অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব, তাদের পূজায় অংশগ্রহণ এবং শুভেচ্ছা বিনিময়

মূল ভিত্তি স্থাপনঃ ইসলামের মূল বিশ্বাসের মধ্যে এই রয়েছে যে, যা কিছু আল্লাহ এবং তার রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ আদেশ করেছেন তাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং দীনের বা ধর্মের নামে আর যা কিছু আছে তাকে অস্বীকার করা। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
ও তোমরা যারা বিশ্বাসী, আল্লাহকে মান্য কর এবং রাসূল ﷺ কে মান্য কর এবং তোমাদের আমলসমূহকে ধ্বংস করে দিও না। (আল কুরআন ৪৭ঃ৩৩)
আল্লাহ আরও বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ
যা কিছু রাসুল তোমাদের দেন তা তোমরা গ্রহন কর এবং যা কিছুর ব্যপারে তিনি তোমাদের নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। (৫৯:৭)
সুতরাং এখানে কোন সন্দেহ নেই যে যদি কোন বিষয়ের আদেশ আল্লাহর কাছ থেকে ওয়াহী আকারে সরাসরি আসে, কুরআন রূপে অথবা রাসূলের মুখনিঃসৃত বাণী, তার সম্মতি, তার কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে তবে সেটিই আমাদের জন্যে উত্তম উদাহরণ, এবং বাকি সকল উদাহরণ বাতিল এবং অগ্রহণযোগ্য। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
من عمل عملا ليس عليه امرنا فهو رد
যে কেউ এমন কোন কাজ করলো, যা আমাদের বিষয়সমূহ হতে নয়, তা রদকৃত হবে।(মুসলিম ২১৩২)
সুতরাং আমরা যদি কুরআন এবং হাদিস থেকে সঠিক দিক নির্দেশনা পেয়ে যাই, এর পর আমরা অন্য কারো মতকে এর উপর প্রাধান্য দেব না। এ রচনার মূল ভিত্তি হচ্ছে এটিই।
মূল আলোচনাঃ লক্ষ্য করুন শুভেচ্ছা শব্দটি শুভ এবং ইচ্ছার সমন্বয়ে গঠিত। এটি শুধুমাত্র সৌজন্যতা নয়। শুভেচ্ছা জানানোর অর্থ আপনি কারো কোন কিছুর ব্যপারে খুশী। আর পূজার শুভেচ্ছার অর্থ হচ্ছে আপনি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের পূজার ব্যপারে আপত্তি পোষণ করেন না অথবা এ ব্যপারে আপনি খুশী।
ইসলামে কাদের সাথে বন্ধুত্ব এবং কাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে হবে এ ব্যপারে অত্যন্ত স্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে।
ইসলামের মূল বিশ্বাস আমাদের সকল মুসলিমের উপর ওয়াজিব করে এই মূল বিশ্বাসের উপরই দীন পালন করতে এবং এর অপর পালনকারীদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ পোষণ করতে, আবার ঠিক তেমনিভাবে এর বিরোধিতাকারীদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে। অর্থাৎ তাওহীদপন্থীদের ভালবাসতে এবং শিরকপন্থীদের ঘৃণা করতে এবং তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে। এ বিষয়টি পরিষ্কার হবে যদি আমরা ইব্রাহীম ﷺ এর সম্বন্ধে নাযিলকৃত আয়াতের দিকে লক্ষ্য করি, যাতে আল্লাহ নির্দেশ করেনঃ
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
নিশ্চিতভাবে তোমাদের জন্যে উত্তম উদাহরণ রয়েছে ইব্রাহীম ﷺ এর মাঝে, এবং যারা তার সাথে ছিল। যখন তারা তাদের জাতিকে বলল, ” নিশ্চিতভাবে আমরা তোমাদের হতে মুক্ত এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যা কিছু উপাসনা কর তা হতে, আমরা তোমাদেরকে অবিশ্বাস করেছি এবং আমাদের এবং তোমাদের মাঝে শুরু হয়েছে অনন্তকালীন শত্রুতা এবং ঘৃণা যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমরা এক আল্লাহতেই বিশ্বাস কর।” (আল কুরআন ৬০ঃ৪)
আর এ কথা দীন ই মুহাম্মাদ ﷺ অর্থাৎ ইসলামেরও অন্তর্গত। আল্লাহ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاء بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِي
ও তোমরা যারা বিশ্বাসী, তোমরা গ্রহণ করো না ইহুদী এবং খৃষ্টানদের তোমাদের বন্ধুস্বরূপ, তারা একে ওপরের বন্ধু, এবং তোমাদের মধ্য হতে যারা তাদের বন্ধুরূপে গ্রহন করবে, নিশ্চিতভাবে সে তাদের মধ্য হতেই। আল্লাহ অবশ্যই জালিম জাতিকে হিদায়াত দেন না। (আল কুরআন ৫ঃ৫১)
এ আয়াতটি বিশেষ করে আহলে কিতাবদের সাথে বন্ধুত্ব এবং সুসম্পর্ক বিষয়ে। আর আল্লাহ বলেছেন সাধারণভাবে সকল কাফিরের সাথে বন্ধুত্বের ব্যপারে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاء
ও তোমরা বিশ্বাসী, তোমরা আমার এবং তোমাদের শত্রুকে বন্ধুস্বরূপ গ্রহণ করো না। (আল কুরআন ৬০ঃ১)
