আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন

আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন
_________________________
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুললাহি ওয়াবারাকাতুহু ।বিসমিল্লাহ আলহা’মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ।
আম্মা বাআ’দ।
“এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে। শীঘ্রই তার আমলনামা তাকে দেখা হবে। অতঃপর তাকে তার পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। আপনার পালনকর্তার কাছেই সবকিছুর সমাপ্তি। তিনিই হাসান ও তিনিই কাঁদান, এবং তিনিই মৃত্যু দেন ও তিনি বাঁচান।”
সুরা নাজমঃ ৩৯-৪৪।
_________________________
১/ ডান হাত দিয়ে খাওয়া সুন্নাহ, বাঁ হাত দিয়ে খাওয়া ও পান করা হারাম, কারণ শয়তান বাঁ হাত দিয়ে খায়।

২/ নারীদের জন্যে হাই হিল পড়া জায়েজ নয়, কারণ এটা কাফির নারীদের অনুকরণ করার অন্তর্ভুক্ত।

৩/ পুরুষদের জন্যে রেশম বা সিল্কের পাঞ্জাবী, রুমাল, চাদর বা যেকোন ধরণের পোশাক ব্যবহার করা হারাম।

৪/ পুরুষদের জন্যে স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম, চার আনা ব্যবহার করাও হারাম। আমাদের দেশের অনেক লোকেরা বলে, কোথাও গিয়ে মারা গেলে তার দাফন- কাফনের ব্যবস্থার জন্যে চার আনা স্বর্ণ শরীরে রাখা জায়েজ, এটা সম্পূর্ণ মনগড়া ফতোয়া এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনীত দ্বীনের বিরোধীতা করার শামিল। তাদের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা, এবং জ্ঞান ছাড়াই দ্বীনি বিষয়ে কোন কথা বলা থেকে জিহবাকে সংযত রাখা।

৫/ অনেকে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার(!) জন্যে এংগেইজমেন্ট বা বিয়ের আংটি পড়ে, এটা কাফিরদের অনুকরণ করার অন্তর্ভুক্ত এবং হারাম। স্ত্রীকে ভালোবাসা জায়েজ, কিন্তু সেই ভালোবাসা যেনো হারাম কাজে উদ্ধুদ্ধ না করে। আর সেটা যদি স্বর্ণের আংটি বা গলার মালা হয়, তাহলেতো সেটা আরো বড় হারাম।

৬/ দাঁড়িয়ে, বসে কিংবা শুয়ে সর্বাবস্থাতেই ক্বুরান তেলাওয়াত করা জায়েজ। শুয়ে মুখস্থ বা ক্বুরান হাতে নিয়েও পড়া যাবে, এতে কোন সমস্যা নেই বা বেয়াদবী হবেনা।

৭/ নারীরা ঋতু অবস্থায় যেকোন দুয়া, দুরুদ
পড়তে পারবেন, ক্বুরান স্পর্শ না করে মুখস্থও পড়তে পারবেন। ক্বুরানের অনুবাদ, তাফসীর বা হাদীসের বই স্পর্শ করতে পারবেন বা মোবাইল থেকে দেখে ক্বুরান পড়তে পারবেন। আর গোসল ফরয অবস্থায় ক্বুরান তেলাওয়াত ছাড়া যেকোন দুয়া দুরুদ পড়তে পারবেন।

৮/ অপবিত্র অবস্থায় মাটিতে হাটাহাটি করলে মাটি অভিশাপ দেয় বা কবরে আজাব দেওয়া হয় – এটা নিতান্তই বাজে কথা ও কুসংস্কার। সর্বদা পবিত্র থাকা ভালো, তবে পরবর্তী সালাতের সময় পর্যন্ত অবসর রয়েছে গোসল না করার জন্যে।

৯/ যারা হজ্জ করতে যাবেন, তারা মদীনায়
যাবেন ‘মসজিদে নববী’ অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদ যিয়ারত (দর্শনের) জন্যে, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘কবর যিয়ারত’ করার জন্যে নয়। কারণ, তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য যেকোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ
নয়।

