এক রাকআত বিতর না পড়া অথবা তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সময় দুই রাক‘আতের পর তাশাহ্হুদ পড়া

এক রাকআত বিতর না পড়া অথবা তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সময় দুই রাক‘আতের পর তাশাহ্হুদ পড়া

এক রাকআত বিতর না পড়া অথবা তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সময় দুই রাক‘আতের পর তাশাহ্হুদ পড়া
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষ
শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন

বিতর মূলতঃ এক রাক‘আত। কারণ যত স্বলাতই আদায় করা হোক এক রাক‘আত আদায় না করলে বিতর হবে না। এ মর্মে অনেক সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এক রাক‘আত বলে কোন স্বলাতই নেই, এই কথাই সমাজে বেশী প্রচলিত। উক্ত মর্মে কিছু উদ্ভট বর্ণনাও উল্লেখ করা হয়। এক রাকআত বিতর না পড়া

(أ) عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ أَنَّ النَّبِىَّ نَهَى عَنِ الْبُتَيْرَاءِ أَنْ يُّصَلِّىَ الرَّجُلُ وَاحِدَةً يُوْتِرُ بِهَا.

(ক) আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) এক রাক‘আত বিতর পড়তে নিষেধ করেছেন। তাই কোন ব্যক্তি যেন এক রাক‘আত স্বলাত আদায় করে বিজোড় না করে।[1]

তাহক্বীক্ব : আব্দুল হক্ব বলেন, উক্ত বর্ণনার সনদে ওছমান বিন মুহাম্মাদ বিন রবী‘আহ রয়েছে।[2] ইমাম নববী বলেন, এক রাক‘আত বিতর নিষেধ মর্মে মুহাম্মাদ বিন কা‘ব-এর হাদীছ মুরসাল ও যঈফ।[3] উক্ত বর্ণনা গ্রহণযোগ্য না হলেও ‘হেদায়ার’ ভাষ্য গ্রন্থ ‘আল-ইনাইয়াহ’ কিতাবে তাকে খুব প্রসিদ্ধ বলে দাবী করা হয়েছে। অর্থাৎ এক রাক‘আত বিতর পড়ার বিরোধিতা করা হয়েছে।[4]

(ب) عَنْ حُصَيْنٍ قَالَ بَلَغَ ابْنَ مَسْعُوْدٍ أَنَّ سَعْدًا يُوْتِرُ بِرَكْعَةٍ قَالَ مَا أَجْزَأْتُ رَكْعَةً قَطُّ

(খ) হুছাইন (রাঃ) বলেন, ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর কাছে যখন এই কথা পৌঁছল যে, সা‘দ (রাঃ) এক রাক‘আত বিতর পড়েন। তখন তিনি বললেন, আমি এক রাক‘আত স্বলাতকে কখনো যথেষ্ট মনে করিনি’।[5] অন্যত্র সরাসরি তাঁর পক্ষ থেকে বর্ণনা এসেছে, عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ مَا أَجْزَأْتُ رَكْعَةً قَطُّ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি কখনো এক রাক‘আত স্বলাত যথেষ্ট মনে করি না’।[6]

তাহক্বীক্ব : ইমাম নববী (রাঃ) উক্ত আছার উল্লেখ করার পর বলেন, এটি যঈফ ও মাওকূফ। ইবনু মাসঊদের সাথে হুছাইনের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। ইবনু হাজার আসক্বালানীও তাই বলেছেন।[7]

(ج) قَالَ أَبُوْ حَنِيْفَةَ لاَ يَصِحُّ الْإِيْتَارُ بِوَاحِدَةٍ وَلاَ تَكُوْنُ الرَّكْعَةُ الْوَاحِدَةُ صَلاَةً قَطُّ.