বরঞ্চ আল্লাহ মুমিনদের জন্যে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব হারাম করেছেন, যদি সে তার সবচাইতে নিকটাত্মীয় হয়। আল্লাহ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاء إِنِ اسْتَحَبُّواْ الْكُفْرَ عَلَى الإِيمَانِ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
ও তোমরা যারা বিশ্বাসী, তোমরা তোমাদের বাবা এবং ভাইদের বন্ধুস্বরূপ গ্রহন করো না যদি তারা ঈমানের উপর কুফরকে পছন্দ করে। আর তোমাদের মধ্য হতে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, নিশ্চিতভাবে তারাই হচ্ছে জালিম। (আল কুরআন ৯ঃ২৩)
আর আল্লাহ বলেনঃ
لا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ
আপনি কখনোই এমন পাবেন না যে যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ এবং শেষ দিনের উপর তারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করেছে যারা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল ﷺ এর বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের বাবা, সন্তান, ভাই বা আত্মীয় হয়। (আল কুরআন ৫৮ঃ২২)
পূজার মণ্ডপে অমুসলিমেরা একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করে, ঠিক যেভাবে আমরা আমাদের দীনের বিষয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। রাসুল ﷺ বলেন,
من تشبه بقوم فهو منهم
যে কেউ কোন জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদের মধ্য হতে। (আহমাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫০) (আবু দাউদ, ৪০৩৩)
সুতরাং অমুসলিমদের অনুকরণে পূজার শুভেচ্ছা জানালে তাদের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে। কেননা সাহায্য সহযোগিতা কেবলমাত্র আল্লাহর প্রতি তাকওয়ার ব্যপারেই প্রযোজ্য।
আল্লাহ বলেনঃ
وَتَعَاوَنُواْ عَلَى الْبَرِّ وَالتَّقْوَى وَلاَ تَعَاوَنُواْ عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُواْ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
তোমরা একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করো আল বীর এবং আত তাকওয়া (আল্লাহভীতি, ধর্মভীরুতা) তে কিন্তু সহযোগিতা করোনা গুনাহ এবং সীমালঙ্ঘনে। নিশ্চিতভাবে আল্লাহ শাস্তিতে অত্যন্ত কঠোর। (আল কুরআন ৫ঃ২)
আল্লাহ বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ
এবং মানুষের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছে যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের নিদস্বরূপ গ্রহন করেছে, তারা তাদের সেভাবে ভালোবাসে যেভাবে তারা আল্লাহকে ভালোবাসে।(আল কুরআন ২ঃ১৬৫)
অর্থাৎ আল্লাহর উর্ধে অথবা আল্লাহর সমকক্ষরূপে আপনি আর কাউকে ভালবাসতে পারবেন না।
وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ
আর যারা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর প্রতি ভালবাসায় প্রচন্ড। (আল কুরআন ২ঃ১৬৫)
অর্থাৎ বিশ্বাসী কখনোই আল্লাহর উর্ধে কাউকে ভালবাসবে না। আর এ ভালবাসার প্রমান আপনি দেবেন আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত ওয়াহীকে মান্য করবার মাধ্যমে।
আল্লাহ বলেন,
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে (অর্থাৎ আল্লাহর রাসুলকে) অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু। (আল কুরআন ৩ঃ৩১)
আর আল্লাহর ওয়াহী আপনাকে আদেশ করেছে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব না করতে, সুতরাং আর তাদের শিরককে প্রশ্রয় দেওয়া অথবা তাতে শুভেচ্ছা জানানোর তো প্রশ্নই আসে না। দেখুন আল্লাহ বলছেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء
আল্লাহ ক্ষমা করেন না তার সাথে শিরক করাকে। আর তিনি ক্ষমা করেন এ ব্যাতীত অন্য কিছুকে যাকে ইচ্ছা তাকে।(আল কুরআন ৪ঃ৪৮)

লক্ষ্য করুন, আপনার বাবা, মা সম্পর্কে যদি কেউ নোংরা মন্তব্য করে অথবা তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে, আপনি অবশ্যই তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করবেন। অথচ যিনি আপনার স্রষ্টা, আল্লাহ, তাঁকে বাদ দিয়ে যদি কেউ অপর কারো পূজা করে, আপনি যদি সত্যিই আল্লাহকে ভালবেসে থাকেন, কিভাবে সম্ভব যে আপনি এত বড় জঘন্য কাজে শুভ ইচ্ছা পোষণ করছেন!!! আপনার বাবা মার সাথে শত্রুতা পোষণ করা অপেক্ষা এ কাজ কি আরও ভয়াবহ নয়?

শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন বলেন,
“কেননা এমন কারো সাথে বন্ধুত্ব করা এবং সম্পর্ক রাখা, যে আল্লাহর বিরোধিতা করেছে, এই প্রমান করে যে আল্লাহ এবং রাসুল ﷺ এর ব্যপারে কোন মানুষের ঈমান অত্যন্ত দূর্বল। কেননা এটি কোন বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাজ নয় যে সে এমন কাউকে ভালবাসবে যে তার ভালবাসার পাত্রের শত্রু। আর কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা কুফর এবং পথভ্রষ্টতার বিষয়ে যার উপর সে বিদ্যমান। এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা সে সকল কাজের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যার কারণে আপনি তাদের ভালবাসবেন, সুতরাং আপনি পাবেন এমন মানুষকে সে সকল পথ দিয়ে তাদের ভালবাসা খুঁজছে। আর এটি সন্দেহাতীত ভাবে ঈমানের পুরোটাই সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করে দিতে পারে।”
(শারহ থালাথাতুল উসুল, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ৩৬, দার থারায়া লিন নাশর)
পূজার শুভেচ্ছা দেয়ার অর্থই হচ্ছে এত বড় অপরাধ শুভেচ্ছা যে দেয় দৃষ্টিতে অত্যন্ত ছোট, অথবা অপরাধই নয়। আর শিরকে সানন্দে আনন্দ পোষণ করাও শিরক।
আল্লাহ বলেন,
قُلْ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِي
বলুন নিশ্চিতভাবে আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সমস্ত আলাম (সৃষ্টি জগত) এর পালঙ্কর্তা আল্লাহ এর জন্যে। (আল কুরআন ৬ঃ১৬২)
অথচ যে পূজায় শুভেচ্ছা জানিয়েছে, সে তার ভালবাসা ইতিমধ্যেই আল্লাহর শত্রুকে দিয়ে বসে আছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের পূজায় শুভ ইচ্ছা অর্থাৎ আনন্দ পোষণ করেছে।
আল্লাহ এমন সব মানুষের সম্বন্ধে বলেনঃ
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلاَّ وَهُم مُّشْرِكُونَ

এবং তাদের অধিকাংশই আল্লাহর উপর ঈমান আনেনি এ ব্যতীত যে তারা মুশরিক। (আল কুরআন ১২ঃ১০৬)

অথচ আল্লাহ বলেছেনঃ
إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُواْ لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا
নিশ্চিতভাবে কাফিরেরা তোমাদের জন্যে প্রকাশ্য শত্রু। (আল কুরআন ৪ঃ১০১)
তাই আল্লাহ বিশ্বাসীর গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ
وَالَّذِينَ لا يَشْهَدُونَ الزُّورَ
আর তারা সাক্ষী হয়না মিথ্যার। (আল কুরআন ২৫ঃ৭২)
শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু মুহাম্মাদ আশ শাওকানী এই আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ অর্থাৎ যারা মিথ্যা সাক্ষ্যের সাক্ষী হয় না। অথবা কোন الزُّورَ (ঝুর) এ উপস্থিত থাকে না। আর ঝুর হচ্ছেঃ মিথ্যা, বাতিল; এবং তারা এ ব্যপারে সাক্ষ্য দেয় না। অধিকাংশ মুফাসসিরগণ দ্বিতীয় মতের সাথে একমত হয়েছেন। (অর্থাৎ মিথ্যা এবং বাতিল এ উপস্থিত থাকে না।) যাজ্জাজ বলেছেন, ঝুর এর ভাষাগত সংজ্ঞা হচ্ছে মিথ্যা, আর এমন কোন মিথ্যা নেই যা আল্লাহর সাথে শিরকের উর্ধে (অর্থাৎ শিরকই সর্বোচ্চ মিথ্যা)। আল ওয়াহিদি বলেন, অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে ঝুরের অর্থ এক্ষেত্রে শিরক। আর এটি এখান থেকে প্রাপ্ত যে (يشهدون , উপস্থিত হওয়া বা সাক্ষী হওয়া), যদি এটি সাক্ষ্য দেওয়া হয় তবে এ বাক্যে