কয়েকটি বর্জনীয় দৃশ্য

কয়েকটি বর্জনীয় দৃশ্য

আবু আহমাদ

কিছু বিষয় আছে, যা নিজেরটা নিজে দেখা যায় না বা অনুভব করা যায় না। আবার কিছু বিষয় আছে, যা নিজে একটু খেয়াল করলেই আমরা বুঝতে পারি, কিন্তু অনেক সময় ওদিকে নযর যায় না। এমনই কয়েকটি বিষয় নিয়ে মুযাকারা করাই আজকের লেখার উদ্দেশ্য।

এক. আমি কারো সাথে সামনা-সামনি কথা বলছি তার অর্থ হল, সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় যদি হাই ওঠে আর আমি তা প্রতিহত না করি বা মুখে হাত না দিই তাহলে কেমন দৃশ্য হয়?

সেটা বোঝার জন্য হাই ওঠা অবস্থায় মুখে হাত না দিয়ে একবার আয়নার সামনে দাঁড়ালেই বোঝা যাবে। আমার নিজের এ দৃশ্য যদি আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগে তাহলে অন্যের কাছে দৃশ্যটি কেমন লাগে একটু ভেবে দেখি।

ইসলাম আমাদেরকে এধরনের ছোট ছোট বিষয়ের আদবও শিক্ষা দেয়; নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কারো হায় আসে সে যেন তা যথাসাধ্য প্রতিহত করার চেষ্টা করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬২২৬) আরেক বর্ণনায় আছে, “…সে যেন তা আড়াল করে।” (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৮৮৭৯) আরেক বর্ণনায় আছে, “… সে যেন তার মুখের উপর হাত রাখে।” (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৩২৩)

দুই. তেমনি আরেকটি অপছন্দনীয় দৃশ্য হল, মজলিশে বা কারো সামনে থাকা অবস্থায়, কিংবা রাস্তায় চলতে চলতে নাকে আঙ্গুল দেয়া।

দৃশ্যটি কেমন লাগে অন্যকে দেখেই আমরা বুঝতে পারি। অন্যকে দেখতে যেমন বাজে লাগে, তার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার অস্বস্তি লাগে, তেমনি আমাকে দেখতেও বাজে লাগে এবং অন্য মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে অস্বস্তি বোধ করে।

অনেক সময় এটা মুদ্রাদোষ, অনেক সময় প্রয়োজন। যদি মুদ্রাদোষ হয় তাহলে একটু আয়নার সামনে দাঁড়াই বা বারবার অন্যের দৃশ্যটা স্মরণ করি।

আর যদি মানুষের সামনে থাকাবস্থায় বাস্তবেই এর প্রয়োজন হয় তাহলে কোনোভাবে নিজেকে একটু আড়াল করে নিই, যাতে আমার প্রয়োজনও পুরা হয় এবং অপসন্দনীয় দৃশ্যের অবতারণাও না হয়।

তিন. আরেকটি বিষয় যা বলতেও দ্বিধা হয়। একেবারে সাধারণ রুচি-বোধ যার আছে তার দ্বারা এমন কাজ হতে পারে না। যে বিষয়টি বলতে চাচ্ছি তাতে অপসন্দনীয় দৃশ্য ও ‘অন্যকে কষ্ট দেওয়া’ উভয়টিই রয়েছে।

হাম্মামে (টয়লেটে) মানুষ প্রয়োজনেই প্রবেশ করে এবং চেষ্টা করে, কত অল্প সময়ে প্রয়োজন সেরে সেখান থেকে বের হওয়া যায়। কিন্তু আমাদের অবহেলার কারণে কখনো এমন হয় যে, কোনো ভাই হাম্মামে প্রবেশ করে প্রয়োজন পুরা করা ছাড়াই বের হয়ে যান। দুর্গন্ধ বা কোনো দৃশ্যের কারণে তিনি এমন কষ্ট পান যে নিজের প্রয়োজন পুরা করার কথাও ভুলে যান।

আমার অসতর্কতার কারণে আরেক ভাই কষ্ট পাবেন তা হতে পারে না। দুর্গন্ধ রয়ে গেলে যেমন মানুষ কষ্ট পায়, তেমনি অপসন্দনীয় দৃশ্যের মুখোমুখি হলেও কষ্ট পায়। সুতরাং হাম্মাম থেকে বের হওয়ার সময় এ পরিমাণ পানি ঢালার চেষ্টা করব যে, অন্য ভাইকে না দুর্গন্ধের কারণে কষ্ট পেতে হয়, না অপসন্দনীয় দৃশ্যের কারণে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের আমলের তাওফিক দান করুন।