(গ) আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, ‘এক রাক‘আত বিতর পড়া ঠিক নয়। তাছাড়া স্বলাত কখনো এক রাক‘আত হয় না’।[8]

তাহক্বীক্ব : উক্ত বক্তব্যের কোন সত্যতা নেই। তাছাড়া রাসূল (ﷺ) যেহেতু এক রাক‘আত বিতর পড়েছেন এবং পড়তে বলেছেন, সেহেতু অন্য কারো ব্যক্তিগত কথার কোন মূল্য নেই।

জ্ঞাতব্য : ইমাম ত্বাহাবী বলেন, ‘বিতর স্বলাত এক রাক‘আতের অধিক। এক রাক‘আত বিতর সম্পর্কে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি।[9] হেদায়া কিতাবে বিতর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, কিন্তু এক রাক‘আত বিতর সম্পর্কে কোন কথা উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তিন রাক‘আতের কথা বলা হয়েছে।[10] মাওলানা মুহিউদ্দীন খান তার ‘তালীমুস্-স্বলাত’ বইয়ে বিতর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন প্রায় ছয় পৃষ্ঠা। কিন্তু কোথাও এক রাক‘আত বিতর-এর কথা উল্লেখ করেননি।[11] ড. ইলিয়াস ফায়সাল ‘নবীজীর স্বলাত’ বইয়ে লিখেছেন, ‘বিতর সর্বনিম্ন তিন রাকাআত। আমরা জানি যে, দু’ রাকাআতের নিচে কোনো স্বলাত নেই। .. হাদীস শরীফ থেকে বোঝা যায় যে, বিতর হল সর্বনিম্ন তিন রাকাআত’।[12] ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইয়ে ৩২০ থেকে ৩৩২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিতর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও এক রাক‘আত বিতরের কথা বলা হয়নি। বরং বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয়েছে যে, তিন রাক‘আতের কম বিতর পড়া যায় না। ভাবখানা এমন যে, তারা জানেন না বা হাদীছে কোন দিন দেখেননি যে বিতর স্বলাত এক রাক‘আতও আছে।

আমরা শুধু এতটুকু বলব যে, সাধারণ মুছল্লীদেরকে যে কৌশলেই ধোঁকা দেয়া হোক, আল্লাহ সে বিষয়ে সর্বাধিক অবগত। কেউই তাঁর আয়ত্বের বাইরে নয়। অতএব সাবধান!

[1]. ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তামহীদ, আল-আহকামুল উস্তা ২/৫০ পৃঃ; আলোচনা দ্রঃ টীকা, মুওয়াত্ত্বা মালেক, তাহক্বীক্ব : ড. তাক্বিউদ্দীন আন-নাদভী হা/২৫৮।
[2]. فى إسناده عثمان بن محمد بن ربيعة والغالب على حديثه الوهم আল-আহকামুল উস্তা ২/৫০ পৃঃ।
[3]. حديث محمد بن كعب في النهي عن البتيراء مرسل ضعيف …নববী, খুলাছাতুল আহকাম হা/১৮৮৮; কাশফুল খাফা।
[4]. اُشْتُهِرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ الْبُتَيْرَاءِ হেদায়াহ ২/১৮৪ পৃঃ।
[5]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৯৪২২।
[6]. খুলাছাতুল আহকাম ফী মুহিম্মাতিস সুনান ওয়া ক্বাওয়াইদিল ইসলাম হা/১৮৮৯।
[7]. তাহক্বীক্ব মুওয়াত্ত্ব মুহাম্মাদ ২/২২ পৃঃ।
[8]. সহিহ মুসলিম শরহে নববী ১/২৫৩ পৃঃ, হা/১৭৫১-এর হাদীছের আলোচনা দ্রঃ।
[9]. ত্বাহাবী হা/১৭৩৯-এর আলোচনা দেখুন أَنَّ الْوِتْرَ أَكْثَرُ مِنْ رَكْعَةٍ وَلَمْ يُرْوَ فِى الرَّكْعَةِ شَيْءٌ।
[10]. হেদায়া ১/১৪৪-১৪৫ পৃঃ।
[11]. ঐ, পৃঃ ১৬৯-১৭৪।
[12]. ঐ, পৃঃ ২৪১।

এক রাক‘আত বিতর পড়ার সহিহ হাদীছ সমূহ :

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّى مِنَ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى وَيُوْتِرُ بِرَكْعَةٍ.