মুদাফ মাহদুফ রয়েছে, অর্থাৎ তারা সাক্ষ্য দেয় না ঝুর সাক্ষ্য। আর যদি এটি সাক্ষী হওয়া বা উপস্থিত থাকা হয়, যে পথে অধিকাংশ মুফাসসির গিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে এর অর্থে (আগের মত হতে) ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। এর পর কাতাদাহ বলেছেন, এরা সাহায্য করে না বাতিল পন্থীদের বাতিলের ব্যপারে। মুহাম্মাদ বিন হানিফাহ বলেন, এরা লজ্জাহীন ফালতু কথা এবং গান বাজনায় উপস্থিত থাকে না। ইবনু জুরাইজ বলেন, (এর অর্থ) মিথ্যা। এবং এটি মুজাহিদ হতেও বর্ণিত। বরঞ্চ সর্বাপেক্ষা উত্তম হচ্ছে সকল প্রকার অর্থ হতে কোন বিশেষ অর্থে না নেওয়া, বরঞ্চ এর উদ্দেশ্য তারা যারা উপস্থিত হয় না সে সকল কিছুতে যাকিছুকে ঝুর শব্দটি সত্যায়ন করে, তা যা ই হোক না কেন।
(ফাতহুল কাদির, মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু মুহাম্মাদ আশ শাওকানী, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১৯, দার ইবনু হাযম)
আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবন জারীর আত তাবারী বলেনঃ সুতরাং এটি যদি এরকমই হয়, সেক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্ববহ বক্তব্য এই আয়াতের অর্থ হিসেবে, তারা যারা সাক্ষী বা উপস্থিত হয় না কোন প্রকার বাতিল পন্থায়; না শিরকে, না গানবাজনায়, না মিথ্যায়, না অন্য কোন কিছুতে যা এই ঝুর শব্দটির অর্থকে বোঝায়। কেননা আল্লাহ এ সকল প্রকার (বদ) গুণকে সাধারণ করেছেন (অর্থাৎ এ সকল অর্থই এতে রয়েছে), এই বলে যে তারা ঝুর এর ব্যপারে সাক্ষী হয় না। সুতরাং কোন ধরনের বিশেষ অর্থে একে বর্ণনা করা উচিত হবে না যদি না এমন কোন দলিল থাকে যার সাথে একমত হওয়া ওয়াজিব হয় উত্তম এবং বুদ্ধির সবার্থে।

(তাফসীর আত তাবারী, আবু জা’ফার মুহাম্মাদ ইবন জারীর আত তাবারী, খন্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৫২৩, দার আলাম আল কিতাব)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে মুফাসসিরগণ একমত যে ঝুর এ সাক্ষী হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ আল কুরআনেই তা মুমিনের গুন নয় বলে হারাম করেছেন, আর তা হচ্ছে সাধারণ অর্থে। আর যদি কেউ শিরক করবার ব্যপারে তার শুভ ইচ্ছা ব্যক্ত করে, তবে সে নিশ্চিত শিরকে অংশীদার হয়েছে। কেননা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের পূজায় তার শুভ ইচ্ছা রয়েছে।
পরিশেষে বলতে চাই, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْمُشْرِكِينَ ، وَحَتَّى يَعْبُدُوا الْأَوْثَانَ
কিয়ামাতের ঘণ্টা কায়িম হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার উম্মতের কোন কোন গোত্র মুশরিক দের সাথে একত্রিত হবে (অর্থাৎ তাদের পূজা অর্চনায়) এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত মূর্তি পূজা করা হবে। (তিরমিযি,২১৪৯)
আশা করি পাঠকদের মধ্য হতে এত বড় গর্হিত কাজে কেউ অংশ নেন নি। কিন্তু মূর্তির পূজায় আনন্দ করা এবং শুভেচ্ছা জানানো পূজা করারই সমান। আল্লাহ আমাদের এমন ভয়ানক কাজ হতে রক্ষা করুন।
আল্লাহর দরবারে ফকির এবং তার দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন
আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী।
>>>>>Special Courtesy:- darhadith.com<<<<<