১০/ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁর ‘শাফায়াত’ বা সুপারিশ চাওয়া বড় শিরক। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কার জন্যে সুপারিশ করতে পারবেন বা, কার জন্যে সুপারিশ করতে পারবেন না – এটা সম্পূর্ণ ‘আল্লাহর ইচ্ছার’ অধীন। আল্লাহ যার জন্যে অনুমতি দিবেন, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্যে সুপারিশ করবেন, আল্লাহ যার জন্যে অনুমতি দিবেন না, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্যে কোন সুপারিশ করতে পারবেন না।সেইজন্যে আল্লাহর কাছে এই বলে দুয়া করতে হবে, “হে আল্লাহ! কেয়ামতের দিন তুমি
আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম এর সুপারিশ নসীব করো।” আমাদের দেশে প্রচলিত ‘তাবলীগ জামাত’ এর ‘ফাজায়েলে হাজ্জ’ নামক বইয়ে লিখা আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এই বলে দুয়া করতে হবে, “হে আল্লাহর নবী! আমি আপনার নিকট সুপারিশ চাই।”
ফাজায়েলে হাজ্জ, নবম পরিচ্ছেদ, ১২৫-১২৬ পৃষ্ঠা। প্রথম কথা হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দুয়া করা ডাহা শিরক, এমনকি যে
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে দুয়া করবে সে মুশরেক। আর দ্বিতীয়ত, নবী সাঃ এর কাছে তাঁর শাফায়াৎ চাওয়া শিরক। কারণ শাফায়াতের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ, সুতরাং শাফায়াত চাইতে হবে আল্লাহর কাছেই। তাবলিগ জামাতের লোকদের উচিৎ এমন শিরকি দুয়া থেকে তোওবা করা, এই সমস্ত বাজে বই পুড়িয়ে ফেলে বা নদীতে ফেলে দিয়ে ক্বুরান ও সহীহ হাদিস ভিত্তিক নির্ভরযোগ্য আলেমদের বই পড়া। সর্বোপরি, ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদাহ’ শিক্ষা করা এবং তার অনুসরণ করা।

১১/ মোবাইলে ক্বুরান তেলাওয়াত রিংটোন
হিসেবে ব্যবহার করা জায়েজ নয়। জামাতে ভুলবশত সাইলেন্ট না করা থাকলে আর কল আসলে রিংটোন বাজা চরম অপরাধ।এর জন্যে আন্তরিক তোওবা করতে হবে অন্যদের সালাতে বিঘ্ন ঘটানোর জন্যে এবং, ভবিষ্যতে যাতে আর কখনোই না হয় সেইদিকে সজাগ থাকতে হবে। তবে এক হাতে সাথে সাথে রিংটোন অফ করে দিতে হবে, এর জন্যে সালাত বাদ দিতে হবেনা বা রিংটোন অফ করলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবেনা।

১২/ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর সেবা-যত্ন করা স্ত্রীর জন্যে ফরয কিংবা ওয়াজিব নয়। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কেউ নিজে থেকে করলে এর জন্যে সে সওয়াব পাবে।

১৩/ ঘরের ভেতরে পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো জায়েজ। হারাম হচ্ছে কিবলার দিকে ফিরে পেশাব-পায়খানা করা।

১৪/ বাংলা উচ্চারণ দেখে ক্বুরান তেলাওয়াত
করলে শুদ্ধ হয়না, সেইজন্যে উস্তাদ এর কাছ থেকে, এবং নারীরা তাদের মাহরাম পুরুষ বা মহিলা উস্তাদের কাছ থেকে শুদ্ধ ক্বুরান তেলাওয়াত শিখে নিতে হবে। আমাদের মাঝে অনেক দ্বাইয়ী ও আলিম থাকা দরকার, যারা কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই সাধারণ মানুষকে দ্বীন ও ক্বুরান শিক্ষা দিবেন। আর আমাদেরকেও আল্লাহর দ্বীন শেখার জন্যে আরো পরিশ্রমী ও কর্মতৎপর হতে হবে।

১৫/ ক্বুরানুল কারীম ‘আল্লাহর কালাম’ বা আল্লাহর কথা। ক্বুরানের আয়াতগুলো কোন ‘মাখলুক’ বা আল্লাহর সৃষ্টি নয়,বরং ক্বুরান ‘আল্লাহর সিফাত’ বা আল্লাহর গুণ কিয়ামতের পূর্বে যার যতটুকু মুখস্থ থাকবে বা কিতাবে লিপিবদ্ধ থাকবে, সেটা আল্লাহ তাঁর কাছে উঠিয়ে নিবেন।

১৬/ আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর কসম করা
ছোট শিরক। তবে যেহেতু ক্বুরানুল কারীম
আল্লাহর সিফাতের অন্তর্ভুক্ত, একারণে
‘ক্বুরানের কসম’ কথাটি করা যাবে। কাবার কসম বলাও শিরক, ‘কাবার রব্ব’ বা ‘কাবার মালিকের কসম’ বলা যাবে।

১৭/ চাচাতো, ফুফাতো ভাই-বোন বা কাজিনরা ‘গায়ের মাহরাম’ অর্থাৎ তাদেরকে বিয়ে করা যায়, একারণে তাদের সামনে পর্দা করা ওয়াজিব।

১৮/ কাফের-মুশরেকেদের দাওয়াত খাওয়া
জায়েজ, তবে দাওয়াতে কোন হারাম খাবার বা
আল্লাহর নামে জবাই করা হয়নি, এমন পশু বা
পাখির গোশত খাওয়া যাবেনা। তবে অমুসলিমদের বিয়ে বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে শরীক হওয়া যাবেনা।