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) রাত্রে দুই দুই রাক‘আত করে স্বলাত আদায় করতেন এবং এক রাক‘আত বিতর পড়তেন।[1] রাসূল (ﷺ) এক রাক‘আত বিতর পড়ার নির্দেশও দিয়েছেন। যেমন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الْوِتْرُ رَكْعَةٌ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ.

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘বিতর এক রাক‘আত শেষ রাত্রে’।[2]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ عَنْ صَلَاةِ اللَّيْلِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَام صَلَاةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى فَإِذَا خَشِيَ أَحَدُكُمْ الصُّبْحَ صَلَّى رَكْعَةً وَاحِدَةً تُوْتِرُ لَهُ مَا قَدْ صَلَّى.

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বিতর স্বলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাত্রির স্বলাত দুই দুই রাক‘আত করে। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন সকাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করবে, তখন সে যেন এক রাক‘আত পড়ে নেয়। তাহলে সে এতক্ষণ যা পড়েছে তার জন্য সেটা বিতর হয়ে যাবে’।[3]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَاةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى وَالْوِتْرُ رَكْعَةٌ وَاحِدَةٌ.

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘রাত্রির স্বলাত দুই দুই রাক‘আত। আর বিতর এক রাক‘আত’।[4]

عَنْ أَبِىْ أَيُّوْبَ الأَنْصَارِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الْوِتْرُ حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوْتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوْتِرَ بِثَلاَثٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوْتِرَ بِوَاحِدَةٍ فَلْيَفْعَلْ.

আবু আইয়ুব আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, বিতর পড়া প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর বিশেষ কর্তব্য। সুতরাং যে পাঁচ রাক‘আত পড়তে চায়, সে যেন তাই পড়ে। আর যে তিন রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তা পড়ে এবং যে এক রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে।[5]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ إِنَّ اللهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ فَأَوْتِرُوْا يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ বিজোড়। তিনি বিজোড়কে পসন্দ করেন। সুতরাং হে কুরআনের অনুসারীরা! তোমরা বিতর পড়’।[6]

সুধী পাঠক! উপরিউক্ত হাদীছগুলো থাকতে কেন বলা হয় যে, এক রাক‘আত কোন স্বলাত নেই? সর্বশেষ হাদীছটিতে সরাসরি আল্লাহর সাথে তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ এক বিজোড়, না তিন, না পাঁচ বিজোড় তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? হাদীছের গ্রন্থগুলো বিভিন্ন মাদরাসায় পড়ানো হয়, বরকতের জন্য ‘খতমে বুখারী’ নামে লোক দেখানো অনুষ্ঠানও করা হয়। কিন্তু উক্ত হাদীছগুলো কি তাদের চোখে পড়ে না? এটা অবশ্যই মাযহাবী নীতিকে ঠিক রাখার অপকৌশল মাত্র। রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছকে যদি এভাবে অবজ্ঞা ও গোপন করা হয়, তবে ক্বিয়ামতের মাঠে কে উদ্ধার করবে? যে সমস্ত ব্যক্তি ও মাযহাবের পক্ষে ওকালতি করা হচ্ছে তারা কি বিচারের দিন কোন উপকারে আসবে?

ঢাকার ‘জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া’-এর শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মতিন ‘দলিলসহ স্বলাতের মাসায়েল’ বইয়ে বিতর স্বলাত সম্পর্কে ৯৮-১৩১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অনেক আলোচনা করেছেন। ছলে বলে কৌশলে মিথ্যা ও উদ্ভট তথ্য দিয়ে প্রচলিত তিন রাক‘আত বিতরকে প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। আর এক রাক‘আত বিতরের হাদীছগুলো সম্পূর্ণই আড়াল করেছেন। একজন সচেতন পাঠক পড়লেই বুঝতে পারবেন কিভাবে তিনি প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন। দুনিয়াতে রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছ গোপন করলেও পরকালে তাঁর কথা ঠিকই মনে পড়বে। কিন্তু কোন লাভ হবে কি? আল্লাহ বলেন, ‘যালিম সেদিন তার হাত দুইটি দংশন করবে আর বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের পথে চলতাম। হায়! দুর্ভোগ আমার, অমুককে যদি সাথী হিসাবে গ্রহণ না করতাম। আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল- আমার নিকট বিধান আসার পর। শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক’ (ফুরক্বান ২৭-২৯)। অতএব লেখকের চিন্তা করা উচিত তিনি কাকে অনুসরণ করে পথ চলছেন!

