কবরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত ও জানাযা সম্পর্কে মিথ্যা ফযীলত বর্ণনা করা

কবরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত ও জানাযা সম্পর্কে মিথ্যা ফযীলত বর্ণনা করা
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষ
শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন

কবর যিয়ারত করতে গিয়ে হাদীছে বর্ণিত সহিহ দু‘আ পাঠ করবে। অতঃপর কবরবাসীর জন্য দু‘আ করবে। কিন্তু সেখানে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। তিনবার সূরা ফাতিহা পাঠ, সাতবার দরূদ পাঠ, সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব, নাস পাঠ ইত্যাদি যে প্রথা চালু আছে তা সম্পূর্ণ বিদ‘আতী প্রথা। সূরা ইয়াসীন পাঠ করা সম্পর্কে যে বর্ণনা প্রচলিত আছে তা জাল।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ مَنْ دَخَلَ الْمَقَابِرَ فَقَرَأَ سُوْرَةَ ( يس ) خُفِّفَ عَنْهُمْ يَوْمَئِذٍ وَكاَنَ لَهُ بِعَدَدٍ مَا فِيْهَا حَسَنَاتٌ.

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, সে দিন কবরবাসীর আযাব হালকা করা হবে। আর তার জন্য প্রত্যেক অক্ষরের বিনিময়ে নেকী রয়েছে।[1] কবরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। এর সনদে আবু উবায়দাহ, আইয়ুব বিন মুদরিক ও আহমাদ রিইয়াহী নামে তিন জন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[2]

[1]. তাফসীরে ছা‘লাবী; সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৪৬।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৪৬।

(১৮) কবর খনন করা ও জানাযা সম্পর্কে মিথ্যা ফযীলত বর্ণনা করা :

(أ) عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ حَفَرَ قَبْرًا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَمَنْ غَسَلَ مَيْتًا خَرَجَ مِنَ الْخَطَايَا كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ وَمَنْ كَفَّنَ مَيْتًا كَسَاهُ اللهُ أَثْوَابًا مِنْ حُلَلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ عَزَى حَزِيْنًا أَلْبَسَهُ اللهُ التَّقْوَى وَصَلَّى عَلَى رُوْحِهِ فِى الْأَرْوَاحِ وَمَنْ عَزَى مُصَابًا كَسَاهُ اللهُ حُلَّتَيْنِ مِنْ حُلَلِ الْجَنَّةِ لاَ يَقُوْمُ لَهُمَا الدُّنْيَا وَمَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ حَتَّى يَقْضِىَ دَفْنَهَا كُتِبَ لَهُ ثَلاَثَةَ قَرَارِيْطَ الْقِيْرَاطُ مِنْهَا أَعْظَمُ مِنْ جَبَلِ أُحُدٍ وَمَنْ كَفَّلَ يَتِيْمًا أَوْ أَرْمَلَةً أَظَلَّهُ اللهُ فِىْ ظِلِّهِ وَأَدْخَلَهُ جَنَّتَهُ.

(ক) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কবর খনন করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে গোসল করাবে সে পাপ থেকে অনুরূপ মুক্ত হবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে তাকে আল্লাহ জান্নাতের পোশাক পরাবেন। যে চিন্তিত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দিবে আল্লাহ তাকে তাক্বওয়ার লেবাস পরিধান করাবেন এবং তার রূহের উপর রহমত বর্ষণ করবেন। যে ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দিবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক সেটের মধ্য হতে দু’টি সেট দান করবেন। পুরো পৃথিবী ঐ দু’টি কাপড়ের সমকক্ষ হবে না। যে দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত জানাযার সাথে থাকবে তার তিন ক্বীরাত নেকী হবে। এক ক্বীরাত্ব ওহোদ পাহাড়ের চেয়ে বড় হবে। যে ব্যক্তি ইয়াতীম বা বিধবার তত্ত্বাবধায়ক হবে আল্লাহ তাকে তাঁর ছায়ায় ছায়া দান করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।[1]

তাহক্বীক্ব : যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী নিজেই যঈফ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।[2] কারণ এর সনদে খলীল বিন মুররা ও ইসমাঈল বিন ইবরাহীম নামে দুইজন যঈফ রাবী আছে।[3]

উল্লেখ্য যে, নিম্নের হাদীছটি সহিহ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করাল, অতঃপর তার গোপন বিষয়গুলো গোপন রাখল, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তাকে ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন’।[4]

(ب) عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ حَمَلَ جَوَانِبَ السَّرِيْرِ الْأَرْبَعِ كَفَّرَ اللهُ عَنْهُ أَرْبَعِيْنَ كَبِيْرَةً.

(খ) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি মৃতের চার পায়া খাটিয়ার পার্শ্ব বহন করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ৪০ টি কাবীরা গোনাহ মাফ করে দিবেন।[5]

তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য। এর সনদে আলী বিন আবু সারাহ ও মুহাম্মাদ বিন উক্ববা সাদূসী নামে দুই জন যঈফ রাবী আছে।[6]

 

>>>কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ Hadithonlinebd.com<<<