আমাদের দেশে প্রচলিত কুসংস্কার ও যঈফ হাদিস! ঋতুবতী বা অপবিত্র ব্যক্তিদেরকে সাধারণ কাজকর্ম করতে নিষেধ করা??

আমাদের দেশে প্রচলিত কুসংস্কার ও যঈফ হাদিস!
ঋতুবতী বা অপবিত্র ব্যক্তিদেরকে সাধারণ কাজকর্ম করতে নিষেধ করা??

অপবিত্র ব্যক্তি সালাম-মুছাফাহা করতে পারে না, কোন বিশেষ পাত্র স্পর্শ করতে পারে না ও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না বলে যে কথা সমাজে প্রচলিত আছে, তা কুসংস্কার মাত্র। কারণ তারা স্বাভাবিকভাবে সাধারণ কাজকর্ম করতে পারে।[1]

উল্লেখ্য যে, অপবিত্র ব্যক্তি বা ঋতুবতী মহিলা কুরআন স্পর্শ না করে যিকির হিসাবে কোন অংশ মুখস্থ তেলাওয়াত করতে পারে।[2] তবে পবিত্র ও ওযূ অবস্থায় পাঠ করা উচিৎ। এটাই উত্তম।[3] কুরআন মুখস্থও পড়া যাবে না যে সমস্ত বর্ণনা রয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন-

(أ) عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِِ  لَا تَقْرَأُ الْحَائِضُ وَلَا الْجُنُبُ شَيْئًا مِنْ الْقُرْآنِ.

(ক) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ঋতুবতী এবং অপবিত্র ব্যক্তি কুরআনের কোন অংশ পড়তে পারবে না।[4]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি মুনকার। ইমাম তিরমিযী বলেন, আমি ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি, ইসমাঈল বিন আইয়াশ হিজায ও ইরাকের অধিবাসীদের থেকে বর্ণনা করেছে। তার হাদীছগুলো মুনকার। সে যঈফ হাদীছ বর্ণনা করেছে।[5]

(ب) عَنْ عَلِيٍّ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ  يُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَا لَمْ يَكُنْ جُنُبًا.

(খ) আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) অপবিত্র না থাকলে প্রত্যেক অবস্থাতেই তিনি আমাদের কুরআন পড়াতেন।[6]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[7] এর সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।[8]

(ج) عَنْ عَلِيٍّ قَالَ كَانَ النَّبِىُِّ  يَخْرُجُ مِنَ الْخَلاَءِ فَيُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ وَيَأْكُلُ مَعَنَا اللَّحْمَ وَلَمْ يَكُنْ يَحْجُبُهُ أَوْ قَالَ يَحْجِزُهُ عَنْ الْقُرْآنِ شَيْءٌ لَيْسَ الْجَنَابَةَ.

(গ) আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) পায়খানা হতে বের হয়ে আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সাথে গোশত খেতেন। অপবিত্রতা ছাড়া কুরআন হতে তাঁকে কোন কিছু বাধা দিতে পারত না।[9]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদেও আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।[10]

[1]. ছহীহ বুখারী হা/২৮৩, (ইফাবা হা/২৭৯, ১/১৫৯ পৃঃ), ‘গোসল’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৩; ছহীহ মুসলিম হা/৮৫০; মিশকাত হা/৪৫১, পৃঃ ৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪২৩, ২/১০৫ পৃঃ, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, ‘নাপাক ব্যক্তির সাথে মিলামিশা’ অনুচ্ছেদ। [2]. ছহীহ বুখারী হা/৩০৫ ও ৩০৬, ১/৪৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/২৯৯, ১/১৬৯-১৭০ পৃঃ), ‘ঋতু’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭; মুসলিম হা/৮৫২, ১/১৬২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭১০), ‘ঋতু’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩০; সূরা হিজর, আয়াত-৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪০৬; মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৪৬৯, সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১২২, ১/১৬১ পৃঃ। [3]. আবুদাঊদ হা/১৭, ১/৪ পৃঃ; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৩৪; মিশকাত হা/৪৬৭, পৃঃ ৫০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৮, ২/১১০ পৃঃ, ‘নাপাক ব্যক্তির সাথে মিলামিশা’ অনুচ্ছেদ; শায়খ বিন বায, মাজমূউ ফাতাওয়া ২৬/৯৯; ফাতাওয়া উছায়মীন। [4]. তিরমিযী হা/১৩১; মিশকাত হা/৪৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩২, ২/১০৮। [5]. سَمِعْت مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَعِيلَ يَقُولُ إِنَّ إِسْمَعِيلَ بْنَ عَيَّاشٍ يَرْوِي عَنْ أَهْلِ الْحِجَازِ وَأَهْلِ الْعِرَاقِ أَحَادِيثَ مَنَاكِيرَ كَأَنَّهُ ضَعَّفَ -যঈফ তিরমিযী হা/১৩১। [6]. আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু হিববান, বুলূগুল মারাম হা/১০০। [7]. যঈফ তিরমিযী হা/১৪৬। [8]. ইরওয়াউল গালীল ২/২৪১ পৃঃ। [9]. আবুদাঊদ হা/২২৯; নাসাঈ হা/২৬৫; মিশকাত হা/৪৬০, পৃঃ ৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩১, ২/১০৭। [10]. ইরওয়াউল গালীল হা/৪৮৫, ২/২৪১ পৃঃ।।