[1]. বুখারী হা/৯৯৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৬, (ইফাবা হা/৯৪১, ২/২২৭ পৃঃ), ‘বিতর’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২; মুসলিম হা/১৭৯৭, ১/২৫৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৫৮৮) ‘মুসাফিরের স্বলাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২০; তিরমিযী হা/৪৬১; ইবনু মাজাহ হা/১১৭৪।
[2]. সহিহ মুসলিম হা/১৭৯৩-৯৯ (৭৫২), ১ম খন্ড, পৃঃ ২৫৭, (ইফাবা হা/১৬২৭-১৬৩৩), ‘মুসাফিরের স্বলাত’ অধ্যায়-৭, ‘রাত্রির স্বলাত দুই দুই রাক‘আত’ অনুচ্ছেদ-২০; মিশকাত হা/১২৫৫, পৃঃ ১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৮৬, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩১।
[3]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; সহিহ বুখারী হা/৯৯০, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৫, (ইফাবা হা/৯৩৭, ২/২২৫ পৃঃ), ‘বিতর স্বলাত’ অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-১; সহিহ মুসলিম হা/১৭৮২, ১৭৮৪, ১৭৮৫, ১৭৮৬, ১/২৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৬১৮-১৬২১); মিশকাত হা/১২৫৪, পৃঃ ১১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৮৫, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩০।
[4]. সহিহ নাসাঈ হা/১৬৯৩, ১/১৯০ পৃঃ, ‘রাতের স্বলাত’ অধ্যায়, ‘এক রাক‘আত বিতর’ অনুচ্ছেদ।
[5]. আবুদাঊদ হা/১৪২২, ১/২০১ পৃঃ; নাসাঈ হা/১৭১২, ১/১৯২ পৃঃ; সহিহ ইবনু হিববান হা/২৪১১; মিশকাত হা/১২৬৫, পৃঃ ১১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৯৬, ৩/১৩৫ পৃঃ, ‘বিতর স্বলাত’ অনুচ্ছেদ।
[6]. আবুদাঊদ হা/১৪১৬, ১/২০০ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/১১৭০; তিরমিযী হা/৪৫৩; মিশকাত হা/১২৬৬, পৃঃ ১১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৯৭, ৩/১৩৫ পৃঃ।

(২) তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সময় দুই রাক‘আতের পর তাশাহ্হুদ পড়া :

তিন রাক‘আত বিতর একটানা পড়তে হবে। মাঝখানে কোন বৈঠক করা যাবে না। এটাই সুন্নাত। কিন্তু অধিকাংশ মুছল্লী মাঝখানে বৈঠক করে ও তাশাহ্হুদ পড়ে। মুহিউদ্দীন খান লিখেছেন, ‘প্রথম বৈঠকে কেবল আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দাঁড়িয়ে যাবে। দুরূদ পড়বে না এবং সালাম ফিরাবে না। যেমন মাগরিবের স্বলাতে করা হয়, তেমনি করবে’।[1] অথচ উক্ত আমলের পক্ষে কোন সহিহ দলীল নেই।

(أ) عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ الْوِتْرُ ثَلاثُ رَكَعَاتٍ كَصَلاةِ الْمَغْرِبِ.