১৯/ পূজা দেখতে যাওয়া হারাম এবং বড় রকমের ফেতনা। দেব-দেবীদের মূর্তির প্রতি এতোটা নমনীয় যে, তাদের মূর্তি দেখতে চলে যাবে – এতোটা দুর্বল ঈমান কোন মুসলমানের হতে পারেনা। এমন যারা করে তাদের উচিৎ আন্তরিক তোওবা করে দ্বীন শিক্ষা করা, যাতে করে নাজাত পাওয়ার মতো ঈমান অর্জন করতে পারে।

২০/ দুই বছরের কম বয়সের কোন শিশু যদি
অন্তত পাঁচবার বা তার বেশি কোন নারীর দুধ পান করে, এমনভাবে যে শিশুটির পেট পূর্ণ হয়, তাহলে সেই নারী তার ‘দুধ মা’ হিসেবে গণ্য হবে। দুই বছর পর খেলে বা পাঁচবারের কম খেলে বা ৫ বার খেয়েছে কিন্তু অল্প করে যে শিশুটির ক্ষুদা নিবারণ হয়নি, এতে দুধ মায়ের সম্পর্ক স্থাপন হবেনা। দুধ মায়ের সম্পর্কের দ্বারা মাহরাম অর্থাৎ বিয়ে হারাম হয়ে যায়, একারণে দুধ মায়ের সন্তানদের বিয়ে করা যায়না, বা তাদের সাথে পর্দা করা ওয়াজিব থাকেনা।

২১/ ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কাবা ঘরের কালো পাথরটি জান্নাত থেকে ফেরেশতারা নিয়ে এসেছিলো। পূর্বে এটি সাদা ছিলো, পাপী মানুষের চুমা দেওয়ার কারণে এটি কালো হয়ে গেছে। তবে, ‘হাজরে আসওয়াদ’ আল্লাহর ডান হাত, এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। এ সম্পর্কে হাদীসটি বানোয়াট বা জয়ীফ, সুতরাং এই বিভ্রান্তিকর কথাটি বিশ্বাস করা যাবেনা।

২২/ আদম (আঃ) এর ছেলে কাবিল তার এক
বোনকে বিয়ে করার জন্যে হাবিলকে হত্যা
করেছিলো – প্রচলিত এই কথার কোন ভিত্তি নেই, এ সম্পর্কে ইসরাঈলী কাহিনী পাওয়া যায়, যা দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কাবিল তার ভাই হাবিলের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে হত্যা করেছিলো, এখানে নারীঘটিত কোন বিষয় ছিলোনা।

২৩/ “আমাদের আদি মাতা হাওয়্যা (আঃ)
প্রথমে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছিলেন, এর
পরে তিনি ভুলিয়ে ভালিয়ে আদম (আঃ) কেও
সেটা খাওয়ান। একারণে নারীদেরকে কয়েকটি শাস্তি দেওয়া হয় দুনিয়াতে, যার মাঝে রয়েছে তাদের ঋতুকালীন কষ্ট” – এইগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা এবং ইসরাঈলীদের কিচ্ছা কাহিনী, যার পক্ষে ক্বুরান ও সহীহ হাদীসের কোন প্রমান নেই। এই সমস্ত কথা বলে আদি মাতা হাওয়্যা (আঃ) এর সমালোচনা করা মারাত্মক অন্যায় যার ফলে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার পাপ কাঁধে নিতে হবে। আমাদের হুজুর
মাওলানাদের উচিৎ ভিত্তিহীন বা মিথ্যা কাহিনী বলে ওয়াজ-নসীহত করার বদ চরিত্র বর্জন করা, এবং ইলম অনুপাতে সঠিক দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া। ক্বুরানে বর্ণিত হয়েছে, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আদি পিতা আদম (আঃ) এবং আদি মাতা মাতা হাওয়্যা (আঃ) দুইজনেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছিলেন, এর জন্যে কাউকে কম বা কাউকে বেশি দোষ দেওয়া হয়নি। আর নারীদের ঋতুকালীন কিছুটা অসুবিধা – এটা আল্লাহর জ্ঞান অনুযায়ী নির্ধারিত, যার দ্বারা সুস্থ সুন্দর সন্তান জন্ম দেওয়া নিশ্চিত হয়। এটা বৃহৎ স্বার্থের জন্যে
নারীদের উপর একটা দায়িত্ব, আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্যে এ ব্যপারে ধৈর্য ধারণ করলে তার প্রতিদান পাওয়ার আশা করা যায়। কিন্তু এটা তাদের উপর অভিশাপ, বা পাপের ফল – এটা ইয়াহুদী খ্রীস্টানদের ভ্রান্ত বিশ্বাস, মুসলমানেরা এইগুলো বিশ্বাস করেনা।
__________________________
__________________________
সৌজন্যে Facebook Group – তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও
__________________________