আমাদের কী উচিত কেবল একজন বিশ্বাসী হয়ে বসে থাকা? নাকী, মুসলিম বনে যাওয়া?

আল্লাহ বলছেন,- [ “হে বিশ্বাসীগণ! ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো” ] – বাক্বারা ২০৮

আচ্ছা, এই আয়াতটা পড়তে গিয়ে কখনো কী ভেবেছেন যে আল্লাহ সুবাহান ওয়া’তালা ঠিক কী বুঝাতে চাচ্ছেন?
খেয়াল করুন, আল্লাহ তা’লা প্রথম সম্বোধনটাই করেছেন “ ইয়া আইয়্যুহাল লাজীনা আমানু” বা “হে বিশ্বাসীগণ” বলে।
এখন, বিশ্বাসী বলে সম্বোধন করার পরে তাহলে নতুন করে আবার ইসলামে প্রবেশের কী থাকতে পারে?

যারা এক আল্লাহ, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম, নবী-রাসূলগণ, ফেরেস্তা, আসমানী কিতাব ইত্যাদি বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ঈমান আনে, তাদের বলা হয় বিশ্বাসী। ঈমানদার।

তাহলে, একজন বিশ্বাসী কী পরিপূর্ণভাবে ইসলামে থাকে পারে না?
উত্তরটা এরকম- পারে, আবার পারে না।
কীভাবে একটু ব্যাখ্যা করি।
একজন মানুষ যদি ঈমানের প্রাথমিক শর্তগুলো ফিলাপ করে (বিশ্বাস করে), তাহলে সে বিশ্বাসী।
যখন সে একনিষ্ঠভাবে ইসলামের নিয়ম কানুন মানা শুরু করবে, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্ব, পর্দা, দাঁড়ি সহ সকল ইসলামী অনুশাসনকে নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে, তখন সে মুসলিম। একজন মুসলিম সে, যে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে। আরো ক্লিয়ারলি, একজন মুসলিম সে, যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেয়। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে আল্লাহর হুকুম আহকামকে প্রাধান্য দেয়।
প্রাথমিকভাবে একজন বিশ্বাসী আবার একজন মুসলিম নাও হতে পারে, কিন্তু প্রত্যেকটা মুসলিম অবশ্যই অবশ্যই বিশ্বাসী।

এজন্য, কোরআনে আল্লাহ যখন ইবরাহীম (আঃ) এর পরিচয় দিচ্ছেন, তখন বলছেন-

[ “Ibrahim was neither a Jew nor a Christian, but he was one inclining toward truth, a Muslim” -Al Imran- 67]

[ “ ইব্রাহীম না খ্রিষ্টান ছিলেন, না ইহুদী। বরং, তিনি ছিলেন একজন মুসলিম (একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণকারী” ) ]

এখানে, আল্লাহ তা’লা ইবরাহীম (আঃ) এর পরিচয় দেওয়ার সময় উনাকে ‘মুসলিম’ বলেছেন।

আবার, সূরা ইমরানে বলা হচ্ছে-
[ “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান
না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা।”]- আল ইমরান, ১০২
খেয়াল করুন, বিশ্বাসীগণকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করতে, আবার বলা হচ্ছে ‘তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’…

আল্লাহ সুবাহান ওয়া’তালা অবশ্যই জানেন যে, আমাদের মধ্যে ঈমান থাকা সত্ত্বেও আমরা (অনেকে) মুসলিম হতে পারবো না।
আল্লাহ জানেন, আমাদের মধ্যে ঈমানের টইটুম্বুর অবস্থা। ঈমানী জোশে আমরা ঈসরাঈলকে ঘৃণা করি। এই যে আল আকসাতে হামলা করছে ঈসরাঈল, আমাদের ভাইদের শহীদ করছে, জুমা আটকে দিচ্ছে, আমরা কিন্তু প্রতিবাদে ফেঁটে পড়ছি। ইয়ায়ায়ায়ায়া লম্বা আবেগঘন পোস্ট লিখছি ফেইসবুকে। হ্যাশট্যাগে দিচ্ছি #FreePalestine । সবকিছুই কিন্তু ঈমান থেকে।
কিন্তু দেখা যায়, পরেরদিন আমার ফজ্বর কাযা।
ঘুম থেকে জাগতে জাগতেই বেজে গেছে ১০ টা (চাকরি বা কাজ থাকলে। নাহলে টাইমটা কমপক্ষে দুপুর ১২ টা)।
এরপর ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে যোহরও কাযা। আসর আর মাগরিব চলে যায় আড্ডায়। এশা’টা আর পড়া হয়েই উঠে না…..

আল্লাহ জানেন, আমরা বিশ্বাস করি যে বিবাহ বহিঃভূত রিলেশনশীপ ইসলামে হারাম। আমরা আরো জানি,ইসলামে কঠোর পর্দাপ্রথার নিয়ম আছে।
কিন্তু জানা এবং বিশ্বাস করা সত্ত্বেও আমরা জি এফ, বি এফ রাখতে পছন্দ করি। রাতভর তাদের সাথে ফোনালাপ, দিনভর রিক্সায় পাশাপাশি চেপে ঘুরাঘুরিও কিন্তু আমরা করি।
আমরা বিশ্বাস করি ইসলাম অশ্লীল কিছুই সমর্থন করে না, কিন্তু তবুও, রাতভর “বাহুবলী-২” দেখেই কিন্তু আমরা ঘুমাতে যাই।

এই যে “বিশ্বাস করা” আর বিশ্বাস করে “পালন করা”র মধ্যে গূর্ঢ় যে পার্থক্য, এটাই হচ্ছে বিশ্বাসী আর মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য।
আমি একজন বিশ্বাসী হয়ে মুসলিম নাও হতে পারি, কিন্তু একজন মুসলিম হয়ে আলটিমেটলি আমি একজন বিশ্বাসী।

এজন্য আল্লাহ তালা বলেছেন- “হে বিশ্বাসীগণ! ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো”

আল্লাহ বলছেন,- তুমি আমায় বিশ্বাস করো, পরকালে বিশ্বাস করো, জান্নাত-জাহান্নামে বিশ্বাস করো। নবী-রাসূল, কিতাবে বিশ্বাস করো। কিন্তু, এর পাশাপাশি যে নামাজ পড়ো না, মুভি দেখো, হারাম রিলেশনে জড়াও, পর্দা করো না, দাঁড়ি রাখো না, গালি দাও, মিথ্যা কথা বলো, সুদ খাও, ঘুষ নাও, মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো- এসবকিছু ছেড়ে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে চলে এসো। মুসলিম হয়ে যাও।

ঈমানের প্রাথমিক শর্তাবলী পূরণ করার পরেও যারা মুসলিম হতে পারেনা, এই আয়াত তাদের জন্য।
আমরা যারা এই আয়াতের ক্রাইটেরিয়ার (যা উল্লেখ করেছি) মধ্যে পড়ি, তাদের কী উচিত কেবল একজন বিশ্বাসী হয়ে বসে থাকা? নাকী, মুসলিম বনে যাওয়া?
যদি কেবল বিশ্বাসী হয়েই পার পাওয়া যেতো, আল্লাহ নিশ্চই পরিপূর্ণভাবে আমাদের ইসলামে দাখিল হবার জন্য বলতেন না।

*****লিখেছেনঃ- আরিফ আজাদ*****