(ক) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মাগরিবের স্বলাতের ন্যায় বিতরের স্বলাত তিন রাক‘আত।[2]

তাহক্বীক্ব : ইবনুল জাওযী বলেন, এই হাদীছ সহিহ নয়।[3]

(ب) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ كَانَ يَقُوْلُ صَلَاةُ الْمَغْرِبِ وِتْرُ صَلَاةِ النَّهَارِ

(খ) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা) বলেন, মাগরিবের স্বলাত দিনের বিতর স্বলাত।[4]

তাহক্বীক্ব : অনেকে উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বিতর স্বলাত মাগরিব স্বলাতের ন্যায় প্রমাণ করতে চান। অথচ তা ত্রুটিপূর্ণ। বর্ণনাটি কখনো মারফূ‘ সূত্রে এসেছে, কখনো মাওকূফ সূত্রে এসেছে। তবে এর সনদ যঈফ। মুহাদ্দিছ শু‘আইব আরনাঊত বলেন, ঐ অংশটুকু সহিহ নয়।[5]

(ج) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ وِتْرُ اللَّيْلِ ثَلاَثٌ كَوِتْرِ النَّهَارِ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ.

(গ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, রাত্রির তিন রাক‘আত বিতর দিনের বিতরের ন্যায়। যেমন মাগরিবের স্বলাত।[6]

তাহক্বীক্ব : ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া যাকে ইবনু আবীল হাওয়াজিব বলে। সে যঈফ। সে আ‘মাশ ছাড়া আর কারো নিকট থেকে মারফূ হাদীছ বর্ণনা করেনি।[7] ইমাম বায়হাক্বী বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া ইবনু হাযিব কূফী আ‘মাশ থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেছে। কিন্তু সে যঈফ। তার বর্ণনা আ‘মাশ থেকে বর্ণিত অন্যান্য বর্ণনার বিরোধিতা করে।[8] এছাড়াও ইমাম দারাকুৎনী উক্ত বর্ণনার পূর্বে তার বিরোধী সহিহ হাদীছ উল্লেখ করেছেন। সেখানে মাগরিবের মত করে বিতর পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন-

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ لاَ تُوْتِرُوْا بِثَلاَثٍ أَوْتِرُوْا بِخَمْسٍ أَوْ سَبْعٍ وَلاَ تُشَبِّهُوْا بِصَلاَةِ الْمَغْرِبِ.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা (মাগরিবের স্বলাতের ন্যায়) তিন রাক‘আত বিতর পড় না, পাঁচ, সাত রাক‘আত পড়। আর মাগরিবের স্বলাতের ন্যায় আদায় কর না’। ইমাম দারাকুৎনী উক্ত হাদীছকে সহিহ বলেছেন।[9]

বিশেষ জ্ঞাতব্য : ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ ও ‘নবীজীর স্বলাত’ শীর্ষক বইয়ে যঈফ হাদীছটি দ্বারা দলীল পেশ করা হয়েছে। কিন্তু সহিহ হাদীছটি সম্পর্কে কোন কিছু বলা হয়নি। এটা দুঃখজনক।[10] ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, لَمْ أَجِدْ حَدِيْثاً مَرْفُوْعاً صَحِيْحاً صَرِيْحاً فِىْ إِثْبَاتِ الْجُلُوْسِ فِى الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ عِنْدَ الْإِيْتَارِ بِثَلاَثٍ ‘তিন রাক‘আত বিতরে দ্বিতীয় রাক‘আতে বৈঠক করার পক্ষে আমি কোন মারফূ সহিহ দলীল পাইনি’।[11]

