায়ভুক্ত। আর পাগলের পাপ-পুণ্য কিছু নেই। ইবনে উমার (রাঃ) অজ্ঞান অবস্থায় কোন নামায ত্যাগ করলে তা আর কাযা পড়তেন না।

অবশ্য নামায পড়তে পারত এমন সময়ের পর অজ্ঞান হলে জ্ঞান ফিরার পর সেই সময়ের নামায কাযা পড়া জরুরী।

পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি যদি কোন কারণে কোন বস্তু ব্যবহার করে  স্বেচ্ছায় বেহুশ হয়, তাহলে তার জন্য কাযা পড়া জরুরী।

কাযা নামায পড়ার জন্য আযান ও ইকামত বিধেয়। কয়েক ওয়াক্তের নামায কাযা পড়তে হলে, প্রথমবার আযান ও তারপর প্রত্যেক নামাযের জন্য পূর্বে ইকামত বলা কর্তব্য।

এক সফরে আল্লাহর রসূল (সাঃ) সহ্‌ সাহাবাগণ ঘুমিয়ে পড়লে ফজরের নামায ছুটে যায়। তাঁদের চেতন হয় সূর্য ওঠার পর। অতঃপর একটু সরে গিয়ে তাঁরা ওযূ করেন। বিলাল (রাঃ) আযান দেন। অতঃপর সুন্নত কাযা পড়ে ইকামত দিয়ে ফজরের ফরয কাযা পড়েন।

খন্দকের যুদ্ধের সময় মহানবী (সাঃ) ও সাহাবাগণের চার ওয়াক্তের নামায ছুটে গেলে গভীর রাত্রিতে তিনি বিলাল (রাঃ) কে আযান দিতে আদেশ করেন।১০ অতঃপর প্রত্যেক নামাযের পূর্বে ইকামত দিতে বলেন। এইভাবে প্রথমে যোহ্‌র, অতঃপর আসর, মাগরেব ও এশার নামায পরপর কাযা পড়েন।১১

উল্লেখ্য যে, ফজরের আযান দিনে দিতে হলেও ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” বলতে হবে। কারণ ফজরের ঐ কাযা নামাযে মহানবী (সাঃ) ফজরের সময় যা করেন, দিনেও তাই করে নামায আদায় করেছেন বলে প্রমাণ আছে।১২

যে নামায যে অবস্থায় কাযা হয়, সেই নামাযকে সেই অবস্থা ও আকারে পড়া জরুরী। সুতরাং রাতের নামায দিনে কাযা পড়ার সুযোগ হলে রাতের মতই করে জোরে ক্বিরাআত করতে হবে। কারণ, মহানবী (সাঃ) যখন ফজরের নামায দিনে কাযা পড়েছিলেন, তখন ঠিক সেই রুপই পড়েছিলেন, যেরুপ প্রত্যেক দিন ফজরের সময় পড়তেন।১৩ তদনুরুপ ছুটে যাওয়া নামায রাতে কাযা পড়ার সুযোগ হলে দিনের মতই চুপে চুপে ক্বিরাআত পড়তে হবে।১৪

তদনুরুপ কেউ মুসাফির অবস্থায় নামায কাযা করে বাড়ি ফিরলে, বাড়ি ফিরার পর নামায কসর করে না পড়ে পুরোপুরি পড়বে; কিন্তু ঐ কাযা নামায কসর করেই আদায় করবে। কারণ, সফর অবস্থায় তার কসর নামাযই কাযা হয়েছে। আর বাড়িতে থাকা অবস্থায় কোন ছুটে যাওয়া নামায সফরে মনে পড়লে বা কাযা পড়ার সুযোগ হলে তা পুরোপুরিই আদায় করতে হবে। মোট কথা যেমন নামায কাযা হবে, ঠিক তেমনিভাবে তা আদায় করতে হবে।১৫

(স্বালাতে মুবাশ্‌শির)
-আবদুল হামীদ ফাইযী

—————
১. বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত।
২. কুরআন মাজীদ ২০/১৪, মুসলিম,  মিশকাত।
৩. মুহাল্লা, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪১-২৪৩, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ৭৮পৃ:, ১নং টীকা, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ৫/৩০৬, ১৫/৭৭, ১৬/১০৫, ২০/১৭৪, মিশকাত ৬০৩নং হাদীসের আলবানীর টীকা দ্র:।
৪. আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৩২৮৭ নং, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ২৬/১২৮, ফিকহুস সুন্নাহ্।‌ ১/২৪১, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ২/১২৬।
৫. আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪১।
৬. আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ২/১২৬-১২৭।
৭. ঐ ২/১৮।
৮. মুসলিম, সহীহ ৬৮১, আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান।
৯. বুখারী ৩৪৪, মুসলিম, সহীহ ৬৮০ নং, নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/২৭।
১০. শাফেয়ী, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ।
১১. নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী প্রমুখ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১/২৫৭।
১২. মুসলিম, সহীহ ৬৮১নং, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ১/২০৪।
১৩. মুসলিম, সহীহ ৬৮১নং।
১৪. নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/২৭, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২০৪, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩১০।
১৫. আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উসাইমীন ৪/৫১৮।