[1]. তালীমুস্-স্বলাত, পৃঃ ১৭১।
[2]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৯৩১১; মাজমাউল বাহরাইন হা/১০৮৭।
[3]. -هَذَا حَدِيْثٌ لاَيَصِحُّ তানক্বীহ, পৃঃ ৪৪৭।
[4]. মালেক, মুওয়াত্ত্বা হা/২৫৪।
[5]. তাহক্বীক্ব মুসনাদে আহমাদ হা/৫৫৪৯ – صحيح دون قوله ” صلاة المغرب وتر صلاة النهار فأوتروا صلاة الليل ” فقد رواه عدة موقوفا।
[6]. দারাকুৎনী হা/১৬৭২; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৯৩০৯ ও ৯৩১০; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/৩১।
[7]. يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا هَذَا يُقَالُ لَهُ ابْنُ أَبِى الْحَوَاجِبِ ضَعِيْفٌ. وَلَمْ يَرْوِهِ عَنِ الأَعْمَشِ مَرْفُوعًا غَيْرُهُ -সুনানু দারাকুৎনী হা/১৬৭২; তানক্বীহ, পৃঃ ৪৪৭।
[8]. وقد رفعه يحيى ابن زكريا بن ابي الحاجب الكوفي عن الاعمش وهو ضعيف وروايته تخالف رواية الجماعة عن الاعمش -বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/৩১।
[9]. দারাকুৎনী ২/২৪ পৃঃ, সনদ সহিহ كُلُّهُمْ ثِقَاتٌ; ত্বাহাবী হা/১৭৩৯ لَا تُوتِرُوْا بِثَلَاثِ رَكَعَاتٍ تَشَبَّهُوْا بِالْمَغْرِبِ ।
[10]. মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ৩২৪; নবীজীর স্বলাত, পৃঃ ২৪৯।
[11]. মির‘আতুল মাফাতীহ হা/১২৬২-এর আলোচনা দ্রঃ।

এক সঙ্গে তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সহিহ দলীল :

(أ) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.

(ক) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি শেষের রাক‘আতে ব্যতীত বসতেন না।[1]

বিশেষ সতর্কতা : মুস্তাদরাকে হাকেমে বর্ণিত لاَ يَقْعُدُ (বসতেন না) শব্দকে পরিবর্তন করে পরবর্তী ছাপাতে لاَيُسَلِّمُ(সালাম ফিরাতেন না) করা হয়েছে। কারণ পূর্ববর্তী সকল মুহাদ্দিছ لاَ يَقْعُدُ দ্বারাই উল্লেখ করেছেন।[2] আরো দুঃখজনক হল- আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) নিজে স্বীকার করেছেন যে, আমি মুস্তাদরাক হাকেমের তিনটি কপি দেখেছি কিন্তু কোথাও لاَيُسَلِّمُ (সালাম ফিরাতেন না) শব্দটি পাইনি। তবে হেদায়ার হাদীছের বিশ্লেষক আল্লামা যায়লাঈ উক্ত শব্দ উল্লেখ করেছেন। আর যায়লাঈর কথাই সঠিক।[3]

সুধী পাঠক! ইমাম হাকেম (৩২১-৪০৫ হিঃ) নিজে হাদীছটি সংকলন করেছেন আর তিনিই সঠিকটা জানেন না!! বহুদিন পরে এসে যায়লাঈ (মৃঃ ৭৬২ হিঃ) সঠিকটা জানলেন? অথচ ইমাম বায়হাক্বী (৩৮৪-৪৫৮ হিঃ)ও একই সনদে উক্ত হাদীছ উল্লেখ করেছেন। সেখানে একই শব্দ আছে। অর্থাৎ لاَ يَقْعُدُ (বসতেন না) আছে। একেই বলে মাযহাবী গোঁড়ামী। অন্ধ তাকলীদকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যই হাদীছের শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে।

(ب) عَنِ بْنِ طَاوُوسَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ كاَنَ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ بَيْنَهُنَّ.

(খ) ইবনু ত্বাঊস তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। মাঝে বসতেন না।[4]

(ج) عَنْ قَتَادَةَ قال كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.

(গ) ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। শেষের রাক‘আতে ছাড়া তিনি বসতেন না।[5]

(د) عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُوْتِرُ بِثَلاَثِ رَكَعَاتٍ كَانَ يَقْرَأُ فِى الأُولَى بِ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) وَفِى الثَّانِيَةِ بِ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ) وَفِى الثَّالِثَةِ بِ (قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ) وَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوْعِ فَإِذَا فَرَغَ قَالَ عِنْدَ فَرَاغِهِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ يُطِيْلُ فِىْ آخِرِهِنَّ.

(ঘ) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। প্রথম রাক‘আতে ‘সাবিবহিসমা রাবিবকাল আ‘লা’ দ্বিতীয় রাক‘আতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফেরূন’ এবং তৃতীয় রাক‘আতে ‘কুল হুওয়াল্লা-হুল আহাদ’ পড়তেন এবং তিনি রুকূর পূর্বে কুনূত পড়তেন। অতঃপর যখন তিনি শেষ করতেন তখন শেষে তিনবার বলতেন ‘সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’। শেষবার টেনে বলতেন।[6] উক্ত হাদীছও প্রমাণ করে রাসূল (ﷺ) একটানা তিন রাক‘আত পড়েছেন, মাঝে বৈঠক করেননি।

(ه) عَنْ عَطاَءَ أَنَّهُ كَانَ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَجْلِسُ فِيْهِنَّ وَ لاَ يَتَشَهَّدُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.

(ঙ) আত্বা (রাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন কিন্তু মাঝে বসতেন না এবং শেষ রাক‘আত ব্যতীত তাশাহহুদ পড়তেন না।[7] এমন কি পাঁচ রাক‘আত পড়লেও রাসূল (ﷺ) এক বৈঠকে পড়েছেন।

(و) عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِىَّ كَانَ يُوْتِرُ بِخَمْسٍ وَلاَ يَجْلِسُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.

(চ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) পাঁচ রাক‘আত বিতর পড়তেন। কিন্তু তিনি শেষ রাক‘আতে ছাড়া বসতেন না।[8]

সুধী পাঠক! যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন তারাই সমাধান পেশ করেছেন। সুতরাং তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে মাঝে তাশাহ্হুদ পড়া যাবে না; বরং একটানা তিন রাক‘আত পড়তে হবে। তারপর তাশাহ্হুদ পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।

জ্ঞাতব্য : তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে দুই রাক‘আত পড়ে সালাম ফিরিয়ে পুনরায় এক রাক‘আত পড়া যায়। তিন রাক‘আত বিতর পড়ার এটিও একটি উত্তম পদ্ধতি।[9] উল্লেখ্য যে, তিন রাক‘আত বিতরের মাঝে সালাম দ্বারা পার্থক্য করা যাবে না মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।[10]

[1]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/১১৪০; বায়হাক্বী হা/৪৮০৩, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪১; সনদ সহিহ, তা’সীসুল আহকাম ২/২৬২ পৃঃ।
[2]. হাকেম হা/১১৪০; ফাৎহুল বারী হা/৯৯৮-এর আলোচনা দ্রঃ; আল-আরফুশ শাযী ২/১৪ পৃঃ।
[3]. আল-আরফুয যাশী শারহু সুনানিত তিরমিযী ২/১৪- وأما أنا فوجدت ثلاث نسخ للمستدرك وما وجدت فيها ما أخرج الزيلعي بلفظ لا يسلم وإنما وجدت فيها وكان لا يقعد وظني الغالب أن لفظ لا يسلم لا بد من أن يكون في مستدرك الحاكم ، فإن الزيلعي متثبت في النقل।
[4]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৪৬৬৯, ৩য় খন্ড, পৃঃ ২৭।
[5]. মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৪৭১, ৪/২৪০; বিস্তারিত দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪১৮-এর আলোচনা।
[6]. নাসাঈ হা/১৬৯৯, ১/১৯১ পৃঃ, সনদ সহিহ।
[7]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/১১৪২।
[8]. নাসাঈ হা/১৭১৭, ১/১৯৩ পৃঃ, সনদ সহিহ; শারহুস সুন্নাহ ১/২৩১ পৃঃ।
[9]. বুখারী হা/৯৯১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৫, (ইফাবা হা/৯৩৭, ২/২২৫); সিলসিলা সহিহাহ হা/২৯৬২; সনদ সহিহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৪২০-এর আলোচনা দ্রঃ, ২/১৪৮ পৃঃ; দেখুনঃ আলবানী, ক্বিয়ামু রামাযান, পৃঃ ২২; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৬৮৭১, ৬৮৭৪- عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوْتِرُ بِرَكْعَةٍ وَكَانَ يَتَكَلَّمُ بَيْنَ الرَّكْعَتَيْنِ وَالرَّكْعَةِ।